শিশুর কান্না ট্যানট্রাম নাকি মেল্টডাউন? দুটির পার্থক্য জেনে রাখা এত জরুরি কেন
Published: 26th, June 2025 GMT
ট্যানট্রাম কী এবং কেন হয়
খেলনা কিনে দিতে রাজি না হওয়ায় দোকানের মেঝেতে শুয়ে হাত-পা ছুড়ে কাঁদতে শুরু করল শিশুটি। চোখে পানি নেই, কিন্তু সেকি কান ফাটানো চিৎকার! কোনো কিছু চেয়ে না পেলে কিংবা তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে গেলেই শিশুর এমন নাটকীয় প্রতিক্রিয়াকে বলা হয় ট্যানট্রাম। শব্দটির বাংলা ‘ইচ্ছাকৃত ক্রোধ বা ক্ষোভ’। অর্থাৎ মনোযোগ আকর্ষণের জন্য শিশুর ইচ্ছাকৃত কান্না হচ্ছে ট্যানট্রাম।
সন্তানের ট্যানট্রামের কারণে প্রায়ই বিপদে পড়েন মা–বাবারা। এদিকে সন্তানের এই ‘যা চাই তা–ই পাই’ মনোভাব তৈরির দায় কিন্তু তাঁদেরই। সাধারণত ১–৪ বছর বয়সী শিশু যখন দেখে যে কোনো কিছুর জন্য কাঁদলে বা জেদ করলেই সেটা পাওয়া যায়, তখন এ ধরনের আচরণ সে আরও বেশি করে। নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে দিন দিন তা বাড়তে থাকে, যা অভিভাবকের মানসিক অশান্তির কারণ হয়।
সাধারণত অল্প সময়ের জন্য শিশু ট্যানট্রাম দেখায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বাইরের লোকের সামনে মা–বাবাকে অপ্রস্তুত করতে এমনটা করে শিশুরা। ওই মুহূর্তে শিশু যা চায়, তাকে তা–ই দিয়ে দিলে সে কান্না থামিয়ে দেয়। না দিলেও কিছুক্ষণ পরই কান্না বন্ধ হয়।
মেল্টডাউন কী এবং কেন হয়আবেগের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যে কেউই কাঁদতে পারে। শিশুরাও ব্যতিক্রম নয়। কারও অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণে দুঃখ পেলে, পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে না পারলে কিংবা অনুভূতি প্রকাশ করতে না পেরে শিশু কাঁদলে সেটা মেল্টডাউন। এটা ট্যানট্রামের মতো ইচ্ছাকৃত বা কৌশলগত আচরণ নয়।
মেল্টডাউন হলে শিশু সাধারণত কোনো কিছু পাওয়ার জন্য জেদ বা মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করে না। সময়-অসময়ে সব শিশুর মেল্টডাউন হলেও অ্যাটেনশন ডেফিশিয়েট হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিজঅর্ডার বা এডিএইচডি–আক্রান্ত শিশুদের তুলনামূলক বেশি মেল্টডাউন হয়।
আরও পড়ুনশিশুর স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর জন্য কী করবেন, কী করবেন না১০ মে ২০২৫ট্যানট্রামের লক্ষণকান্নার পাশাপাশি শিশু চিৎকার করে
কোনো কিছু পাওয়ার জন্য তীব্র জেদ দেখায়
হাতের কাছে থাকা জিনিসপত্র ছুড়ে মেরে ভাঙতে পারে
হাত-পা ছোড়ে
সহিংস আচরণ করে
অন্যকে আঘাত করে
ইচ্ছাপূরণের সঙ্গে সঙ্গে কান্না থামিয়ে দেয়
মেল্টডাউনের লক্ষণশিশু তার কান্না বা মন খারাপের কারণ বুঝিয়ে বলতে পারে না
মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে
নিজেকে বা অন্যকে আঘাত করে
কথা বলা বন্ধ করে দেয়
সমবয়সী শিশুদের সঙ্গে মিশতে চায় না
অমৌখিকভাবে নিজের অনুভূতি বোঝানোর চেষ্টা করে
দুটির পার্থক্য বুঝে যেভাবে পরিস্থিতি সামলাবেনশিশু ট্যানট্রাম দেখালে
জেদ মেনে নেবেন না: শিশু যদি একবার বুঝতে পারে যে সে যা চাইবে তা–ই তাকে দেওয়া হবে, তাহলে সে সব সময় সবকিছুর জন্যই জেদ করবে। তাই সন্তানের অকারণ জেদ সব সময় মেনে নেবেন না।
ভালো ব্যবহারে প্রশংসা করুন: শিশু যখন নিজের রাগ সামলে শান্ত থাকার চেষ্টা করে, তখন তার প্রশংসা করুন। এতে সে শান্ত থাকাকে ইতিবাচক আচরণ হিসেবে দেখে এবং রাগকে খারাপ হিসেবে চিনতে শেখে।
সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ দিন: শিশু কখন, কীভাবে , কী দিয়ে খাবে, খেলবে, পড়বে ইত্যাদি প্রতিদিনের কাজগুলো নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় দিন। শিশুকে ছোট ছোট ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ দিন। যেমন কোন রঙের পোশাক পরবে, হোমওয়ার্কের কোনটি আগে করবে, কোন বইটা পড়বে ইত্যাদি। এতে শিশু নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে, আত্মনির্ভর হতে শেখে এবং রাগ কমে।
শিশুর মেল্টডাউন হলে
পরিবেশ শান্ত রাখুন: বারবার প্রশ্ন করে, কথা বলার চেষ্টা করে শিশুকে আরও উত্তেজিত করে তুলবেন না। সে যেন নিজেকে সামলে উঠতে পারে, সে জন্য তাকে সময় দিন। তাকে বলুন, সে যেকোনো সময় আপনার কাছে আসতে পারে, তার অনুভূতিগুলো আপনার কাছে বলতে পারে।
শান্ত হওয়ার কৌশল শেখান: ধীরে ধীরে শ্বাস নেওয়া, ১ থেকে ১০ পর্যন্ত গোনা অথবা প্রিয় কোনো খেলনা বা যেকোনো প্রিয় জিনিস হাতে নিতে বলুন বা ব্যবহার করতে বলুন। শিশুকে বোঝান যে মাঝেমধ্যে এমন নেতিবাচক অনুভব করা অত্যন্ত স্বাভাবিক এবং সাময়িক একটি ব্যাপার। অনেক সময় ক্ষুধা, তৃষ্ণা, ঘুমের অভাব, অতিরিক্ত বিশ্রাম বা ক্লান্তির কারণেও শিশুর মেল্টডাউন হতে পারে। সন্তানের এসব চাহিদা পূরণে সচেতন থাকুন।
সময় ও জায়গা দিন: মেল্টডাউন হঠাৎ করে হয় না, আবার হঠাৎ করে চলেও যায় না। তাই মেল্টডাউন হলে শিশুকে চুপচাপ এবং একা থাকার সময় ও সুযোগ দিন, যেন সে নিজেই নিজের অনুভূতিগুলো বুঝতে এবং নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
আরও পড়ুনমা-বাবার যে ১০ অভ্যাস শিশুকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে২৫ এপ্রিল ২০২৫চিকিৎসক বা মনোবিদের কাছে কখন যাবেনট্যানট্রাম বা মেল্টডাউন খুব ঘন ঘন হলে এবং তীব্র মনে হলে, একজন বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিতে হবে। শিশুর এডিএইচডি বা লার্নিং ডিজঅর্ডার থাকলে, সে অনেক সময় নিজের আবেগ এবং আচরণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। মানসিকভাবে অত্যন্ত সংবেদনশীল হয়। এ কারণে ছোট ছোট ঘটনাও শিশুর জন্য বড় মানসিক চাপের কারণ হতে পারে। এমন হলে শিশুকে নিয়ে একজন বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে।
সূত্র: হ্যান্ডস্প্রিং
আরও পড়ুনমা-বাবা এই ৭ কাজ করলে বুদ্ধিমত্তায় এগিয়ে যায় শিশু০২ জুন ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ট য নট র ম অন ভ ত র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
টাঙ্গুয়ার হাওরে গাঁজা সেবন ও বিশৃঙ্খলা করায় ৫ পর্যটককে কারাদণ্ড
সুনামগঞ্জে টাঙ্গুয়ায় হাওরে ঘুরতে এসে গাঁজা সেবন করে বিশৃঙ্খল আচরণ করার অভিযোগে পাঁচ পর্যটককে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
বুধবার (২৫ জুন) রাতে সুনামগঞ্জের মধ্যনগর এলাকায় হাওর থেকে ওই পর্যটকদেরকে আটক করা হয়।
উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে, মধ্যনগর এলাকায় টাঙ্গুয়ার হাওরে একটি পর্যটকবাহী হাউজবোটে গাঁজা সেবন করে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করছেন কিছু পর্যটক, এ খবর পেয়ে মধ্যনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে অভিযান চালানো হয়। এ সময় পাঁচ পর্যটককে আটক করা হয়। পরে মাদক সেবন ও সংরক্ষণের দায়ে তাদেরকে ৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ৫০ টাকা অর্থদণ্ড দেন নির্বাহী মাজিস্ট্রেট ও মধ্যনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উজ্জ্বল রায়।
দণ্ডিতরা হলেন—ইশাক হোসেন শান্ত, আনাফ রাজিন, আহমেদ মাহফুজ, নাসির হোসাইন এবং তাহসিন আহমেদ।
মধ্যনগর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উজ্জ্বল রায় বলেছেন, হাওরে ঘুরতে এসে গাঁজা সেবন করে বিশৃঙ্খলা করায় পাঁচ পর্যটককে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। হাওর ভ্রমণকালে কেউ আইন লঙ্ঘন করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঢাকা/মনোয়ার/রফিক