ছেলের বিরুদ্ধে মারধরের মামলা শতবর্ষী আমিরুল নেছার
Published: 19th, June 2025 GMT
ঝালকাঠিতে ছেলের বিরুদ্ধে মারধর ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এনে মামলা করেছেন শতবর্ষী এক মা। বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) দুপুরে ঝালকাঠি সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১১০ বছর বয়সের আমিরুল নেছা বাদী হয়েছে ছেলে ইউনুস মোল্লার বিরুদ্ধে এ মামলা দায়ের করেন।
আদালতের বিচারক রুবেল শেখ অভিযোগ আমলে নিয়ে আসামির বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ইস্যু করেছেন। মায়ের বিরুদ্ধে ছেলের এমন আচরণ মানতে পারছেন না স্থানীরা। তারা দোষী ছেলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
মাকে কিছু অর্থের জন্য মারধর করেছেন ঝালকাঠি সদর উপজেলার বাসন্ডা ইউনিয়নের ধারাখানা গ্রামের বাসিন্দা ও এলজিইডির গাড়ি চালক ইউনুস মোল্লা। বাধ্য হয়ে শতবর্ষী ওই মা তার ছেলের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
আরো পড়ুন:
বেরোবি উপাচার্য কলিমউল্লাহসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
কিশোরগঞ্জে মাদক মামলায় নারীর যাবজ্জীবন
মামলার অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, বৃদ্ধ মা আমিরুল নেছা তিন বছর আগে জমি বিক্রি করে তিন লাখ টাকা তার ছোট ছেলে ইউনুস মোল্লার কাছে জমা রাখেন। গত ১২ জুন চিকিৎসার জন্য এই টাকা চাইতে গেলে ছেলে মায়ের ওপরে ক্ষিপ্ত হন। এক পর্যায়ে মাকে লাথি মারেন ছেলে ইউনুস মোল্লা। এ সময় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। পরে আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঝালকাঠি সদর হাসপাতলে চিকিৎসা করানো হয়। বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) দুপরে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়।
আদালতে বারান্দায় বসে মা আমিরুল নেছা বলেন, ‘‘জমি বিক্রি করে তিন লাখ টাকা আমি আমার ছোট ছেলে ইউনুস মোল্লার কাছে জমা রাখি। চিকিৎসার জন্য টাকার প্রয়োজন হলে আমি ওই টাকা চাই। সে টাকা না দিয়ে আমাকে লাথি মারে। এতে আমি আমার ডান পায়ে ব্যথা পাই। কিন্তু এর পরও আমার ছেলে আমাকে নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছিলেন। তাই বাধ্য হয়ে আজ আমি আদালতে মামলা করেছি।’’
অভিযুক্ত ইউনুস মোল্লা তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘‘আমি আমার মাকে মারধর করিনি। যে মা আমাকে গর্ভে ধারণ করেছেন, তাকে মরাব কেন? আমার অন্য ভাইরা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন।’’
মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী মুহাম্মদ সোলায়মান বলেন, ‘‘এটা দুঃখজনক যে ছেলের বিরুদ্ধে মায়ের মামলা করতে হয়েছে। তবে বিজ্ঞ আদালত বৃদ্ধা আমিরুল নেছার অভিযোগ আমলে নিয়ে সরাসরি ওয়ারেন্ট ইস্যু করেছেন। আমরা আশা করছি, তিনি ন্যায়বিচার পাবেন।’’
ঢাকা/অলোক/বকুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইউন স ম ল ল আম র ল ন ছ কর ছ ন ঝ লক ঠ ম রধর
এছাড়াও পড়ুন:
৪৪ নং সনমান্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তি উদযাপন
একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শতবর্ষ পূর্তি মানে শুধু সময়ের হিসাব নয়,এটি প্রজন্মের পর প্রজন্মকে আলোকিত করার এক দীর্ঘ ইতিহাস। সেই ইতিহাসের গৌরবময় একশ বছর পূর্ণ করল ৪৪ নং সনমান্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
এ উপলক্ষে বিদ্যালয়ের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জনাব রোকসানা বেগমের নেতৃত্বে, সকল শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের অংশগ্রহণে উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপিত হলো বিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তি উৎসব।
বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) সকালে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে বের করা হয় একটি বর্ণাঢ্য র্যালি। ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড হাতে শতাধিক শিক্ষার্থী সারিবদ্ধভাবে অংশ নেয়। বিদ্যালয়ের আশপাশের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে র্যালিটি পুনরায় বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এসে শেষ হয়।
শিক্ষার্থীদের কণ্ঠে ভেসে ওঠা শিক্ষা, শৃঙ্খলা ও ভবিষ্যৎ গড়ার প্রত্যয়দীপ্ত স্লোগান পুরো এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে দেয় উৎসবের আবহ। র্যালি শেষে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক ফজিলা ইয়াসমিন। তিনি বিদ্যালয়ের শুরুর দিনের স্মৃতি স্মরণ করে বলেন, “এই বিদ্যালয় শুধু একটি প্রতিষ্ঠান নয়—এটি এই এলাকার স্বপ্নের ঠিকানা। এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে অসংখ্য শিক্ষার্থী সমাজের নানা ক্ষেত্রে আলোকবর্তিকা হয়ে উঠেছে।”
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন শিক্ষক রোকসানা বেগম, আজমিনা খাতুন, নুরজাহান আক্তার রত্না, শায়লা শারমিন, গোলাম হোসেন ও মফিজুল ইসলাম সহ স্কুল অ্যাডহক কমিটির সদস্য সাইমুম ইসলাম,প্রাক্তন শিক্ষার্থী ইয়াসমিন আক্তার ও খাদিমুন্নাহার।এছাড়াও বিপুলসংখ্যক অভিভাবক অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
পরে শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় শুরু হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। গান, নৃত্য ও আবৃত্তিতে ফুটে ওঠে শিক্ষা, দেশপ্রেম, শৈশব ও আগামীর স্বপ্ন। শিক্ষার্থীদের পরিবেশনা উপভোগ করেন অতিথি, শিক্ষক ও অভিভাবকেরা। অভিভাবকদের মুখে দেখা যায় গর্বের ঝিলিক।
বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রোকসানা বেগম বলেন, ১৯২৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয় একশ বছরের দীর্ঘ পথচলা অতিক্রম করেছে। এই পথচলা আমাদের জন্য যেমন গর্বের, তেমনি দায়িত্বেরও। প্রজন্মের পর প্রজন্মকে আলোকিত করার যে দায়িত্ব আমরা বহন করে আসছি, তা আরও নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।
শিক্ষার্থীদের মেধা, মনন ও মূল্যবোধ গঠনে আধুনিক শিক্ষার পাশাপাশি মানবিক শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। শতবর্ষের এই শিক্ষা ঐতিহ্য আগামী প্রজন্মের জন্য আলোর বাতিঘর হয়ে থাকবে।
বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, শতবর্ষ ধরে সনমান্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এ অঞ্চলে প্রাথমিক শিক্ষার ভিত গড়ে তুলেছে। ভবিষ্যতেও মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে আধুনিক পাঠদান, সহশিক্ষা কার্যক্রম, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক চর্চা আরও জোরদার করা হবে।
অভিভাবকরা আলোচনায় বলেন, এই বিদ্যালয় থেকেই শিক্ষা নিয়ে এলাকার বহু শিক্ষার্থী আজ ডাক্তার, প্রকৌশলী, শিক্ষক, সরকারি কর্মকর্তা ও সফল উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন।
শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মিলিত অংশগ্রহণে শতবর্ষ পূর্তির এই উৎসব পরিণত হয় এক স্মরণীয় মিলনমেলায়। দীর্ঘ পথচলার গর্ব হৃদয়ে ধারণ করে নতুন শতকে আরও এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ে শেষ হয় ৪৪ নং সনমান্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শতবর্ষ উদযাপন।