ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের সবচেয়ে বড় শহর শ্রীনগরের ঝিলাম নদীর তীরবর্তী একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা ফতেহ কদলে। ৬২ বছর বয়সী নারী হাজিরা সেখানকার বাসিন্দা। গত শনিবার একটি সরকারি চালের দোকানের সিমেন্টের মেঝেতে তাঁকে বসে থাকতে দেখা গেল। তিনি তাঁর কাঁধে বাদামি রঙের একটি সুতির স্কার্ফ জড়িয়ে নিচ্ছিলেন। হাজিরার চেহারায় দুশ্চিন্তার ছাপ, তাঁর ঠোঁটের ওপরের অংশে ঘাম জমে ছিল। হঠাৎই তিনি দোকানের কর্মীকে বলে ওঠেন ‘আপনি কি একটু তাড়াতাড়ি করতে পারেন?’

হাজিরা প্রতি মাসে নিজের বায়োমেট্রিক তথ্য জমা দিতে এখানে আসেন। সরকারি বরাদ্দের শস্য পেতে হলে এ তথ্য দেওয়াটা বাধ্যতামূলক। তাঁর চার সদস্যের পরিবার এ খাদ্যশস্যের ওপর নির্ভরশীল।

তবে এবারের পরিস্থিতি ছিল একেবারেই আলাদা। কারণ, ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের বাসিন্দাদের জন্য আগের কয়েকটি দিন ছিল নজিরবিহীন। আকাশে ড্রোন ওড়াউড়ি করছিল, বিমানবন্দর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছিল, সীমান্তে গোলাগুলিতে মানুষ প্রাণ হারাচ্ছিলেন এবং সম্ভাব্য পূর্ণমাত্রার যুদ্ধের জন্য পুরো এলাকা যেন প্রস্তুতি নিচ্ছিল।

হাঁটুর ব্যথায় কুঁকড়ে ওঠা হাজিরা দোকানকর্মীকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘তিনি আমাকে লাইনে দাঁড় করিয়ে রেখেছিলেন; কিন্তু চারপাশে অনিশ্চয়তা। আমি শুধু আমার চালের ভাগটা নিতে চাই, যেন তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে পারি। যুদ্ধ আসন্ন।’

তবে ওই দিন সন্ধ্যায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দেন, তিনি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতায় সফল হয়েছেন। আর সে ঘোষণাটি শোনার পর স্বস্তিতে শ্বাস নেন হাজিরা।

গত কয়েক দিনে কাশ্মীরের হাজারো মানুষ ভারত ও পাকিস্তানের গোলাগুলিতে পড়ার আতঙ্কে ছিলেন। প্রতিবেশী দুই দেশ যখন একে অপরের দিকে ড্রোন পাঠাচ্ছিল, ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ছিল, তখন নিয়ন্ত্রণরেখার কাছাকাছি বসবাসকারী কাশ্মীরি জনগণ দুই দেশের পাল্টাপাল্টি গোলাগুলির ঘটনার সাক্ষী হয়েছেন। এমন মাত্রায় গোলাগুলির ঘটনা তাঁরা দেখেছেন, যা কয়েক দশকে সেখানে দেখা যায়নি।

লাজুক হাসি দিয়ে তিনি বলেন, ‘এ জন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি।’ সম্ভবত তিনি বুঝেছেন, যুদ্ধের মতো পরিস্থিতি তৈরি হলে আর্থিক সংকট সামাল দেওয়ার ক্ষমতা তাঁর হতো না।

গত রোববার সকালে ট্রাম্প আরও এক ধাপ এগিয়ে নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে বলেন, কাশ্মীর ইস্যুতে দীর্ঘদিনের বিরোধ মেটাতে তিনি ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে কাজ করার চেষ্টা করবেন। ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশই আংশিকভাবে অঞ্চলটির নিয়ন্ত্রণে থাকলেও তারা এককভাবে এর সম্পূর্ণ মালিকানা দাবি করে আসছে।

দক্ষিণ কাশ্মীরের জম্মু শহরভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাফর চৌধুরী আল–জাজিরাকে বলেন, ট্রাম্পের বক্তব্যে নয়াদিল্লি খুশি হতে পারবে না। কারণ, ভারত দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে, পারমাণবিক শক্তিধর এই দুই প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনার মূল কারণ হলো পাকিস্তান-সমর্থিত ‘সন্ত্রাসবাদ’।

তবে জাফর চৌধুরীর মতে, ট্রাম্পের প্রস্তাব এটাই প্রমাণ করে যে কাশ্মীর ভারত-পাকিস্তান বিরোধের কেন্দ্রবিন্দুতে থেকে গেছে।

ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ায় কাশ্মীরিরা ক্ষীণ আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন। তবে কাশ্মীর ইস্যুতে ট্রাম্পের মধ্যস্থতার প্রস্তাব নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন তাঁরা। শান্তির জন্য দীর্ঘ প্রতীক্ষায় থাকতে থাকতে তাঁদের মনে সন্দেহ দানা বেঁধেছে।

‘এতটা ভয় আগে কখনো লাগেনি’

গত কয়েক দিনে কাশ্মীরের হাজারো মানুষ ভারত ও পাকিস্তানের গোলাগুলিতে আতঙ্কে ছিলেন। প্রতিবেশী দুই দেশ যখন একে অপরের দিকে ড্রোন পাঠাচ্ছিল, ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ছিল, তখন নিয়ন্ত্রণরেখার কাছাকাছি বসবাসরত কাশ্মীরি জনগণ দুই দেশের পাল্টাপাল্টি গোলাগুলির ঘটনার সাক্ষী হয়েছেন। এমন মাত্রায় গোলাগুলির ঘটনা তাঁরা দেখেছেন, যা কয়েক দশকে সেখানে দেখা যায়নি। গোলাগুলিকে কেন্দ্র করে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বহু মানুষ নিজ এলাকা ছাড়তে বাধ্য হন।

১৯৮০-এর দশকের শেষ দিকে ভারত সরকারের বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু হওয়ার পর থেকে চার দশক ধরে সংঘাত যেন কাশ্মীরের জনগণের জীবনের সঙ্গে ছায়ার মতো জড়িয়ে আছে। এরপর ২০১৯ সালে কাশ্মীরের আধা স্বায়ত্তশাসিত মর্যাদা বাতিল করে দেয় নরেন্দ্র মোদির কেন্দ্রীয় সরকার। সে সময় ব্যাপক নিরাপত্তা অভিযান চালিয়ে হাজারো মানুষকে কারাবন্দী করা হয়।

গত রোববার সকালে ট্রাম্প আরও এক ধাপ এগিয়ে নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে বলেন, কাশ্মীর ইস্যুতে দীর্ঘদিনের বিরোধ মেটাতে তিনি ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে কাজ করার চেষ্টা করবেন। ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশই আংশিকভাবে অঞ্চলটির নিয়ন্ত্রণে থাকলেও তারা এককভাবে এর সম্পূর্ণ মালিকানা দাবি করে থাকে।

গত ২২ এপ্রিল পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। এরপর ভারত ও পাকিস্তান একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি কূটনৈতিক পদক্ষেপ ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু করে। পাশাপাশি কাশ্মীরে সক্রিয় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে ধরপাকড় আরও জোরদার করে ভারত সরকার।

পেহেলগাম হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বিদ্রোহীদের বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দিয়েছে ভারত সরকার। পাশাপাশি পুরো কাশ্মীরে বিভিন্ন বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। এসব অভিযানে ২ হাজার ৮০০ জনকে আটক করা হয়। এর মধ্যে ৯০ জনকে জননিরাপত্তা আইনে আটক করা হয়েছে। একই সঙ্গে বহু সাংবাদিককে তলব করেছে পুলিশ এবং অন্তত একজনকে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী মতাদর্শ প্রচারের’ অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ভারতশাসিত কাশ্মীরে শ্রীনগরের উপকণ্ঠে একটি হাসপাতালের ছাদে লাল-সাদা মেডিকেল চিহ্ন আঁকছেন শ্রমিকেরা.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ ল গ ল র ঘটন সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

বাংলাদেশের বিরোধিতাকারীদের আস্ফালন মেনে নেওয়া হবে না: গণতন্ত্র মঞ্চ

সম্প্রতি রাজধানীর শাহবাগে আন্দোলনের সময় দেওয়া কিছু স্লোগান এবং জাতীয় সংগীত থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টার ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চ। তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, স্বাধীনতাসংগ্রাম এবং মহান মুক্তিযুদ্ধকে হেয় করার প্রচেষ্টা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।

আজ মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে এ প্রতিবাদ জানিয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চ। বিবৃতিতে বলা হয়, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলন চলাকালে একটি পক্ষ বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামবিরোধী স্লোগান দিয়েছে। এমনকি প্রকাশ্যে জাতীয় সংগীতের অবমাননা করার ধৃষ্টতা দেখিয়েছে।

গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা বলেন, যারা ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে, তাদের অনুসারী ও পৃষ্ঠপোষকদের বাংলাদেশের জনগণ কখনোই মেনে নেবে না। তাদের আস্ফালন বাংলাদেশের জনগণ সর্বাত্মকভাবে প্রতিহত করবে।

বিবৃতিতে সই করেছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম এবং রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ূম।

আরও পড়ুনরাজু ভাস্কর্যে সমবেত কণ্ঠে গাওয়া হলো জাতীয় সংগীত২০ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাংলাদেশের বিরোধিতাকারীদের আস্ফালন মেনে নেওয়া হবে না: গণতন্ত্র মঞ্চ
  • আ.লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টির শাসন দেখার কিছু নেই: চরমোনাই পীর
  • কৌশলের রাজনীতি বাংলাদেশে মানুষ দেখতে চায় না: চরমোনাই পীর
  • হাতিরঝিল ভরাট ও পান্থকুঞ্জ ধ্বংস করে উন্নয়ন প্রকল্পের বিরোধিতা করলেন ১৫৭ বিশিষ্ট নাগরিক
  • বাঁচতে হলে পাকিস্তানকে সন্ত্রাস নির্মূল করতে হবে: মোদি
  • আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আড়ালে দেশে সাজানো নাটকীয়তা চলছে: মির্জা আব্বাস
  • ঈদুল আজহা ও হজ যখন প্রতিবাদের ক্ষেত্র
  • আওয়ামী লীগ কচুপাতার পানি না: কাদের সিদ্দিকী
  • আওয়ামী লীগ কার্যক্রম চালালে শক্ত হাতে দমন করা হবে: ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি