ত্যাগ আর উৎসর্গের আদর্শে মহিমান্বিত পবিত্র ঈদুল আজহা আজ। আরবি মাসের ১০ জিলহজ তারিখে এই ঈদ উদ্যাপিত হয়। যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে রাজধানীসহ সারাদেশে মুসলিম সম্প্রদায় দিনটি উদযাপন করবে। মহান আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের আশায় ঈদের জামাত শেষে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা সামর্থ্য অনুযায়ী পশু কোরবানি করবেন।
ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো.
ঈদুল আজহা মুসলমানদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। যুগ যুগ ধরে এই ঈদ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর হয়ে আসছে। সকালে মুসল্লিরা কাছাকাছি ঈদগাহ বা মসজিদে ঈদুল আজহার দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় করবেন। খতিব নামাজের খুতবায় তুলে ধরবেন কোরবানির তাৎপর্য। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাই একত্রে নামাজ আদায় ও শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।
ঈদের নামাজ শেষে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি করবেন সামর্থ্যবান মুসলমানরা। ঈদুল আজহার সঙ্গে পবিত্র হজের সম্পর্ক রয়েছে। মক্কার অদূরে আরাফাতের ময়দানে সমবেত হওয়ার মধ্য দিয়ে বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলিম সম্প্রদায় হজ পালন করেছেন।
স্থানীয় হিজরি মাস গণনা অনুযায়ী শুক্রবার সৌদি আরবে ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়েছে। সকালে মুজদালিফা থেকে ফিরে হাজিরা মিনায় অবস্থান করে পশু কোরবানিসহ হজের অন্য কার্যাদি সম্পাদন করেছেন। সৌদি আরবের সঙ্গে মিলিয়ে পৃথিবীর বহু দেশ আজ ঈদুল আজহা উদযাপন করছে।
ঈদুল আজহা হজরত ইব্রাহিম (আ.) ও তার পুত্র হজরত ইসমাইলের (আ.) সঙ্গে সম্পর্কিত। হজরত ইব্রাহিম (আ.) স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে পুত্র ইসমাইলকে আল্লাহর উদ্দেশে কোরবানি করতে গিয়েছিলেন। আল্লাহর পক্ষ থেকে এই আদেশ ছিল হজরত ইব্রাহিমের জন্য পরীক্ষা। তিনি পুত্রকে আল্লাহর নির্দেশে জবাই করার সব প্রস্তুতি নিয়ে সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ইসলামে বর্ণিত আছে, নিজের চোখ বেঁধে পুত্র ইসমাইলকে ভেবে যখন জবেহ সম্পন্ন করেন, তখন চোখ খুলে দেখেন ইসমাইলের পরিবর্তে পশু কোরবানি হয়েছে, যা এসেছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে।
সেই ঐতিহাসিক ঘটনার স্মৃতি ধারণ করেই হজরত ইব্রাহিমের (আ.) সুন্নত হিসেবে পশু জবাইয়ের মধ্য দিয়ে কোরবানির বিধান এসেছে ইসলামি শরিয়তে। সেই মোতাবেক প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমানের জন্য পশু কোরবানি করা ওয়াজিব। ইসলামে কোরবানি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।
মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশে আজ দেশের প্রতিটি শহর, গ্রাম ও পাড়া-মহল্লায় পশু কোরবানির দৃশ্য দেখা যাবে। রাস্তাঘাটে দেখা যাবে ঈদ আনন্দে ভাসমান মানুষের মুখ। এদিকে টেলিভিশন চ্যানেলগুলো প্রচার করবে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা, আর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পরিবেশন করা হবে উন্নতমানের খাবার।
এবার ঈদের ছুটি সরকারি কর্মীদের জন্য চলবে ১৪ জুন পর্যন্ত— সব মিলিয়ে এবারের ঈদে মিলেছে ১০ দিনের ছুটি। প্রসঙ্গত, ঈদে শহর থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষ গ্রামের বাড়িতে গেছেন প্রিয়জনের সঙ্গে উৎসব উদযাপন করতে। ফলে রাজধানী এখন কিছুটা ফাঁকা।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ঈদ ল আজহ ঈদ ল আজহ ম সলম ন ক রব ন করব ন উদয প
এছাড়াও পড়ুন:
ঈদের দিনে ছয় তারকা, এক পতাকার নিচে
ঈদ মোবারক প্রিয় হামজা, জামাল, তারিক, কাজেম, ফাহামিদুল ও শমিত।
এ ঈদ শুধু উৎসব নয়—এ এক গৌরবের অনুভব। আপনাদের প্রত্যেকের জন্য এ ঈদ হয়ে উঠেছে দেশ, ফুটবল আর স্বপ্নের এক অপরূপ সংমিশ্রণ।
ভাবা যায়! কিছুদিন আগেও আপনারা কেউ ইংল্যান্ডে, কেউ ইতালিতে, কেউ কানাডার নিজেদের জীবনে ব্যস্ত। তখন কে জানত, বাংলাদেশ নামের ছোট্ট একটি দেশের ফুটবল ইতিহাসে আপনারা একদিন লিখে যাবেন নতুন অধ্যায়! হয়তো আপনাদের স্বপ্নে বাংলাদেশ ছিল, হয়তো ছিল না। কিন্তু আজ আপনারা দাঁড়িয়ে আছেন এই দেশের ফুটবলে সবচেয়ে প্রতীক্ষিত লক্ষ্য সামনে রেখে—এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলার স্বপ্ন পূরণে।
২০১৩ সালে জামাল ভূঁইয়ার হাত ধরে শুরু। ডেনমার্কে জন্ম, ইউরোপীয় ঘরানায় বেড়ে ওঠা জামাল হয়ে ওঠেন এক পথ প্রদর্শক। এরপর ধাপে ধাপে তারিক কাজী (ফিনল্যান্ড), কাজেম শাহ (কানাডা), হামজা চৌধুরী (ইংল্যান্ড) , ফাহামিদুল ইসলাম (ইতালি) এবং সর্বশেষ শমিত সোম (কানাডা) এসে মিলিত হয়েছেন জাতীয় দলে।
এ যেন ছয় ছয়টি নদী, যার উৎস ভিন্ন হলেও তাঁরা এসে মিশেছে বাংলার ফুটবল নামক মোহনায়।
এই ছয়জনের মধ্যে হামজা নিজেকে এরই মধ্যে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে লেস্টার সিটিতে খেলেছেন। গোটা বিশ্ব ফুটবল তাঁকে চেনে। অন্যরাও ভালো ফুটবলার। শুধু ভালো ফুটবলার বলেই নয়, তাঁরা হয়ে উঠেছেন এক নতুন আশার প্রতীক। ভিন্ন ভিন্ন দেশের লিগে খেলা, উন্নত প্রশিক্ষণ, আধুনিক কোচিংয়ের অভিজ্ঞতা আর ফিটনেস নিয়ে তাঁরা বাংলাদেশ দলে এনে দিয়েছে এক নতুন ছন্দ ও আত্মবিশ্বাস। জাতীয় দলের অনেক দিনের জড়তা, স্থবিরতা ভেঙে এসেছে চঞ্চলতা, সজীবতা। জাতীয় দলের কাছে বেড়েছে সমর্থকদের প্রত্যাশা।
২০২৭ সালের এশিয়ান কাপের মূলপর্বে খেলা—এটিই এখন শুধু স্বপ্ন। তার জন্য দরকার গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়া। শুরুটা হয়েছে গত ২৫ মার্চ ভারতের সঙ্গে ড্র দিয়ে তাদেরই মাঠে, তবে সে ম্যাচে অন্তত দুই-তিন গোলে জেতার সুযোগ এসেছিল বাংলাদেশের সামনে। হামজার পারফরম্যান্স নজর কেড়েছে দেশের বাইরেও। ৪ জুন ভুটানের বিপক্ষে ঢাকার জাতীয় স্টেডিয়ামে ফিফা প্রীতি ম্যাচে জয় এসেছে ২-০ গোলে, যেখানে ইতালিফেরত তরুণ ফাহামিদুল ছিলেন মূল একাদশে।
এখন সামনে ১০ জুন, সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে লড়াই। যে ম্যাচে জয় মানেই ইতিহাসের দিকে আরেক ধাপ এগিয়ে যাওয়া।
আর এই সময়ে এসে হাজির হয়েছে ঈদ। সবকিছুর ঊর্ধ্বে এক সাংস্কৃতিক অনুভূতি, সম্প্রীতির উৎসব। এমন ঈদ আপনারা আগেও উদ্যাপন করেছেন, কিন্তু এই ঈদ একেবারেই আলাদা। এই ঈদ—দেশের মাটিতে, দেশের পতাকা গায়ে জড়িয়ে। দেশের স্বপ্ন বহন করে মাঠের বাইরে একটুখানি প্রশান্তির উৎসবও।
আপনাদের হয়তো কেউ কেউ দেশের মাটিতে প্রথমবার ঈদ করছেন। অনেকের সঙ্গে পরিবার রয়েছে, অনেকের সঙ্গী সতীর্থরাই পরিবার হয়ে উঠেছে। জাতীয় দলের ক্যাম্প এখন ঢাকার একটি পাঁচতারকা হোটেলে। তবু বাইরে ঈদের রোদের উজ্জ্বলতা, ভক্তদের ভালোবাসা, সাংবাদিকদের আগ্রহ—সব মিলিয়ে সেই পুরোনো দেশি ঈদের মতোই একটা অনুভব।
আপনারা ফুটবলার, তাই ঈদের দিনেও ‘কোচের ছক’ ভুলে যাওয়ার সুযোগ নেই। অনুশীলন, ডায়েট, বিশ্রাম—সবই চালু আছে। ঈদ মানে এখানে ছুটি নয়, বরং খানিকটা ভিন্ন অনুভবে ডুবে গিয়ে দায়িত্বকে আরও গভীর করে তোলা।
এত দূর আসার পেছনে অবশ্যই বড় ভূমিকা আপনাদের নিজেদের। কিন্তু তার চেয়েও বড় কথা—আপনারা এই মাটিকে গ্রহণ করেছেন, বাংলাদেশকে ভালোবেসেছেন। আপনারা বাংলা ভাষাও আয়ত্ত করে ফেলেছেন। আপনাদের মুখে এখন ‘আমরা’ শব্দটা অনেক বেশি বিশ্বাসযোগ্য লাগে। তিন দিন আগে ঢাকায় পা রাখা শমিত গতকাল জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুশীলনে ফাঁকে বারবারই যখন বলেন, ‘আমরা ম্যাচটা জিতব’, তখন বোঝা যায়—এই ‘আমরা’ শুধু কাগজে-কলমে নয়, হৃদয়ে ধারণ করা এক পরিচয়।
ভবিষ্যৎ কী হবে কেউ জানে না, কিন্তু এই মুহূর্তের বাংলাদেশ ফুটবলে আপনারা প্রতিটি মানুষকে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। আপনাদের দেখে প্রবাসে থাকা আরও তরুণ এখন জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন দেখছে। হয়তো কয়েক বছরের মধ্যে আরও নতুন ‘হামজা’ কিংবা ‘শমিত’কে আবিষ্কার করে ফেলবে বাংলাদেশের ফুটবল। যাঁরা হয়ে উঠবেন লালসবুজকে বহুদূর নিয়ে যাওয়ার বাহক।
এই ঈদ তাই শুধু উৎসব নয়। এটা এক অভিন্নহৃদয় হয়ে ওঠার মুহূর্ত, যেখানে প্রবাস আর দেশ একসূত্রে বাঁধা পড়ে শুধু একটি স্বপ্নে। এক পতাকার নিচে, এক পতাকার জন্য।
১০ জুনের ম্যাচের জন্য রইল নিঃশর্ত সমর্থন। আপনাদের পায়ে যদি থাকে দেশের স্বপ্ন, তবে এই দেশের মানুষ হৃদয়ে রাখবে আপনাদের ভালোবাসা।
ঈদ মোবারক, ছয় তারকা!
ঈদ মোবারক, বাংলাদেশ!