Samakal:
2025-06-23@23:27:19 GMT

স্থবির পাথরঘাটার অর্থনীতি

Published: 23rd, June 2025 GMT

স্থবির পাথরঘাটার অর্থনীতি

ট্রলার আটকের পর বরগুনার পাথরঘাটা কোস্টগার্ডের কার্যালয় ঘেরাও করেছিলেন মৎস্যজীবীরা। দুই পক্ষের মধ্যে সেখানে সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনার সপ্তাহখানেক পেরিয়ে গেলেও স্বাভাবিক হয়নি পাথরঘাটার অর্থনৈতিক কার্যক্রম। 
গ্রেপ্তার আতঙ্কে জেলে ও মৎস্যজীবীদের বেশির ভাগই আত্মগোপনে। ফলে পাথরঘাটা মোকামে মাছের পাইকারি কেনাবেচা কমে গেছে দুই-তৃতীয়াংশ।
বিএফডিসি পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মাছের মোকাম। এটি পুরো উপজেলার অর্থনীতির হৃৎপিণ্ড। এটি ঘিরে কর্মসংস্থান হয়েছে কয়েক হাজার শ্রমিকের। মৎস্যজীবী ছাড়াও পরিবহন, বরফ, জ্বালানি ও মুদি-মনোহারি ব্যবসাসহ নানা ধরনের বাণিজ্য হয়। কিন্তু ১৭ জুন সংঘর্ষের পর থেকেই তাদের কর্মকাণ্ড একরকম স্থবির। 
পাথরঘাটা নতুন বাজারের তেল ব্যবসায়ী ইউসুফ মিয়ার ভাষ্য, দিনে গড়ে তিনি ১০০ ব্যারেল ডিজেল (দুই হাজার লিটার) বিক্রি করতেন। এখন এক ব্যারেলও বিক্রি হয় না। তাছাড়া প্রতিটি ট্রলার সাগরে যাওয়ার জন্য ২৫-৩০ হাজার টাকার মুদি-মনোহারিসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনত। এসব দোকানে এখন দিনে ২ হাজার টাকাও বেচাকেনা হয় না।  
সূত্র জানায়, ১৭ জুন কোস্টগার্ডের সদস্য দুটি অবৈধ ট্রলার আটক করে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে পাঁচ শতাধিক জেলে ও ব্যবসায়ী তাদের স্টেশন ঘেরাও করেন। এক পর্যায়ে তারা কোস্টগার্ডের দুটি যানবাহন ভাঙচুর করেন। ফাঁকা গুলি ছুড়ে ও লাঠিপেটা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে কোস্টগার্ড। এ ঘটনায় ৩২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় আট শতাধিক ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা হয়। এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছেন আটজন। এতে জেলে ও মৎস্যজীবীদের মধ্যে গ্রেপ্তার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় তাদের বেশির ভাগই এলাকাছাড়া। 
বিএফডিসিতে মাছ বিক্রি কমে যাওয়ায় সংশ্লিষ্ট সব ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস নেমেছে বলে জানান বরগুনা জেলা ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো.

দুলাল মিয়া। তিনি বলেন, ট্রলারমালিকরা এখন বরফ কিনছেন না। তাই ২০টি বরফকলের উৎপাদন বন্ধ। 
এ বক্তব্যের সত্যতা মেলে উপজেলার আছিয়া বরফকলের মালিক কামরুল ইসলামের বক্তব্যে। তিনি বলেন, ‘কয়েকজন অসৎ মাছ ব্যবসায়ীর জন্য পাথরঘাটার প্রায় সব ব্যবসায়ী ক্ষতির মুখে পড়েছেন। আমরা বরফ বিক্রি করতে পারছি না।  অথচ নিয়মিত বিদ্যুৎ বিল দিতে হয়। ট্রলার মালিকদের কাছে বরফকল মালিকদের বকেয়া কয়েক কোটি টাকা। তারা এখন অন্য মোকাম থেকে বরফ কিনে সাগরে যাচ্ছেন। মাছও বিক্রি করছেন দক্ষিণাঞ্চলের অন্যান্য মোকামে। ইলিশ মৌসুম শেষ হলে ট্রলার মালিকরা বকেয়া দেবেন না। এতে অনেক বরফকল মালিক পথে বসবেন।’
পাথরঘাটা বিএফডিসি মৎস্যবাজার পাইকার সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্বাস উদ্দিনের ভাষ্য, কোস্টগার্ডের সঙ্গে সংঘর্ষের পর অবৈধ ট্রলিং ট্রলার সাগরে যাওয়া বন্ধ। এতে সাগরগামী অন্য ট্রলারের জেলেরা বেশি পরিমাণ ইলিশ পাচ্ছেন। মোহনা সংলগ্ন নদীতেও ইলিশ মিলছে ভালো। কিন্তু জেলেরা পাথরঘাটা মোকাম এড়িয়ে দক্ষিণাঞ্চলের অন্যান্য মোকামে মাছ বিক্রি করছেন। 
তাঁর দেওয়া তথ্যমতে, সাগরে ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয় ১১ জুন। এরপর থেকে ওই কেন্দ্রে দিনে ২০০-৩০০ মণ ইলিশসহ অন্যান্য সামুদ্রিক মাছ বিক্রি হতো। কিন্তু সংঘর্ষের পর থেকে দিনে ২০ মণ ইলিশও মোকামে আসছে না। 
পাথরঘাটা আড়তদার সমিতির দায়িত্বপ্রাপ্ত সভাপতি ছগির আলম বলেন, জেলে ও ট্রলার মালিকদের দাদন দেওয়া আছে কোটি কোটি টাকা। প্রতি ইলিশ মৌসুমে মাছ দিয়ে দাদনের 
টাকা শোধ করেন তারা। কোস্টগার্ডের সঙ্গে মারামারির পর সাগরের অধিকাংশ ট্রলার পাথরঘাটা বিএফডিসি এড়িয়ে অন্য জায়গায় মাছ বিক্রি করছে। এতে একদিকে আড়তদারির টাকা 
পাচ্ছেন না। অন্যদিকে দাদনের টাকাও পরিশোধ করছেন না কেউ। 
কোস্টগার্ডের সঙ্গে জেলের ঝামেলার পর পাথরঘাটার সাধারণ মানুষের ক্ষতি হয়েছে বলে জানান পাথরঘাটা বিএফডিসি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মাসুদ শিকদার। তিনি বলেন, এই কেন্দ্রে দিনে এক-দেড় হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়। সমুদ্রগামী ট্রলার এখানে মাছ বিক্রি করতে আসছে না। তাই সংশ্লিষ্ট সব ব্যবসায় ধস নেমেছে। কর্মহীন শ্রমিকদের অনেকে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন। এ অচলাবস্থা কাটাতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প থরঘ ট র র প থরঘ ট ব যবস য় ব এফড স স ঘর ষ মৎস য

এছাড়াও পড়ুন:

বিদ্যুৎ বিভ্রাটে বন্ধ ২০ বরফকল

ভোলার চরফ্যাসনে বিদ্যুৎ নিয়ে ভোগান্তি থামছেই না। দিনে দুই থেকে তিন ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে। এতে ভোগান্তি পোহাচ্ছে লাখো মানুষ। দিনে-রাতে সমানতালে বিদ্যুৎ বিভ্রাটে সাধারণ গ্রাহকের ভোগান্তির পাশাপাশি বরফকলসহ কারখানায় উৎপাদন চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এতে মৎস্য খাতে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে হাসপাতালে রোগীর কষ্ট বেড়েছে।
ভোলার চরফ্যাসনে দিন রাত মিলিয়ে দু-তিন ঘণ্টার বেশি বিদ্যুৎ মিলছে না। লাগামহীন বিদুৎ বিভ্রাটের কারণে ৩৫টি বরফকলের মধ্যে ২০টি বন্ধ হয়েছে। বাকি ১৫টি সীমিত পরিসরে চলছে। উৎপাদন বন্ধ থাকায় বেকার হয়ে পড়েছেন বরফকলসহ ছোট-বড় কারখানার কয়েকশ শ্রমিক। বরফ উৎপাদন না থাকায় উপকূলের মাছঘাটগুলোতে পচে যাচ্ছে লাখ লাখ টাকার মাছ। চলতি মৌসুমে বরফকল, আড়ত ও ট্রলার মালিক ছাড়াও এ পেশায় সংশ্লিষ্টদের প্রায় ২০ কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে। একই কারণে দুটি অটো রাইস মিলসহ ছোট-বড় অর্ধশত কারখানাও বন্ধ রয়েছে। বাসাবাড়ির বৈদ্যুতিক পাখা, ফ্রিজসহ ইলেকট্রনিকস সামগ্রী অকেজো হয়ে পড়ছে। পৌরসভাসহ উপজেলার লক্ষাধিক গ্রাহক বিদুৎ নিয়ে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়ে আছে। 
সামরাজ আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি আজিজ পাটোয়ারী জানান, বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে বরফ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এতে মাছ সংরক্ষণ নিয়ে বিপদে পড়েছেন তারা। বরফ সংকটের কারণে মাছ মোকামে চালান করতে সমস্যা হচ্ছে। আড়তেই পচে যাচ্ছে লাখ লাখ টাকার মাছ। গত কয়েক দিন দুই কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে তাদের। 
বরফকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম মিয়া জানান, ৫৮ দিন ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা চলাকালে বরফ উৎপাদন বন্ধ ছিল। এখন বরফকল সচল হলেও দেখা দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভ্রাট। এরই মধ্যে ২০টি বরফকল বন্ধ হয়ে গেছে। 
একই অভিযোগ ট্রলার মালিক ছালাউদ্দিনের। তাঁর ভাষ্য, বিদ্যুৎ বিভ্রাটে বরফ উৎপাদন বন্ধ। ট্রলারে মাছ সংরক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত বরফ না থাকায় সাগরে যেতে পারছে না জেলেরা। এতে বেকার হয়ে পড়েছেন লক্ষাধিক জেলে। আর ভরা মৌসুমে লোকসানের মুখে পড়েছেন ট্রলার মালিকরা।
অটো রাইস মিল মালিক কামাল গোলদার জানান, লাগামহীন লোডশেডিংয়ে অনেক রাইস মিল বন্ধ হয়ে গেছে। উৎপাদন বন্ধ থাকায় বেকার হয়ে পড়েছেন শ্রমিকরা।  
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট কয়েকজন জানান, চরফ্যাসন সাব-স্টেশনের ধারণক্ষমতার সীমাবদ্ধতা, ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) টানাপোড়েন এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনে কারিগরি ত্রুটির কারণে বিদ্যুতের এ সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। শীত মৌসুমের আগে চলমান এ বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার সম্ভাবনা নেই বলে জানান তারা। 
বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে, কোরবানি ঈদের আগে থেকেই ভোলার ৩৪ মেগাওয়াট রেন্টালের দুটি ট্রান্সফরমারের মধ্যে একটি বিকল। বোরহানউদ্দিন উপজেলার রেন্টালের একটি ট্রান্সফরমার বিকল। তাই ভোলায় ১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ। সচল ১৪ মেগাওয়াট ট্রান্সফরমার দিয়ে জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ সহনীয় রাখার চেষ্টা চলছে। একটি ট্রান্সফরমার দিয়ে ৩৩ কেভি ফিডার লাইনের মাধ্যমে সীমিত আকারে ছয় উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রাখা হয়েছে।
ওজোপাডিকোর চরফ্যাসন আবাসিক প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানান, ভোলার বোরহানউদ্দিনের ৩৩ কেভি রেন্টালের দুটি ট্রান্সফরমার একটি বিকল। এ কারণে চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাচ্ছে না। দিনে-রাতে এক থেকে দেড় ঘণ্টা করে লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে। 
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) জিএম সুজিত কুমার বিশ্বাস জানান, ভোলার বোরহানউদ্দিনের দুটি রেন্টাল প্লান্টের একটি ট্রান্সফরমার বিকল। দ্রুত সেটি সংস্কারে জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।  

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিদ্যুৎ বিভ্রাটে বন্ধ ২০ বরফকল