গলে ফিরলেন পুরোনো মুশফিক, জাগলেন নতুন নাজমুল
Published: 17th, June 2025 GMT
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ২৯২/৩ (প্রথম দিন শেষে)
পিঠাপিঠি এগোচ্ছেন সেঞ্চুরির দিকে। যেন নিজেদের মধ্যেই একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা!
সেটা অবশ্য মাঠের বাইরে থাকাদের অনুভূতি। উইকেটের দুই প্রান্তে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন আর অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিমের উপভোগ্য ব্যাটিং বরং দুজনের কাজকেই দুদিক থেকে এগিয়ে দিচ্ছিল। প্রতিটি পদক্ষেপ, প্রতিটি শটে প্রদর্শিত হচ্ছিল টেস্ট–ব্যাটিংয়ের সৌন্দর্য।
যার সুফল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গল টেস্টের প্রথম দিনেই দুজনের সেঞ্চুরি এবং চতুর্থ উইকেটে ২৪৭ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়া। প্রথম দিন শেষে ৩ উইকেটে ২৯২ রান বাংলাদেশকে দেখাচ্ছে ভালো কিছুর স্বপ্ন।
আজ প্রথম দিনের প্রথম দুই সেশনে রান হয়েছে খুবই কাছাকাছি। প্রথম সেশনে ৯০, দ্বিতীয় সেশনে ৯২। পার্থক্য হলো, প্রথম সেশনে ৯০ রান করতে, বলা ভালো, প্রথম ৪৫ রানের মধ্যেই বাংলাদেশ হারিয়ে ফেলেছিল ৩ উইকেট।
কিন্তু দ্বিতীয় সেশনের ৯২ রানে নাজমুল, মুশফিক উইকেট পড়তে দেননি আর একটিও। দিনের শেষ সেশনটাও খেলেছেন শুধুই এ দুজন, যোগ করেছেন আরও ১১০ রান। দিনের প্রথম ১৭ ওভারের বিপর্যয়ের পরও দিনটা পুরোপুরিই বাংলাদেশের করে দিয়েছে তাঁদের অনবদ্য ব্যাটিং জুটি।
গল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের এক পাশের প্রায় পুরোটাই গল ফোর্টের প্রাচীরে ঘেরা। তাতে ভারত মহাসাগরের উথালপাতাল হাওয়া যেমন প্রাচীরে প্রতিহত হয়ে সরাসরি মাঠে আসতে পারে না, তেমনি মাঠের দুই কোনার দিকের যে অংশে ফোর্টের প্রাচীর নেই, তার এক দিক দিয়ে হু হু করে বাতাস ঢুকে আরেক দিক দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার পথ খুঁজে নেয়। স্টেডিয়ামের উইকেট, কন্ডিশনে তাই গল ফোর্ট আর ভারত মহাসাগরের বিরাট প্রভাব। বাতাসের সুবিধা কাজে লাগাতে পারা বোলারদের জন্যও এ এক দারুণ বিষয়।
শ্রীলঙ্কার গলের মতো ভেন্যুগুলোতে যখন–তখন ‘পাসিং শাওয়ার’ এসে মাঠ ভিজিয়ে দেওয়াটা নিয়মিত। আবার মুহূর্তেই ঝলমলিয়ে ওঠা রোদ, সামুদ্রিক বাতাস দ্রুত সব শুকিয়ে ফেলায়ও প্রভাবক হয়।
আজ টেস্টের প্রথম দিনে অবশ্য খেলার অংশটা বৃষ্টি ছাড়া চনমনে আবহাওয়ায়ই কেটেছে। আগের রাতের ধারাবাহিকতায় বৃষ্টি হয়েছে সকালে। তারপর থেকেই দুর্গনগরী গলে উজ্জ্বল দিন। টেস্টকে আনুষ্ঠানিক বিদায় বলার সকালে শ্রীলঙ্কান অলরাউন্ডার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস পরিবারের সঙ্গে মাঠে পেয়েছেন টেস্ট ক্রিকেটের জবরদস্ত আবহও।
গলের উইকেট স্পিনবান্ধব বলেই পরিচিত। আর স্পিনবান্ধব উইকেট মানেই শুরুর দিকে রান থাকার প্রবল সম্ভাবনা। স্পিনাররা সহায়তা পেলে পাবেন তৃতীয়, চতুর্থ দিনে গিয়ে; যখন উইকেট ভাঙতে শুরু করবে।
গলের বেলায় আবার এ ক্ষেত্রে একটা শর্ত প্রযোজ্য—যদি এই তিন–চার দিনের মধ্যে বৃষ্টি না হয়। বৃষ্টি হলে উইকেট অতটা শুকাবে না। উইকেট না শুকালে পিচ ভাঙবে কম, স্পিনাররাও সহায়তা পাবেন কম। তবে যেটাই হোক, শুরুর দিকে অন্তত ব্যাটসম্যানদের সংগ্রামে পড়ার কোনো কারণ থাকে না এমন উইকেটে।
আজ এই ব্যাপারটাই বুঝতে একটু সময় নিল বাংলাদেশের ব্যাটিং। অথবা বুঝেও অবুঝের মতো কাজ করলেন ওপরের দিকে ব্যাটসম্যানরা। তারই মাশুল ৪৫ রানের মধ্যে দুই ওপেনারসহ টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যানকে হারানো।
ওপেনার সাদমান ইসলাম আর মুমিনুল হক আবার আউট হয়েছেন মাত্র ৮ বলের ব্যবধানে। এর আগে আসিতা ফার্নান্ডোর করা দিনের চতুর্থ ওভারে অফ স্টাম্পের বাইরের বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ১০ বল খেলা এনামুল হক ফেরেন শূন্য হাতে।
অসুস্থতা–পরবর্তী ধকল কাটিয়ে উঠতে না পারায় গলে খেলছেন না মেহেদী হাসান মিরাজ। চার বিশেষজ্ঞ বোলারের দলে একজন ব্যাটসম্যান বাড়াতে তাই এনামুলকে নেওয়া এবং অধিনায়ক নাজমুল হোসেনের পরিবর্তে সাদমানের সঙ্গী করে ওপেনিংয়ে পাঠানো। কিন্তু এনামুলের তাড়াহুড়ায় এমন কন্ডিশনেও শুরুতেই উইকেট হারাতে হয়েছে বাংলাদেশকে।
সে তুলনায় শ্রীলঙ্কার অভিষিক্ত সব্যসাচী স্পিনার থারিন্দু রত্নায়েকের যে অফ স্পিনে সাদমান স্লিপে ক্যাচ দিলেন, একটু কঠিন বলই ছিল সেটা। বল নিচু হয়েছে, সামান্য টার্ন করেছে, তারপর সাদমানের ব্যাট ছুঁয়ে গেছে ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার হাতে। এক ওভার পর আবারও থারিন্দু, এবার প্রথম বলে সেই ধনাঞ্জয়ারই ক্যাচ মুমিনুল।
রোদেলা সকালেও যেন ছোটখাটো ঝড়ই বয়ে গেল বাংলাদেশের ইনিংসে। অথচ টসে জিতে অধিনায়ক নাজমুল বলেছিলেন, উইকেট শুকনো। পরে বোলিংয়ের সুবিধা নিতেই আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত। কিন্তু শ্রীলঙ্কান বোলাররা যে প্রথম দিন সকালেই সুবিধা পেতে শুরু করলেন! আসলে যে তা নয়, সেটি পরের লম্বা জুটিতে বুঝিয়ে দিয়েছেন নাজমুল ও মুশফিক।
মুশফিকের কাছে গলের মাঠ একরকম নিজেরই মাঠ হয়ে গেছে। ২০১৩ সালে এ মাঠেই বাংলাদেশের হয়ে তাঁর প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি, ড্র হওয়া যে টেস্টের প্রথম ইনিংসের ৬৩৮ রান টেস্টে এখনো বাংলাদেশের সর্বোচ্চ। ২০১৭ সালের মার্চে গলে নিজের দ্বিতীয় ও সর্বশেষ টেস্টের দুই ইনিংসে করেছেন ৮৫ আর ৩৪। সব মিলিয়ে এবারের আগে এ মাঠে দুই টেস্টের তিন ইনিংসে ব্যাটিং করে ১০৬.
আজ যোগ হলো ১৮৬ বলে আরও ১০৫ রান এবং সেটা আগামীকাল আরও বাড়বে বলেই আশা। মজার ব্যাপার হলো, নাজমুলের (২০২ বল) চেয়ে কম বলে (১৭৬ বল) সেঞ্চুরি করলেও মুশফিকের ব্যাটে আক্রমণাত্মক শট অত ছিল না। এক–দুই করে তিলে তিলে গড়েছেন ইনিংসটা। সেঞ্চুরিতে বাউন্ডারি মাত্র ৫টি, যেখানে নাজমুল মেরেছেন ১১টি চার আর একটি ছক্কা। ২৬০ বলে ১৩৬ রানে অপরাজিত নাজমুলের দিন শেষে ওই এক ছক্কার সঙ্গে বাউন্ডারি ১৪টি।
গলের মাঠে ভালো খেলার ধারাবাহিকতা ধরে রেখে মাঝে কাটানো খারাপ সময়েরও ইতি টানলেন মুশফিক। অন্যদিকে নাজমুল সাম্প্রতিক সময়ে খুব বড় ইনিংস খেলতে না পারলেও টেস্টে শুরুটা নিয়মিতই ভালো করছেন।
এদিন মুশফিকের সঙ্গে সেই ভালো শুরুকে টেনে লম্বাও করেছেন তিনি, সেঞ্চুরি পেয়েছেন মুশফিকের আগেই। ব্যক্তিগত ৯৮ রান থেকে বাঁহাতি স্পিনার প্রবাত জুয়াসুরিয়ার বলে ২ রান নিয়ে সেঞ্চুরি উদ্যাপনে নাজমুলের ড্রেসিংরুমমুখী লাফ বাড়তি বিনোদন জোগালো ফিল্ডারের থ্রো থেকে বাঁচতে পরক্ষণেই আবারও লাফিয়ে ওঠায়।
১০৭ বলে ফিফটির পর ২০২ বলে তিন অঙ্কে পৌঁছান নাজমুল। টেস্টে এটি তাঁর ষষ্ঠ সেঞ্চুরি, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয়। মুশফিক তাঁর টেস্ট সেঞ্চুরির ডজন পূর্ণ করলেন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চতুর্থবার তিন অঙ্কে গিয়ে। সব মিলিয়ে গলে আজ বাংলাদেশ দারুণ জিনিস দেখল—নিজের আসল রূপে ফিরেছেন পুরোনো মুশফিক আর জেগে উঠেছেন নতুন নাজমুল!
গলে বাংলাদেশ ২০১৩ সালের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারবে কি না, তার অনেকটাই নির্ভর করছে নাজমুল–মুশফিক আগামীকাল আর কতটা টেনে নিতে পারেন দলকে, টেনে নিতে পারেন নিজেদের।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব য টসম য ন প রথম দ ন র প রথম স দম ন উইক ট
এছাড়াও পড়ুন:
সিরাজ–কৃষ্ণাতে ম্যাচে ফিরল ভারত
অ্যান্ডারসন-টেন্ডুলকার ট্রফিতে মোহাম্মদ সিরাজের মতো আর কোনো পেসার নেই, এভাবে বলাই যায়। কারণ, সিরাজ ও ক্রিস ওকসই এই সিরিজের সব কটি ম্যাচ খেলেছেন। সেই ওকসও ওভাল টেস্টের প্রথম দিনে চোট পেয়ে টেস্ট থেকে ছিটকে গেছেন, টিকে আছেন সিরাজ।
টিকে থাকা সিরাজ কী করেছেন? গতকাল ওভাল টেস্টের দ্বিতীয় দিনের দ্বিতীয় সেশনে ৮ ওভারের এক স্পেলে ফিরিয়েছেন ওলি পোপ, জো রুট, জ্যাকব বেথেলকে। এরপর আরও এক উইকেট। সিরাজকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন প্রসিধ কৃষ্ণা। দ্বিতীয় সেশনের শেষ ওভারে দুই উইকেটসহ তিনিও নিয়েছেন ৪ উইকেট। ভারতের ২২৪ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ড অলআউট হয়েছে ২৪৭ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ভারত কাল দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ করেছে ২ উইকেটে ৭৫ রান নিয়ে। দুই ‘জীবন’ পাওয়া যশস্বী জয়সোয়াল ৫১ ও আকাশ দীপ ৪ রান নিয়ে উইকেটে আছেন।
অথচ কাল প্রথম সেশন শেষে ম্যাচের চিত্র ছিল আলাদা। ইংল্যান্ড প্রথম ১৬ ওভারেই তোলে ১ উইকেটে ১০৯ রান। দুই ওপেনার জ্যাক ক্রলি ও বেন ডাকেট ৭৭ বলে গড়েন ৯২ রানের জুটি। এমন বাজবলীয় শুরুর পর চিত্র পুরোপুরি বদলে যায় দ্বিতীয় সেশনে। শুরুটা করেন কৃষ্ণা। তাঁর শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে ক্যাচ দেন ক্রলি। পরের গল্পটা সিরাজের। প্রথম স্পেলে ৪ ওভারে ৩১ রান দেওয়া সিরাজকে অধিনায়ক গিল যখন বোলিংয়ে আনেন, তখন ইংল্যান্ডের রান ২৪ ওভারে ২ উইকেটে ১৪২। তিনি একে একে ফেরান দুই সেট ব্যাটসম্যান পোপ (২২), রুটকে (২৯) ও বেথেলকে (৬)। এরপর কৃষ্ণার দুই উইকেটে দ্বিতীয় সেশনটা পুরোপুরি ভারতের হয়ে যায়। ইংল্যান্ড দ্বিতীয় সেশনে ১০৬ রান তুলতে হারায় ৬ উইকেট। তৃতীয় সেশনে আর ৩২ রান যোগ করতে পারে তারা।
আরও পড়ুনকাঁধের চোটে ভারতের বিপক্ষে আর খেলতে পারবেন না ওকস১১ ঘণ্টা আগেলোকেশ রাহুলকে আউট করার পর অ্যাটকিনসনের আনন্দ