চারটি আসনে বিএনপিতে অসন্তোষ, আগেভাগেই প্রচারে জামায়াত
Published: 17th, November 2025 GMT
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছয়টি সংসদীয় আসনের মধ্যে একটি ছাড়া প্রতিটিতেই বিএনপির প্রার্থী নিয়ে একাংশের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। ঘোষিত চারটি আসনের মধ্যে তিনটিতেই প্রার্থী পুনর্বিবেচনার দাবি উঠেছে। দুটি আসন যুগপৎ আন্দোলনের দুই শরিক দলকে ছেড়ে দেওয়ার আলোচনা রয়েছে রাজনীতির মাঠে। অন্যদিকে আগেভাগে প্রার্থী ঘোষণা করে প্রচারে আছে জামায়াতে ইসলামী।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী ঘোষণা না করলেও সদরসহ কয়েকটি আসনে দলটির নেতারা তৎপর আছেন। এককভাবে প্রতিটি আসনে প্রচারণা চালাচ্ছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। এছাড়া বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) তিনটিতে এবং গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকিসহ দুজন দুটি আসনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রাজনীতিতে একসময় আওয়ামী লীগের আধিপত্য ছিল। ৫ আগস্টের পর দলটির নেতা-কর্মীদের অধিকাংশই আত্মগোপনে। একইভাবে জাতীয় পার্টির (জাপা) সাংগঠনিক কার্যক্রম নেই বললেই চলে। জেলা জাপার সাধারণ সম্পাদক নাসির আহমেদ খান বলেন, নির্বাচন নিয়ে সংশয় আছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের আশ্বাস পেলে প্রতিটি আসনে প্রার্থী দেওয়া হবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর)এই আসনটিতে আগে জিততে পারেনি বিএনপি। ১৯৭০ সালের পর আওয়ামী লীগ আটবার, জাপা দুবার, ন্যাপ একবার ও স্বতন্ত্র প্রার্থী দুবার জয়ী হয়েছেন। এবার নাসিরনগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো.
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির প্রার্থী ঘোষণার পর দলের একাংশের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি কামরুজ্জামান মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন।
বিএনপির মনোনয়ন পাওয়া আবদুল হান্নান প্রথম আলোকে বলেন, মনোনয়ন না পেয়ে অনেকে অনেক কিছু বলতে পারেন। এতে কোনো প্রভাব ফেলবে না। দিন শেষে তারেক রহমানের ডাকে সবাই মূলস্রোতে ফিরে আসবেন।
বিএনপির শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মাঠে নিয়মিত সভা-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি করছেন জামায়াতের প্রার্থী এ কে এম আমিনুল ইসলাম। তিনি উপজেলা জামায়াতের আমির। ভোটের মাঠে ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছেন বলে দাবি করেছেন তিনি।
এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলনের উপজেলা সভাপতি মাওলানা হুসাইন আহমেদ আলী ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মাওলানা সাইদুল্লা বিন আনসারী মাঠে আছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ)এই আসনে বিএনপি ছয়বার, জাপা তিনবার ও স্বতন্ত্র প্রার্থী একবার জয়ী হয়েছেন। এখানে এখনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি বিএনপি। আসনটি শরিকদের ছেড়ে দেওয়ার আলোচনা রয়েছে। পাশাপাশি বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যেও কোন্দল চাঙা। এখানে জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও জেলার আমির মোবারক হোসেনকে দলীয় প্রার্থী করা হয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে এখানে সক্রিয় সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহসম্পাদক রুমিন ফারহানা। এ ছাড়া জেলা বিএনপির উপদেষ্টা ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শেখ মো. শামীম, জেলা বিএনপির সদস্য আহসান উদ্দিন খান, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের মহাসচিব এস এন তরুণ দে, সরাইল উপজেলা বিএনপির সভাপতি আনিসুল ইসলাম ঠাকুর, সরাইল উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান লস্কর, আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান সিরাজ দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী।
গত শনিবার আশুগঞ্জে শাহজাহান সিরাজকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন তাঁর সমর্থকেরা।
বিএনপির আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী আনিসুল ইসলাম ঠাকুর বলেন, ‘এই আসন বিএনপির ঘাঁটি। আমরা চাই, দল থেকে ধানের শীষ প্রতীকের কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হোক।’
এখানে জোটের প্রার্থী হিসেবে হেফাজতে ইসলামের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব জুনাইদ আল হাবিবকে মনোনয়ন দেওয়ার আলোচনা আছে।
আসনটিতে দীর্ঘদিন ধরে গণসংযোগ করছেন জামায়াত নেতা মোবারক হোসেন আকন্দ। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলনের আশুগঞ্জ উপজেলার সহসভাপতি নেছার আহমদ আন-নাছিরী, বাংলাদেশ খেলাফত মসজিসের মাওলানা মনিরুল ইসলাম খন্দকার, সিপিবির সরাইল উপজেলা সভাপতি দেবদাস সিংহ রায় ও এনপিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক আশরাফ মাহদী প্রার্থী হতে পারেন বলে আলোচনায আছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর ও বিজয়নগর)১৯৯১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত আসনটিতে বিএনপি জয় পেয়েছিল। এবার কেন্দ্রীয় অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সভাপতি খালেদ হোসেন মাহবুবকে (শ্যামল) মনোনয়ন দিয়েছে দল। এই আসনে বিএনপির প্রার্থী নিয়ে অসন্তোষ নেই।
খালেদ হোসেন মাহবুব বলেন, ‘সর্বত্রই এখন ভোটের আমেজ। জনগণ বিএনপিকে সমর্থন দিচ্ছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সব আসনে বিএনপি জয়ী হবে।’
জামায়াতে ইসলামী এখানে দলের জেলা শাখার সহকারী সেক্রেটারি মো. জোনায়েদ হাসানকে প্রার্থী করেছে। তিনি বলেন, ‘প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। মাঠে দৌড়ঝাঁপ করছি। এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হবে।’
এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলনের জেলার সাধারণ সম্পাদক মাওলানা গাজী নিয়ামুল করিম, এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কুমিল্লা বিভাগের সমন্বয়ক মো. আতাউল্লাহ এবং জেলার সমন্বয়ক আজিজুর রহমান আলোচনায় আছেন। মো. আতাউল্লাহ বলেন, জেলার প্রতিটি আসন থেকে এনসিপির চার থেকে পাঁচজন দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। দ্রুত মনোনয়ন চূড়ান্ত করে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা ও আখাউড়া)বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মুশফিকুর রহমানকে এই আসনে মনোনয়ন দেওয়ার পর দলের একাংশের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তারা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ব্যক্তিগত সহকারী আবদুর রহমানের (সানি) বড় ভাই ও জেলা বিএনপির সদস্য কবির আহমেদকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে। মুশফিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রার্থী পুনর্বিবেচনার দাবি উঠতেই পারে। তবে আমার মনে হয় না এতে কিছু হবে।’
আসনটিতে জামায়াত ঢাকা মহানগর উত্তরের প্রচার ও মিডিয়া সম্পাদক আতাউর রহমান সরকারকে প্রার্থী করেছে। আতাউর রহমান বলেন, ‘২ জুন থেকে প্রচারণা শুরু করেছি। পরিবর্তনের হাওয়া এখানে পড়েছে। জনগণ নতুন নেতৃত্ব চাচ্ছে।’
এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলনের জেলা শাখার উপদেষ্টা মুফতি জসিম উদ্দিন ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মাওলানা কাজী মইনুদ্দীন তৎপর আছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ (নবীনগর)নবীনগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. আবদুল মান্নানকে মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। এতে দলের একাংশের নেতা-কর্মীরা অসন্তুষ্ট। তাঁরা জেলা বিএনপির অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক কাজী নামজুল হোসেনকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে নানা কর্মসূচি করছেন। কাজী নাজমুল হোসেন বলেন, ‘দিন শেষে যত কিছুই হোক, ধানের শীষকে জয়ী করার চেষ্টা করতে হবে। দল এখানে প্রার্থী পুনর্বিবেচনা করে এমন একজনকে মনোনয়ন দেবে, যিনি আসনটি তারেক রহমানকে উপহার দিতে পারবেন।’
আবদুল মান্নান বলেন, ‘মান-অভিমান তো থাকতেই পারে। মনোনয়ন পাওয়ার পর বাড়ি বাড়ি গিয়ে মনোনয়নপ্রত্যাশী সবার সঙ্গে দেখা করেছি। সব ঠিক হয়ে যাবে।’
আসনটিতে আইনজীবী আবদুল বাতেনকে প্রার্থী করেছে জামায়াত। এ ছাড়া এনসিপির জেলার সংগঠক এ বি এম কবির আলম, ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মাওলানা আবদুল কাইয়ুম ফারুকী, সিপিবির উপজেলা সাধারণ সম্পাদক শাহিন খান ও গণসংহতি আন্দোলনের নাহিদা সাহান মাঠে আছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ (বাঞ্ছারামপুর)গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি এই আসনে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন। এখানে কাউকে প্রার্থী ঘোষণা করেনি বিএনপি। জোট হলে আসনটি সাকিকে ছেড়ে দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে বিএনপি সূত্রে জানা গেছে।
গুঞ্জন থাকায় স্থানীয় বিএনপিতে কিছু অসন্তোষ আছে। এখানে মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য এম এ খালেক, উপজেলা বিএনপির সভাপতি মেহেদী হাসান, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রফিক সিকদার ও জিয়াউদ্দিন, জেলা বিএনপির উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত মেজর সাইদুর রহমান উল্লেখযোগ্য।
এম এ খালেক বলেন, ‘জোট থেকে প্রার্থী দিলে কতটুকু সাফল্য পাবে, জানি না। দল এমন সিদ্ধান্ত নিলে মেনে নিতে হবে।’
এ আসনে জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে দেওয়ান নকিবুল হুদা, ইসলামী আন্দোলনের উপজেলার সহসভাপতি মোহাম্মদ আলী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মাওলানা আবদুল মজিদ, সিপিবির জেলার সাবেক সভাপতি সৈয়দ মো. জামাল ও এনসিপির উপজেলার প্রধান সমন্বয়ক মো. মাইন উদ্দিন প্রার্থী হবেন বলে আলোচনা আছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ছ ন ব র হ মণব ড় য় ব এনপ র স র উপদ ষ ট সমন বয়ক অসন ত ষ র সদস য র উপজ ল ল ইসল ম এনস প র র রহম ন আসনট ত এই আসন কম ট র উদ দ ন ন বল ন আবদ ল
এছাড়াও পড়ুন:
খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে প্রার্থী হিসেবে পেয়ে চাঙা বিএনপি
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের জেলা বগুড়া দলের ‘দুর্গ’ হিসেবে পরিচিত। তবে ২০০৮ সালের নির্বাচনে জেলার দুটি সংসদীয় আসন হাতছাড়া হয় বিএনপির। আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দলের ‘হারানো দুর্গ’ পুনরুদ্ধারে মাঠে জোরেশোরে নেমেছে বিএনপি।
১২ উপজেলা নিয়ে গঠিত বগুড়ায় সংসদীয় আসন রয়েছে সাতটি। এর মধ্যে দুটি আসনে প্রার্থী হচ্ছেন বিএনপির শীর্ষ দুই নেতা। কোনো নির্বাচনে না হারা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবারও লড়বেন বগুড়া-৭ আসনে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবারই প্রথম ভোটের লড়াইয়ে নামছেন বগুড়া-৬ আসনে।
বিএনপির দুই শীর্ষ রাজনীতিকের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে মাঠে তৎপর জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থীরা। দলীয় প্রার্থী ঘোষণা হওয়ায় জেলার অন্য আসনগুলোতেও প্রচারে নেমেছেন বিএনপি ও জামায়াতের নেতা–কর্মীরা। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাসদও মাঠে সক্রিয় আছে। এ ছাড়া জেলার সাতটি আসনে প্রার্থী হতে ইতিমধ্যে ১৪ জন দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন বলে জানিয়েছেন জেলা এনসিপির যুগ্ম সমন্বয়কারী রাফিয়া সুলতানা।
বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা)বগুড়া–১ আসনে বিএনপি প্রার্থী করেছে সাবেক সংসদ সদস্য কাজী রফিকুল ইসলামকে। বর্তমানে তিনি গণসংযোগ, কর্মী সমাবেশসহ নানা কর্মসূচিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে পাশে পাচ্ছেন না দলের একাংশের নেতা–কর্মীদের।
সোনাতলা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আহসানুল তৈয়ব (জাকির) আসনটিতে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী। তিনি বলেন, ‘প্রার্থী চূড়ান্তভাবে ঘোষণা করা হলে দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নেব।’ তবে কাজী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘নেতা-কর্মীদের মধ্যে কোনো বিভেদ নেই, ধানের শীষের পক্ষে সবাই ঐক্যবদ্ধ।’
জামায়াত এ আসনে দলের কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদের সদস্য শাহাবুদ্দিনকে প্রার্থী করেছে। ইসলামী আন্দোলন এ বি এম মোস্তফা কামাল পাশাকে এবং বাসদ শাহজাহান আলীকে মনোনয়ন দিয়েছে।
বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ)জেলায় একমাত্র বগুড়া–২ আসনে এখনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি বিএনপি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে আসনটি নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নাকে ছেড়ে দেয় বিএনপি। এবারও বিএনপি আসনটিতে তাঁকে ছাড় দিতে পারে বলে আলোচনা আছে। ইতিমধ্যে মাহমুদুর রহমান মান্না এই আসন থেকে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন।
এ আসনে জামায়াত সাবেক সংসদ সদস্য শাহাদাতুজ্জামানকে প্রার্থী করেছে। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলনের মুফতি জামাল পাশা ও বাসদের মাসুদ পারভেজও মাঠে আছেন।
যদিও এ আসনে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী শিবগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও জেলা বিএনপির সহসভাপতি মীর শাহে আলম। তিনি বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশমতো ধানের শীষের পক্ষে জনমত গঠন ও দলীয় প্রতীকে ভোট চেয়ে এলাকায় কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘ভোট যদি হয়, আমি এখানে দাঁড়াব। আমার দল আছে, দলের নিবন্ধন আছে; মার্কা (প্রতীক) আছে। আমার মার্কায় আমি ভোট করব।’
বগুড়া-৩ (দুপচাঁচিয়া-আদমদীঘি)এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন আদমদীঘি উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল মহিত তালুকদার। অন্যদিকে জামায়াত দুপচাঁচিয়া উপজেলার গুণাহার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ আবু তাহেরকে প্রার্থী করেছে। ইসলামী আন্দোলনের শাজাহান তালুকদার ও বাসদের সুরেশ চন্দ্র দাসও দলীয় প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন।
আবদুল মহিত তালুকদার বলেন, তাঁর বাবা ও বড় ভাই এ আসনে বিএনপির মনোনয়নে একাধিকবার সংসদ সদস্য হয়েছেন। ধানের শীষের জোয়ারের সঙ্গে এলাকায় পারিবারিক জনপ্রিয়তায় জয়ের ব্যাপারে তিনি আশাবাদী।
বগুড়া-৪ (নন্দীগ্রাম-কাহালু)জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য মোশারফ হোসেনকে এবারও আসনটিতে প্রার্থী করেছে বিএনপি। মোশারফ হোসেন বলেন, ধানের শীষের পক্ষে চারদিকে গণজোয়ার তৈরি হয়েছে। মানুষ ভোটের উৎসবের জন্য মুখিয়ে আছে।
এ আসনে জামায়াতের প্রার্থী মোস্তফা ফয়সাল পারভেজ। তিনি ঢাকা মহানগর শিবিরের সাবেক সভাপতি। ইসলামী আন্দোলন এখানে ইদ্রিস আলীকে মনোনয়ন দিয়েছে। বাসদ প্রার্থী করেছে দলের জেলা সদস্য সাইফুজ্জামান টুটুলকে।
বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট)এ আসনে বিএনপি প্রার্থী করেছে সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মোহাম্মদ সিরাজকে। তিনি জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক। জামায়াত এখানে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা জামায়াতের আমির দবিবুর রহমানকে প্রার্থী করেছে। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নেতা সন্তোষ সিংকে প্রার্থী করেছে বাসদ। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন মীর মাহমুদুর রহমান।
১৯৯১ থেকে ২০০১ সালের নির্বাচন পর্যন্ত আসনটি জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ সংসদ সদস্য ছিলেন। তিনি বলেন, ‘আসছে নির্বাচনে ধানের শীষের পক্ষে গণজোয়ার তৈরি হয়েছে।’
বগুড়া-৬ আসন (সদর)১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত সব নির্বাচনে বগুড়া-৬ আসনে জয়ী হয়ে এসেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। এবার এখানে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে প্রার্থী করেছে বিএনপি।
জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বলেন, বগুড়া বিএনপির দুর্গ ছিল, এখনো অক্ষুণ্ন আছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এখানে প্রার্থী হওয়ায় সর্বস্তরের ভোটারের মধ্যে উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছে। সব রেকর্ড ভেঙে তারেক রহমান সারা দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হবেন বলে তিনি আশাবাদী।
এ আসনে শহর জামায়াতের আমির আবিদুর রহমানকে (সোহেল) প্রার্থী করেছে দলটি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর বগুড়ার রাজনীতির চিত্র পাল্টে গেছে। বগুড়া কোনো দলের একক দুর্গ নয়, আগামী নির্বাচনে ভোটাররা তা প্রমাণ করে দেবেন।
এ আসনে বাসদ দলের জেলা সদস্যসচিব দিলরুবা নূরীকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে। ইসলামী আন্দোলন মনোনয়ন দিয়েছে আ ন ম মামুনুর রশিদকে।
বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর)বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের বাড়ি গাবতলী উপজেলার সঙ্গে শাজাহানপুর নিয়ে গঠিত বগুড়া-৭ আসনে বরাবর প্রার্থী হয়ে আসছেন খালেদা জিয়া। ১৯৯১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত প্রতিটি নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে জেতেন তিনি। তবে তিনি ছেড়ে দিলে উপনির্বাচনে তিনবার জয়ী হন বিএনপির স্থানীয় নেতা হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু, একবার উপনির্বাচনে প্রার্থী করে জিতিয়ে আনা হয় কেন্দ্রীয় নেতা মওদুদ আহমদকে।
আসন্ন নির্বাচনেও এখানে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। জামায়াত প্রার্থী করেছে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি গোলাম রব্বানীকে। এ ছাড়া মাঠে আছেন ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী শফিকুল ইসলাম ও বাসদের শহিদুল ইসলাম।
জামায়াতের প্রার্থী গোলাম রব্বানী বলেন, ‘বিএনপির চেয়ারপারসনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা আগেও করেছি। এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।’
গাবতলী উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোরশেদ মিল্টন বলেন, দীর্ঘ প্রায় দেড় যুগ ভোট দিতে পারেননি ভোটাররা। গণতন্ত্রের জন্য দলের চেয়ারপারসন প্রার্থী হওয়ায় সাধারণ ভোটাররা উচ্ছ্বাস–আবেগে ভাসছেন।