আলুর দাম বাড়াতে চান হিমাগারমালিকেরা
Published: 23rd, July 2025 GMT
আলুর উৎপাদন খরচের তুলনায় বাজারমূল্য কম—এমন তথ্য জানিয়ে কোল্ডস্টোরেজ বা হিমাগার পর্যায়ে আলুর দাম বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তাঁরা বলছেন, আলু চাষ করেন, এমন কৃষকদের অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে হলে হিমাগারের গেটে আলুর ন্যূনতম মূল্য কেজিপ্রতি ২৫ টাকা করা প্রয়োজন।
সম্প্রতি হিমাগারের গেটে আলুর দাম বাড়ানোর দাবি জানিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ হিমাগার সমিতি। একই সঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয় ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবদের কাছেও চিঠির অনুলিপি দেয় সংগঠনটি।
চিঠিতে হিমাগার সমিতির সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী জানান, ২০২৪ সালে দেশে আলুর দাম অনেক বেশি ছিল। অধিকাংশ সময় আলুর কেজি ছিল ৬০ থেকে ৮০ টাকা। তবে চলতি বছর গত কয়েক মাসে আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫-৩০ টাকা দরে। গত বছর কৃষকেরা আলুর দাম ভালো পাওয়ায় চলতি বছর তাঁরা রেকর্ড পরিমাণে আলু উৎপাদন করেছেন। প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, ২০২৫ সালে দেশে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ টন আলু উৎপাদিত হয়েছে।
মোস্তফা আজাদ চৌধুরী আরও বলেন, ‘চলতি বছর চাহিদার তুলনায় প্রায় ৪০ লাখ টন বেশি আলু উৎপাদিত হয়েছে। এ কারণে আলুর বাজারমূল্য বর্তমানে অনেক কম। অথচ কৃষকেরা উৎপাদন খরচই তুলতে পারছেন না।’
দেশে আলুর প্রধান মৌসুম সাধারণত ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসে (শীতকাল) হয়ে থাকে। এ সময় নতুন আলু বাজারে আসে এবং কৃষকেরা সরাসরি নতুন আলু বাজারে বিক্রি করেন। ফলে দাম কম থাকে। মার্চ-এপ্রিল মাস থেকে কৃষক ও আড়তদারেরা আলু হিমাগারে মজুত করেন। এরপর সারা বছর ধরে হিমাগার ফটক থেকে আলু পাইকারি দরে বিক্রি হয়।
হিমাগার সমিতির সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন, বর্তমানে এলাকাভেদে হিমাগার গেটে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ১৩ থেকে ১৫ টাকায়। অথচ চলতি বছর প্রতি কেজি আলু উৎপাদনে কৃষকের ব্যয় হয়েছে গড়ে ১৭ টাকা করে। এর সঙ্গে হিমাগারে আলু সংরক্ষণ ভাড়া ও অন্যান্য খরচ যোগ করলে এ ব্যয় দাঁড়ায় প্রায় ২৫ টাকা। অর্থাৎ বর্তমানে কৃষকের মোট খরচের তুলনায় কেজিতে প্রায় ১০-১২ টাকা কম দামে হিমাগার গেটে আলু বিক্রি হচ্ছে। এ কারণে কৃষকেরা বড় ধরনের লোকসানে পড়ছেন।
মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন, এ অবস্থায় আলু চাষকারী কৃষকদের অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষার হিমাগার গেটে কেজিপ্রতি আলুর ন্যূনতম বিক্রয় মূল্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করা একান্ত প্রয়োজন। এটি নিশ্চিত করতে না পারলে আগামী বছর কৃষকেরা আলু চাষে নিরুৎসাহিত হবেন। ফলে ২০২৪ সালের মতো আলুর অস্বাভাবিক উচ্চ মূল্য দেখা যেতে পারে।
খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে আলু বিক্রির অনুরোধ
সরকারি একাধিক খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে আলু বিক্রি কার্যক্রম চালুর অনুরোধও জানিয়েছে হিমাগার সমিতি। সম্প্রতি সরকার দেশের ৫৫ লাখ নিম্ন আয়ের পরিবারের কাছে প্রতি মাসে ১৫ টাকা কেজি দরে সর্বোচ্চ ৩০ কেজি চাল বিক্রির কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। আগামী আগস্ট থেকে এ কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা।
এ কার্যক্রমে আলুকেও যুক্ত করার অনুরোধ জানিয়েছে হিমাগার সমিতি। সংগঠনটি বলেছে, নিম্ন আয়ের পরিবারকে চালের পাশাপাশি ১০ কেজি করে আলু দেওয়া (বিক্রি) যেতে পারে। এ ছাড়া সারা দেশে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ট্রাকসেল (ট্রাকে করে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রি) কার্যক্রমেও আলু বিক্রি করতে পারে সরকার। তাতে দেশে আলুর ব্যবহার ও দাম বাড়বে এবং আলুচাষিরাও উপকৃত হবেন।
হিমাগার সমিতি বলেছে, বর্তমানে দেশের ৩৫০টির বেশি হিমাগারে প্রায় ৩৫ লাখ টন আলু সংরক্ষিত আছে। হিমাগার গেটে আলুর দাম না বাড়লে এই আলুর অন্তত ২০ থেকে ৩০ শতাংশ হিমাগার থেকে খালাস হবে না। অর্থাৎ যাঁরা আলু রেখেছেন, তাঁরা নির্ধারিত সময়ে এগুলো নেবেন না। ফলে অন্তত ৭ থেকে ১০ লাখ টন আলু হিমাগারে অবিক্রীত থেকে যাবে। বছর শেষে এই আলু হিমাগারমালিকেরা কোথায় ফেলবেন, তার কোনো স্থান নেই। এতে পরিবেশ বিপর্যয়েরও মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। সার্বিক বিবেচনায় আলুর দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়ার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছে হিমাগার সমিতি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আল র দ ম ব ড় আজ দ চ ধ র ল খ টন অন র ধ উৎপ দ
এছাড়াও পড়ুন:
পরিবহনশ্রমিকদের নির্বাচন কাল, চলবে না প্রাইম মুভারসহ কনটেইনারবাহী গাড়ি
আগামীকাল সোমবার কনটেইনার পরিবহনের গাড়িচালক ও সহকারীদের সংগঠন চট্টগ্রাম জেলা প্রাইম মুভার ট্রেলার, কংক্রিট মিক্সচার, ফ্ল্যাটবেড ও ড্রাম ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যকরী পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন উপলক্ষে কাল সকাল ছয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত কনটেইনার পরিবহনের গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকার ঘোষণা দিয়েছে এ–সংক্রান্ত নির্বাচন উপপরিষদ।
কাল সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত বন্দর রিপাবলিক ক্লাবে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন উপলক্ষে কনটেইনার পরিবহনের গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখায় বন্দর ব্যবহারকারীদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। কারণ, এই গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকলে বন্দরে জাহাজ থেকে কনটেইনার ওঠানো-নামানো, ডিপো ও বন্দরে আমদানি-রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনার আনা-নেওয়ার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে।
বন্দরসচিব ওমর ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, ‘কনটেইনার পরিবহনের গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকলে বন্দরে কনটেইনার ওঠানো-নামানো ও পরিবহনের কাজে ব্যাহত হবে। তাই পালাক্রমে ভোট দিয়ে যাতে গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক রাখা যায়, সে জন্য তাঁদের আহ্বান জানাই।’
প্রাইম মুভার ট্রেলারে করে প্রতিদিন গড়ে রপ্তানি পণ্যবাহী দুই হাজার কনটেইনার ডিপোগুলো থেকে বন্দরে নেওয়া হয়। আবার আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনার বন্দর থেকে ডিপোতে নেওয়া হয় এ ধরনের গাড়িতে।
জানতে চাইলে কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব রুহুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, সংগঠনটির সদস্যরা গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক রেখে ভোট দিতে পারেন। তাহলে কাজের ক্ষতি হবে না।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সংগঠনটির নির্বাচন উপপরিষদের চেয়ারম্যান মো. ওয়াহিদুজ্জামান জাহিদ প্রথম আলোকে বলেন, ভোটদানের সুবিধার জন্য এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে চাইলে ভোট দিয়ে গাড়ি চালাতে পারবেন যে কেউ। আশা করি দুপুরের পর থেকে গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক হবে।
ওয়াহিদুজ্জামান জাহিদ বলেন, কনটেইনার পরিবহনের সাড়ে ৯ হাজার প্রাইম মুভার ট্রেলার রয়েছে। ভোটার হলেন ১০ হাজার ৪৫২ জন। তিন বছর মেয়াদে এই নির্বাচনে ২৫ পদে ৬৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।