এক সময় ছিল, যখন সন্তানের আবেগ, দুষ্টুমি বা হঠাৎ রাগ দেখে বাবা-মা মুচকি হেসে বলতেন—“বয়স হয়েছে, ঠিক হয়ে যাবে।” কিন্তু আজ, সেই দুষ্টুমি পরিণত হয়েছে এমন আচরণে, যা অনেক সময় বাবা-মা পর্যন্ত চেনেন না। সন্তান চোখে চোখ রাখে না, ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয়, কথা বললে রাগে ফেটে পড়ে। এই চিত্র এখন বিশ্বব্যাপী। মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন—আমরা এক ‘Adolescent Syndrome’ বা ‘Teenage Behavioral Crisis’-এর মুখোমুখি, যা বিশেষ করে মেয়েদের মধ্যে আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে।

আচরণগত বিপর্যয়ের পেছনে বিজ্ঞান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিনএজ সিনড্রোমের প্রধান কারণ তিনটি:

হরমোনের দোলাচল: ইস্ট্রোজেন ও টেস্টোস্টেরনের ওঠানামা টিনএজারদের আচরণে গভীর প্রভাব ফেলে। মেয়েদের ক্ষেত্রে এই হরমোনাল পরিবর্তন দীর্ঘস্থায়ী ও সংবেদনশীল হয়ে ওঠে, যা আচরণে অতিরিক্ত আবেগ ও বিদ্রোহের জন্ম দেয়।

মস্তিষ্কের অসম্পূর্ণ বিকাশ: ১৩-১৯ বছর বয়সে মস্তিষ্কের যুক্তিবোধ ও নিয়ন্ত্রণ-সম্পর্কিত অংশ (prefrontal cortex) এখনও গঠনের পর্যায়ে থাকে। ফলে তারা আবেগে সিদ্ধান্ত নেয়, ঝুঁকি নেয়, এবং কখন কী বলতে হবে—তা বোঝে না।

প্রযুক্তির নীরব আগ্রাসন: TikTok, Instagram, Snapchat—এসব প্ল্যাটফর্মে মেয়েরা দিনে গড়ে ৬–৮ ঘণ্টা সময় কাটায়। সোশ্যাল মিডিয়ার ভুয়া সৌন্দর্য ধারণা, জনপ্রিয়তার চাপ, ফিল্টার সংস্কৃতি তাদের আত্মপরিচয়কে বিকৃত করে তুলছে।

কেন বেশি দেখা যায় মেয়েদের মধ্যে?

Emotional Sensitivity: মেয়েরা আত্মপরিচয় ও আত্মমূল্যায়নে বেশি স্পর্শকাতর।
Beauty Pressure: সোশ্যাল মিডিয়ায় নারীদের শরীর, ত্বক, স্টাইল—সবকিছু নিয়েই এক অনিয়ন্ত্রিত চাপ কাজ করে।
Hormonal Impact: মাসিক চক্র ও হরমোন ওঠানামা তাদের মুড, আবেগ ও আচরণে ব্যাপক প্রভাব ফেলে।

বাবা-মা কি আগের তুলনায় বেশি সমস্যায়?

হ্যাঁ, এবং এর পেছনে রয়েছে পরিবারে সংলাপের ঘাটতি। অনলাইন ইনফ্লুয়েন্সারদের আধিপত্য। পিতামাতার নিজের মানসিক চাপ। বিকৃত প্রতিযোগিতামূলক সমাজব্যবস্থা। আজ অনেক অভিভাবক জানেন না—কীভাবে সন্তানের কাছে পৌঁছাতে হয়। তারা নিজেরাই কর্মব্যস্ত, ক্লান্ত, মানসিকভাবে নিঃশেষ।

বিশ্বের অবস্থা কী বলছে?

জাপানে টিনএজ আত্মহত্যার হার সর্বোচ্চ পর্যায়ে। সুইডেনে, গত ১০ বছরে কিশোরীদের বিষণ্ণতা বেড়েছে ৪৭%। যুক্তরাষ্ট্রে, CDC বলছে—“Teenage girls are experiencing record levels of sadness, violence, and suicidal thoughts.

” বাংলাদেশে, শহরাঞ্চলে স্কুলগামী কিশোরীদের মধ্যে বিষণ্ণতা বেড়েছে প্রায় ৫০% (মনোরোগ ইনস্টিটিউট, ২০২৩)।

তাহলে বাবা-মা কী করবেন?

শুনুন, শাসন নয় – সন্তানকে সময় দিন, তার কথার পেছনে আবেগ বুঝুন।
প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রণ করুন – নিজেরাও মডেল হোন প্রযুক্তি ব্যবহারে।
কাউন্সেলিংয়ে ভীতি নয় – প্রয়োজনে পেশাদার সহায়তা নিন।
নিজের মানসিক স্বাস্থ্যও রক্ষা করুন – সন্তানকে বোঝাতে গেলে নিজের ভেতরে শান্তি থাকা জরুরি।

একটি প্রজন্ম যেন না হারিয়ে যায়। এই সংকট নিছক পারিবারিক নয়—এটি এক সামাজিক দায়। টিনএজারদের অভ্যন্তরীণ যন্ত্রণা বোঝা না গেলে, আমরা এক ‘চুপ করে থাকা বিষণ্ণ প্রজন্ম’ হারিয়ে ফেলব। সন্তান যখন বিদ্রোহ করে, সে আসলে জানিয়ে দেয়— ‘আমি ভালোবাসা চাই, বোঝার মানুষ চাই।’ আমাদের দায়িত্ব তাদের ভাষা বুঝে নেওয়া।

তারা//

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

অশোভন আচরণ, শিষ্টাচারবহির্ভূত বিরুদ্ধাচরণ কাম্য নয়: সৈয়দ এমরান সালেহ

আগামীকাল সোমবার ময়মনসিংহের টাউন হল মাঠে অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচি।

ময়মনসিংহে এনসিপির পদযাত্রা কর্মসূচিকে স্বাগত জানিয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ বলেছেন, ‘ময়মনসিংহ শান্তির জনপদ। এখানে রাজনৈতিক শিষ্টাচার মেনেই আমরা রাজনীতি করি। আশা করছি সব রাজনৈতিক দল সেই শান্তি বজায় রেখে নিজ নিজ কর্মসূচি পালন করবে। এতে অশোভন আচরণ, শিষ্টাচারবহির্ভূত বিরুদ্ধাচরণ, অশ্লীল মন্তব্য বা কুৎসা রটনা কাম্য নয়।’

আজ রোববার দুপুরে ময়মনসিংহ নগরের টাউন হল মোড়ে গণ–অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে গ্রাফিতি অঙ্কন ও গণসংগীত অনুষ্ঠানের উদ্বোধন শেষে এমরান সালেহ সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।

বিএনপির এই যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের বুকের ভেতর থেকে ফ্যাসিবাদের জগদ্দল পাথর হয়তো এক বছর আগে নেমে গেছে। আমরা এখন মুক্তকণ্ঠে কথা বলতে পারছি। ৫ আগস্ট আমরা গণ–অভ্যুত্থানে বিজয় অর্জন করতে পেরেছি। কিন্তু সে অর্জন ছিল আংশিক। পরিপূর্ণ বিজয় তখনই হবে, যখন দেশে বহু আকাঙ্ক্ষিত গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে পারব এবং জনগণের শাসন আমরা প্রতিষ্ঠিত করতে পারব। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারব। এর মধ্য দিয়েই আমরা পরিপূর্ণ বিজয় অর্জন করতে পারব।’

সৈয়দ এমরান সালেহ আরও বলেন, ‘গত এক বছর একটা দীর্ঘ সময়। আমরা ভাবিনি এত সময় লেগে যাবে। এখন দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশ নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা আশা করছি, আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই দেশে একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়েই আমরা যে জনপ্রতিনিধিত্বশীল সংসদ পাব বা সরকার পাব, সেই সংসদ ও সরকারের মধ্য দিয়েই এই গণ–অভ্যুত্থানের যে আকাঙ্ক্ষা, সেটাকে আমরা বাস্তবায়নের দিকে নিয়ে যেতে পারব।’

ময়মনসিংহ মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি যৌথভাবে এ কর্মসূচির আয়োজন করেছে। কর্মসূচির অংশ হিসেবে নগরীর টাউন হল ও ধোপাখলা মোড় এলাকায় জুলাই-আগস্ট গণ–অভ্যুত্থানের স্মৃতি ধারণ করে দেয়ালে দেয়ালে গ্রাফিতি অঙ্কন করেন বিএনপির নেতা–কর্মীরা।

মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এ কে এম শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শরীফুল আলম, সহসাংগঠনিক সম্পাদক শাহ ওয়ারেস আলী ও আবু ওয়াহাব আকন্দ, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাকির হোসেন, উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এনায়েত উল্লাহ প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নারীদের নিয়ে বারে ‘অগ্রহণযোগ্য’ আচরণ, আমিরাতের ক্ষোভে রাষ্ট্রদূতকে ফেরত নিচ্ছে ইসরায়েল
  • অফিসে প্রেম করার আগে জেনে রাখুন
  • যে ৬টি সীমারেখা একজন পুরুষকে নারীর কাছে আকর্ষণীয় করে তোলে
  • অশোভন আচরণ, শিষ্টাচারবহির্ভূত বিরুদ্ধাচরণ কাম্য নয়: সৈয়দ এমরান সালেহ