আলুর উৎপাদন খরচের তুলনায় বাজারমূল্য কম—এমন তথ্য জানিয়ে কোল্ডস্টোরেজ বা হিমাগার পর্যায়ে আলুর দাম বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তাঁরা বলছেন, আলু চাষ করেন, এমন কৃষকদের অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে হলে হিমাগারের গেটে আলুর ন্যূনতম মূল্য কেজিপ্রতি ২৫ টাকা করা প্রয়োজন।

সম্প্রতি হিমাগারের গেটে আলুর দাম বাড়ানোর দাবি জানিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ হিমাগার সমিতি। একই সঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয় ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবদের কাছেও চিঠির অনুলিপি দেয় সংগঠনটি।

চিঠিতে হিমাগার সমিতির সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী জানান, ২০২৪ সালে দেশে আলুর দাম অনেক বেশি ছিল। অধিকাংশ সময় আলুর কেজি ছিল ৬০ থেকে ৮০ টাকা। তবে চলতি বছর গত কয়েক মাসে আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫-৩০ টাকা দরে। গত বছর কৃষকেরা আলুর দাম ভালো পাওয়ায় চলতি বছর তাঁরা রেকর্ড পরিমাণে আলু উৎপাদন করেছেন। প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, ২০২৫ সালে দেশে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ টন আলু উৎপাদিত হয়েছে।

মোস্তফা আজাদ চৌধুরী আরও বলেন, ‘চলতি বছর চাহিদার তুলনায় প্রায় ৪০ লাখ টন বেশি আলু উৎপাদিত হয়েছে। এ কারণে আলুর বাজারমূল্য বর্তমানে অনেক কম। অথচ কৃষকেরা উৎপাদন খরচই তুলতে পারছেন না।’

দেশে আলুর প্রধান মৌসুম সাধারণত ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসে (শীতকাল) হয়ে থাকে। এ সময় নতুন আলু বাজারে আসে এবং কৃষকেরা সরাসরি নতুন আলু বাজারে বিক্রি করেন। ফলে দাম কম থাকে। মার্চ-এপ্রিল মাস থেকে কৃষক ও আড়তদারেরা আলু হিমাগারে মজুত করেন। এরপর সারা বছর ধরে হিমাগার ফটক থেকে আলু পাইকারি দরে বিক্রি হয়।

হিমাগার সমিতির সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন, বর্তমানে এলাকাভেদে হিমাগার গেটে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ১৩ থেকে ১৫ টাকায়। অথচ চলতি বছর প্রতি কেজি আলু উৎপাদনে কৃষকের ব্যয় হয়েছে গড়ে ১৭ টাকা করে। এর সঙ্গে হিমাগারে আলু সংরক্ষণ ভাড়া ও অন্যান্য খরচ যোগ করলে এ ব্যয় দাঁড়ায় প্রায় ২৫ টাকা। অর্থাৎ বর্তমানে কৃষকের মোট খরচের তুলনায় কেজিতে প্রায় ১০-১২ টাকা কম দামে হিমাগার গেটে আলু বিক্রি হচ্ছে। এ কারণে কৃষকেরা বড় ধরনের লোকসানে পড়ছেন।

মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন, এ অবস্থায় আলু চাষকারী কৃষকদের অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষার হিমাগার গেটে কেজিপ্রতি আলুর ন্যূনতম বিক্রয় মূল্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করা একান্ত প্রয়োজন। এটি নিশ্চিত করতে না পারলে আগামী বছর কৃষকেরা আলু চাষে নিরুৎসাহিত হবেন। ফলে ২০২৪ সালের মতো আলুর অস্বাভাবিক উচ্চ মূল্য দেখা যেতে পারে।

খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে আলু বিক্রির অনুরোধ

সরকারি একাধিক খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে আলু বিক্রি কার্যক্রম চালুর অনুরোধও জানিয়েছে হিমাগার সমিতি। সম্প্রতি সরকার দেশের ৫৫ লাখ নিম্ন আয়ের পরিবারের কাছে প্রতি মাসে ১৫ টাকা কেজি দরে সর্বোচ্চ ৩০ কেজি চাল বিক্রির কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। আগামী আগস্ট থেকে এ কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা।

এ কার্যক্রমে আলুকেও যুক্ত করার অনুরোধ জানিয়েছে হিমাগার সমিতি। সংগঠনটি বলেছে, নিম্ন আয়ের পরিবারকে চালের পাশাপাশি ১০ কেজি করে আলু দেওয়া (বিক্রি) যেতে পারে। এ ছাড়া সারা দেশে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ট্রাকসেল (ট্রাকে করে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রি) কার্যক্রমেও আলু বিক্রি করতে পারে সরকার। তাতে দেশে আলুর ব্যবহার ও দাম বাড়বে এবং আলুচাষিরাও উপকৃত হবেন।

হিমাগার সমিতি বলেছে, বর্তমানে দেশের ৩৫০টির বেশি হিমাগারে প্রায় ৩৫ লাখ টন আলু সংরক্ষিত আছে। হিমাগার গেটে আলুর দাম না বাড়লে এই আলুর অন্তত ২০ থেকে ৩০ শতাংশ হিমাগার থেকে খালাস হবে না। অর্থাৎ যাঁরা আলু রেখেছেন, তাঁরা নির্ধারিত সময়ে এগুলো নেবেন না। ফলে অন্তত ৭ থেকে ১০ লাখ টন আলু হিমাগারে অবিক্রীত থেকে যাবে। বছর শেষে এই আলু হিমাগারমালিকেরা কোথায় ফেলবেন, তার কোনো স্থান নেই। এতে পরিবেশ বিপর্যয়েরও মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। সার্বিক বিবেচনায় আলুর দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়ার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছে হিমাগার সমিতি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আল র দ ম ব ড় আজ দ চ ধ র ল খ টন অন র ধ উৎপ দ

এছাড়াও পড়ুন:

জকসুতে একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে তাড়াহুড়ো করেছে প্রশাসন: ছাত্রদল

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) নির্বাচনের বিধিমালা প্রণয়নে প্রশাসন একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে তাড়াহুড়ো করেছে বলে অভিযোগ করেছে শাখা ছাত্রদল। 

বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা শহীদ রফিক ভবনের নিচে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির নেতারা এ অভিযোগ তুলে ধরেন।

আরো পড়ুন:

ইডিএস মাস্টার্স ফেলোশিপ পেলেন ঢাবি শিক্ষার্থী

সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে  মাদকবিরোধী কার্যক্রমে এগিয়ে আসতে হবে: জবি উপাচার্য

লিখিত বক্তব্যে শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল বলেন, “আমাদের প্রত্যাশা ছিল প্রশাসন একটি আধুনিক, যুগোপযোগী ও বাস্তবসম্মত জকসু নীতিমালা প্রণয়ন করবেন। কিন্তু আমরা দেখেছি, প্রশাসন একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে তাড়াহুড়ো করেছে, যা হতাশাজনক।”

তিনি বলেন, “জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর প্রথমবার জকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আমরা চাই এটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হোক—যাতে জকসু শিক্ষার্থীদের প্রকৃত প্রতিনিধি নির্বাচনের মুক্ত মঞ্চে পরিণত হয়, কোনো দলীয় প্রভাবের শিকার না হয়।”

তিনি আরো বলেন, “জকসুর মেয়াদ ও দায়িত্বের ক্ষেত্র নির্দিষ্ট ও বাস্তবসম্মত করা, সদস্যপদের যোগ্যতা সহজ করা এবং সংবিধানে শিক্ষার্থীদের কল্যাণমূলক কার্যক্রমে গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। এছাড়া উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষের সঙ্গে সমন্বয়ের ক্ষমতা শুধু সহ-সভাপতির মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে সাধারণ সম্পাদক ও সহসাধারণ সম্পাদককেও যুক্ত করতে হবে।”

সংগঠনটি জকসুর কাঠামোতে নতুন ১০টি পদ সংযোজনের প্রস্তাব করেছে তারা। প্রস্তাবিত পদগুলো হলো— বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীবিষয়ক সম্পাদক, ছাত্রীকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক (শুধু নারীদের জন্য), দক্ষতা উন্নয়ন (ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট) সম্পাদক, ধর্ম ও সম্প্রীতি সম্পাদক, মিডিয়া ও যোগাযোগ সম্পাদক, দফতর সম্পাদক, বিতর্ক সম্পাদক, স্বাস্থ্য সম্পাদক, পরিবেশ সম্পাদক, সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সম্পাদক এবং কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়াবিষয়ক সম্পাদক।

এর আগে, ছাত্রদলের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে মুক্তিযুদ্ধ ও গণতন্ত্র সম্পাদক, আইন ও মানবাধিকার সম্পাদক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক এবং একটি সদস্য পদ জকসু বিধিমালায় সংযোজন করা হয়েছে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব শামসুল আরেফিন বলেন, “আমাদের নেতাকর্মীরা সবাই যোগ্য। তবে এখনো প্যানেল নিয়ে চূড়ান্ত আলোচনা হয়নি। নির্বাচনে অধিক গ্রহণযোগ্য প্রার্থীদের নিয়েই প্যানেল প্রকাশ করা হবে।”

তিনি বলেন, “আমরা এমফিল ও পিএইচডি শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্ত রাখার দাবি জানিয়েছিলাম, কিন্তু তা রাখা হয়নি। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ থাকলেও জকসুতে তা নেই। এছাড়া বিগত ফ্যাসিস্টদের বিচার না হওয়াটা প্রশাসনের ব্যর্থতা।”

সংবাদ সম্মেলনে শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক, আহ্বায়ক সদস্যসহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/লিমন/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এনসিপির জাতীয় ছাত্রশক্তির কমিটি ঘোষণা, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে জাহিদ–বাকের
  • জকসুতে একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে তাড়াহুড়ো করেছে প্রশাসন: ছাত্রদল