রাবি ক্যাম্পাস সংস্কার ও রাকসু নির্বাচনের দাবিতে শিবিরের বিক্ষোভ
Published: 26th, June 2025 GMT
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাস সংস্কার ও কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণার দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ পালন করেছে শাখা ইসলামী ছাত্রশিবির। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতি ফলক চত্বরে এ কর্মসূচি পালন করে সংগঠনটি।
এদিন বিকেল সাড়ে ৫টায় নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার চত্বরে সমবেত হন। সেখান থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে ক্যাম্পাসের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে মিছিলটি শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলকের সামনে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন।
সমাবেশে শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল মুজাহিদ ফয়সালের সঞ্চালনায় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ, দপ্তর সম্পাদক হাফেজ মেহেদী হাসান, রাজশাহী মহানগর ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল ইমরান নাজির বক্তব্য দেন।
সমাবেশে শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, ‘গত একত্রিশ বছর ধরে ক্যাম্পাসে রাকসু নির্বাচনের মত একটা সম্মানজনক ছাত্রসংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। বর্তমান প্রশাসন শুধু কথা দেওয়ার রাজনীতি করছে। যত কথাই বর্তমান প্রশাসন দিয়েছে তার একটাও তারা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। আমরা প্রশাসনকে বলতে চাই, আপনারা আওয়ামী লীগের মতো কথা দেওয়ার সাংস্কৃতি বন্ধ করেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘একটা প্রচ্ছন্ন শক্তি রাকসু নির্বাচনে বাধা দিচ্ছে। এরা কোনো নির্দিষ্ট দলের বা মতের নয়। ক্যাম্পাসে এমনও শিক্ষক রয়েছে; যারা চায় না তাদের পাশে এসে ছাত্ররা বসুক। এজন্য তারা রাকসু নির্বাচন থেকে বিরত থাকতে চায়। তাদেরকে আমরা চিনে রাখছি। রাকসু নির্বাচন যদি না হয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে হুঁশিয়ারি দিয়ে রাজশাহী মহানগর ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল ইমরান নাজির বলেন, ‘আপনারা জুলাই বিপ্লব-পরবর্তী প্রশাসন। ফ্যাসিস্টদের সরিয়ে আমরাই আপনাদের এই চেয়ারে বসিয়েছি। আপনারা দুই হাজার শহীদের রক্তের ওপর বসে আছেন। কিন্তু আপনাদের আচরণ সেই ফ্যাসিস্ট প্রশাসনের মতোই লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আমরা চাই, আপনারা ছাত্রবান্ধব প্রশাসন হন। এটা না হলে ছাত্ররা ফ্যাসিস্টদের যেভাবে সরিয়েছে, আপনাদের সরাতে দুবার ভাববে না।’
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সন্ত্রাসীর পা কেটে আনলে লাখ টাকার পুরস্কার
যশোরের চৌগাছা উপজেলার ফুলসারা ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে দেওয়ার প্রতিবাদে এলাকাবাসী বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। সেখানে এক বক্তা হামলায় জড়িত সন্ত্রাসী লিটনের পা কেটে আনলে ১ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেন। বিষয়টি নিয়ে নানা আলোচনা শুরু হয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে যশোর-চৌগাছা সড়কের ফুলসারা নিমতলা বাজারে শুরু হয় এলাকাবাসীর বিক্ষোভ। কয়েক ঘণ্টা ধরে চলে এই বিক্ষোভ। শুরুতে সড়ক অবরোধ করা হলেও পরে রাস্তার পাশেই সমাবেশ করেন তারা।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, বিক্ষোভ চলাকালে মাইকে সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে নানা স্লোগান ও বক্তব্য দেওয়া হয়। এরই মধ্যে ইকবাল হোসেন নামের এক ব্যক্তি তাঁর বক্তব্যের এক পর্যায়ে সন্ত্রাসী লিটনের পা কেটে আনতে পারলে ১ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেন। এ সময় উপস্থিত জনতা করতালি দিয়ে বক্তব্যের প্রতি সমর্থন জানায়।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ফুলসারা গ্রামের আবদুল লতিফ বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান ঢালি এলাকায় সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। চাঁদা না পেয়ে পিটিয়ে তাঁর হাত-পা ভেঙে দিয়েছে চিহ্নিত সন্ত্রাসী লিটন, মামুন, টিটো ও তাদের সহযোগীরা। এদের শাস্তির দাবিতে দলমত নির্বিশেষে মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেন।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে ইকবাল হোসেনের মোবাইল ফোনে কল দিয়েও সংযোগ পাওয়া যায়নি। তবে আব্দুল লতিফ বলেন, ‘ক্ষোভে পড়ে হয়তো উনি (ইকবাল) পায়ের মূল্য ঘোষণা করেছেন। তবে এলাকার সব মানুষ সন্ত্রাসী লিটন ও তার লোকজনের ওপর চরম ক্ষুব্ধ। চেয়ারম্যানের হাত-পা ভেঙে দেওয়ার ঘটনা কেউ মেনে নিতে পারছেন না।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ফুলসারা ইউপি চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী মাসুদ চৌধুরী। ৫ আগস্টের পর আত্মগোপনে যান তিনি। চলতি বছরের ২৮ এপ্রিল তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। একই ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন সভাপতি জিয়াউর রহমান ঢালি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান।
জিয়াউর রহমান ঢালির স্বজনের ভাষ্য, দায়িত্ব পাওয়ার পর স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী ও একাধিক মামলার আসামি লিটনসহ পাঁচ-ছয়জন জিয়াউর রহমানের কাছে চাঁদা দাবি করে আসছিলেন। তিনি এতে রাজি না হওয়ায় ক্ষুব্ধ হন লিটন। বুধবার দুপুরে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মোটরসাইকেলে করে বাড়িতে ফিরছিলেন জিয়াউর। পথে লিটন সহযোগীদের নিয়ে গতিরোধ করে। পরে অস্ত্র ঠেকিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করে। হকিস্টিক দিয়ে জিয়াউরের দুই পা ও হাত ভেঙে তারা পালিয়ে যায়।
স্থানীয় লোকজন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। জরুরি বিভাগের চিকিৎসক হাসিবুর রহমান বলেন, আশঙ্কাজনক অবস্থায় আনা হলেও এখন জিয়াউর রহমান শঙ্কামুক্ত।
চিকিৎসাধীন জিয়াউর ঢালি জানান, ‘চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে একটি পক্ষ আমাকে মেনে নিতে পারছে না। তারা আমাকে হত্যার চেষ্টা শুরু করে। সন্ত্রাসী লিটন ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। ওই টাকা না দেওয়ায় হামলা চালিয়েছে। মারধরের এক পর্যায়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলির চেষ্টা করছিল; কিন্তু লোকজন চলে আসায় তারা পালিয়ে যায়।’
চৌগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন জানান, হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের আটকে পুলিশি অভিযান চলছে। এখনও কেউ মামলা করেননি।