ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়েছে, বেশি দিন হয়নি। নির্বাচন সামনে রেখে এই ঈদে যেমন দেখা গেল শুভেচ্ছার রাজনীতি, তেমনটি এর আগেও আমরা দেখেছি। এলাকায় একই ব্যক্তির ব্যানার-ফেস্টুন-বিলবোর্ডজুড়ে মুখচ্ছবি আর নাম-পরিচয়! একদিকে ঈদের অনাবিল আনন্দ, অন্যদিকে রাস্তায় হঠাৎ দেখা যায়, ‘অমুক সাহেবের পক্ষ থেকে ঈদ মোবারক’ কিংবা ‘জনপ্রতিনিধি পদপ্রার্থী তমুক ভাইয়ের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা’। অবশ্য শুধু ঈদে নয়, এর বাইরেও এ ধরনের শুভেচ্ছা দেখা যায়। তবে ঈদ মুসলমানদের প্রধান দুটি ধর্মীয় উৎসব, সেহেতু এ সময়ে প্রবণতা বেশি থাকে।
এত বড়মাপের আয়োজন, ছাপানো, টাঙানো সবই ব্যয়সাধ্য। সাধারণ একজন রাজনৈতিক কর্মী কীভাবে এত খরচ করেন? নাকি এটি ভবিষ্যতের বিনিয়োগ? রাজনৈতিক পুঁজি সঞ্চয়ের একটি চতুর পদ্ধতি? যারা ভোট চান, তারা জানেন ঈদ হলো মানুষের অনুভূতির সময়। এ সময়কে কাজে লাগিয়ে মানুষের মাঝে নিজের উপস্থিতি জানান দেওয়া যায় নীরবে, আত্মীয়ের মতো করে। তাই ‘ঈদ মোবারক’ লেখার চেয়েও বড় করে লেখা থাকে প্রার্থীর নাম, তার ছবি, দলের প্রতীক কিংবা নেতার ছবির পাশে নিজের ঠাঁই। এক অর্থে, এটি নিজের চেহারা ও অবস্থানকে জনগণের মনে গেঁথে দেওয়ার কৌশল; ঈদের মোড়কে!
এত ব্যানার-ফেস্টুনের মাঝে ঈদের মূল বার্তাটি কোথায়? রাস্তার পাশে পড়ে থাকা ছেঁড়া ব্যানার, বাতাসে উড়তে থাকা ছিন্ন ফেস্টুন কি ঈদের শোভা বাড়ায়, নাকি নগরজীবনে দৃষ্টিকটু মাত্রা যোগ করে? প্রশাসন অনেক সময় এগুলো অপসারণে উদ্যোগী হলেও প্রভাবশালী মহলের নাম লেখা থাকলে সে ব্যানার ছোঁয়া যেন সাহসের ব্যাপার। ফলে শহরের সৌন্দর্য বা সজ্জা হয়ে দাঁড়ায় রাজনীতির বিজ্ঞাপনস্থল।
এই প্রবণতা শুধু শহরে নয়, গ্রাম-গঞ্জেও ছড়িয়ে পড়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য কিংবা সম্ভাব্য চেয়ারম্যানও ঈদের আগে ছবি পাঠিয়ে দেন ছাপাখানায়। বাজারের মোড়ে তাদের ফেস্টুন ঝুলে যায়। সঙ্গে যুক্ত থাকে দলের প্রতীক, স্থানীয় নেতার নাম এবং অবশ্যই ঈদের শুভেচ্ছা। মানুষের অনুভূতিকে ব্যবহার করে নিজেকে পরিচিত ও প্রভাবশালী করে তোলার এক নীরব প্রচারকৌশল এটি। তবে সবাই কি এসব ব্যানার-ফেস্টুনে বিরক্ত হন? অনেক সাধারণ মানুষও এটিকে স্বাভাবিকভাবে নেন। তারা বলেন, ‘যাক, অন্তত মনে তো করেছে!’ এই মানসিকতা রাজনৈতিক কর্মীদের উৎসাহিত করে। কিন্তু আশঙ্কা থেকে যায়, এই ছদ্ম-শুভেচ্ছার মাঝে যদি সত্যিকারের দায়বদ্ধতা না থাকে, তবে জনগণ কবে বুঝবে, তারা প্রতারিত হচ্ছে?
এটা ঠিক, যে কেউ ঈদে শুভেচ্ছা জানাতে পারেন। সামাজিক মাধ্যম থেকে শুরু করে ব্যক্তি পর্যায়ে কার্ড পাঠানো হৃদয় ছোঁয়া বার্তার অভাব নেই। কিন্তু যান্ত্রিকভাবে, দখলদারির মতো করে শহর কিংবা গ্রামজুড়ে মুখের ছবি ঝুলিয়ে দেওয়া কতটা শোভন? এসব ব্যানার-ফেস্টুনের মাধ্যমে কে কোথায় কতটা প্রভাব বিস্তার করতে পারছেন, তার একটি ম্যাপ তৈরি হয়। কার ব্যানার সবচেয়ে বড়, কার ছবি কেন্দ্রীয় স্থানে, এসব বিশ্লেষণ করেই স্থানীয় রাজনীতিতে কে কতটা শক্তিশালী, তা বোঝা যায়। ফলে ঈদ এক সময় হয়ে পড়ে রাজনৈতিক পরিমাপের বারোমাসি দিনপঞ্জির একটি কৌশলগত দিন। এখন সময় এসেছে এই প্রবণতা নিয়ে ভাববার।
ঈদ আমাদের আত্মশুদ্ধি, ত্যাগ ও ভালোবাসার উৎসব। এটি হোক মানুষের হৃদয়ে পৌঁছানোর এক আন্তরিক উপলক্ষ। নিছক ব্যানার-ফেস্টুনে আটকে না থাকুক এই পবিত্র বার্তা। শুভেচ্ছা জানানো হোক নিঃস্বার্থ ভালোবাসা দিয়ে; চোখে পড়ার জন্য নয়; হৃদয়ে গেঁথে যাওয়ার জন্য। সত্যিকারের নেতৃত্ব তো জন্ম নেয় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে; কৃত্রিম ব্যানারে নয়। রাজনীতি যদি মানুষের সেবার মাধ্যম হয়, তবে ঈদের সময় সেই সেবা প্রতিফলিত হোক কাজে; শুধু মুখে কিংবা ব্যানারে নয়। তাহলেই ঈদ, রাজনীতি দুটোই পাবে প্রকৃত সম্মান।
জুয়েল হাসান: প্রকৌশলী
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন ত ক
এছাড়াও পড়ুন:
এবারও কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে নেই বাংলাদেশ
দ্বিতীয় বছরের মত কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশের কোনো সিনেমাা বা তথ্যচিত্র দেখানো হচ্ছে না। সম্প্রতি কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব কমিটির তরফে সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টি জানানো হয়ছে। পরবর্তীতে কমিটির তরফে তাদের নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে যে ছবি তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে তাতে কোন ক্যাটাগরিতেই বাংলাদেশি সিনেমার নাম উল্লেখ নেই।
মূলত ভিসা জটিলতা এবং রাজনৈতিক কারণেই এই চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশের উপস্থিতি থাকছে না।
বিষয়টি নিয়ে গত বছরই উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের চেয়ারপার্সন পরিচালক গৌতম ঘোষ। সেসময় তাকে বলতে শোনা গিয়েছিল, “এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। সেদেশে ভিসা সমস্যা রয়েছে। আর বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে আসতে অনেকটা সময় লাগবে। স্বাভাবিকভাবেই এই অবস্থায় চলচ্চিত্র উৎসবের তালিকায় বাংলাদেশের কোনো ছবি নেই। আমরা আশা করব চলচ্চিত্র উৎসবের পরবর্তী এডিশনের (৩১ তম) আগে প্রতিবেশী দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।”
কিন্তু এক বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও অবস্থার যে কোনো পরিবর্তন হয়নি তা চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশের অনুপস্থিতির ঘটনাটাই পরিষ্কার।
যদিও কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের জুরি কমিটির এক সদস্য বলেছেন, “আন্তর্জাতিক বিভাগে বাংলাদেশ থেকে শুধুমাত্র একটি ছবি জমা দেওয়া হয়েছিল। তানভীর চৌধুরীর ‘কাফ্ফারাহ’। কিন্তু দুঃখের বিষয় এটি আমাদের কাঙ্ক্ষিত মানদণ্ড পূরণ করতে পারেনি। ফলে চলচ্চিত্র উৎসবে এই ছবিটি জায়গা পায়নি।”
চলতি বছরের ৬ নভেম্বর থেকে শুরু হতে চলেছে ৩১ তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। এক সপ্তাহব্যাপী এই উৎসব চলবে আগামী ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত। এই উৎসবে ৩৯ টি দেশের ২১৫ টি ছবি দেখানো হবে। ভারত ছাড়াও অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানি, পোল্যান্ড, বেলজিয়াম, ইতালি, ব্রাজিল, মরক্কো, অস্ট্রিয়া, তুরস্ক, বলিভিয়া, গুয়েতেমালা, শ্রীলংকা, চীন, জাপান, ইরান, সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান, ফিলিস্তিন, ইরাক, সৌদি আরব, মিশর, সুদান, লেবানন।
সুচরিতা/শাহেদ