উত্তরায় র্যাব পরিচয়ে কোটি টাকা ডাকাতি: গ্রেপ্তার ৫
Published: 19th, June 2025 GMT
রাজধানীর উত্তরা এলাকায় নগদ কোম্পানির ডিস্ট্রিবিউটরের কাছ থেকে র্যাব পরিচয়ে এক কোটি আট লাখ ১১ হাজার টাকা ডাকাতির চাঞ্চল্যকর ঘটনার রহস্য উদঘাটন এবং নগদ ২২ লাখ ১০ হাজার ৭৮০ টাকা, ব্যাংকে গচ্ছিত ১২ লাখ টাকা ও হাইয়েস গাড়িসহ ডাকাত চক্রটির ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) এবং উত্তরা বিভাগ ও উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ। বুধবার (১৮ জুন) রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন-মো.
উত্তরা পশ্চিম থানা সূত্রে জানা যায়, গত ১৪ জুন সকালে নগদের ডিস্ট্রিবিউটর আব্দুল খালেক নয়ন তার উত্তরার ১২ নম্বর রোডের ৩৭ নম্বর বাসা থেকে প্রতিষ্ঠানের ৪ জন কর্মচারীসহ চারটি ব্যাগে এক কোটি আট লাখ ১১ হাজার টাকা নিয়ে দুটি মোটরসাইকেল যোগে উত্তরার নগদের অফিসের উদ্দেশে রওনা হয়। পথে উত্তরা ১২ ও ১৩ নম্বর রোডের সংযোগস্থলে একটি কালো রঙের হাইয়েস মাইক্রোবাস তাদের গতিরোধ করে। মাইক্রোবাস থেকে ‘র্যাব’ লেখা কালো কটি পরিহিত মুখে কালো কাপড় বাঁধা ৬/৭ জন অজ্ঞাত ব্যক্তি হাতে অস্ত্র নিয়ে নামে। তাদের কাছে আসতে দেখে নগদের টাকা বহনকারী কর্মচারীরা টাকার ব্যাগ নিয়ে দৌঁড়ানোর চেষ্টা করে। তখন দুষ্কৃতকারীরা তাদের ধাওয়া করে ৪টি ব্যাগে থাকা টাকা ছিনিয়ে নেয় এবং তাদের ৩ জনকে মাইক্রোবাসে তুলে হাত-চোখ বেঁধে মারধর করে। ঘটনাস্থল থেকে একজন কর্মচারী পালাতে সক্ষম হন।
আরো পড়ুন:
২৫৩ জন গুমের প্রমাণ মিলেছে
‘জঙ্গিবাদবিরোধী’ প্রচারণাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে: কমিশন
নগদের কোটি টাকা ছিনতাইয়ের রহস্য উদঘাটনের দাবি ডিএমপির
পরে ডাকাতরা ৩ জনকে তুরাগ থানার ১৭ নম্বর সেক্টরের বৃন্দাবন এলাকায় ফেলে রেখে টাকা, দুটি অফিসিয়াল মোবাইল ফোন ও তিনটি ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন নিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় আব্দুর রহমানের অভিযোগের ভিত্তিতে উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মামলা করা হয়।
থানা সূত্র জানায়, চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার পর উত্তরা বিভাগ ও ডিবি ঘটনার রহস্য উদঘাটন, আসামি গ্রেপ্তার ও লুণ্ঠিত টাকা উদ্ধারে তৎক্ষণাৎ কাজ শুরু করে। উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনারের নেতৃত্বে উত্তরা বিভাগের এডিসি, এসি, অফিসার ইনচার্জসহ অন্যান্য পুলিশ সদস্যদের সমন্বয়ে একটি চৌকস দল তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ঘটনায় ব্যবহৃত মাইক্রোবাস ও চালককে শনাক্ত করে।
পরে বুধবার (১৮ জুন) রাতে খিলগাঁও থানা এলাকা থেকে মাইক্রোবাসের চালক মো. হাসানকে গ্রেপ্তার করে উত্তরা পশ্চিম থানার একটি টিম। এ সময় তার হেফাজত হতে নকল একটি নেমপ্লেট ও নগদ আট হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়। অতঃপর গ্রেপ্তারকৃত হাসানের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে সবুজবাগ থানার মাদারটেক চৌরাস্তার স্বপন মিয়ার গ্যারেজ থেকে উক্ত ডাকাতির ঘটনায় ব্যবহৃত মাইক্রোবাসটি জব্দ করা হয়।
ডিবি উত্তরা বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ডিবি উত্তরা বিভাগের একটি টিম ঘটনাস্থলসহ আশেপাশের এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ডাকাতির ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করে। পরবর্তীতে উক্ত ডাকাত চক্রের হোতা গোলাম মোস্তফা ঘরামী ওরফে শাহিনকে বুধবার (১৮ জুন) রাতে উত্তরা এলাকা হতে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে লুণ্ঠিত ১৩ লাখ ৩৪ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়। অতঃপর গ্রেপ্তারকৃত শাহিনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ইমদাদুল শরীফকে আদাবর থানাধীন বায়তুল আমান হাউজিং এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয। এ সময় তার নিকট হতে লুষ্ঠিত ৮ লাখ ৪ হাজার ৭৮০ টাকা উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃত শাহিন ও শরীফের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সেনাবাহিনী থেকে অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট শেখ মো. জালাল উদ্দিনকে একই দিন রাতে সবুজবাগ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার নিকট হতে নগদ ৬৩ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জালাল নিজেকে ক্যাপ্টেন জালাল হিসেবে পরিচয় দেয়। জালাল ঘটনার পরদিন লুষ্ঠিত ১২ লাখ টাকা ঢাকা ব্যাংকের নিজ নামে অ্যাকাউন্টে জমা করে। উক্ত টাকা জব্দের ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন।
ডিবি সূত্র জানায়, গ্রেপ্তারকৃতদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ডাকাত চক্রের অন্য সদস্য মো. সাইফুল ইসলাম ওরফে শিপনকে বুধবার রাতে এয়ারপোর্ট রেল স্টেশন এলাকা হতে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের হেফাজত হতে র্যাব ও পুলিশের নকল আইডি কার্ড, লাঠি, সিগনাল লাইট, সেনাবাহিনীর লোগো সম্বলিত মানিব্যাগ, বিভিন্ন ব্যাংকের চেকবই ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
থানা ও ডিবি সূত্রে জানা যায়, ডাকাত দলের দলনেতা মোস্তফা ওরফে শাহিন একজন চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্য এবং শেখ মো. জালাল উদ্দিন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট। এই দলটি দীর্ঘদিন ধরে র্যাব ও পুলিশের পরিচয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতি করে আসছে মর্মে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে।
গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন। মামলার নিবিড় তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে এবং ঘটনায় জড়িত অন্যান্যদের গ্রেপ্তারসহ অবশিষ্ট টাকা উদ্ধারে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
ঢাকা/এমআর/এসবি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গ র প ত র কর গ র প ত রক ত এ সময় ত র ঘটন য় নগদ র সদস য ঘটন র
এছাড়াও পড়ুন:
খুলনায় ব্যবসায়ীকে গলা কেটে হত্যা
খুলনার দৌলতপুর থানার মহেশ্বরপাশা বণিকপাড়ার খানাবাড়ি এলাকায় আল আমিন (৪০) নামের এক ঘের ব্যবসায়ীকে গলা কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। রোববার রাত ৯টার দিকে তাঁকে গলা কেটে রাস্তার ওপর ফেলে যায় তারা।
নিহত আল আমিনের বাড়ি দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশা দিঘির পূর্বপাড় এলাকায়। তিনি ইজারা নিয়ে মাছের ঘেরের ব্যবসা করতেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, রাতে মোটরসাইকেল চালিয়ে মহেশ্বরপাশার বণিকপাড়া খানাবাড়ি সড়ক দিয়ে যাচ্ছিলেন আল আমিন। পথিমধ্যে কয়েকজন দুর্বৃত্ত তাঁর গতিরোধ করে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলা কেটে হত্যা করে পালিয়ে যায়। আল আমিনের মরদের পাশে মোটরসাইকেল পড়ে ছিল।
দৌলতপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জাহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আল আমিনের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা ছিল। কিছুদিন আগে তিনি কারাগার থেকে বের হন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, পূর্বশত্রুতার জেরেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।
পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নিহত ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে। রাতেই খুলনা মহানগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।