সিলেট জেলার ১৩টি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে দূরবর্তী উপজেলা সীমান্তবর্তী জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট। এ দুটি উপজেলা নিয়ে সিলেট-৫ আসন গঠিত। সীমান্তবর্তী ৫টি উপজেলা হলেও সিলেট নগরী থেকে জকিগঞ্জের দূরত্ব ৯০ ও কানাইঘাটের দূরত্ব ৭০ কিলোমিটার।
১৯৯১ সাল থেকে ২০২৪ সালের নির্বাচনে ওই আসনটি কোনো শক্তিশালী সংসদ সদস্য পায়নি। আওয়ামী লীগের প্রার্থী তিনবার, বিএনপির একবার, জাতীয় পার্টির একবার ও তিনবার ইসলামী দলের তিন প্রার্থী জয়লাভ করেছেন সেখান থেকে। গত ৩৫ বছর ধরে সিলেট-৫ আসনের মানুষ কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন পায়নি– দাবি করে কানাইঘাট উপজেলা বিএনপির সভাপতি মামুনুর রশীদ (চাকসু মামুন) সমকালকে জানিয়েছেন, তারা আর উন্নয়নবঞ্চিত থাকতে চান না। তিনি দুই উপজেলার নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষকে নিয়ে আন্দোলন শুরু করেছেন। বিশেষ করে রাস্তা সংস্কার ও নদীভাঙন রোধে দাবি তুলেছেন।
আগামী ১৮ মে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ভবন ঘেরাও কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে স্থানীয়দের পক্ষ থেকে। পরে পানি উন্নয়ন বোর্ড ভবন ঘেরাও কর্মসূচির কথাও জানান তিনি।
জানা গেছে, সীমান্তবর্তী দুই উপজেলার সার্বিক অবস্থা অন্যান্য উপজেলার চেয়ে খারাপ। বিশেষ করে রাস্তার করুণ অবস্থা ছাড়াও নদীভাঙন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ব্যবস্থার খুব একটা অগ্রগতি হয়নি। সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর কানাইঘাট-জকিগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন অংশে ভাঙন, লোভা ছড়া নদীর ভাঙন, সিলেট বোরহান উদ্দিন-কানাইঘাট সড়ক, গাছবাড়ি-হরিপুর সড়ক, আগ্রাম-জকিগঞ্জ ও শেওলা-জকিগঞ্জ সড়কের অবস্থা খুবই করুণ।
দীর্ঘদিন ধরে নানা সমস্যায় জর্জরিত দুই উপজেলাবাসীর সমস্যার দাবি নিয়ে সম্প্রতি আন্দোলন শুরু করেছেন সেখানকার বিএনপি নেতারা। সম্প্রতি এলাকায় মানববন্ধন ও সমাবেশ ছাড়াও মঙ্গলবার সিলেট নগরীর কোর্ট পয়েন্টে জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকে মানববন্ধন ও পরে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
জকিগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইসমাঈল হোসেন সেলিম জানান, গত ১৭ বছরে দুই উপজেলায় উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। যার কারণে যোগাযোগ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাসহ নানামুখী সমস্যায় জর্জরিত এ অঞ্চলের বাসিন্দারা। সম্প্রতি যোগাযোগ ব্যবস্থার এতটাই বেহালদশা হয়েছে যে, সড়কগুলোতে গাড়ি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। 
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আমির হোসেন জানিয়েছেন, প্রতিবছর নদীভাঙন রোধে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। এবারও কিছু এলাকায় হয়েছে। এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী কেএম ফারুক হোসেন জানিয়েছেন, এলাকাবাসীর দাবির বিষয়টি তারা অবগত। সম্প্রতি জরুরিভিত্তিতে ৯৭ লাখ টাকার কাজ করা হয়েছে। ৩৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য একটি রাস্তার উন্নয়নের বরাদ্দ চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। দুই উপজেলার বিষয়টি তারা গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: দ ই উপজ ল ব এনপ র উপজ ল র

এছাড়াও পড়ুন:

সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম

সালাতুল হাজত একটি নফল নামাজ, যা বিশেষ প্রয়োজনকে সামনে রেখে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতে আদায় করা হয়। এই নামাজের মাধ্যমে মুমিন ব্যক্তি জীবনের বিভিন্ন কঠিন পরিস্থিতিতে আল্লাহর নৈকট্য ও সাহায্য কামনা করে।

হাদিসে সালাতুল হাজতের ফজিলত ও নিয়ম বর্ণিত আছে, যা মুমিনের আল্লাহর ওপর ভরসাকে দৃঢ় করে।

সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম

সালাতুল হাজত একটি নফল নামাজ, যা সাধারণত দুই রাকাত আদায় করা হয়। তবে ইচ্ছা হলে চার বা ততোধিক রাকাতও পড়া যায়। নামাজের নিয়ম বিস্তারিত বর্ণনা করা হলো:

১. অজু করা

সালাতুল হাজত নামাজের জন্য পূর্ণ পবিত্রতা প্রয়োজন। তাই প্রথমে অজু করতে হবে। অজুর ফরজ চারটি: মুখমণ্ডল ধোয়া, দুই হাত কনুই পর্যন্ত ধোয়া, মাথায় মসেহ করা এবং দুই পা টাখনু পর্যন্ত ধোয়া। এ ছাড়া সুন্নত অনুযায়ী অজু করা উত্তম, যেমন বিসমিল্লাহ বলে শুরু করা, কুলি করা, নাকের ভেতরে পানি দেওয়া ইত্যাদি। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৮৫)

সালাতুল হাজত একটি নফল নামাজ, যা বিশেষ প্রয়োজনকে সামনে রেখে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতে আদায় করা হয়। সাধারণ ফরজ বা নফল নামাজের মতোই পড়তে হয়।

২. নিয়ত করা

নামাজ শুরু করার আগে মনে মনে সালাতুল হাজতের নিয়ত করতে হবে। নিয়তের উদাহরণ: ‘আমি দুই রাকাত সালাতুল হাজত নফল নামাজ আল্লাহর জন্য আদায় করছি, আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করে।’

নিয়ত মনে মনে করা যথেষ্ট, মুখে বলা জরুরি নয়। (সাইয়্যিদ সাবিক, ফিকহুস সুন্নাহ, পৃষ্ঠা: ১৪৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ২০১৮)

আরও পড়ুনইশরাকের নামাজ: সকালের আলোয় আল্লাহর নৈকট্য ০৪ জুলাই ২০২৫

৩. দুই রাকাত নামাজ আদায়

প্রথম রাকাত: তাকবিরে তাহরিমা (আল্লাহু আকবার) বলে নামাজ শুরু করা। সুরা ফাতিহার পর যেকোনো সুরা পড়া, যেমন সুরা ইখলাস। তারপর রুকু, সিজদা ও অন্যান্য নিয়ম অনুসরণ করে প্রথম রাকাত সম্পন্ন করা।

দ্বিতীয় রাকাত: একইভাবে সুরা ফাতিহার পর একটি সুরা পড়া, রুকু, সিজদা ও তাশাহহুদ পড়ে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করা।

এই নামাজ সাধারণ ফরজ বা নফল নামাজের মতোই পড়তে হবে, তবে খুশুখুজু (মনোযোগ) বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। (সুনান তিরমিজি, হাদিস: ৪৭৮)

৪. নামাজের পর দোয়া

নামাজ শেষে আল্লাহর প্রশংসা ও দরুদ পড়ে নিজের প্রয়োজনের জন্য দোয়া করতে হবে। আব্দুল্লাহ ইবনে আবু আওফা (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তির আল্লাহর কাছে কোনো প্রয়োজন বা মানুষের কাছে কোনো দরকার থাকে, সে যেন অজু করে দুই রাকাত নামাজ পড়ে, তারপর আল্লাহর প্রশংসা করে, নবীর ওপর দরুদ পড়ে এবং এই দোয়া পড়ে:

উচ্চারণ: ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল হালিমুল কারিম, সুবহানাল্লাহি রাব্বিল আরশিল আজিম, আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন, আসআলুকা মুজিবাতি রাহমাতিক, ওয়া আজাইমা মাগফিরাতিক, ওয়াল গানিমাতা মিন কুল্লি বিরর, ওয়াস সালামাতা মিন কুল্লি ইসম। লা তাদা লি জাম্বান ইল্লা গাফারতাহু, ওয়া লা হাম্মান ইল্লা ফাররাজতাহু।’

অর্থ: ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তিনি সহনশীল ও দয়ালু। পবিত্র মহান আরশের প্রভু আল্লাহ। সমস্ত প্রশংসা বিশ্বজগতের প্রভু আল্লাহর জন্য। আমি তোমার কাছে তোমার রহমতের কারণ, ক্ষমার দৃঢ়তা, প্রতিটি পুণ্যের লাভ এবং সব পাপ থেকে মুক্তি প্রার্থনা করি। আমার কোনো গুনাহ রেখো না, যা তুমি ক্ষমা করোনি এবং কোনো দুশ্চিন্তা রেখো না, যা তুমি দূর করোনি।’ (সুনান তিরমিজি, হাদিস:: ৪৭৮)

৫. অতিরিক্ত দোয়া

ওপরের দোয়ার পর নিজের প্রয়োজন বা দরকারের জন্য নিজের ভাষায় আল্লাহর কাছে দোয়া করা। দোয়া করার সময় আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা রাখা এবং ধৈর্যের সঙ্গে ফলাফলের অপেক্ষা করা।

আরও পড়ুননামাজ আধ্যাত্মিক পরিশুদ্ধির একটি ধাপ১৭ জুলাই ২০২৫সালাতুল হাজতের সময়

সালাতুল হাজত নির্দিষ্ট কোনো সময়ের সঙ্গে সীমাবদ্ধ নয়। এটি যেকোনো সময় আদায় করা যায়, তবে নিষিদ্ধ সময় (যেমন সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত বা ঠিক মধ্যাহ্নে) এড়িয়ে চলতে হবে। সর্বোত্তম সময় হলো:

রাতের শেষ প্রহর (তাহাজ্জুদের সময়)।

ফজর বা মাগরিব নামাজের পর।

জুমার দিনে, বিশেষ করে আসর ও মাগরিবের মাঝে। (মুহাম্মদ ইবনে সালিহ, আল-ফিকহুল মুয়াসসার, পৃষ্ঠা: ১৯৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ২০১৫)

সালাতুল হাজতের ফজিলত

সালাতুল হাজত নামাজের ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে উল্লেখ আছে। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সালাতুল হাজত পড়ে এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করে, আল্লাহ তার প্রয়োজন পূরণ করেন।’ (সুনান তিরমিজি, হাদিস: ৪৭৮)

এই নামাজ মুমিনের জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনার একটি শক্তিশালী মাধ্যম, যা মানসিক শান্তি ও ইমানের দৃঢ়তা বাড়ায়।

সতর্কতা

নিষিদ্ধ সময় এড়ানো: সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত ও মধ্যাহ্নে নামাজ পড়া থেকে বিরত থাকা।

খুশুখুজু: নামাজ ও দোয়ায় মনোযোগ বজায় রাখা, যাতে ইবাদত পূর্ণতা পায়।

হারাম প্রয়োজনে না: সালাতুল হাজত শুধু জায়েজ ও হালাল প্রয়োজনের জন্য পড়তে হবে।

ধৈর্য: দোয়ার ফলাফলের জন্য ধৈর্য ধরা, কারণ আল্লাহ সর্বোত্তম সময়ে প্রয়োজন পূরণ করেন। (ইবনে হাজার আসকালানি, ফাতহুল বারি, ২/৪৮০, দারুল মা’রিফা: ১৯৮৯)

সালাতুল হাজত নামাজ মুমিনের জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনার একটি অসাধারণ মাধ্যম। এটি দুই রাকাত নফল নামাজ, যার পর নির্দিষ্ট দোয়া ও নিজের প্রয়োজনের জন্য দোয়া করা হয়। জীবনে ব্যস্ততার মাঝেও এই নামাজ সহজেই আদায় করা যায়।

আরও পড়ুনজীবনকে ছন্দে ফেরাবে ‘ধীর নামাজ’২৪ মে ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ