ফলে ফলে ভরা মেলা: দেশি ফলের উৎসবে পুষ্টির আহ্বান
Published: 19th, June 2025 GMT
রাজধানীর খামারবাড়ি যেন হয়ে উঠেছে দেশি ফলের রাজ্য। লিচু, আম, জাম, কাঁঠাল, আনারস, পেয়ারা, কামরাঙা থেকে শুরু করে বিলুপ্তপ্রায় বেত ফল, ডেউয়া, আতাফল—সবই মিলছে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) প্রাঙ্গণে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী জাতীয় ফল মেলায়। ফলের রঙে, গন্ধে, স্বাদে এবং বৈচিত্র্যে রীতিমতো মাতোয়ারা দর্শনার্থীরা।
‘দেশি ফল বেশি খাই, আসুন ফলের গাছ লাগাই’—এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কেআইবি প্রাঙ্গণে শুরু হয়েছে ফল মেলা। কৃষি মন্ত্রণালয় আয়োজিত এ মেলা উদ্বোধন করেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো.
উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আমরা চালের ক্ষেত্রে যেমন আত্মনির্ভরতা অর্জন করেছি, এবার ফলের ক্ষেত্রেও তা অর্জনের লক্ষ্য রাখছি। পুষ্টির চাহিদা পূরণে ফল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। বর্তমানে যেখানে একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন কমপক্ষে ২০০ গ্রাম ফল খাওয়া প্রয়োজন, সেখানে আমরা খাচ্ছি মাত্র ৫৫–৬০ গ্রাম। এ ব্যবধান কমানোই সরকারের অন্যতম লক্ষ্য।'
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এই দেশি ফলের মেলা করার উদ্দেশ্য সবার কাছে দেশি ফলের পরিচিতি বাড়ানো। অনেকে দেশি ফল চেনেনই না। আঙুর, আপেল এসব বিদেশি ফল খান। কিন্তু আমাদের দেশি ফলের যে গুণগত মান ও স্বাদ, তা অনেক বিদেশি ফলের চেয়ে বেশি।
বর্তমানে বিদেশে বাংলাদেশের ফল রপ্তানি করা হচ্ছে জানিয়ে কৃষি উপদেষ্টা বলেন, আপনারা শুনে খুশি হবেন, আমরা বিদেশে প্রচুর পরিমাণে আম, কাঁঠাল, পেয়ারা ইত্যাদি পাঠাচ্ছি। চীনে আমাদের নতুনভাবে আম পাঠানো শুরু হয়েছে। রপ্তানি বাড়লে কৃষকরা উপকৃত হবেন। আমরা যেন বেশি করে দেশি ফল খাই। এ ফল খেলে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রাও অনেক সাশ্রয় হবে
মেলায় সরকারি ২৬টি এবং বেসরকারি ৪৯টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। বিভিন্ন স্টলে দেশি ফলের পাশাপাশি উপস্থাপিত হয়েছে ফল চাষে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, উচ্চফলনশীল জাত এবং রাসায়নিকমুক্ত উৎপাদনের উদাহরণ।
এবারের ফল প্রদর্শনীতে ৬০ জাতের আম নিয়ে এসেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এসব আমের নামও বেশ বাহারি। যেমন- বিশ্বনাথ চ্যাটার্জি, গৌড়মতি, কালোপাহাড়, কুয়াপাহাড়ি, রানীপছন্দ, মল্লিকা, ক্ষীরশাপাতি, আনন্দপুরি, বাদশাভোগ, গ্রেট বোম্বাই ইত্যাদি। এছাড়া দুই শতাধিক দেশি ফলের সমাহার দেখা গেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের স্টলে।
দেশীয় কয়েকশ’ ফলের সমাহার বসিয়েছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনও। কাউফল, করমচা, ডেউয়া, আঁশফল, গাব, জগডুমুর, চাম্বুল, আতাফল, ডুমুর, চালতা, অরবরই, বিলিম্বি, শরিফা, সাতকরা, তৈকর, ডেফল, লুকলুকি, বৈচি, মুনিয়ার মতো বিলুপ্তপ্রায় ফল সংস্থাটির স্টলে দেখা গেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পার্টনার প্রকল্প মেলায় এনেছে উত্তম কৃষি চর্চার মাধ্যমে ফল চাষের প্রযুক্তি। উত্তম কৃষি চর্চার মাধ্যমে চাষ করা ফল তাদের স্টলে শোভা পাচ্ছে।
রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পের স্টলে মিলছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা রপ্তানির আম। বিদেশে কীভাবে আম রপ্তানি হয়, তা দর্শনার্থীদের জানাচ্ছেন প্রকল্পের কর্মকর্তারা। রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদনের কলাকৌশলও দর্শনার্থীরা আগ্রহ ভরে জেনে নিচ্ছেন।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আব্দুর রহমান মেলা দেখতে এসে বলেন, ‘এখানে এমন অনেক ফল দেখছি, যেগুলোর নামও আগে শুনিনি। নতুন জাত ও প্রযুক্তি নিয়ে অনেক কিছু জানতেও পারছি।’
মেলায় দেখা মিলছে বিভিন্ন দেশি ফলের। ডেউয়া, সফেদা, বিলাতি গাব, করমচা, কাউফল, শরিফা, অড়বরই, বেতফল ও লটকনের মতো ফলগুলো আগ্রহভরে দেখছিলেন মেলায় আসা দর্শনার্থীরা। অনেকে মোবাইল ফোনে ছবি তুলে নিচ্ছিলেন।
রাজধানীর ধানমণ্ডি থেকে আসা আফরোজা বেগম তেমনি একজন৷ তিনি মেলায় ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন ফলের ছবি তুলছিলেন। তিনি বললেন, ‘এখানে এমনও অনেক ফল দেখছি, যেগুলো আগে দেখার সুযোগ হয়নি।’
অনেকে দেশি ফল দেখে শৈশবে ফিরে যাচ্ছিলেন। উত্তরা থেকে আসা মাহমুদুর রহমান মাকে নিয়ে মেলায় এসেছেন৷ কয়েকটি ফল দেখিয়ে তিনি বললেন, ‘আগে এই ফলগুলো আমাদের বাড়িতে হতো কিংবা স্থানীয় বাজারেও পাওয়া যেত। এখন আর পাওয়া যায় না৷’
মেলা উপলক্ষে রাজধানীর কৃষি গবেষণা কাউন্সিল মিলনায়তনে ‘স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও বাণিজ্যিকীকরণে দেশি ফল: বর্তমান প্রেক্ষিত, চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতির বক্তব্যে কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, ‘দেশীয় ফলের উৎস, স্বাদ ও পুষ্টিগুণ বিশ্বমানের। আমাদের কাজ হচ্ছে এগুলোর সংরক্ষণ, প্রচার ও বাজার সম্প্রসারণ।’
মূল প্রবন্ধে অধ্যাপক ড. মো. আজিজুর রহমান বলেন, ‘দেশি ফলের অনেক জাত জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতেও টিকে থাকতে সক্ষম। পাশাপাশি কৃষকদের আয়ের নতুন দ্বারও খুলছে এসব ফল।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পরিচালক (প্রশাসন) মো. হাবিবউল্লাহ্ বলেন, জাতীয় ফল মেলা শুধু একটি প্রদর্শনী নয়, বরং এটা ফল চাষ, পুষ্টি, অর্থনীতি ও কৃষিনির্ভর সমাজের মধ্যে মেলবন্ধন তৈরি করছে। এখানে আছে কৃষক, গবেষক, ভোক্তা ও নীতিনির্ধারকদের কণ্ঠ। সরকারি-বেসরকারি অংশগ্রহণ, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি, দেশের সব জেলায় বিস্তার এবং সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে এমন মেলা দেশি-দেশি ফলভিত্তিক একটি টেকসই বাজার ও সচেতনতা গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। দেশি ফলকে বাঁচিয়ে পুষ্টির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব—এটাই জাতীয় ফল মেলার বড় বার্তা।
মেলা চলবে শনিবার পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মেলা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। মেলা প্রাঙ্গণের পাশে মঞ্চে বিকেল থেকে আয়োজন করা হয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের।
রাজধানীর পাশাপাশি এবার দেশের ৬৪টি জেলার ৪৩১টি উপজেলাতেও স্থানীয় ফল মেলার আয়োজন করা হয়েছে। এতে স্থানীয় কৃষক, গবেষক এবং সাধারণ মানুষ একসঙ্গে মেলে ধরার সুযোগ পাচ্ছেন দেশি ফলের সম্ভাবনা ও পুষ্টি–বাণিজ্যের চিত্র।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ফল প র ঙ গণ য় ফল ম ল ফল দ খ আম দ র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
পূজাকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলায় বাহিনী তৎপর : ডিসি
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, আইনসৃঙ্খলা স্বাভাবিক রয়েছে, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজাকে ঘিরে সকল ধর্মমত, সকল সম্প্রদায় তারা একত্রিত হয়েছে।
সকলেই সার্বিক সহয়তা করছে যাতে করে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পূজা উৎসব সুন্দর ভাবে পজলন করতে পারে। পূজাকে ঘিরে একটি গোষ্ঠি চাইবে পূজা উৎসব নষ্ট করে দেয়ার জন্য।
সে জন্য আমাদের তৎপরতা রয়েছে। আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে। তার পাশাপাশি র্যাব, বিজিবি, সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ পুলিশবাহিহনী সবাই কাজ করছে যাতে করে সুন্দর ভাবে পূজা উৎসব শেষ করতে পারি।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে ৫নং ঘাটে দূর্গা পূজার প্রতিমা বিসর্জনের স্থান পরিদর্শনকালে তিনি এ নির্দেশনা দেন।
দূর্গা পূজা বিজয়া দশমী শেষে প্রতিমা বিসর্জনের সময় যেকোনো অপ্রীতিকর দূর্ঘটনা এড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সুন্দর ভাবে প্রতিমা বিসর্জনের স্থান নিরাপদ রাখতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন জেলা প্রশাসক।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, নারায়ণগঞ্জের ২২৩টি পূজা মণ্ডপে সুষ্ঠুভাবে পূজা উদযাপনে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। শান্তি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে এবং সম্প্রীতি বজায় রেখে বর্তমানে পূজা উদযাপনের প্রস্তুতি চলছে।
এসময় তিনি প্রতিটি মণ্ডপে সুষ্ঠুভাবে ও নির্বিঘ্নে পূজা অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে যথাযথ সহযোগিতার নির্দেশনা দেন।
তিনি বলেন, সকলে মিলে সব উৎসব উদযাপন করাই বাংলার ঐতিহ্য ও গৌরব।
এসময় জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিআইডব্লিউটিএ, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।