বিকল্প শক্তির উত্থানে নভেম্বরের শেষে ‘জাতীয় কনভেনশন’ করবে বাম ঘরানার দলগুলো
Published: 15th, November 2025 GMT
বিকল্প রাজনৈতিক শক্তির উত্থানে ‘জাতীয় কনভেনশন’ করার ঘোষণা দিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট ও বাংলাদেশ জাসদসহ বাম ঘরানার গণতান্ত্রিক-প্রগতিশীল দলগুলো।
মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ২০২৪ সালের গণ–অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এই কনভেনশন করা হবে।
আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) কার্যালয়ের মৈত্রী মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ।
বাম ঘরানার রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্যোগে বিকল্প রাজনৈতিক শক্তির বিস্তারিত কর্মসূচি প্রণয়ন এবং রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে ২৯ নভেম্বর রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয় কনভেনশনটি অনুষ্ঠিত হবে।
বাসদ নেতা বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, সব দেশপ্রেমিক-গণতান্ত্রিক-প্রগতিশীল-বাম রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তিবর্গ, বিভিন্ন জাতিসত্তা, নারী সংগঠন, শ্রম-কর্ম-পেশার সংগঠনগুলো, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সবার মিলিত শক্তিতে আমরা জনগণের বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছি। তিনি বলেন, ‘১৯৭১–এর মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ২০২৪–এর গণ–অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠায় জনগণের বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় কনভেনশন। দেশের চলমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় আন্দোলন-সংগ্রাম এবং আসন্ন নির্বাচনে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে এ কনভেনশনের আয়োজন করা হচ্ছে।’
সংবাদ সম্মেলনে দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলোর সমালোচনা করে বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, ‘দীর্ঘ পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে দেশে পর্যায়ক্রমে নৌকা-ধানের শীষ-দাঁড়িপাল্লা-লাঙ্গল ইত্যাদি মার্কার সরকার এবং সামরিক সরকারের অপশাসন ও দুঃশাসন চলেছে। দেশ নির্যাতিত, রুগ্ণ, গভীর সংকট ও ধ্বংসের মুখোমুখি। মানুষ মুক্তি চায়।’
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন সিপিবির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সিপিবি সভাপতি সাজ্জাদ জহির চন্দন, সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাংলাদেশ জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য মুশতাক হোসেন প্রমুখ।
বিকল্প রাজনৈতিক শক্তির প্রস্তাবনাসংবাদ সম্মেলনে বাম গণতান্ত্রিক জোট ও বাংলাদেশ জাসদের পক্ষে জনগণের বিকল্প রাজনৈতিক শক্তির ৮টি প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে—মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও মূল্যবোধ রক্ষা, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তির ষড়যন্ত্র প্রতিরোধ করা; জুলাই গণ–অভ্যুত্থানকে ব্যর্থ হতে না দেওয়া, ফ্যাসিবাদী শাসনামলে সংগঠিত খুন গুম লুণ্ঠন ও সম্পদ পাচারের উপযুক্ত বিচার করা, নব্য-ফ্যাসিবাদ ও উগ্র ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান প্রতিরোধ; গণতন্ত্রের অভিযাত্রায় জাতীয় সংসদের সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান ও নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর, সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রাখা; শোষণ, লুণ্ঠন, গুম, খুন, দখলবাজি, চাঁদাবাজি, দুর্নীতির বিপরীতে সন্ত্রাস অনাচার মুক্ত জনবান্ধব শাসন কায়েম।
প্রস্তাবনায় আরও রয়েছে কর্মসংস্থানভিত্তিক উন্নয়নকৌশল অবলম্বন, আধুনিক সর্বজনীন একমুখী শিক্ষাব্যবস্থা আর দরিদ্রবান্ধব জনস্বাস্থ্যভিত্তিক সর্বজনীন স্বাস্থ্যব্যবস্থা বাস্তবায়ন; বিদেশি শোষণের নিয়ন্ত্রণমুক্ত দেশ গড়ে তোলা। জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণ করে সমমর্যাদার ভিত্তিতে সব ধরনের বৈষম্যমুক্ত সমাজ-অর্থনীতি-রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলা; আন্তর্জাতিক সম্পর্কের নীতি মেনে চলা সাম্রাজ্যবাদী ও আধিপত্যবিরোধী আগ্রাসন লুণ্ঠনের বিরুদ্ধে গণ-আন্দোলন গড়ে তোলা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গণত ন ত র ক কনভ নশন দলগ ল
এছাড়াও পড়ুন:
‘সরকার জনগণের সঙ্গে প্রতারণা ও বিশ্বাসঘাতকতা করছে’
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, ‘‘সরকার জনগণের সঙ্গে প্রতারণা এবং বিশ্বাসঘাতকতা করছে। তাদের সিদ্ধান্তে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন নেই।”
তিনি বলেন, “আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। নিরাপত্তা উপদেষ্টার সাম্প্রতিক ভারত সফরে কী আলোচনা হয়েছে তা সরকারকে সংবাদ সম্মেলন করে জাতিকে পরিষ্কার করতে হবে।”
আরো পড়ুন:
নির্বাচনের দিন গণভোটের সিদ্ধান্তে ‘গণআকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়নি’: জামায়াত
বৃহস্পতিবার সারা দেশে সড়কে থাকবে জামায়াতসহ ৮ দল
শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়ন জামায়াতের উদ্যোগে আয়োজিত নির্বাচনী জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জামায়াত নেতা তাহের বলেন, “জীবন ও রক্ত দিয়ে বাংলার মানুষ ভারতের আধিপত্যবাদকে প্রতিহত করেছে। বশ্যতা আর মেনে নেবে না। সরকার যদি ভারতের অন্যায় আবদার ও সিদ্ধান্তের কাছে নতি স্বীকার করে, তার পরিণতি শুভ হবে না।”
নির্বাচনী সংস্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “একটি দল সংস্কার চায় না। তারা পুরনো বস্তাপচা নিয়মে নির্বাচন করতে চাইছে। অন্তর্বর্তী সরকারও সেই ফাঁদে পা দিয়েছে। সংস্কার না হলে শহীদের রক্তের প্রতি বেঈমানি হবে।”
গণভোট প্রসঙ্গে জামায়াতের এই নেতা অভিযোগ করেন, ‘‘সরকার গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন একসঙ্গে করার উদ্যোগ নিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে। দুটি নির্বাচন এক নয়। আলাদা গণভোট হলে অন্তত ৮০ শতাংশ মানুষ সংস্কারের পক্ষে রায় দেবে। এ কারণেই তারা আলাদা গণভোট চায় না।”
ঢাকা/রুবেল/রাজীব