লর্ডসে দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জেতার পর এই জয় নিয়ে গতকাল নিজেদের এক্স হ্যান্ডলে একটি ভিডিও পোস্ট করেছিল আইসিসি। সে ভিডিওতে আইসিসি চেয়ারম্যান জয় শাহকে দেখানো হয় একাধিকবার, যা ভক্ত থেকে সাংবাদিকেরা ভালোভাবে নিতে পারেননি। কটূক্তি ও হাস্যরসের শিকার হয়েছেন আইসিসির ভারতীয় চেয়ারম্যান।

আরও পড়ুনবেশি টাকা কামাতে ভারত দল থেকে নায়ারকে অবসর নিতে বলেছিলেন এক তারকা ক্রিকেটার৭ ঘণ্টা আগে

সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, সমালোচনা শুরুর পর গতকাল ভিডিওটি সরিয়ে নিয়েছিল আইসিসি। কিন্তু আজ আবারও বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টা ৩২ মিনিটে ভিডিওটি পুনরায় পোস্ট করা হয় আইসিসির এক্স হ্যান্ডলে। ৪৫ সেকেন্ডের এ ভিডিওতে মোট ২৩টি শটের মধ্যে ১১ বারই দেখানো হয় জয় শাহকে।

টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে ৫ উইকেটে হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। এর মধ্য দিয়ে ২৭ বছর পর আইসিসির কোনো টুর্নামেন্ট জিতল প্রোটিয়ারা।

স্বাভাবিকভাবেই সবার আশা ছিল ম্যাচের পর এই ভিডিওতে দুই দলের খেলোয়াড়েরাই বেশি প্রাধান্য পাবেন। কিন্তু এর মধ্যে জয় শাহর একাধিকবার উপস্থিতি অনেকেরই চোখে বিঁধেছে।

যেমন শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট সাংবাদিক অ্যান্ড্রু ফিদেল ফার্নান্দো। নিজের এক্স হ্যান্ডলে তাঁর পোস্ট, ‘এই যে গ্রোক (এআই চ্যাটবট), টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে জয় শাহ কত রান ও উইকেট নিয়েছে।’

আরও পড়ুনবল টেম্পারিংয়ের অভিযোগ থেকে মুক্তি মিলল অশ্বিনের৯ ঘণ্টা আগে

এরিকা মরিস নামে আরেক ক্রিকেট সাংবাদিক তাঁর এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন, ‘বুঝতেই পারিনি আইসিসি ফাইনাল ছিল জয় শাহ বনাম জয় শাহ। ভিডিওটি দেখে মনে হয়েছে, এটা জয় শাহকে প্রশংসা করার গোষ্ঠীর (একজন সদস্য) বানানো। হ্যাঁ, তিনি আইসিসির চেয়ারম্যান কিন্তু এই পোস্টটি ছিল টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল নিয়ে, আর জয় শাহকে দেখানো হয়েছে ১২ বার (১১ বার)।’

ক্রিকেট সম্প্রচারক পল ডেনেট তাঁর এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন, ‘আইসিসির ভিডিওটি দেখেছেন? টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল উদ্‌যাপনের কথা ছিল—কিন্তু তার বদলে জয় শাহকে দেখানো হয়েছে ১১ বার। খুবই অদ্ভুত। হাস্যকর।’

ভারতের কার্টুনিস্ট সতীর্শ আচার্য এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন, ‘টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপজয়ী অধিনায়ক টেম্বা বাভুমার চেয়ে আইসিসির ভিডিওতে জয় শাহকে বেশিবার দেখানোর বিষয়টি মজার।’

মাত্র ৩৫ বছর বয়সে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আইসিসির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন জয় শাহ। আইসিসির ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ চেয়ারম্যান তিনি। ২০০৯ সালে গুজরাটে ক্রিকেট সংগঠক হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করা জয় শাহ বিসিসিআইয়ের সচিব পদে ছিলেন। এই পদ ছেড়ে আইসিসি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন তিনি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ট স ট চ য ম প য়নশ প আইস স র ভ ফ ইন ল জয় শ হ

এছাড়াও পড়ুন:

অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে

সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’

বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।

এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।

এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’

আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।

শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ