১০ কিলোমিটার দীর্ঘ আর ৩ কিলোমিটার চওড়া চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের উত্তর-পশ্চিম উপকূলের নতুন চরটির নাম ডুবোচর। স্থানীয় মানুষেরা একে ডোবাচর বা ডুবাগা বলে। ডুবাগা শব্দের অর্থ—যে চর প্রবল জোয়ারে ডুবে যায়। চরটিতে এর আগে মাছ চাষের জন্যই কৃষকেরা ধানের আবাদ করতেন। এবার প্রথমবারের মতো ধানের ফলন কৃষকের প্রত্যাশাকেও ছাপিয়ে গেছে। মাছের পাশাপাশি ধান থেকেও ভালো আয়ের আশা করছেন তাঁরা।

গতকাল রোববার ডুবোচর ঘুরে দেখা গেছে, সোনালি রঙের পাকা ধানের ভারে নুয়ে পড়েছে গাছ। মাঠে কৃষকেরা ব্যস্ত ধান কাটতে। কেউ মাঠ থেকে ধান তুলে এনে স্তূপ সাজাচ্ছেন। কেউ কেউ ট্রাক্টরে ধান বোঝাইয়ে ব্যস্ত। কৃষকদের মতে, চরের প্রায় ৫০০ কানি (১৬০ শতকে ১ কানি) আবাদি জমিতে এ বছর ধান উঠবে অন্তত ৩০ হাজার মণ বা ১ হাজার ২০০ টন। কৃষকেরা যেটিকে বাম্পার ফলন বলে উল্লেখ করেছেন।

কৃষকেরা জানিয়েছেন, ডোবাচরে এ বছরই প্রথম এত বেশি পরিমাণে চাষ হলো। গত মৌসুমে পরীক্ষামূলক চাষে বাজিমাত হয়েছে বলেই এবার চাষ বেড়েছে বহুগুণে। আগামী মৌসুমগুলোতে চাষ উত্তরোত্তর বাড়বে বলেই তাঁদের ধারণা। আমনের বাম্পার ফলন হলেও কৃষি বিভাগের কোনো মাঠ কর্মকর্তার দেখা পাননি বলে অভিযোগ রয়েছে কৃষকের। সন্দ্বীপের কৃষি কর্মকর্তা মো.

মারুফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেছেন, ডুবোচরে তাঁর যাওয়া হয়নি, তবে সেখানকার আমনের ফলন সম্পর্কে তিনি জানেন।

বাড়ছে ধানের চাষ

কৃষকেরা জানিয়েছেন, গত মৌসুমে তাঁরা ধানের ফলন যাচাই করেছেন। জোয়ারের নোনাজলে ডুবে যায় বলে তাঁরা আমনের শতবর্ষী জাত ‘রাজাশাইল’ আবাদ করেছিলেন। খুব ভালো ফলন হওয়ায় এবার চাষ হয়েছে অন্তত ৫০০ কানি জমিতে, যা গতবারের চেয়ে ১০ গুণ বেশি। চরের মধ্যভাগে নিজের জমিতে ধান কাটছিলেন মো. নুরুল ইসলাম (৫৫)। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে এই চরের চাষ এক হাজার কানি ছাড়িয়ে যাবে।

কৃষকেরা জানিয়েছেন, গত মৌসুমে তাঁরা ধানের ফলন যাচাই করেছেন। জোয়ারের নোনাজলে ডুবে যায় বলে তাঁরা আমনের শতবর্ষী জাত ‘রাজাশাইল’ আবাদ করেছিলেন। খুব ভালো ফলন হওয়ায় এবার চাষ হয়েছে অন্তত ৫০০ কানি জমিতে, যা গতবারের চেয়ে ১০ গুণ বেশি।

জমিতে বিছিয়ে রাখা ধানের ছড়া স্তূপ করছিলেন মো. নুর উদ্দিন (৫০)। নুর উদ্দিন এ বছর ১২ কানি জমিতে চাষ করে ভালো লাভের আশা করছেন। ভবিষ্যতে তিনি ২০ কানি জমিতে আমন লাগানোর স্বপ্ন দেখছেন। নুর উদ্দিন, নুরুল ইসলামদের মতো প্রায় সব চাষির আশা, তাঁরা ভবিষ্যতে আরও বেশি আমনের চাষ করবেন।

ধানে আর মাছে সাফল্য

ডুবোচরে গিয়ে দেখা গেল, মাঠজুড়ে সোনালি ধান নিয়ে কৃষকের তৎপরতা। তবে কেবল ধান নিয়েই এখানে কৃষকের কারবার থেমে নেই। ধানের জমিতে মাছও চাষ করছেন। অনেক কৃষক মাছ চাষ করবেন বলে ধান লাগিয়েছিলেন। দুটিতেই এসেছে সাফল্য।

তালিম হোসেন পূর্বপুরুষের জমিতে ফিরে চাষ শুরু করেছেন। ১২ কানি জমিতে ধান চাষ করেছেন তিনি। একই জমিতে মাছও ছেড়েছিলেন। এবার তিনি মাছ বিক্রি করেছেন প্রায় ২২ লাখ টাকার মতো। ভবিষ্যতে চাষ আরও বাড়াবেন। মাছের বিক্রিও বাড়বে বলে আশা তাঁর।

সন্দ্বীপের সবুজচর ও এই ডুবোচরের ধানি জমি থেকে আহরিত মাছের হাট নিয়ে ১১ অক্টোবর প্রথম আলোয় ‘মাছের জন্য ধান চাষ, দিনে কোটি টাকা আয়’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। মাছে আর ধানে এখানকার কৃষকদের উপার্জন এখন তুঙ্গে।

ডুবোচরে ফলন বেশি

জোয়ারের সঙ্গে ডুবোচরে পলি জমা হয় প্রতিবছর। আর এ কারণেই এখানকার জমি উর্বর। পাশের সবুজচর ও স্বর্ণদ্বীপের জমিতে এখন আর নতুন পলি জমে না। যত দিন পলি জমার সুযোগ পাবে, তত দিন উর্বরতা থাকবে অক্ষুণ্ন। ধানের ফলন যেমনি বেশি হবে, তেমনি মাছের আনাগোনাও থাকবে বেশি। এমন তথ্যই দিয়েছেন কৃষকেরা। তালিম হোসেন স্নাতক শেষ করে এখানে চাষে নেমে উপার্জন করছেন লাখ লাখ টাকা। তিনি বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, পলি জমতে পারে বলেই বাম্পার ফলন হচ্ছে আমনের। ক্রমে চর উঁচু হয়ে জোয়ারে ডুবে যাওয়া বন্ধ হবে। তখন মাছ আহরণ আর ধানের ফলনে ভাটা পড়বে।

আরও পড়ুনমাছের জন্য ধান চাষ, দিনে কোটি টাকা আয়১১ অক্টোবর ২০২৫পরিবহন আর শ্রমিকের সংকট

প্রায় সব কৃষকেরই দাবি, শ্রমিকের সংকটের কারণে ভুগতে হচ্ছে তাঁদের। পাশের সবুজচরের প্রায় চার হাজার কানি জমি থেকেও এই সময়ে আমন ঘরে তোলা হচ্ছে। কিন্তু শ্রমিকের অভাবে ডুবোচরে ফসল ঘরে তোলা যাচ্ছে না। কয়েক হাজার কৃষিশ্রমিকের দরকার পড়লেও শ্রমিক মিলছে না। অন্যদিকে রয়েছে যাতায়াত আর পরিবহনের সংকটও। সন্দ্বীপের জনবসতি থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরের এই চরে নেই রাস্তাঘাট। জমি চাষে ব্যবহৃত ট্রাক্টরে করে ঘরে তুলতে হয় ধান।

মো. মোস্তফা (৬২) নামের এক কৃষক বলেন, ‘ট্রাক্টরগুলো বারবার চলাচল করে রাস্তা বানিয়ে নিচ্ছে। এগুলোই আমাদের ভরসা। ধান তাড়াতাড়ি ঘরে তুলতে না পারলে লঘুচাপ বা নিম্নচাপে জোয়ারে ভেসে যাওয়ার বা বৃষ্টিতে নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি আছে।

ডুবোচরের আমন ফলন তাক লাগিয়েছে সন্দ্বীপের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের কৃষকদের। সন্দ্বীপ শহর বা উপজেলা পরিষদ থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার উত্তরে জেগে ওঠা নতুন ভূমি এই ডুবোচর। গত শতাব্দীর ষাটের দশক থেকে সমুদ্রগর্ভে বিলীন হওয়া সন্দ্বীপের বাটাজোড়া, কাটগড়, হুদ্রাখালী ইউনিয়নের অংশ নিয়ে জেগে উঠেছে এই চর। এখানকার সাবেক বাসিন্দারাই এই চরে আমন চাষে নেমেছেন। তাঁদের বেশির ভাগই প্রায় অর্ধশত বছর ধরে ছিলেন সন্দ্বীপের বাইরে। ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় অনেকেই এখন এই ডুবোচরে এসে বসতঘর তৈরি করছেন। কেউ কেউ পরিবার নিয়ে শুরু করেছেন বসবাস। সেখানকার ধানের জমির আল ধরে হাঁটতে গেলে পায়ের সঙ্গে ধানের ছোঁয়ায় ঝনঝন করা মধুর শব্দ প্রাণ ভরিয়ে দেয়।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব ম প র ফলন সন দ ব প র ধ ন র ফলন চ ষ কর কর ছ ন ড ব চর আমন র প রথম করছ ন ন হওয়

এছাড়াও পড়ুন:

শাটডাউনের প্রভাব নেই, ঢাকা চলছে নিজের ছন্দে

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির রায়কে কেন্দ্র করে নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করলেও সোমবার (১৭ নভেম্বর) সকাল থেকে রাজধানীতে তার দৃশ্যমান কোনো প্রভাব পড়েনি। ঢাকার প্রবেশপথসহ গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কগুলোতে সকাল থেকেই যানবাহন চলছে স্বাভাবিক নিয়মে।

সকাল ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত রায়েরবাগ, শনিরআখড়া ও যাত্রাবাড়ী এলাকায় ঘুরে দেখা যায়- প্রাইভেটকার, সিএনজি, মোটরসাইকেল, আঞ্চলিক বাস স্বাভাবিক দিনের মতোই চলছে। দূরপাল্লার বাস কিছুটা কম হলেও শহরের ভেতরে চলাচল ছিল সাবলীল।

আরো পড়ুন:

রাজধানীর প্রবেশমুখ যাত্রাবাড়ী এলাকায় গণপরিবহন চলাচল স্বাভাবিক 

ঢাবি উপাচার্যের নামে ফেসবুকে ভুয়া আইডি, পাঠানো হচ্ছে রিকুয়েস্ট

সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া

রায়েরবাগ থেকে নিউ মার্কেট যাচ্ছিলেন ব্যবসায়ী কাইউম। তিনি বলেন, শাটডাউন নাকি দিয়েছে আওয়ামী লীগ- রাস্তায় তো তার ছিটেফোঁটাও দেখলাম না। রাজনৈতিক পাগলামির কারণে মানুষকে দুর্ভোগে ফেলতে চাইছে।

তারাবো পরিবহনে মতিঝিলগামী রাফি বলেন, মিডিয়াতে দেখলাম কোনো অরাজকতা হয়নি। রাস্তাঘাট পুরো স্বাভাবিক। তাহলে এই কর্মসূচির প্রয়োজন কী?

একই এলাকার যাত্রী আবুল কাসেম বলেন, মহাসড়কে পুলিশ আছে ঠিকই, কিন্তু শাটডাউনের মতো কোনো পরিস্থিতি তো দেখলাম না। সবাই স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করছে।

পুলিশের বক্তব্য

রায়েরবাগে হাইওয়ে থানার ওসি আব্দুল কাদের জিলানী বলেন, এখন পর্যন্ত আমাদের এলাকায় কোনো সমস্যা হয়নি। তিনটি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে, পুরো পরিস্থিতি নজরদারিতে আছে। যান চলাচল স্বাভাবিক।

তিনি জানান, রায়কে কেন্দ্র করে নাশকতা ঠেকাতে মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ৯টি চেকপোস্ট, ২৭টি পিকেট ও ৪২টি মোবাইল টিম মোতায়েন রয়েছে। দিনে চার শতাধিক এবং রাতে সাড়ে চার শতাধিক পুলিশ দায়িত্ব পালন করছেন।”

ওসি আরও বলেন, মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে আছি।

ঢাকা/এএএম/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ