শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানকে আত্মসমর্পণ করতে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ
Published: 17th, June 2025 GMT
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়ে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর নির্দেশক্রমে রেজিস্ট্রার এ এস এম রুহুল ইমরান স্বাক্ষরিত এই বিজ্ঞপ্তি আজ মঙ্গলবার একটি ইংরেজি ও একটি বাংলা দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, চিফ প্রসিকিউটরের দাখিল করা ফরমাল চার্জ (আনুষ্ঠানিক অভিযোগ) বিবেচনায় আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অপরাধগুলো আমলে নিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনালের এই বিষয় বিশ্বাস করার যুক্তিসংগত কারণ রয়েছে যে অভিযুক্ত দুজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি সত্ত্বেও তাঁরা পলাতক রয়েছেন বা গ্রেপ্তার এড়ানোর জন্য আত্মগোপন করেছেন। সে কারণে তাঁদের ২৪ জুন এই ট্রাইব্যুনালে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেওয়া হলো। অন্যথায় তাঁদের অনুপস্থিতিতে বিচারকার্য সম্পন্ন হবে।
প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম বলেন, এই প্রযুক্তির যুগে কোনো ব্যক্তি জানেন না, তাঁর বিরুদ্ধে মামলা চলছে, এটি সাধারণত বিশ্বাসযোগ্য নয়। তারপরও আইনের প্রতিটি বিধান অনুসরণ করার উদ্দেশ্যে ও ন্যায়বিচারের স্বার্থে ট্রাইব্যুনাল গতকাল সোমবার এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আদেশ দেন।
আরও পড়ুনহাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম আনুষ্ঠানিক অভিযোগ ০১ জুন ২০২৫মামলার অপর আসামি পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তিনি গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
দখলদারদের কাছে প্রশাসনের আত্মসমর্পণ
বরিশালের আগৈলঝাড়া ও গৌরনদী উপজেলার কয়েক হাজার কৃষকের জীবন-জীবিকার উৎস ঐতিহ্যবাহী টরকী–বাশাইল খালটি করুণ মৃত্যুর প্রহর গুনছে। নাব্যতাসংকট, নির্বিচার দখল, দূষণ ও কর্তৃপক্ষের লাগাতার অবহেলার শিকার হয়ে প্রায় সাড়ে ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই খালের এমন পরিণতি খুবই দুঃখজনক। এটি পরিবেশের ওপর কাঠামোগত আগ্রাসনের ধারাবাহিকতারই চিত্র।
খালটি যখন প্রবহমান ছিল, তখন তা ছিল দুই উপজেলার কৃষকদের জন্য আশীর্বাদ। কিন্তু প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কৃষকদের এখন সেচের
জন্য ‘ডাবল লিফটিং’ (দুবার পানি উত্তোলন) করতে হচ্ছে। প্রথমে পাম্প দিয়ে কোনোমতে খালে পানি আনতে হয়। এরপর সেই পানি আবার পাম্প দিয়ে জমিতে দিতে হয়। এই প্রক্রিয়ায় কৃষকের সেচ খরচ প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ২০ শতক জমিতে যেখানে খরচ হতো ৭০০ টাকা, সেখানে এখন গুনতে হচ্ছে ১ হাজার ২০০ টাকা। লাভের মুখ দেখতে না পেয়ে অনেক কৃষক বোরো আবাদ ছেড়ে মাছের ঘের বা পানের বরজ তৈরি করতে বাধ্য হচ্ছেন, নয়তো আবাদি জমির পরিমাণ কমিয়ে দিচ্ছেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে স্থানীয় খাদ্যনিরাপত্তা ও কৃষি অর্থনীতিতে মারাত্মক ধস নামতে বাধ্য।
এ বিপর্যয়ের মূল কারণটি অত্যন্ত স্পষ্ট—অবৈধ দখলদারত্ব ও প্রশাসনিক দুর্বলতা। খালের উৎসমুখ, অর্থাৎ টরকী বন্দরসংলগ্ন পালরদী নদীর মোহনা দখলদারেরা পুরোপুরি রুদ্ধ করে দিয়েছেন। প্রায় এক কিলোমিটারজুড়ে খাল ভরাট করে গড়ে উঠেছে অসংখ্য পাকা ও আধা পাকা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। গৌরনদী ভূমি কার্যালয়ের পক্ষ থেকে ‘খালের জমি কাউকে ইজারা দেওয়া হয়নি’—এমনটা বলা হলেও দখলদারেরা কীভাবে খালের জায়গাকে ‘রেকর্ডীয় সম্পত্তি’ বা ‘ইজারা নেওয়া জমি’ দাবি করেন? এর মধ্য দিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালীরা প্রকাশ্যেই সরকারি সম্পত্তি দখল করে অবৈধভাবে ইমারত নির্মাণ করছেন।
এই দখলদারদের দাপট এতটাই বেশি যে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) গত বছর খাল খননের আবেদন পেয়েও কাজ শুরু করতে পারেনি। বিএডিসির উপসহকারী প্রকৌশলী সাহেদ আহমেদ চৌধুরী জানিয়েছেন, অবৈধ স্থাপনার কারণে খননযন্ত্র চালানো বা খনন করা মাটি রাখার মতো সামান্য জায়গাও সেখানে নেই। অর্থাৎ মুষ্টিমেয় অবৈধ দখলদার একটি সরকারি উন্নয়ন সংস্থাকে তার আইনি দায়িত্ব পালনে পঙ্গু করে রেখেছেন এবং স্থানীয় প্রশাসন এই দখলদারত্বের সামনে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ কেন এই অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না? কার ইশারায় এই দখলদারত্ব এত বছর ধরে চলতে দেওয়া হলো? টরকী–বাশাইল খালকে পুনরুদ্ধার করতে এখন কি কোনো আন্তরিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে, নাকি আমরা এ জলধারার উৎসের পুরোপুরি মৃত্যু নিশ্চিত হতে দেখব?