ঘরের মেঝে খুঁড়ে শিশুর মরদেহ উদ্ধার, বাবা আটক
Published: 19th, June 2025 GMT
ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলায় নিজ ঘরের মেঝেতে মাটিচাপা দেওয়া অবস্থায় দুই বছর বয়সী এক শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ সময় মরদেহটির পাশের গর্তে দুটি মৃত ছাগলও পাওয়া গেছে। স্বজনদের অভিযোগ, ওই শিশু ও ছাগল দুটিকে হত্যার পর মাটিচাপা দেয় শিশুটির বাবা নুরুল আমিন (৩০)। তাঁকে আটক করেছে পুলিশ।
গতকাল বুধবার রাত ১১টার দিকে উপজেলার ধুরাইল ইউনিয়নের পশ্চিম ধুরাইল গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত আইয়ুব আলী একই গ্রামের বাসিন্দা নুরুল আমিনের ছেলে।
নুরুল আমিনের স্বজনেরা জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। কয়েক দিন ধরে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তিনি মারমুখী আচরণ করছিলেন। গতকাল দুপুরে স্ত্রী জোসনা বেগমকে মারধর করে ছেলে আইয়ুবকে নিয়ে নুরুল ঘরের ভেতর চলে যান। তাঁর কাছে গেলে স্ত্রী ও মাকে মেরে ফেলার হুমকি দেন। এর আগে নুরুলের মারধরের শিকার হয়েছেন তাঁরা। এ কারণে ভয়ে তাঁরা ঘরে না গিয়ে অন্যত্র সরে যান। এদিকে সন্ধ্যার দিকে শিশুটির কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে পরিবারের লোকজনের সন্দেহ হয়। পরে এলাকাবাসীর সহায়তায় কৌশলে ঘরে ঢুকে শিশুটিকে খুঁজতে থাকেন। একপর্যায়ে ঘরের মেঝেতে মাটির স্তূপ দেখে সন্দেহ হলে নুরুল জানান, কান্না করায় মাথায় আঘাত করে শিশুকে হত্যা করে পুঁতে রেখেছেন। একই সঙ্গে ঘরে থাকা ছাগল দুটিকেও হত্যা করে পাশে আরেকটি গর্ত খুঁড়ে পুঁতে রাখেন।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সেই সঙ্গে নুরুল আমিনকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
নুরুলের বাবা ফজুল মিয়া জানান, তাঁর ছেলে মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন। ঘটনার সময় তিনি বাড়িতে ছিলেন না।
পরিবার অভিযুক্ত ব্যক্তিকে মানসিক ভারসাম্যহীন দাবি করলেও এ বিষয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন হালুয়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুল ইসলাম। তিনি জানান, এ বিষয়ে মামলা প্রস্তুতি চলছে ও প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন র ল আম ন মরদ হ
এছাড়াও পড়ুন:
চবির বিশেষ ভোজের টোকেনে অনাবাসিক শিক্ষার্থীরা ‘অতিথি’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) বিভিন্ন আবাসিক হলে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উদযাপন উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা ও বিশেষ ভোজের আয়োজন করা হয়েছে। এতে আবাসিকদের শিক্ষার্থী বলা হচ্ছে এবং অনাবাসিকদের অতিথি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়া, আবাসিকদের জন্য টাকার পরিমাণ কম ধরলেও অনাবাসিকদের জন্য বেশি ধরা হয়েছে। এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ ফরহাদ হোসেন হলে উন্নত ভোজের টোকেন আবাসিকদের জন্য ১০০ টাকা ধরা হয়েছে। অপরদিকে, অতিথিদের জন্য ধরা হয়েছে ১৭০ টাকা; এই অতিথিরা হলেন হলের অনাবাসিক শিক্ষার্থী। শামসুন নাহার হলে আবাসিকদের জন্য ৮০ টাকা, অনাবাসিকদের জন্য ১৭০ টাকা। মিল পদ্ধতি চালু থাকা আমানত হলে আবাসিকদের জন্য ফ্রি হলেও অনাবাসিকদের জন্য ৭০ টাকা। তবে সোহরাওয়ার্দী হলে আবাসিক-অনাবাসিক সবার জন্যই ১৫৫ টাকা ধরা হয়েছে।
আরো পড়ুন:
এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দিল শাবিপ্রবি প্রশাসন
চবিতে বিপ্লবী ছাত্র ঐক্যের আত্মপ্রকাশ
এদিকে, বিজয়-২৪ হলের প্রথম বিজ্ঞপ্তিতে আবাসিক-অনাবাসিক সবার জন্য ৮০ টাকা উল্লেখ করলেও দ্বিতীয় বিজ্ঞপ্তিতে অনাবাসিকদের জন্য ১৭০ টাকা ধরা হয়েছে। এভাবে অন্যান্য হলগুলোতেও একই অবস্থার কথা জানা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী জারিফ মাহমুদ বলেন, “৫ আগস্টের ফিস্ট নিয়ে হলে হলে বিশেষ খাবারের আয়োজন করছে, সেখানে আবাসিক-অনাবাসিক আলাদা করেছে। আমার প্রশ্ন হলো, প্রশাসনদের ছাত্র বা সন্তান কি শুধু আবাসিকরা? আমরা যারা অনাবাসিক, তারা কি বিশ্ববিদ্যালয়ে উড়ে এসেছি?”
তিনি প্রশাসনকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “আপনারা আমাদের হলে সিট দিতে পারেননি, এটা আপনাদের ব্যর্থতা। এই আবাসিক-অনাবাসিক পরিচয় বন্ধ করুন। আয়োজন করলে সবার জন্য সমান করে আয়োজন করুন। আর সেটা না পারলে আয়োজন বন্ধ করুন।”
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী নাঈম শাহ ফেসবুকে লেখেন, “কোনো একটা বিশেষ দিন এলেই দেখা যায়, হল প্রশাসনগুলোর আবাসিক শিক্ষার্থীদের বিশেষ করে দাঁড় করানোর ভণ্ডামি। ৫ তারিখে আয়োজনকে ঘিরে তারা আবার সেই অতিথি টার্ম সামনে নিয়ে আসছে। ফরহাদ হলে অনুষ্ঠান শেষে বিশেষ ভোজের আয়োজনের টোকেন আবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য ১০০ টাকা এবং অতিথিদের জন্য ১৭০ টাকা। বাকি হলগুলোতে বোধহয় তাই করেছে। কিন্তু এই অতিথিগুলোও তো বিশ্ববিদ্যালয়েরই শিক্ষার্থী।”
তিনি বলেন, “বাহির থেকে যে কয়েকজন শিক্ষার্থী আসবে, তাদের থেকে ৭০ টাকা করে বেশি না নিলে তো হল প্রশাসন দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে না। আর আপনাদের যদি সামর্থ্য নাই থাকে, কাউকেই খাওয়ায়েন না। কিন্তু ৫ আগস্টের দিনকে কেন্দ্র করে করা অনুষ্ঠানে প্রিভিলেজড-আনপ্রিভিলেজড বিষয়টা জিইয়ে রাখাটা নিতান্ত নোংরামি লাগছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এটা নিয়ে ভাবা উচিত।”
এ বিষয়ে শহিদ মো. ফরহাদ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মান্নান বলেন, “এ সিদ্ধান্তটি শুধু ফরহাদ হলের জন্য নয়, অন্যান্য হলেও এ সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে। মূলত উন্নত ভোজের আয়োজনটি আবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য করা হয়েছে। তারপরেও কোনো অনাবাসিক শিক্ষার্থী বা কারো বন্ধুবান্ধব অংশ নিতে চাইলে পারবে। সেক্ষেত্রে তাদের জন্য টাকা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যেহেতু তাদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে কোনো বরাদ্দ দেওয়া হয়নি।”
বিশ্ববিদ্যালয়ে সব হল প্রাধ্যক্ষের উপস্থিতিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ঢাকা/মিজান/মেহেদী