শরীরের অ্যালার্জির মতো চোখেও অ্যালার্জি হয়। অ্যালার্জি চোখের একটি অতিপরিচিত রোগ। চোখের অ্যালার্জি মৃদু থেকে গুরুতর হতে পারে। এই রোগ শিশু বয়স থেকে বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত যে কোনো বয়সে হতে পারে। এই রোগের উপসর্গ সাধারণত চোখ চুলকানো, পানি পড়া, আলোভীতি, চোখ লাল হওয়া ইত্যাদি।
প্রাথমিক অবস্থায় দৃষ্টিশক্তির ব্যাঘাত না ঘটলেও উপসর্গগুলো অনেক কষ্টের কারণ হয়। এই রোগের উপসর্গ ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে কমবেশি হয়। দীর্ঘকাল স্থায়ী রোগের ক্ষেত্রে গুরুতর ধরনের জটিলতা হতে পারে। যেমন: দৃষ্টিশক্তির ব্যাঘাত, নেত্রস্বচ্ছের অস্বচ্ছতা, উচ্চ চোখের চাপ এবং চোখের পাতার বিকৃতি।
অ্যালার্জির কারণ
পরিবেশের উপাদানই মূলত চোখের অ্যালার্জির প্রধান কারণ। তবে বংশানুক্রমের প্রভাব অবশ্য রয়েছে। যার কারণে একই পরিবেশে অবস্থানের ফলেও কেউ আক্রান্ত হচ্ছেন, আবার কেউ আক্রান্ত হচ্ছেন না। যার সংস্পর্শে এলে চোখে এ অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়, তাকে বলে অ্যালার্জেন। প্রকৃতিতে প্রায় আটশ রকমের অ্যালার্জেন বিদ্যমান। অ্যালার্জেন সাধারণত দুই ধরনের– বহিরাগত এবং অভ্যন্তরীণ। বহিরাগত অ্যালার্জেনই অ্যালার্জির প্রধান কারণ। অভ্যন্তরীণ অ্যালার্জেনের মধ্যে রয়েছে- ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক এবং পরজীবীর সংক্রমণ। বহিরাগত অ্যালার্জেন সাধারণত চার রকমের হয়। যেসব অ্যালার্জেন নিঃশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে তার মধ্যে রয়েছে– ফুল বা ঘাসের রেণু, বাসা বা রাস্তার ধুলাবালি, বিভিন্ন জন্তুর উচ্ছিষ্ট ইত্যাদি। যেসব অ্যালার্জেন খাবারের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে তার মধ্যে রয়েছে– গরুর মাংস, হাঁসের ডিম, ইলিশ মাছ, চিংড়ি মাছ, বেগুন ইত্যাদি। যেসব ওষুধের মাধ্যমে চোখে অ্যালার্জি হয় তার মধ্যে রয়েছে– জেন্টামাইসিন ও নিউমাইসিন জাতীয় ওষুধ। এ ছাড়া চোখের সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য অনেকে কসমেটিকস এবং কাজল ব্যবহার করেন। এর জন্যও চোখে অ্যালার্জির মতো একটি বিরক্তিকর রোগ হয়। অনেক কীটপতঙ্গের কামড়েও চোখে অ্যালার্জি হতে পারে। অতি ঠান্ডা ও অতি গরমেও অনেকের অ্যালার্জি হতে দেখা যায়।
সবচেয়ে বেশি যে অ্যালার্জির সঙ্গে আমরা পরিচিত তার নাম ঋতুভিত্তিক অ্যালার্জিজনিত কনজানটিভার প্রদাহ (Seasonal allergic conjunctivitis)। সাধারণত বসন্তকালে এর প্রভাব দেখা যায়। এটি সাধারণত কম জটিল হয়। চোখের চুলকানির সঙ্গে নাক দিয়ে পানি পড়া এবং কিছু কাশিও হতে পারে। বসন্তকাল শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনা আপনি উপসর্গের উপশম হয়। সার্বক্ষণিক অ্যালার্জিজনিত কনজানটিভার প্রদাহ বছরের সব সময়ই থাকে। কিন্তু উপসর্গের কমবেশি হয়। এটোপিক কেরাটোকনজানটিভাইটিস সাধারণত চর্মের প্রদাহ, অ্যাকজিমা এবং হাঁপানি রোগের সঙ্গে জড়িত। এই রোগের
জটিলতা অনেক বেশি। এই রোগের ফলে নেত্র স্বচ্ছের অস্বচ্ছতা এবং ছানি রোগ হতে পারে, যা অন্ধত্বের অন্যতম কারণ। ভারনাল কেরাটোকনজানটিভাইটিস সাধারণত শিশু ও কিশোর বয়সে হয়ে থাকে এবং বালকরাই বেশি আক্রান্ত হয়। চৌদ্দ বছর বয়সের পরে ধীরে ধীরে উপসর্গের উপশম হয়। কিন্তু আক্রান্ত অবস্থায় সময়মতো চিকিৎসা না হলে স্থায়ী অ্যামব্লায়োপিয়া হতে পারে, যার কারণে দৃষ্টিশক্তি আর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে না। শিশুর চোখে অ্যালার্জি হলে একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে থাকা উচিত। অনেক সময় দেখা যায়, হাতুড়ে চিকিৎসক বা অনভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে দীর্ঘ সময় ধরে স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করে আসছেন। এতে করে চোখে উচ্চ চাপ (গ্লুকোমা) সৃষ্টি হয়, যা স্থায়ী অন্ধত্বের আরেকটি কারণ। তাই কোনো ক্রমেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা উচিত নয়। চিকিৎসা ও প্রতিকার– অ্যালার্জির চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রতিকারই মুখ্য। বিভিন্ন জনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম অ্যালার্জেন দায়ী। ধরা যাক, একজনের গরুর মাংস খেলে অ্যালার্জি হচ্ছে। আরেকজনের হচ্ছে ইলিশ মাছ খেলে। তাই ভুক্তভোগীকেই বের করতে হবে কীসে অ্যালার্জি হচ্ছে। সেই অনুযায়ী দায়ী উপাদান বাদ দিতে হবে। ধুলাবালি থেকে রক্ষার্থে সানগ্লাস ব্যবহার করতে হবে।
[চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও কনসালট্যান্ট।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর এই র গ র স ধ রণত উপসর গ অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
মিরপুর দোকানে ঢুকে যুবদল নেতাকে গুলি করে হত্যা
রাজধানীর মিরপুরে দোকানে ঢুকে পল্লবী থানা যুবদলের সদস্যসচিব গোলাম কিবরিয়া (৪৭)কে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। আজ সোমবার সন্ধ্যায় মহানগরের মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনের সি ব্লকে এই ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্র জানায়, আজ সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে গোলাম কিবরিয়া মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনের সি ব্লকে একটি দোকানে বসেছিলেন। এ সময় কয়েকজন দুর্বৃত্ত দোকানে ঢুকে তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। দুর্বৃত্তদের মাথায় হেলমেট ও মুখোশ ছিল। একাধিক গুলি লেগে কিবরিয়া লুটিয়ে পড়েন। রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে শেরে বাংলা নগরে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়।
আজ সন্ধ্যায় যোগাযোগ করা হলে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে কর্তব্যরত ওয়ার্ড মাস্টার আবুল বাশার প্রথম আলোকে বলেন, সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার দিকে স্বজনেরা রক্তাক্ত অবস্থায় গোলাম কিবরিয়াকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা করে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কিবরিয়াকে গুলি করার ঘটনায় একজন আটক করা হয়েছে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। রাস্তার ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে হত্যাকারীদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে। তাৎক্ষণিকভাবে হত্যাকাণ্ডের কোনো কারণ জানা যায়নি।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক প্রথম আলোকে বলেন, গোলাম কিবরিয়া পল্লবী থানা যুবদলের সদস্যসচিব ছিলেন। তিনি রাজনীতির পাশাপাশি ছোটখাটো ব্যবসা করতেন। তাঁর কোনো শত্রু ছিল না। তাঁর গায়ে ৯টি গুলি লেগেছে। তিনি স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে মিরপুর সাড়ে ১১-তে ফলপট্টি সংলগ্ন ভাড়া বাসায় থাকতেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের মতলবে।