‘আমার বাসা পুরোপুরি গুঁড়িয়ে দিয়েছে’ বিবিসিকে বললেন তেহরানের বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তা
Published: 18th, June 2025 GMT
ইরানের রাজধানী তেহরানে সোমবার ইসরায়েলের হামলায় সেখানকার বাংলাদেশ দূতাবাসে কর্মরত কর্মকর্তাদের বাসভবনও আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে অন্তত একজন কর্মকর্তার বাড়িঘর ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। তবে হামলার সময় ওই কর্মকর্তা বাড়িতে না থাকায় প্রাণে বেঁচে গেছেন।
‘আমার বাসা পুরোপুরি গুঁড়িয়ে দিয়েছে’, বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন ভুক্তভোগী দূতাবাস কর্মকর্তা ওয়ালিদ ইসলাম।
তেহরানে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা মূলত জর্ডান নামের একটি এলাকায় বসবাস করেন, যেটি পড়েছে তেহরানের তিন নম্বর জেলায়।
ওই এলাকায় ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবনসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে, যেগুলোতে গত সোমবার ঘোষণা দিয়ে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।
হামলার আগে বাসিন্দাদের সরে যেতে বলা হয়। এতে প্রাণহানি কিছুটা কম হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অসংখ্য স্থাপনা।
‘আমাদের আশপাশে এখন আর কিছুই নাই। কেবল কূটনীতিকদের কয়েকটি বাড়ি টিকে আছে, কিন্তু আশপাশে কিছুই নাই’, বলেন ইরানে বাংলাদেশি দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি ওয়ালিদ ইসলাম।
সোমবার দুপুরে তেহরানের তিন নম্বর জেলায় ইসরায়েলি সেনারা হামলার ঘোষণা দেওয়ার পর সেখানকার বাংলাদেশ মিশনে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বাংলাদেশি নাগরিকদের সবাইকে ওই এলাকা থেকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয় ঢাকা।
এরপর তেহরানে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস কমপ্লেক্স ছেড়ে যান সেখানকার কর্মীরা। যদিও বর্তমানে তাঁরা তেহরানের অন্য এলাকায় অবস্থান করছেন।
কিন্তু ইসরায়েলি হামলার ব্যাপ্তি ক্রমেই বাড়তে থাকায় এখন নাগরিকদের তেহরানের বাইরে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব রুহুল আলম সিদ্দিক বলেন, ‘আমরা তাঁদের নিয়ে উদ্বিগ্ন, যাঁরা তেহরানে আছেন। তাঁরা হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কার মধ্যে আছেন। তাঁদের এবং আমাদের দূতাবাসে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁদের জন্য এখন কাজ করছি, যাতে তাঁরা নিরাপদে থাকতে পারেন।’
তেহরানে বর্তমানে যে চার শর মতো বাংলাদেশি অবস্থান করছেন, তাঁরা সবাই অক্ষত রয়েছেন বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
‘আমাদের বাঁচান’
ইরানে টানা হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। একের পর এক বোমা বিস্ফোরণে কেঁপে উঠছে তেহরান।
এ অবস্থায় জীবন বাঁচাতে দলে দলে রাজধানী ছাড়ছেন বাসিন্দারা। এতে গত কয়েক দিন রাস্তায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হতে দেখা যাচ্ছে।
এদিকে অসংখ্য মানুষ গাড়িতে করে শহর ছাড়তে যাওয়ায় পেট্রলপাম্পগুলোয় জ্বালানি তেলের সংকট তৈরি হয়েছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও অনেকে তেল পাচ্ছেন না।
এমন পরিস্থিতিতে তেহরান থেকে বের হওয়ার জন্য বাংলাদেশ মিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন সেখানে অবস্থানরত অনেক বাংলাদেশি।
‘অনেকেই ফোন দিয়ে কান্নাকাটি করছেন। বলছেন, এখানকার পরিস্থিতি ভালো না ভাই, আমাদের বাঁচান’, বিবিসি বাংলাকে বলেন তেহরানে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তা ওয়ালিদ ইসলাম।
তেহরানের বাইরেও কিছু কিছু শহরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। ফলে সেসব জায়গা থেকে অনেকে যোগাযোগ করে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার জন্য আকুতি জানাচ্ছেন কর্মকর্তাদের কাছে।
ওয়ালিদ ইসলাম বলেন, যেমন—বন্দর আব্বাসে হামলার ঘটনা ঘটেছে। সেখানকার পরিস্থিতিও খারাপ। ফলে ওই এলাকা থেকেও অনেকে ফোন দিচ্ছেন, আর কান্নাকাটি করছেন। এই আর্তনাদ আসলে সহ্য করা যায় না।
চিকিৎসা করাতে গিয়ে আটকা
বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২০ জন সম্প্রতি চিকিৎসার উদ্দেশ্যে তেহরানে যান।
ওয়ালিদ ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, মূলত তাঁরা কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশনের জন্য এখানে এসেছিলেন।
তেহরানে যাওয়ার পর থেকে তাঁরা শহরের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করছিলেন। কিন্তু গত শুক্রবার ইরান-ইসরায়েল সংঘাত শুরু হওয়ার পর তাঁদের হাসপাতাল এলাকায় অবস্থান করার পরামর্শ দেন বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা।
ওয়ালিদ ইসলাম বলেন, ‘এ সময় হাসপাতাল নিরাপদ হবে ভেবেই আমরা এই পরামর্শ দিয়েছিলাম। কিন্তু গত পরশুদিন হসপিটালেই আক্রমণ হয়েছে।’
এ ঘটনায় রোগীদের সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন বলে জানান দূতাবাসের এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘তাঁদের শান্ত করার জন্য আমি সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি। কীভাবে তাঁদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া যায়, সেই চেষ্টাও চলছে।’
এর বাইরে বেড়াতে গিয়েও কেউ কেউ আটকা পড়েছেন। তেমনই একজন বাংলাদেশি চিকিৎসক ইকরাম আর আজিজুর রহমান। তাঁর স্ত্রী একজন ইরানি নাগরিক। গত মে মাসে তাঁরা ইরানের মাটিতে পা রাখেন। বাংলাদেশে ফেরার কথা ছিল ১৫ জুন।
বিবিসি বাংলাকে আজিজুর রহমান বলেন, ‘কিন্তু এর মধ্যেই যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ায় ১৫ তারিখে ফেরা সম্ভব হয়নি। কবে ফিরতে পারব, সেটাও বুঝতে পারছি না।’
সরিয়ে কোথায় নেওয়া হচ্ছে
বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন সময় পড়াশোনা, ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরিসহ নানা কারণে বহু বাংলাদেশি ইরানে পাড়ি জমিয়েছেন।
সরকারি হিসাবে, বর্তমানে দেশটিতে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিকের সংখ্যা প্রায় দুই হাজার।
গতকাল ব্রিফিংয়ে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব রুহুল আলম সিদ্দিক বলেন, এই দুই হাজার বাংলাদেশির মধ্যে ৪০০ জনের মতো তেহরানে রয়েছেন।
জরুরি প্রয়োজনে তাঁরা যেন যোগাযোগ করতে পারেন, সে জন্য ‘হটলাইন’ চালু করেছে তেহরানের বাংলাদেশ দূতাবাস। সেই সঙ্গে ঢাকায়ও আরেকটি ‘হটলাইন’ চালু করা হয়েছে।
রুহুল আলম সিদ্দিক সাংবাদিকদের বলেন, ইতিমধ্যে প্রায় ১০০ জন দূতাবাস ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হটলাইনে যোগাযোগ করে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
এই ব্যক্তিদের সঙ্গে দূতাবাসের ৪০ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
কিন্তু তাঁদের কোথায় নেওয়া হবে?
দূতাবাসের কর্মকর্তা ওয়ালিদ ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘আপাতত সবাইকে ভারামিনে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। আর বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের তেহরানের পাশে সাবেতে রাখার ব্যবস্থা করছি।’
যদিও ভারামিন শহরও তেহরানেই অবস্থিত। ফলে পরবর্তী সময়ে সেখানেও হামলা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে। তেমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে আনা হতে পারে বলে জানাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
ওয়ালিদ ইসলাম বলেন, ‘এখন সেটা করা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ ইরানে বিমান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে যদি এক দিনের জন্যও যুদ্ধবিরতি দেয়, তখনই আমরা সবাইকে ইরানের বাইরে পাঠানোর চেষ্টা করব।’
কিন্তু কত দিন নাগাদ সেই সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে, সেটি এখনো সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না দূতাবাসের কর্মকর্তারা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ল দ শ দ ত ব স র কর মকর ত কর মকর ত র অবস থ ন কর য গ য গ কর পর স থ ত ইসর য় ল আম দ র এল ক য় ন র পদ র জন য করছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
‘মাস্তান’কে ছাড়া রিয়ালের অ্যানফিল্ড–অভিযান এবং সালাহর রেকর্ডের হাতছানি
অ্যানফিল্ডে যাওয়ার ঠিক আগে হঠাৎ দুঃসংবাদ পেল রিয়াল মাদ্রিদ। লিভারপুলের বিপক্ষে আজ রাতে খেলতে পারবেন না ফ্রাঙ্কো মাস্তানতুয়োনো। দলের মেডিকেল বিভাগ জানিয়েছে, আর্জেন্টাইন এই মিডফিল্ডার ভুগছেন ‘স্পোর্টস হার্নিয়া’-তে। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম মার্কা লিখেছে, মাস্তানতুয়োনো কবে ফিরতে পারবেন, তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে আজকের ম্যাচে তাঁর না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত।
গতকাল অনুশীলনেও ছিলেন না মাস্তানতুয়োনো। সাধারণত প্রতিপক্ষের মাঠে গিয়ে ম্যাচের আগের দিন অনুশীলন করে রিয়াল। কিন্তু এবার কোচ জাবি আলোনসো একটু ভিন্ন পথ বেছে নিয়েছেন। অ্যানফিল্ডে সাংবাদিকদের সামনে কৌশল প্রকাশ না করে তিনি শেষ অনুশীলন সেরেছেন ক্লাবের নিজস্ব মাঠ ভালদেবাসে। মার্কার বিশ্লেষণ, প্রতিপক্ষ যেন শেষ মুহূর্তে কিছু বুঝে না ফেলে, সে জন্যই আলোনসোর এ সিদ্ধান্ত।
রিয়ালের বর্তমান ফর্ম অবশ্য কোনোভাবেই লুকানো যাচ্ছে না। লা লিগায় গত পরশু রাতে ভ্যালেন্সিয়াকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে তারা। এ মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ১৪ ম্যাচে এটি তাদের ১৩তম জয়। একমাত্র হারের স্বাদ লিগে। ১২৬ বছরের ইতিহাসে রিয়ালের এর চেয়ে ভালো সূচনা হয়েছে মাত্র দুবার, সর্বশেষ ১৯৬১-৬২ মৌসুমে।