ইলিশে প্লাস্টিকের কণা, মানুষের শরীরে প্রভাব কতটা
Published: 17th, June 2025 GMT
বাংলা ভাষায় ইলিশ–বন্দনায় ছড়া, কবিতা কিংবা গদ্যের কমতি নেই। রসরাজ অমৃতলাল বসুর এমন একটি ছড়া, ‘পাড়াতে কড়াতে কেহ মাছ ভাজে রাতে, রন্ধনে আনন্দ বাড়ে গন্ধে মন মাতে।...ভাতে মেখে খাও যদি ইলিশের তেল, কাজে দেবে যেন কডলিভার অয়েল।’
ইলিশের শুধু স্বাদ নয়, এর পুষ্টিগুণও এখানে স্পষ্ট। ‘জলের উজ্জ্বল শস্য’ ইলিশের স্বাদ থেকে বাঙালিকে দূরে রাখা দায়। ইলিশকে ‘জলের উজ্জ্বল শস্য’ বলেছিলেন বুদ্ধদেব বসু। কিন্তু সত্যিই যদি এই শস্য তার ঔজ্জ্বল্য হারায় দূষণে, তাহলে?
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের নদীমুখে ধরা ইলিশে পাওয়া গেছে মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা। শুধু তা-ই নয়, ইলিশের শরীরে বাসা বেঁধেছে ক্যাডমিয়াম, সিসা, পারদ, আর্সেনিকের মতো ভারী ধাতু।
গবেষণায় দেখা গেছে, ইলিশের অন্ত্রে, যকৃতে, এমনকি পেশিতেও পাওয়া গেছে ৫ মিলিমিটারের চেয়েও ছোট প্লাস্টিক কণা, যেগুলোকে বলা হয় মাইক্রোপ্লাস্টিক। এই কণা প্লাস্টিক ব্যাগ, বোতল, সিনথেটিক কাপড়, টায়ার কিংবা কসমেটিকস থেকে এসে পড়ে নদী ও সাগরে। সেখান থেকেই তা গিলে ফেলে মাছ।
গবেষণা প্রতিবেদনটি গত এপ্রিলে প্রকাশিত হয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক খ্যাতনামা বিজ্ঞান সাময়িকী ওয়াটার, এয়ার সয়েল পলিউশন–এ। গবেষণাটি করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অ্যাকুয়াটিক জুওলজি রিসার্চ গ্রুপ এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের একদল বিজ্ঞানী।
প্লাস্টিকের, বিশেষ করে ক্ষুদ্র বা মাইক্রোপ্লাস্টিকের দূষণ এখন বৈশ্বিক সমস্যায় পরিণত হয়েছে। বৈশ্বিক বাস্তবতা মেনে চলতি বছর বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয় ‘প্লাস্টিক দূষণ আর নয়। ৫ জুন এ দিবসটি পালিত হয় বিশ্বব্যাপী।
এবারের প্রতিপাদ্যে প্লাস্টিক দূষণকে ‘না’ বলা হয়েছে। বাস্তবে বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্র প্লাস্টিকের প্রাবল্য। বাংলাদেশে ২০০৫ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে প্লাস্টিক উৎপাদন প্রায় ১৬৯ শতাংশ বেড়েছে, যা বৈশ্বিক গড় উৎপাদন বৃদ্ধির (২৫ শতাংশ) চেয়েও বেশি। উপকূলীয় অঞ্চলে মাইক্রোপ্লাস্টিকের আধিক্য মাছ ধরার নৌকা, পণ্যবাহী জাহাজ ও গৃহস্থালি বর্জ্য নিষ্কাশনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এই এলাকায় ধরা মাছ বেশি মাইক্রোপ্লাস্টিক গ্রহণ করে।
ইলিশের শুধু স্বাদ নয়, এর পুষ্টিগুণও এখানে স্পষ্ট। ‘জলের উজ্জ্বল শস্য’ ইলিশের স্বাদ থেকে বাঙালিকে দূরে রাখা দায়। ইলিশকে ‘জলের উজ্জ্বল শস্য’ বলেছিলেন বুদ্ধদেব বসু। কিন্তু সত্যিই যদি এই শস্য তার ঔজ্জ্বল্য হারায় দূষণে, তাহলে?কেন এই গবেষণা, কীভাবে হলো
গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক গাউসিয়া ওয়াহিদুন্নেসা চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘জল এবং স্থল উভয় পরিবেশেই মাইক্রোপ্লাস্টিকের ভয়ানক দূষণ আমরা দেখছি। এবারের গবেষণায় আমরা দেখতে চেয়েছি ক্রমবর্ধমান প্লাস্টিক দূষণের প্রভাবে আমাদের জাতীয় মাছ ইলিশের কী অবস্থা। যেকোনো প্রাণী একটি দূষণে যখন আক্রান্ত হয়, স্বাভাবিকভাবে প্রাণীর রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যায় এবং স্বভাবত অন্যান্য দূষণের ক্ষতিকর প্রভাবে পড়ে। আমাদের এই গবেষণা আমাদের নিজেদের সচেতন হতে সাহায্য করার জন্য, এটা কাউকে ভয় দেখানোর জন্য নয়। বরং এর মাধ্যমে আমরা জলজ প্রতিবেশের নাজুক অবস্থা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। এই প্রতিবেশের সুরক্ষায় আমাদের যে অনেক কিছু করতে হবে, এ গবেষণা সেই তাগিদ সৃষ্টি করেছে।’
অধ্যাপক গাউসিয়া ওয়াহিদুন্নেসা চৌধুরী.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বিএনপির প্রার্থীর তালিকায় নেই তারকারা
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে কয়েকজন জনপ্রিয় তারকার মনোনয়ন পাওয়ার গুঞ্জন থাকলেও শেষ পর্যন্ত প্রার্থী তালিকায় তাদের নাম নেই।
সোমবার (৩ নভেম্বর) বিকেলে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২৩৭ আসনের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন।
আরো পড়ুন:
শাহরুখের অজানা এই সাত তথ্য জানেন?
মালয়েশিয়ায় পরীমণির দশ দিন
তবে আলোচনায় থাকা কোনো তারকা প্রার্থী চূড়ান্ত তালিকায় আসেননি। সংগীতশিল্পী বেবী নাজনীন (নীলফামারী–৪), মনির খান (ঝিনাইদহ–৩) ও রুমানা মোর্শেদ কনকচাঁপা (সিরাজগঞ্জ–১) মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন।
তাদের মধ্যে বেবী নাজনীন ও মনির খানের আসনে যথাক্রমে আবদুল গফুর সরকার ও মেহেদী হাসান মনোনয়ন পেয়েছেন। কনকচাঁপার আসনের প্রার্থী এখনো ঘোষণা হয়নি।
২০১৮ সালের নির্বাচনে সিরাজগঞ্জ–১ আসন থেকেই বিএনপির প্রার্থী হয়েছিলেন কনকচাঁপা। তখন আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ নাসিমের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন তিনি। এবারের নির্বাচনে আবারো লড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বলে জানা যায়।
মনির খান ও কনকচাঁপা দুজনই বিএনপির অঙ্গ সংগঠন জাসাসের কেন্দ্রীয় নেতা। এছাড়া দলটির সাংস্কৃতিক সম্পাদক ও চলচ্চিত্র অভিনেতা আশরাফ উদ্দিন আহমেদ উজ্জ্বলের নামও আলোচনায় ছিল।
উজ্জ্বল বলেন, “দল যদি মনে করে আমার প্রার্থী হওয়া দরকার, আমি প্রস্তুত।”
বিএনপির এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে আপাতত স্পষ্ট—বিনোদন অঙ্গনের জনপ্রিয় মুখগুলো এবারো দলীয় প্রার্থী তালিকার বাইরে থাকছেন।
ঢাকা/রাহাত/মেহেদী