বাংলাদেশে সিগারেট অত্যন্ত সস্তা এবং সহজলভ্য, যা বিশেষ করে তরুণদের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ। সিগারেটের এই সহজলভ্যতা কমাতে এর ওপর কার্যকর করারোপ ও মূল্য বৃদ্ধি অত্যন্ত জরুরি। তাই আসন্ন বাজেটে সিগারেটের মূল্যস্তর চারটি থেকে কমিয়ে তিনটিতে নামিয়ে আনা এবং দাম বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে তরুণ চিকিৎসকরা।

শনিবার (১০ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি করে তারা।

তারা বলেন, তাদের প্রস্তাবনা অনুযায়ী সিগারেটের কর কাঠামোর সংস্কার এবং মূল্য বাড়ানো হলে সিগারেট ব্যবহারকারীরা নিরুৎসাহিত হবে এবং সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে। ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ এর সহযোগিতায় এবং প্ল্যাটফর্ম ডক্টরস ফাউন্ডেশন এর উদ্যোগে এই সংবাদ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়।

আরো পড়ুন:

কোস্ট গার্ডের অভিযানে সোয়া ৩ লাখ ইয়াবা উদ্ধার

ঝিনাইদহে মাদক মামলায় গ্রেপ্তার দম্পতি আদালতে

সংবাদ সম্মেলনে তরুণ চিকিৎসকরা বলেন, বাংলাদেশে সিগারেট অত্যন্ত সস্তা ও সহজলভ্য। বাংলাদেশের সিগারেট কর কাঠামো অত্যন্ত জটিল, যা সিগারেটের ব্যবহার কমাতে যথেষ্ট কার্যকর নয়। বর্তমানে আমাদের দেশে চারটি (নিম্ন, মধ্যম, উচ্চ ও প্রিমিয়াম) মূল্যস্তর থাকায় তামাক কর ও মূল্য পদক্ষেপ সঠিকভাবে কাজ করছে না। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যম স্তরের সিগারেটের দামের পার্থক্য খুব সামান্য হওয়ায় ভোক্তারা সহজেই এক স্তর থেকে অন্য স্তরে যেতে পারছে। তাই নিম্ন ও মধ্যম স্তরকে একত্রিত করে দাম বাড়ানো হলে তরুণ ও দরিদ্র জনগোষ্ঠী সিগারেট ব্যবহারে নিরুৎসাহিত হবে এবং সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে।

সংবাদ সম্মেলনে প্ল্যাটফর্ম ডক্টরস ফাউন্ডেশনের ফারজানা রহমান মুন বলেন, “আমাদের প্রস্তাবনা অনুযায়ী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে তামাকপণ্যের বিদ্যমান কর ব্যবস্থার সংস্কার করা হলে প্রায় ২৪ লক্ষ প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপান থেকে বিরত থাকতে উৎসাহিত হবেন। পাশাপাশি প্রায় ৯ লাখ তরুণসহ প্রায় ১৭ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যু প্রতিরোধ সম্ভব হবে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড.

শাফিউন নাহিন শিমুল বলেন, “জনস্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দিয়ে জটিল কর কাঠামোর সংস্কার এবং সিগারেটের দাম বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। তামাকজাত পণ্যে সরকারের যে রাজস্ব আসে, তা তামাকজনিত রোগে স্বাস্থ্য ব্যয়ের মাত্র ৭৫ শতাংশ মেটাতে পারে। কার্যকর করারোপের মাধ্যমে রাজস্ব আয় বিগত অর্থবছরের চেয়ে ৪৩ শতাংশ বাড়ানো সম্ভব।”

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন,“বাংলাদেশে তামাক ব্যবহারজনিত বিভিন্ন অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতি বছর এক লাখ ৬১ হাজারের বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে। এই প্রতিরোধ্যযোগ্য মৃত্যু প্রতিরোধে তামাকের ব্যবহার হ্রাস করা প্রয়োজন। এজন্য তামাকপণ্যের ওপর কার্যকর করারোপ করে জনগণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে নেওয়া জরুরি।”

এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে তরুণ চিকিৎসকরা সিগারেটের নিম্ন এবং মধ্যম স্তরকে একত্রিত করে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৯০ টাকা নির্ধারণ, উচ্চ স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ১৪০ টাকায় অপরিবর্তিত রাখা এবং প্রিমিয়াম স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ১৯০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব দেন। একই সঙ্গে সিগারেটের খুচরা মূল্যের ওপর ৬৭ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক, ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর এবং এক শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বহাল রাখার দাবি করেন।

পাশাপাশি বিড়ি ও অন্যান্য তামাকপণ্যের মূল্য বৃদ্ধিরও সুপারিশ করা হয়। ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২৫ টাকা এবং ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকা বিড়ির মূল্য ২০ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের দাবি তোলা হয়। জর্দা ও গুলের ক্ষেত্রেও যথাক্রমে ১০ গ্রামে ৫৫ ও ৩০ টাকা খুচরা মূল্য নির্ধারণ করে ৬০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের দাবি জানায় তরুণ চিকিৎসকরা।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির পরামর্শক ও জয়ীতা ফাউন্ডেশনের পরিচালক মো. নাইমুল আজম খান, সমন্বয়ক ডা. অরুনা সরকার ও সিনিয়র কমিউনিকেশন অফিসার আবু জাফর, প্রজ্ঞা’র হেড অব প্রোগ্রামস মো. হাসান শাহরিয়ার ও বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি মো. রাশেদ রাব্বিসহ বিভিন্ন তামাকবিরোধী সংগঠনের প্রতিনিধিরা।

ঢাকা/হাসান/সাইফ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স গ র ট র খ চর ব যবহ র ক র যকর সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

অস্ত্রবিরতির মধ্যেই পাল্টাপাল্টি হামলা, নিহত অন্তত ১৭

অস্ত্রবিরতির মধ্যেই পাল্টাপাল্টি হামলার দাবি করেছে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান। শুক্রবার রাতে পাকিস্তানের বিমান হামলায় আফগানিস্তানে ১০ জন নিহত হওয়ার দাবি করেছে কাবুল। ইসলামাবাদের দাবি, আফগান সীমান্তে আত্মঘাতী হামলায় ৭ পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়েছেন।

পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে সীমান্ত এলাকায় কয়েক দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর বুধবার সন্ধ্যায় দুই পক্ষের মধ্যে ৪৮ ঘণ্টার অস্ত্রবিরতি কার্যকর হয়। শুক্রবার সন্ধ্যায় অস্ত্রবিরতির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে দুই পক্ষই জানায়, অস্ত্রবিরতির মেয়াদ আরও ৪৮ ঘণ্টা বাড়াতে রাজি তারা।

পাল্টাপাল্টি হামলার মধ্যে দুই পক্ষের মধ্যে ‘শান্তি আলোচনা’ শুরু হয়েছে। গতকাল শনিবার কাতারের রাজধানী দোহায় প্রথম দফার বৈঠক করেছে দুই পক্ষের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল।

এদিকে গতকাল পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির বলেছেন, আফগানিস্তানের মাটি ব্যবহার করে পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলা চালানো হচ্ছে। এটা ইসলামাবাদ ও কাবুল উভয় পক্ষের জন্য সমানভাবে উদ্বেগজনক।

পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের বক্তব্যের জবাব দিয়েছেন আফগান উপস্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোল্লা মোহাম্মদ নবি ওমরি। তিনি বলেছেন, কাবুল কোনো জঙ্গিগোষ্ঠীকে আশ্রয় দেয়নি। এসব গোষ্ঠীকে সমর্থনও করে না।

আফগানিস্তানে তিন স্থানে হামলা

যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বৃদ্ধির কয়েক ঘণ্টা পর কাবুল জানায়, দেশটির পাকতিকা প্রদেশের পৃথক তিন স্থানে পাকিস্তান বিমান হামলা চালিয়েছে।

স্থানীয় পুলিশের মুখপাত্র মোহাম্মদউল্লাহ আমিনি বলেন, পাকতিকা প্রদেশে পাকিস্তান সীমান্তসংলগ্ন বারমাল, উরগুন ও খানাদার এলাকায় হামলা চালায় পাকিস্তান। তবে হামলায় কতজন হতাহত হয়েছেন এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাননি তিনি।

পাকতিকার প্রাদেশিক হাসপাতালের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, হামলায় স্থানীয় তিন ক্রিকেটারসহ ১০ জন নিহত হয়েছেন। আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের মুখপাত্র সাইয়েদ নাসিম সাদাত জানান, হামলায় নিহত সেই তিন ক্রিকেটার একটি ম্যাচ শেষে উরগুনে ফিরছিলেন।

গতকাল আফগান সরকারের মুখপাত্র জাবিহউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, অস্ত্রবিরতি লঙ্ঘন করে চালানো হামলার জবাব দেওয়ার অধিকার রাখে কাবুল। তবে শান্তি আলোচনার বিষয়টি ভেবেই তাদের বাহিনীকে পাল্টা হামলা চালানো থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

পাকিস্তান বলছে ‘জঙ্গি আস্তানা’

এর আগে গতকাল পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, আফগান সীমান্তের কাছে নিরাপত্তা বাহিনীর স্থাপনায় তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) পৃষ্ঠপোষকতায় আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালানো হয়। এতে পাকিস্তানি সাত সেনা নিহত হয়েছেন।

আফগানিস্তান সীমান্তবর্তী জেলা উত্তর ওয়াজিরিস্তানের মির আলী শহরে এ হামলা হয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয় পুলিশের কর্মকর্তা ইরফান আলী।

পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর সূত্র জানায়, উত্তর ওয়াজিরিস্তানে হামলাটি চালায় পাকিস্তানের নিষিদ্ধঘোষিত সশস্ত্র গোষ্ঠী টিটিপির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হাফিজ গুল বাহাদুর গ্রুপ। এর জবাব দিতেই আফগানিস্তানে ওই জঙ্গিগোষ্ঠীর আস্তানা নিশানা করে পাকিস্তান পাল্টা হামলা চালায়।

এ বিষয়ে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর এক কর্মকর্তা বলেন, যুদ্ধবিরতি তো আফগান তালেবানের সঙ্গে হয়েছে। আফগানিস্তানে অবস্থানরত সশস্ত্র গোষ্ঠীদের সঙ্গে হয়নি, যারা পাকিস্তানে হামলা চালায়।

দোহায় শান্তি আলোচনা

গতকাল দোহায় প্রথম ধাপের বৈঠকের পর ইসলামাবাদ বা কাবুল এ বিষয়ে কিছু জানায়নি। তবে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ গতকাল রাতে জানায়, দুই দেশের মধ্যে প্রথম দফার বৈঠক শেষ হয়েছে।

একাধিক কূটনৈতিক সূত্রের বরাতে জিও নিউজ জানিয়েছে, আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদী তৎপরতা ছিল আলোচনার মূল বিষয়। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বৈঠকে জানানো হয়েছে, আফগানিস্তানে জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর উপস্থিতি ‘অগ্রহণযোগ্য’। আজ সকালে আবার দুই পক্ষ বৈঠকে বসবে।

পাকিস্তানের প্রতিনিধিদলে নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ। আরও রয়েছেন দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল মুহাম্মদ আসিম মালিক। আফগান প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোহাম্মদ ইয়াকুব।

বৈঠক শুরুর আগে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গতকাল এক বিবৃতিতে জানায়, আলোচনায় মূলত আফগানিস্তান থেকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পরিচালিত আন্তসীমান্ত সন্ত্রাসবাদের অবসান এবং সীমান্তে শান্তি ও স্থিতিশীলতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার তাৎক্ষণিক পদক্ষেপে গুরুত্ব দেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ