নড়াইলে পুলিশ পরিদর্শকের বিরুদ্ধে যৌতুকের দাবি ও নির্যাতনের অভিযোগ, স্ত্রীর মামলা
Published: 17th, November 2025 GMT
নড়াইলের কালিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হাসানুল কবিরের বিরুদ্ধে পরকীয়া, নির্যাতন ও যৌতুকের অভিযোগ তুলে আদালতে নালিশি মামলা করেছেন তাঁর স্ত্রী সাদিয়া কানিজ সিদ্দিকা।
গতকাল রোববার বিকেলে বিষয়টি আমলে নিয়ে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মারুফ হাসান পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি পিবিআইকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। বাদীপক্ষের আইনজীবী মো.
মামলার আরজিতে বলা হয়েছে, পারিবারিকভাবে ২০০৮ সালে হাসানুল কবিরের সঙ্গে সাদিয়া কানিজ সিদ্দিকার বিয়ে হয়। হাসানের চাহিদা অনুযায়ী সাদিয়ার বাবা পাঁচ বিঘা জমি বিক্রি করে যৌতুক হিসেবে নগদ অর্থ ও উপঢৌকন দেন। এ দম্পতির দুটি মেয়েসন্তান আছে।
সাদিয়ার অভিযোগ, পুলিশ থেকে প্রেষণে র্যাবে বদলি হওয়ার পর হাসানুল কবির এক নারীর সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। বিষয়টি প্রতিবাদ করায় তিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতেন। প্রায় ছয় মাস আগে প্রাইভেট কার কেনার কথা বলে হাসানুল কবির ২৫ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। সাদিয়া টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে নির্যাতন আরও বেড়ে যায়।
চলতি বছর কালিয়া থানায় পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) হিসেবে যোগ দেন হাসানুল কবির। ২৭ সেপ্টেম্বর সাদিয়া দুই মেয়েকে নিয়ে বাবার বাড়ি থেকে কালিয়ায় চলে আসেন। ওই দিন যৌতুকের দাবিতে সাদিয়া ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের মারধর করে পৌরসভার গেস্টহাউসে রেখে যান হাসান। এরপর গত ১৯ অক্টোবর সন্ধ্যায় ওই গেস্টহাউসেই আবারও তাঁকে মারধর করা হয়। এসব ঘটনায় থানায় প্রতিকার না পেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে হাসানুল কবির বলেন, ‘২০১৯-২০ সালে এফডিআরের কিছু টাকা স্ত্রীর নামে দিয়েছিলাম। ২০২১ সালে আমার স্ত্রী ও তাঁর পরিবারের চাপে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া পাকা বাড়ি, বসতভিটা ও ফসলি জমি মিলিয়ে মোট ৩৫ শতক লিখে দিই। সর্বমোট ৫৫ শতক জমি ও ১০ লাখ টাকার এফডিআর তাঁর নামে দেওয়া হয়, যার বর্তমান মূল্য প্রায় ২ কোটি টাকা। এগুলো লিখে দেওয়ার পর আমি পরিবারের কাছে অনেকটা অতিথির মতো হয়ে গেছি।’
হাসানুল কবির আরও বলেন, ‘এবার শেষ সম্বলটুকু নেওয়ার জন্য সাদিয়া ও তাঁর পরিবার উঠেপড়ে লেগেছে। আমি সেটা দিতে চাই না। গত মাসের ২২ তারিখ ডাকযোগে সাদিয়াকে তালাকের কাগজ পাঠিয়েছি। সেটা পাওয়ার পরই হয়তো এখন মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট অভিযোগ তুলে আদালতে গেছেন। আমিও চাই সুষ্ঠু তদন্ত হোক, যেন আমি নির্দোষ সেটা প্রমাণ করতে পারি।’
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মেঘনা-ধনাগোদা বেড়িবাঁধ সড়ক যেন মরণফাঁদ
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত ৬৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সড়কটি এখন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। সড়কের বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় অনেক গর্ত। এসব গর্তের পাশ দিয়ে প্রতিদিনই ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন পথচারী ও যানবাহন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের দাবি জানানো হলেও সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ) কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না। যে কোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন তারা।
সরেজমিনে দেখা যায়, মেঘনা-ধনাগোদা বেড়িবাঁধের দুই পাশে জায়গায় জায়গায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও সড়কের পিচ উঠে গেছে, কোথাও আবার গর্তের গভীরতা এত বেশি যে, ছোট যানবাহন উল্টে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।
আরো পড়ুন:
রাজশাহীতে দুর্ঘটনায় কলেজছাত্রের মৃত্যু, ট্রাকে আগুন
সিলেটে বাস-প্রাইভেটকার সংঘর্ষ, বাবা-মেয়ে নিহত
মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের বেড়িবাঁধটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের হলেও, এর ওপরে নির্মিত পাকা সড়কটি সওজ বিভাগের আওতাধীন। এ সড়কটি ব্যবহার করে মতলব উত্তর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ছাড়াও ঢাকা, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালীর যানবাহন চলাচল করে।
স্থানীয় অটোরিকশা চালক রোবেল হোসেন বলেন, “নির্মাণের দুই-তিন বছর যেতে না যেতেই সড়কের দুই পাশে অনেক গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এখন প্রতিদিন গাড়ি চালাতে হচ্ছে ঝুঁকি নিয়ে। একটু অসাবধান হলেই ঘটবে দুর্ঘটনা।”
মোটরসাইকেল চালক আনোয়ার হোসেন বলেন, “দিনে কোনোভাবে পার হওয়া যায়, কিন্তু রাতের পরিস্থিতি থাকে ভয়ঙ্কর। কারণ, অনেক সময় দূর থেকে গর্ত দেখা যায় না। এই সড়কে খুব ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাতে হয়।”
পিকআপ ভ্যানের চালক আব্দুর রহমান বলেন, “কয়েক বছর না যেতেই রাস্তা গর্তে ভরে গেছে। রাতের বেলায় গর্তগুলো বোঝা যায় না, তাই সব সময় আতঙ্ক নিয়ে গাড়ি চালাতে হয়।”
কলাকান্দা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান বলেন, “বেড়িবাঁধ সড়কটি এলাকাবাসীর প্রাণের দাবি। এখন গর্তের কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগকে দ্রুত মেরামতের জন্য আমরা একাধিকবার জানিয়েছি।”
মতলব উত্তর প্রেস ক্লাবের সভাপতি বোরহান উদ্দিন ডালিম বলেন, “এই বেড়িবাঁধ শুধু মতলব নয়, পুরো অঞ্চলের মানুষের যোগাযোগের প্রধান সড়ক। তাই সওজ বিভাগের উদাসীনতা জনজীবনে ঝুঁকি তৈরি করছে। বর্ষার আগেই এই সড়কটির পূর্ণাঙ্গ সংস্কার জরুরি।”
চাঁদপুর সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “অতিবৃষ্টির কারণে গর্ত তৈরি হয়েছে। আমরা সড়কটি মেরামতের ব্যবস্থা নিয়েছি।”
উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন জানান, মতলব ব্রিজ থেকে বেড়িবাঁধের পূর্ব অংশে সংস্কার কাজের জন্য টেন্ডার করা হয়েছে। পশ্চিম অংশ এখনও ঠিকাদারের দায়িত্বে আছে, তাদেরকেও মেরামতের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী (চঃ দাঃ) সেলিম শাহেদ বলেন, “বেড়িবাঁধটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের হলেও এর ওপরে থাকা পাকা সড়ক সওজ বিভাগের দায়িত্বে। বেড়িবাঁধের যদি কোথাও ক্ষতি হয়, আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেই; সড়ক সংস্কার কাজ সওজ বিভাগকেই করতে হয়।”
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, “বেড়িবাঁধ সড়কের বিভিন্ন স্থানে গর্ত দেখা গেছে, যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে।”
ঢাকা/অমরেশ/মাসুদ