কে হবেন ভারতের পরবর্তী উপরাষ্ট্রপতি, মোদি ফিরলে সিদ্ধান্ত
Published: 25th, July 2025 GMT
কে হবেন ভারতের পরবর্তী উপরাষ্ট্রপতি, সেই কৌতূহলের অবসান ঘটবে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশে ফেরার পর। তবে ক্ষমতাসীন দল বিজেপি এটুকু বুঝতে পারছে, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে দলের প্রতি শতভাগ নিবেদিত, এমন কাউকে ওই পদে বসানো উচিত। বিদায়ী উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ের আচরণ থেকে শিক্ষা নিয়েই বিজেপির ওই সিদ্ধান্ত।
ক্ষমতাসীন দলের পাশাপাশি বিরোধীরাও এই নির্বাচনকে ঘিরে কৌশলী হতে চাইছে। বিরোধীরা ঠিক করেছে, সম্মিলিত প্রার্থী ঠিক করেই তারা উপরাষ্ট্রপতি ভোটে লড়াই করবে। সে জন্য ইন্ডিয়া জোটের প্রতিটি শরিকের সঙ্গে কথা বলা হবে। হার অবধারিত জেনেও বিরোধীরা চাইছে বিহার ভোটের আগে নিজেদের ঐক্যবদ্ধতার প্রমাণ রাখতে। প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস গতবারের মতো ভুল এবার আর করতে চায় না।
উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রক্রিয়া নির্বাচন কমিশন শুরু করে দিলেও ভোট কবে হবে, সেই তফসিল এখনো ঘোষণা করেনি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দুই দিনের যুক্তরাজ্য সফর শেষে আজ শুক্রবার মালদ্বীপে পৌঁছেছেন। সেখানেও দুই দিনের সফরে মালদ্বীপের ৬০তম স্বাধীনতা দিবস এবং ভারত–মালদ্বীপ কূটনৈতিক সম্পর্কের ৬০ বছর পূর্তির অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন তিনি। নরেন্দ্র মোদি মালদ্বীপ সফর শেষ করে দেশে ফিরলে বিজেপি প্রার্থী পছন্দের কাজ সেরে ফেলবে। দ্বিধাহীন আনুগত্য আছে, এমন প্রার্থী বেছে নেওয়ার পর শরিকদের সঙ্গে বিজেপি নেতৃত্ব আলোচনা সারবে। দলের এক সূত্রের কথায়, এ ক্ষেত্রে বিজেপি শরিকদের সঙ্গে আগাম আলোচনায় বসতে বিশেষ রাজি নয়।
বিজেপি কাকে প্রার্থী ঠিক করে, তা দেখে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ তাদের প্রার্থী বাছাই নিয়ে আলোচনায় বসবে। প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে এবার কংগ্রেস গতবারের ভুলের পুনরাবৃত্তি করতে রাজি নয়। ২০২২ সালে উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অন্য কারও সঙ্গে আলোচনা না করেই কংগ্রেস তাদের প্রার্থী মার্গারেট আলভার নাম ঘোষণা করেছিল। সেই প্রার্থীকে তৃণমূল কংগ্রেস ও আম আদমি পার্টি মেনে নেয়নি। ওই দুই দল ধনখড় বা আলভা কাউকেই ভোট দেয়নি। বিরোধীদের মোট ৫৫ জন ভোটদানে বিরত ছিলেন। ধনখড় জিতেছিলেন ৩৪৬ ভোটে।
লোকসভা ও রাজ্যসভার সদস্যদের ভোটে উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। দুই কক্ষেই সরকারপক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। কাজেই ‘ক্রস ভোটিং’ না হলে শাসক দলের প্রার্থীর জয় নিয়ে সংশয় নেই। লোকসভা ও রাজ্যসভার মিলিত সদস্যসংখ্যা ৭৮২। জয়ের জন্য প্রয়োজন ৩৯২ জনের সমর্থন। লোকসভায় বিজেপি ও তার জোটসঙ্গীদের মোট ভোট ২৯৩। রাজ্যসভায় শাসক জোটের রয়েছে ১৩০ জনের সমর্থন। তুলনায় লোকসভায় ইন্ডিয়া জোটের ভোট ২৩৪ জন, রাজ্যসভায় ৭৯।
দল ও আদর্শের প্রতি শতভাগ নিবেদিত ও প্রশ্নহীন আনুগত্য থাকা নেতার সংখ্যা বিজেপিতে কম নয়। তাঁদের মধ্যে কাকে উপরাষ্ট্রপতি করা যেতে পারে, তা চূড়ান্ত হবে প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতের আলোচনার ভিত্তিতে। বিজেপিতে এই মুহূর্তে মোদি ও অমিত শাহর ইচ্ছাই প্রথম ও শেষ কথা। তাঁরা চাইছেন রাজনাথ সিংয়ের মতো এমন কাউকে পছন্দ করতে, যিনি সংঘের আদর্শে অনুপ্রাণিত, দলের প্রতি নিবেদিত এবং সংসদীয় গণতন্ত্রে অভিজ্ঞ। প্রবলভাবে পরিচিত এবং বিরোধীদের সঙ্গে যাঁর রাজনৈতিক সখ্য সুবিদিত, এমন ব্যক্তিকে বেছে নিতে দল আগ্রহী। আবার বিহার বিধানসভা ভোট প্রভাবিত করবে, এমন কাউকে যদি প্রার্থী বাছতে হয় এবং সেই বাছাইয়ের মধ্য দিয়ে যদি সর্বভারতীয় রাজনৈতিক বার্তা দিতে হয়, তাহলে আরিফ মহম্মদ খানের মতো কাউকে পছন্দ করা যেতে পারে। কংগ্রেস, জনতা দল ও বহুজন সমাজ পার্টি হয়ে আরিফ মহম্মদ খান ২০০৪ সালে বিজেপিতে যোগ দেন। মোদির বিশ্বাসভাজন আরিফ মহম্মদ খান কিছুকাল আগেও কেরালার রাজ্যপাল ছিলেন। বর্তমানে তিনি বিহারের রাজ্যপাল।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপর ষ ট রপত র জ যসভ দল র প ল কসভ
এছাড়াও পড়ুন:
দেশে বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন এম এন লারমা
মানবেন্দ্র নারায়ণ (এম এন) লারমাই দেশে প্রথম আত্মপরিচয়ের রাজনীতিকে বৈজ্ঞানিকভাবে চিহ্নিত করেছিলেন। তিনি প্রথম দেশে কাঠামোগতভাবে আত্মপরিচয়ের রাজনীতিকে স্পষ্ট করেন। একটি বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন তিনি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য এম এন লারমার ৮৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সোমবার রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।
‘বিপ্লবী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৮৬ম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন কমিটি’ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। পরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানানো হয়।
আলোচনা সভায় লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, ১৯৫৫-৬৫ সালের মধ্যে তৈরি হওয়া ‘বাইনারি বিভাজন’ পরবর্তীকালে প্রতিষ্ঠা করেছে বাংলাদেশে সরকার। ‘বাইনারি’ মনস্তত্ত্বকে এখনো এই দেশে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। এম এন লারমা ‘বাঙালি হেজিমনি’র বিরুদ্ধে আত্মপরিচয়ের বয়ান বাঁচিয়ে রাখতে তৎকালে জোরালো প্রতিবাদ করেছিলেন।
জেএসএসের কেন্দ্রীয় সদস্য দীপায়ন খীসা বলেন, কাপ্তাই বাঁধ না করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়েই ছাত্র এম এন লারমার প্রতিবাদী জীবন শুরু হয়। চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের পর যে বৈষম্যহীন, অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের কথা বলা হচ্ছে, এম এন লারমা ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নকালেই এসব বিষয় নিয়ে জোরালো বক্তব্য দিয়েছিলেন।
দীপায়ন খীসা বলেন, ‘সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে সংবিধান সংস্কার কমিশন বা জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কখনো ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের সঙ্গে সংলাপ করেনি। আমরাও এই দেশের অংশ। তাহলে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের কেন কোনো সংলাপে অংশগ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানানো হলো না?’ তিনি বলেন, চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদেরও অংশীদারত্ব আছে। কিন্তু অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে তাদেরই ভুলে গেল এই সরকার।
সভাপতির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেন বলেন, ‘বাঙালি হয়ে যাও’ কথাটার পেছনে বাঙালি মুসলিমদের জাত্যভিমানের ব্যাপারটি রয়েছে। এম এন লারমা বাংলাদেশের মধ্যে থেকে নিজেদের অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য আন্দোলন শুরু করেছিলেন। সেই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে পরবর্তীকালে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি’ নামে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক শান্তিময় চাকমার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের অর্থ সম্পাদক মেইনথিন প্রমীলা, সাংবাদিক এহসান মাহমুদ, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অং শোয়ে সিং মারমা।
অনুষ্ঠানটি শুরু হয় এম এন লারমাকে সম্মান জানিয়ে কবিতা পাঠের মাধ্যমে। কবিতা পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রেই চাকমা ও লাল নিকিম বম। কবিতা আবৃত্তির পর এম এন লারমার জীবনবৃত্তান্ত পাঠ করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশন ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রিয়া চাকমা।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের তথ্য প্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক হিরণ মিত্র চাকমা, জেএসএসের কেন্দ্রীয় স্টাফ সদস্য অনন্ত বিকাশ ধামাই, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি শান্তিদেবী তঞ্চঙ্গ্যা, পিসিপি ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি জগদীশ চাকমা, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যা।