আকাশের গোমড়া ভাব তখন চলে গেছে। জমে থাকা মেঘ ছিল, তবে সূর্যের আলো যেহেতু সেই আচ্ছাদন ভেদ করে মাঠে আবার সোনালি রোদ ফেলতে শুরু করেছে, মন চাইল আশাবাদী হতে।
কিন্তু মাঠ ঢেকে রাখা কাভারের জমে থাকা পানিকে তখনো স্থির হতে দিচ্ছিল না বৃষ্টির টিপ টিপ ফোঁটা। এদিকে প্রেসবক্সে বসে ভারত মহাসাগরের রূপটাও ঠিক সুবিধার মনে হচ্ছিল না। গলের সমুদ্রতীরে বড় বড় ঢেউয়ের আছড়ে পড়া নতুন কিছু নয়।
কিন্তু গল ফোর্টের দেয়ালের পাশ দিয়ে দৃষ্টিটা গভীর সমুদ্রের দিকে অনেকটা এগিয়ে গিয়েও কেমন অস্বচ্ছ হয়ে যাচ্ছিল। সূর্যের আলো পড়তে পারছে না সেদিকে। সব মিলিয়ে একটা ক্যামোফ্লেজ। বৃষ্টি কি তবে আবার আসবে! দিনের বাকি অংশ খেলা হবে তো!
আজ দুপুরে বৃষ্টিতে থেমে যাওয়া খেলা আবার শুরু হওয়ার তাড়না গল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের প্রেসবক্সে যতটা ছিল, সন্দেহাতীতভাবে তার চেয়ে তা অনেক বেশি ছিল বাংলাদেশ দলের ড্রেসিংরুমে, আরও নির্দিষ্ট করে বললে নামের পাশে তখন ১৫৯ রান নিয়ে ডাবল সেঞ্চুরির অপেক্ষায় থাকা মুশফিকুর রহিমের মনে।
সব অনিশ্চয়তা দূর করে বেলা সোয়া ৩টার পর রৌদ্রোজ্জ্বল হয়ে ওঠে পুরো গল। কিন্তু পরপর দুই ওভারে মুশফিকের ডাবল সেঞ্চুরি আর লিটন দাসের সেঞ্চুরির সম্ভাবনা মাটি হয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশের ইনিংসও যেন খেই হারিয়ে ফেলে। দূরে সরে যেতে থাকে পাঁচ শ ছোঁয়ার সম্ভাবনা। বৃষ্টির পর হওয়া ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিটের খেলাতেই ৫ উইকেট হারিয়ে দিন শেষে বাংলাদেশের স্কোর ৯ উইকেটে ৪৮৪। উইকেটে হাসান মাহমুদ ও নাহিদ রানার শেষ উইকেট জুটি।
এর আগে বেলা ১টা ৪০ মিনিটে শুরু হয়ে ঘণ্টা দেড়েকের বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ থেকেছে সব মিলিয়ে ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিটের মতো। কাভারে জমে থাকা পানি সরিয়ে খেলা আবার শুরু হয়েছে স্থানীয় সময় বিকেল সোয়া ৪টায়।
এর মধ্যে প্রায় ১ ঘণ্টাই গেছে বৃষ্টি থামার পর কাভার সরানোর কাজে। এক কাভারের পানি আরেক কাভারে গড়িয়ে এমনভাবে কাভার আর পানি মাঠের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়, যেন মাঠ না ভেজে। তবে প্রক্রিয়াটা বেশ সময়সাপেক্ষই বলতে হয়।
মজার ব্যাপার হলো, দুপুরে খেলা থামিয়ে মাঠ কাভারে ঢাকা শুরু হয়েছিল বৃষ্টি শুরু হওয়ার মিনিট দশেক আগে থেকেই। আকাশের অবস্থা দেখে এখানে নাকি আগেই বোঝা যায় বৃষ্টি আসছে। যে কারণে এক ফোঁটা বৃষ্টি ঝরার আগেই পুরো মাঠ আচ্ছাদিত। এরপর ওরকম সতর্কতা মেনে কাভার সরানো। এতটা সময় বৃষ্টি হওয়া সত্ত্বেও তাই খেলা শুরুর সময় মাঠ পুরো ঝকঝকে–তকতকে।
বৃষ্টির বাধা নিয়ে এত কথা বলার কারণ, বৃষ্টিটা এসেছে এমন এক সময়ে, যখন বাংলাদেশ দল স্পন্দিত পদক্ষেপে উৎসবের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। উৎসবের সম্ভাব্য উপলক্ষ ছিল একাধিক। মুশফিকের চতুর্থ ডাবল সেঞ্চুরি, প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের বড় সংগ্রহের দিকে এগিয়ে যাওয়া আর নড়বড়ে সময় পেরিয়ে আসা লিটনের সেঞ্চুরি। কখনো কখনো উৎসবের এমন মহামিলনের সম্ভাবনা থামিয়ে দেয় বলেই হয়তো ক্রিকেটে ‘বেরসিক’ হিসেবে ‘কুখ্যাতি’ কুড়িয়েছে বৃষ্টি। গল টেস্টের দ্বিতীয় দিনে বাংলাদেশেরও হলো সেই অভিজ্ঞতা।
বৃষ্টির আগপর্যন্ত শ্রীলঙ্কার অর্জন বলতে ছিল নাজমুল হোসেনের উইকেটটি। ১৪৮ রান করে আসিতা ফার্নান্দোর বলে ড্রাইভ খেলতে গিয়ে মিড অফে ক্যাচ দেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। বৃষ্টির পর বাংলাদেশের ছন্দপতনে দিনের বাকিটা শ্রীলঙ্কার। এ সময় মাত্র ৬৪ রানের মধ্যেই তারা নিয়েছে বাংলাদেশের ৫ উইকেট।
দিনের প্রথম সেশনে হওয়া ২৭ ওভারের মধ্যে নাজমুল উইকেটে ছিলেন সপ্তম ওভারের প্রথম বল পর্যন্ত। তাঁর আউটে ভাঙে ২৬৪ রানের চতুর্থ উইকেট জুটি, যেটিতে আর মাত্র ৩ রান হলেই টেস্টে চতুর্থ উইকেট জুটিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডটি নতুন করে লেখা হতো। সেটি হয়নি বলে ২০১৮ সালে মিরপুরে মুশফিক-মুমিনুলের ২৬৬ রানই এখনো এই জুটিতে হয়ে থাকছে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ জুটি।
মুশফিক-লিটন আজ গলে জুটি বেঁধেছেন পঞ্চম উইকেটে। বৃষ্টির আগে-পরে মিলিয়ে জুটিটা ১৪৯ রানের। গত বছর আগস্টে রাওয়ালপিন্ডিতে প্রথম টেস্টে সেঞ্চুরির পর ১৩ ইনিংসে ৪০-এর বেশি করতে পারেননি মুশফিক। পিন্ডিতেই দ্বিতীয় টেস্টে সেঞ্চুরি করেছিলেন লিটন এবং এরপর তিনিও ১০ ইনিংসে খেই হারা। সর্বোচ্চ ইনিংস ছিল মুশফিকের মতোই ৪০ রানের।
গল টেস্ট তাঁদের দুজনকেই ফিরিয়ে দিয়েছে হারানো ফর্ম, শুধু দেয়নি শেষের তৃপ্তিটা। একজন ফিরেছেন ডাবল সেঞ্চুরি না পাওয়ার আক্ষেপ নিয়ে, আরেকজন সেঞ্চুরি না পাওয়ার। দুজনই অবশ্য একবার করে পেয়েছিলেন নতুন জীবন।
মুশফিক-লিটনের সৌজন্য প্রথম সেশনে শুধু নাজমুলের উইকেট হারিয়ে ৯১ রান করে বাংলাদেশ। ১২৩ বলে ৯০ রানের ইনিংসে লিটন শুরু থেকেই ছিলেন কিছুটা আক্রমণাত্মক। ১১ বাউন্ডারির সঙ্গে মেরেছেন একটি ছক্কাও।
শ্রীলঙ্কার ফিল্ডিং পরিকল্পনা ভেস্তে দিতে অনেক সময় ঝুঁকি নিয়েও শট খেলার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু বৃষ্টির পর তো শ্রীলঙ্কান পেসারদের রিভার্স সুইংয়ের প্রদর্শনীই শুরু হলো! মুশফিক, জাকের আলী, তাইজুল ইসলাম—তিনজনই আউট হয়েছেন রিভার্স সুইংয়ে। জাকের আর তাইজুলকে ফিরিয়েছেন পেসার মিলন রত্নায়েকে।
মুশফিক, নাজমুলের সেঞ্চুরির পরও ব্যক্তিগত অর্জনে কিছু অতৃপ্তি থেকে গেল প্রথম ইনিংসে। তারপরও দিনটা আজ যেখানে শেষ হয়েছে, এই টেস্ট না হারাটাই উচিত হবে বাংলাদেশের। বাকিটা থাকল বোলারদের হাতে।
সংক্ষিপ্ত স্কোরবাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ১৫১ ওভারে ৪৮৪/৯ (মুশফিক ১৬৩, নাজমুল ১৪৮, লিটন ৯০; মিলন ৩/৩৮, আসিতা ৩/৯০, থারিন্দু ৩/১৯৬)।
* ২য় দিন শেষে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ড বল স ঞ চ র ব ষ ট র পর প রথম উইক ট
এছাড়াও পড়ুন:
‘কাঁচামিঠে ফলের ছড়া’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন
রাজধানীর বাংলা মোটরের বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে শিশুসাহিত্যিক অমিত কুমার কুণ্ডুর শিশুতোষ ছড়ার বই ‘কাঁচামিঠে ফলের ছড়া’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ও প্রকাশনা উৎসব হয়েছে।
শুক্রবার (১ আগস্ট) বিকেল ৫টায় অনুষ্ঠানের আয়োজনে ছিল বইটির প্রকাশনা সংস্থা পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড।
শিক্ষাবিদ, গবেষক ও কলামিস্ট সৈয়দ মো. গোলাম ফারুকের সভাপতিত্বে প্রকাশনা উৎসবে প্রধান অতিথি ছিলেন সাহিত্যিক রফিকুর রশীদ। এছাড়া অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাহিত্যিক ও সাংবাদিক দন্ত্যস রওশন, লোকসংস্কৃতিবিদ তপন বাগচী, শিশুসাহিত্যিক সঙ্গীতা ইমাম, কথাসাহিত্যিক মনি হায়দার। অনুষ্ঠানে বক্তারা বইটির বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।
আরো পড়ুন:
নদী স্মৃতিনির্ভর সংকলন গ্রন্থ ‘আমার নদী’ প্রকাশিত
রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী
প্রধান অতিথির আলোচনায় রফিকুর রশীদ বলেন, “১২৪টি ফলের ওপর লেখা এই বইয়ের ছড়াগুলো কেবল পাঠকের রসাস্বাদনই করাবে না, শিশু শিক্ষামূলক এই ছড়াগুলো রসোত্তীর্ণও বটে।”
তিনি দেশের প্রকাশকদের অংশগ্রহণের ওপর জোর দিয়ে বলেন,“প্রকাশকদের বেশি বেশি এরকম প্রকাশনা উৎসব আয়োজন করা উচিত।”
বইটির ব্যতিক্রমী আকৃতির দিকে ইঙ্গিত করে দন্ত্যস রওশন বলেন, “পাঠক তৈরির প্রয়াসেই পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স এমন ক্ষুদ্রাকৃতির ও নতুন নতুন সাইজের বইয়ের ধারণা বাজারে আনছে। এটা সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য।”
শিক্ষাবিদ সৈয়দ মোহাম্মদ গোলাম ফারুক বলেন, “শিক্ষার দুটো দিক রয়েছ।একটি হলো ট্রাডিশনাল, যা আমরা পড়েছি, আপনারাও পড়েন। আরেকটি হলো জাঁ জ্যাক রুশোর পদ্ধতি। তিনি বলেছে, প্রকৃতির সঙ্গে শেখা।রবীন্দ্রনাথ যা বিশ্বভারতীর মাধ্যমে করিয়ে দেখিয়েছেন।অমিত কুমার কুণ্ডুর ছড়ার বইটি সে রকমই।এর মাধ্যমে প্রকৃতির সান্নিধ্য লাভ করবে শিশুরা ও ওরা শিখবে। এরকম বই প্রকাশ করার জন্য প্রকাশকে ধন্যবাদ। আমাদের প্রকাশকদের এ ধরনের বই বেশি বেশি করতে হবে।”
কাঁচামিঠে ফলের ছড়া বইটির পাতায় পাতায় দেশি-বিদেশি বিচিত্র ফলের পরিচয়, পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা নান্দনিক অলংকরণে ছন্দে-ছড়ায় তুলে ধরা হয়েছে। বইটি থেকে ছড়া আবৃত্তি করে বাচিক শিল্পী জান্নাতুল ফেরদৌস মুক্তা।
অনুষ্ঠান শেষে ছিল মৌসুমী ফল দিয়ে অতিথিদের অ্যাপায়নের ব্যবস্থা।
ঢাকা/এসবি