ঢাকার দোহার উপজেলার শাইনপুকুর খরিয়া গ্রামে রাফি করিম খান (২৫) নামের এক তরুণের হাত-পায়ের রগ কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

গত সোমবার রাতে রাফি করিমের হাত-পায়ের রগ কেটে শাইনপুকুর খরিয়া গ্রামের একটি মাঠে ফেলে যায় দুর্বৃত্তরা। স্বজনেরা তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলার একটি হাসপাতালে ও পরে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল রাতে তাঁর মৃত্যু হয়। রাফি করিম শাইনপুকুর খরিয়া গ্রামের মাসুদ করিম খানের একমাত্র ছেলে।

পুলিশ ও নিহত তরুণের স্বজনেরা জানান, সোমবার রাত ১০টার দিকে রাতের খাবার খেয়ে বাড়ির পাশে একটি দোকানে যান রাফি। এরপর আর বাসায় ফেরেননি। রাত একটার দিকে তাঁর মাকে একটি মুঠোফোন থেকে ফোন করে জানানো হয়, শাইনপুকুর মাঠে রাফির নিথর দেহ পড়ে আছে। স্বজনেরা হাত-পায়ের রগ কাটা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নেন। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে ঢাকায় পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল রাত দুইটার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়।

স্থানীয় লোকজনের ধারণা, মাদকসংক্রান্ত ঘটনার জেরে হয়তো তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে এ ঘটনা ঘটতে পারে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, রাফি মা–বাবার একমাত্র ছেলে। বাবা অনেক সম্পত্তির মালিক। বাবার মৃত্যুর পর রাফিই সব দেখভাল করতেন। ওই সম্পত্তি গ্রাস করতে কোনো চক্র এ ঘটনা ঘটিয়েছে কি না, সেটাও খতিয়ে দেখা দরকার।

একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে শোকে নির্বাক মা আনোয়ারা খানম। ছেলের মৃত্যুর পর থেকে আহাজারি করছেন। তিনি বলেন, ‘প্রায় সাত বছর আগে স্বামীকে হারিয়ে তিন মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে সংসার করছিলাম। আমার ছেলেকে যারা এভাবে মেরেছে, তাদের বিচার চাই।’

রাফির ছোট বোন মুন আক্তার একটি কলেজের স্নাতক (সম্মান) তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। ভাই হত্যার বিচার চেয়ে তিনি বলেন, তাঁর ভাইকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার জন্য হাত-পায়ের রগ কেটে দেওয়া হয়েছে। কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে, রাফি হাসপাতালে একটি অডিও বার্তায় সব বলে গেছেন বলে জানান। পুলিশ বলেছে তদন্তের স্বার্থে এখনই প্রকাশ না করতে।

দোহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম বলেন, ময়নাতদন্ত শেষে লাশ হয়তো বিকেলে ফিরবে। দাফন শেষে পরিবারের লোকজন থানায় এসে এজাহার দেবেন বলে জানিয়েছেন। হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের বিষয়ে পুলিশ কাজ করছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হ ত প য় র রগ ক ট শ ইনপ ক র অবস থ য় র একট

এছাড়াও পড়ুন:

মানিকগঞ্জে তাজিয়া মিছিল দেখতে সড়কের পাশে মানুষের ভিড়

মানিকগঞ্জে গড়পাড়া ইমামবাড়ি থেকে জেলা শহরের সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ পর্যন্ত প্রায় আট কিলোমিটার সড়কের দুই পাশে ছিল মানুষের ভিড়।

আজ রোববার পবিত্র মহররমের তাজিয়া মিছিল দেখতে তাঁরা এই দীর্ঘ পথে সারিবদ্ধ হয়ে অবস্থান করেন। সড়কের পাশে ভবনগুলোর ছাদেও মানুষের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।

যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে মানিকগঞ্জে শত বছরের প্রাচীন গড়পাড়া ইমামবাড়ি অন্যান্য বারের মতো এবারও পবিত্র আশুরা পালন করছে। এ উপলক্ষে ১০ দিন ব্যাপী ব্যাপক কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়।

আজ বেলা সাড়ে তিনটার দিকে গড়পাড়া ইমামবাড়ি থেকে দেশের অন্যতম বড় তাজিয়া মিছিল বের হয়। হজরত ইমাম হোসেনের শেষ মঞ্জিলের নকশা ‘তাজিয়া’, তাঁর নিজের ব্যবহার করা ঘোড়া ‘দুলদুল’ এবং কারবালা যুদ্ধের স্মৃতি বহনকারী নিশান নিয়ে হাজার হাজার ইমামভক্তরা এই শোকমিছিলে অংশ নেন। বিগত সময়ের মতো এবারও শোকমিছিলে ‘হায় হোসেন, হায় ইমাম’ শোকধ্বনি গাইবেন ইমামভক্তরা।

এ শোকমিছিল মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড হয়ে জেলা শহরে সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের মাঠে গিয়ে শেষ হয়। এ মিছিল দেখতে সহস্রাধিক মানুষ সড়কের দুই পাশে ভিড় করেন।

মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় তাজিয়া মিছিল দেখতে আসা শামীম হোসেন বলেন, ‘তাজিয়া মিছিলে কারবালার ময়দানে শোকাবহ ঘটনার কথা মনে করিয়ে দেয়। সেই সমবেদনা জানাতে এখানে এসেছি।’

মিছিল শেষে আজ সন্ধ্যায় সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ মাঠে ইফতার ও মাগরিবের নামাজের পর আশুরার গুরুত্ব, তাৎপর্য ও মর্যাদা সম্পর্কে এক সভা হয়। এতে গড়পাড়া ইমামবাড়ি দরবার শরিফের প্রধান খাদেম এবং বাংলাদেশ স্পোর্টস জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের (ভিএসজেএ) সভাপতি শাহ আরিফুর রহমান সভাপতিত্ব করেন। সভায় হজরত ইমাম হোসেনের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা হয়। সভায় হজরত ইমাম হোসেনের আত্মার প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা হবে। মানিকগঞ্জের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এ শোকসভায় কারবালার মহান শহীদদের মহান আত্মত্যাগ সম্পর্কে আলোচনা করেন। আলোচনা সভা শেষে ইসলাম ও বিশ্ব শান্তির উদ্দেশ্যে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। গড়পাড়া ইমামবাড়ির অন্যতম খাদেম শাহ্ শাহজাদা রহমান বাঁধন এ পর্ব পরিচালনা করেন।

এদিকে শোকমিছিল উপলক্ষে গড়পাড়া ইমামবাড়ি ও জেলা শহরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সদস্য মোতায়েন করা হয়। মিছিলে সুশৃঙ্খলা রক্ষায় ইমামবাড়ির স্বেচ্ছাসেবকেরা দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া সেনাসদস্যরা সড়কে টহলের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করেন।

এদিকে গড়পাড়া ইমামবাড়ির পাশে তিন দিনব্যাপী মেলা বসেছে। মেলায় গেরস্তালি বিভিন্ন জিনিসপত্র, মনিহারি, লোহা-তামার জিনিসপত্র, শিশুদের খেলনাসহ বিভিন্ন খাবারের পসরা নিয়ে বসেছেন দোকানিরা। আশপাশের বিভিন্ন এলাকার শিশু থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সী মানুষজন মেলায় ভিড় করেন।

শাহ আরিফুর রহমান বলেন, ‘মুসলমানদের কাছে ১০ মহররমের দিন অত্যন্ত শোকের। ইয়াজিদ চেয়েছিল রাজতন্ত্র কায়েম করতে। তবে ইসলাম তথা মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নীতি ও আদর্শের মধ্যে রাজতন্ত্র ছিল না। ইসলাম উদার ও শান্তির ধর্ম। ইমাম হোসেন ও তাঁর মাতামহ মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) সেই নীতি ও আদর্শ অনুযায়ী চলতে বলেছেন। দেখিছেন ইসলাম সত্য ও শান্তির ধর্ম; ইসলাম অসত্য, অন্যায় ও অবিচারের ধর্ম নয়। ইমাম হোসেনের সেই শিক্ষাই আমাদের নেওয়া উচিত।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ