নেতানিয়াহু কেন ইরানে আক্রমণের ‘ঝুঁকি’ নিলেন
Published: 15th, June 2025 GMT
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকার যেদিন অল্পের জন্য ভেঙে পড়া থেকে রক্ষা পেল, সেদিনই তাঁর নেতৃত্বে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো নিশানা করে নজিরবিহীন সামরিক হামলা চালাল।
ওই দিন ইসরায়েলি পার্লামেন্টে একটি বিতর্ক চলছিল। কট্টর ধর্মাচারী ইহুদি (আলট্রা-অর্থোডক্স) নাগরিকদের জন্যও সামরিক কার্যক্রমে অংশ নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হবে কি না, সেটিই ছিল বিতর্কের বিষয়। এই বিতর্কে সরকার সংকটে পড়ে গিয়েছিল।
এই সময়েই ইসরায়েল একাধিক হামলা চালায়। ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা ও পরমাণুবিজ্ঞানীরা ছিল হামলার লক্ষ্য।
এর ধারাবাহিকতায় আজকের সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হয়েছে। নেতানিয়াহু এর নাম দিয়েছেন ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ বা ‘জাগ্রত সিংহ অভিযান’। তিনি নামটি বেছে নিয়েছেন ওল্ড টেস্টামেন্টের একটি শ্লোক থেকে, যেখানে ‘নবী’ বালাম বলেন, ‘ইসরায়েল হলো এমন এক সিংহ, যে বিজয় নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত বিশ্রাম নেয় না।’
এই ধর্মীয় শব্দবন্ধের ব্যবহার কোনো কাকতাল নয়। ইসরায়েলের রাজনীতিকেরা বহুদিন ধরেই যুদ্ধকে একধরনের পবিত্র দায়িত্ব হিসেবে উপস্থাপন করতে ধর্মীয় ও ভাবগম্ভীর শব্দ ব্যবহার করে আসছেন। নেতানিয়াহুও এর মধ্য দিয়ে কেবল সহিংসতাকে বৈধতা দিচ্ছেন না; বরং সেটিকে ‘ঈশ্বরের উদ্দেশ্য’ হিসেবে উপস্থাপন করছেন।
কিন্তু এই যুদ্ধ শুরু হলো এমন এক সময়ে, যখন ইসরায়েল ভেতরে ও বাইরে নানা চাপের মুখে পড়েছে। সেনাবাহিনীতে লোকবলের অভাব দেখা দিয়েছে।
আরও পড়ুনইসরায়েল ঠিক এখনই কেন ইরানে হামলা করল১২ ঘণ্টা আগেকারণ, সাধারণ ধর্মনিরপেক্ষ নাগরিকদের ওপর যুদ্ধের পুরো বোঝা চাপছে, অথচ আলট্রা-অর্থোডক্স ইহুদিরা এর দায় নিচ্ছেন না। এ নিয়ে জনগণের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে।
অন্যদিকে হামাসের সঙ্গে জিম্মি বিনিময় বা ইসরায়েলি বন্দীদের ছাড়িয়ে আনার আলোচনা থমকে আছে।
আর এখন ইরানের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ার পর মনে হচ্ছে গাজায় চলমান সহিংসতা বন্ধ করা বা ইসরায়েলি বন্দীদের উদ্ধারের চেষ্টা পুরোপুরি পরিত্যক্ত হয়ে গেছে।
ইসরায়েল এখন আন্তর্জাতিকভাবে ক্রমেই একঘরে হয়ে পড়ছে। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে।
তবু ইসরায়েল সর্বাত্মক যুদ্ধের পথে এগিয়ে গেছে। নেতানিয়াহু ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছেন এই বিশ্বাসে যে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এটিকে ইসরায়েলের সাহসী পদক্ষেপ হিসেবে দেখাবে।
আরও পড়ুনইরানে ইসরায়েলের হামলা: ট্রাম্প কি পাগল হয়ে গেছেন১৩ জুন ২০২৫বাস্তবতা হলো, এই অভিযানের কথা যুক্তরাষ্ট্র জানত এবং তারা ইসরায়েলকে থামানোর কোনো চেষ্টা করেনি। বরং ওয়াশিংটন এই সামরিক উত্তেজনাকে ইরানের সঙ্গে নিজেদের কূটনৈতিক দর–কষাকষির একটি কৌশল হিসেবে দেখছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও প্রকাশ্যে ‘উত্তেজনা কমানো দরকার’ বললেও, ইসরায়েলের কাছে মার্কিন অস্ত্র ও গোয়েন্দা তথ্য পৌঁছানো অব্যাহত রয়েছে।
ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি বার্তা দিয়ে স্পষ্ট করে দিয়েছেন, ইরান যদি ছাড় না দেয়, তাহলে তারা আরও হামলার মুখে পড়বে।
ইসরায়েলের দৃষ্টিতে এই যুদ্ধ শুধু ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি থামানোর জন্য নয়, এর মূল লক্ষ্য হলো ইরানকে ভেতর থেকে অস্থির করে দেওয়া।
এই ভাবনা নতুন কিছু নয়। ১৯৯০-এর দশকে ইসরায়েলের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আইজ্যাক রবিন বলেছিলেন, ইরান ইসরায়েলের অস্তিত্বের জন্য হুমকি। তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন, ইরান শুধু অস্ত্র দিয়ে আক্রমণ করতে পারে এমন দেশ নয়, বরং ইরানের ধর্মভিত্তিক সরকার পুরো মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের প্রভাবকে প্রশ্নের মুখে ফেলতে পারে।
কারণ, যদি ইরান পারমাণবিক শক্তি অর্জন করে, তাহলে ইসরায়েল যে চারপাশের দেশগুলোকে ভয় দেখিয়ে নিজের অবস্থান বজায় রাখে, সেটা আর সম্ভব হবে না।
এই যুদ্ধে ইসরায়েল প্রথম দিকেই আঘাত করেছে ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ নেতা ও সামরিক কর্মকর্তাদের ওপর। তারা ইরানের শীর্ষ পরমাণুবিজ্ঞানীদের লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে।
আরও পড়ুনযে ‘ধর্মীয় অনুপ্রেরণায়’ ইরানে হামলা চালাল ইসরায়েল২০ ঘণ্টা আগেনেতানিয়াহু পরিণাম হিসাব না করা বোকার মতো আচরণ করছেন না; তিনি জানেন, ইরানের দিক থেকে প্রতিশোধ আসবেই। তবে হিজবুল্লাহ জানিয়েছে, তারা আগবাড়িয়ে হামলা করবে না।
আর গত অক্টোবরে ইসরায়েল ইরানের প্রতিরক্ষাব্যবস্থায় যে হামলা চালিয়েছিল, তাতে তেল আবিবের মতে ইরানের রক্ষণভাগ দুর্বল হয়ে গেছে এবং এখন ইরানের বিরুদ্ধে বড় কিছু করার জন্য ‘ঐতিহাসিক সুযোগ’ তৈরি হয়েছে।
নেতানিয়াহু জানেন, যুদ্ধ সাধারণত দেশের ভেতরে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলে। বাস্তবেও তা-ই হয়েছে। শুক্রবার সকালেই দেখা গেল, নেতানিয়াহুর প্রধান সমালোচকেরা এবং প্রভাবশালী সব বিরোধীদলীয় নেতা সরকারের পক্ষে একমত হয়ে গেছেন। তবু ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এই যুদ্ধ নিয়ে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
এটি এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে, যা আগে কখনো দেখা যায়নি।
এই যুদ্ধ এমন এক সময়ে শুরু হয়েছে, যখন ইসরায়েল প্রায় দুই বছর একাধিক ফ্রন্টে (যেমন গাজা, লেবানন, পশ্চিম তীর) যুদ্ধ করে চলেছে।
আরও পড়ুনহামলা চালিয়ে ইরানকে যেভাবে পরীক্ষা করছে ইসরায়েল০৭ এপ্রিল ২০২৪এতে হাজার হাজার রিজার্ভ সেনাকে দীর্ঘ সময় সাধারণ জীবনের বাইরে এনে যুদ্ধের দায়িত্বে নিয়োজিত রাখা হয়েছে।
ইসরায়েলের অর্থনীতি এখন স্থবির হয়ে পড়েছে। জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ছে। সমাজের ভেতরে বিভাজন আরও গভীর হচ্ছে।
এর মধ্যেই নেতানিয়াহু একধরনের ‘অন্তহীন যুদ্ধের নীতি’ চালিয়ে যাচ্ছেন। এর ফলে ইসরায়েল এখন আন্তর্জাতিক পরিসরে একঘরে বা ‘অবাঞ্ছিত দেশ’-এ পরিণত হয়েছে।
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েলের হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত কেবল ইরান নয়, পুরো অঞ্চলকেই একটি সম্ভাব্য পারমাণবিক বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিয়েছে।
আসলে নেতানিয়াহুর জন্য এই সময়টি রাজনৈতিক জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। বহু বছর ধরেই তিনি নিজেকে ‘ইহুদিদের রক্ষক’ ও ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে ‘অস্তিত্বের হুমকি’ হিসেবে তুলে ধরে চলেছেন। তিনি নিজেকে ‘মিস্টার সিকিউরিটি’ হিসেবে উপস্থাপন করে নিজের রাজনৈতিক পরিচিতি তৈরি করেছেন।
২০১৫ সালে তিনি মার্কিন কংগ্রেসে গিয়ে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ওবামার নীতির বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথা বলেন। পরবর্তী সময়ে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে সুর মিলিয়ে ইরান পরমাণু চুক্তি বাতিলেও ভূমিকা রাখেন।
এর প্রমাণ হলো ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মধ্যপ্রাচ্য সফর। সেখানে তিনি ইসরায়েলকে একেবারে বাদ দিয়েই শুধু উপসাগরীয় দেশগুলো সফর করেছেন। এর মধ্য দিয়ে নেতানিয়াহু বুঝে গেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এখন আর ইসরায়েলকে মধ্যপ্রাচ্য কৌশলের মূল অংশ হিসেবে দেখে না। এই অবস্থায় ঝুঁকি নিয়ে নেতানিয়াহু এই যুদ্ধ শুরু করেছেন। এই সামরিক অভিযানের কোনো স্পষ্ট পরিণতি নেই, নিরাপদে এখান থেকে বের হয়ে আসার সুনির্দিষ্ট পথও দেখা যাচ্ছে না।এসব মিলিয়ে তাঁর রাজনৈতিক জীবনের একটি বড় অংশ ইরানের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছে। কিন্তু এখন তিনি জানেন, যদি তিনি ওয়াশিংটনে আবারও আগের মতো হস্তক্ষেপ করতে যান (যেমন নতুন করে কোনো আলোচনায় বাধা দেন) তাহলে ট্রাম্প খেপে যেতে পারেন।
কারণ, ওবামা যেভাবে ইসরায়েলের দৃষ্টিভঙ্গিকে গুরুত্ব দিতেন, ট্রাম্প তেমনটা করেন না। ট্রাম্প নিজের মতো করেই সিদ্ধান্ত নেন।
অতীতে ইসরায়েল সরাসরি নিজে যুদ্ধ করার বদলে যুক্তরাষ্ট্রকে চাপ দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে তাদের হয়ে লড়াই করাত। যেমন ইরাক যুদ্ধের সময় ইসরায়েল এমনটা করেছিল। কিন্তু এখন তাদের সেই কূটনীতি প্রায় ব্যর্থ।
মধ্যপ্রাচ্যে কৌশলগত নেতৃত্ব ধীরে ধীরে ইসরায়েল থেকে সরে গিয়ে উপসাগরীয় দেশগুলোর (যেমন সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত) দিকে যাচ্ছে।
এর প্রমাণ হলো ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মধ্যপ্রাচ্য সফর। সেখানে তিনি ইসরায়েলকে একেবারে বাদ দিয়েই শুধু উপসাগরীয় দেশগুলো সফর করেছেন। এর মধ্য দিয়ে নেতানিয়াহু বুঝে গেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এখন আর ইসরায়েলকে মধ্যপ্রাচ্য কৌশলের মূল অংশ হিসেবে দেখে না।
এই অবস্থায় ঝুঁকি নিয়ে নেতানিয়াহু এই যুদ্ধ শুরু করেছেন। এই সামরিক অভিযানের কোনো স্পষ্ট পরিণতি নেই, নিরাপদে এখান থেকে বের হয়ে আসার সুনির্দিষ্ট পথও দেখা যাচ্ছে না।
পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার খরচ, বিশ্ববাজারে তেলের দামের ঊর্ধ্বগতি ও ইরান কেমন প্রতিশোধ নেবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা—এসব মিলিয়ে ইসরায়েলজুড়ে একধরনের জাতীয় উৎকণ্ঠা ও ভয় ছড়িয়ে পড়েছে।
এ অবস্থায় যদি ইসরায়েলের উদ্দেশ্য সফল হয় ও তার বড় ধরনের ক্ষতি না হয়, তাহলে নেতানিয়াহু শুধু নিজের নির্বাচনী অবস্থানই মজবুত করতে পারবেন না, বরং ‘ইহুদি জাতির রক্ষক’ হিসেবে নিজের রাজনৈতিক পরিচয়ও চূড়ান্তভাবে প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন।
কিন্তু যদি এই যুদ্ধ ইসরায়েলের জন্য খুব বেশি ক্ষতিকর হয়ে ওঠে, তাহলে এটি নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক পতন ডেকে আনবে।
এটি হবে তাঁর কূটনৈতিকভাবে একঘরে হয়ে যাওয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে ভুল সিদ্ধান্তের আরেকটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা।
মিডল ইস্ট আই থেকে নেওয়া
অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ
আবেদ আবু শাহাদেহ ইসরায়েলের জাফাভিত্তিক রাজনৈতিক কর্মী।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র র জন ত ক এই য দ ধ শ ন ইসর য় ল ইসর য় ল র ক কর ম কর ছ ন র জন য মন ত র সরক র অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
বাউফলে বেদখল সরকারি ৭ গণমিলনায়তন
পটুয়াখালীর বাউফলে সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের উদাসীনতায় সরকারি ৭টি গণমিলনায়তন বেদখল হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় প্রভাবশালীরা এসব গণমিলনায়তনে দোকান তুলে ভাড়া দেওয়াসহ নানা কাজে ব্যবহার করছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের নির্মিত এসব গণমিলনায়তনের কার্যক্রম দীর্ঘদিন বন্ধ রয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তদারকির অভাবে এগুলো স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও যুবলীগ নেতারা দখল করেন। পরে দোকান তুলে ভাড়া দেন। অনেকে গণমিলনায়তনের জমিতে লাগানো গাছও কেটে বিক্রি করেন। এ ছাড়া পরিত্যক্ত ভবনে মাদক ও জুয়ার আসর বসে।
১৯৮৯ সালে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে দক্ষ ও কর্মঠ করে তোলার লক্ষ্যে জনগণকে উদ্বুদ্ধকরণ ও জনসচেতনতা তৈরিতে গণমিলনায়তন কেন্দ্র তৈরির প্রকল্প হাতে নেয় সমাজসেবা অধিদপ্তর। এ প্রকল্পের অংশ হিসেবে উপজেলার কালাইয়া বন্দর, বীরপাশা, কালিশুরি বাজার, চন্দ্রপাড়া, মমিনপুর, বগাবাজার ও পৌরসভার কালীবাড়ি এলাকায় গণমিলনায়তন নির্মাণ করা হয়। আধাপাকা টিনশেড ভবনে গণমিলনায়তন নির্মাণে জমিও অধিগ্রহণ করে সমাজসেবা অধিদপ্তর।
সরেজমিন দেখা যায়, চন্দ্রদ্বীপের চেয়ারম্যান উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক আলকাছ কালাইয়া বন্দরের গণমিলনায়তনটি দলীয় সাইন বোর্ড লাগিয়ে দখলে নিয়েছেন। স্থানীয়রা জানান, এনামুল হক সেখানে দুটি দোকান ঘর তুলে ভাড়া দিয়েছেন। এ ছাড়া সেখানে তাস ও ক্যারম বোর্ডের নামে জুয়ার আসর জমে। গত বছরের আগস্টে দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর চেয়ারম্যান এনামুল এলাকা ছেড়ে চলে যান। পরে কালাইয়া বিএনপির আহ্বায়ক জসিম উদ্দিন তুহিনের সমর্থিত নেতাকর্মীরা মিলনায়তনটি দখল করে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জসিম উদ্দিন তুহিন বলেন, তিনি মিলনায়তনটি দখল করেননি। স্থানীয় তরুণ ও যুবকরা সেখানে ক্যারাম বোর্ড খেলে।
চন্দ্রপাড়ার আবদুল খালেক মাতুব্বর বাড়ির সামনে ১৫ শতাংশ জমিতে গণমিলনায়তন নির্মিত হয়। কয়েক বছর বিভিন্ন প্রশিক্ষণও হয়েছে সেখানে। কার্যক্রম বন্ধ থাকায় কেন্দ্রটিকে ওই বাড়ির এক ব্যক্তি গোয়াল ঘর হিসেবে ব্যবহার করছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় স্থানীয় প্রভাবশালীরা গণমিলনায়তন কেন্দ্রের ইট ও টিন খুলে নেয়। এ ছাড়া সেখানে থাকা চারটি পুরোনো রেইন্ট্রি গাছ কেটে নিয়ে যায় তারা।
স্থানীয় বাসিন্দা জাহাঙ্গীর হোসেন মৃধা বলেন, যুবলীগ নেতা মো. জহির মাতুব্বর গণমিলনায়তন কেন্দ্রের ইট ও টিন খুলে নেওয়ার পাশাপাশি চারটি রেইন্ট্রি গাছ কেটে বিক্রি করেন। ওই চারটি গাছের মূল্য লক্ষাধিক টাকা।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জহির মদনপুরা ইউনিয়ন যুবলীগের সহসভাপতি ছিলেন। অভিযোগ অস্বীকার করে জহির মাতুব্বর বলেন, কে বা কারা এ কাজ করেছে তা তিনি জানেন না।
কনকদিয়ার বীরপাশা এলাকার বাসিন্দা ফোরকান মাস্টার বলেন, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বীরপাশা গ্রামের গণমিলনায়তনটি বখাটেদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে।
কেশবপুরের মমিনপুরের গণমিলনায়তনটিরও একই দশা। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) শাহজাহান বলেন, তাঁর এলাকার গণমিলনায়তন ভবনটির নিয়ন্ত্রণ নিতে তিনি উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাদের বেশ কয়েকবার অনুরোধ করেছেন। কিন্তু তারা কর্ণপাত করেন না।
এদিকে বাউফল পৌরসভার বাজার রোড এলাকায় গণমিলনায়তন কেন্দ্রের ৫ শতাংশ জমি রয়েছে। সেখানে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ গণশৌচাগার নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মুসফিকুর রহমান বলেন, তিনি সম্প্রতি এখানে যোগদান করেছেন। এসব বিষয়ে তাঁর জানা নেই। খোঁজ নিয়ে এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন তিনি।
পটুয়াখালী জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. শাহজাদা বলেন, এ বিষয়ে তিনি খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেবেন।