পুরোপুরি বিলুপ্তির পর উগান্ডায় আবার ফিরল গন্ডার
Published: 17th, September 2025 GMT
উগান্ডার মধ্যাঞ্চলে প্রায় ২৭ বর্গমাইল (৭০ বর্গকিলোমিটার) এলাকায় বিস্তৃত জিওয়া র্যাঞ্চ নামে খামারে রয়েছে প্রচুর সবুজ ঘাস, জলাভূমি, বনাঞ্চল। সেই খামারে সাত হাজার গরু ঘুরে বেড়াত। এখন আর সেখানে গরু নেই। এর জায়গায় ঘাস খায় গন্ডার। উগান্ডায় এখন কেবল এখানেই রয়েছে গন্ডার। নিজেদের প্রাকৃতিক আবাসে বসবাস করছে এসব বন্য প্রাণী।
আফ্রিকার দেশ উগান্ডায় ৪০ বছর আগে গন্ডার একেবারেই বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। তবে একজন খামারির হাত ধরে আবার দেশটিতে ফিরে এসেছে বন্য এ প্রাণী। সেখানকার বেসরকারি খামার জিওয়া র্যাঞ্চে এখন গন্ডার আছে প্রায় অর্ধশত। কীভাবে গন্ডারদের সেই দেশে ফিরিয়ে আনা হলো, বলা যাক সেই গল্প।
একসময় ধূসর ও সাদা গন্ডারের আবাসস্থল ছিল উগান্ডা। ১৯৮০-এর দশকে শিকার, চোরাচালান ও রাজনৈতিক অস্থিরতায় দেশটি থেকে গন্ডার সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়ে যায়। একসময় সেখানে প্রায় ৭০০টি গন্ডার থাকলেও সে সংখ্যা শূন্যে নেমে আসে।
এর এক দশক পর জিওয়া র্যাঞ্চের মালিক ক্যাপ্টেন জোসেফ চার্লস রয়ের কাছে গন্ডার ফিরিয়ে আনার প্রস্তাব দেয় ‘রাইনো ফান্ড উগান্ডা’। জোসেফ এ প্রস্তাবে সম্মত হন এবং ২০০৫-০৬ সালে কেনিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা থেকে ছয়টি গন্ডার নিয়ে আসেন। খামারটিতে বংশবৃদ্ধির মাধ্যমে সেই গন্ডারের সংখ্যা এখন দাঁড়িয়েছে ৪৮–এ।
৪৮টি গন্ডারের মধ্যে জিওয়া র্যাঞ্চে গত তিন মাসে জন্মেছে পাঁচটি শাবক। খামারের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ও সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা এই সাফল্যের মূল কারণ বলে ধরা হয়। সেখানে কর্তব্যরত রেঞ্জাররা প্রতিটি ‘গন্ডার পরিবারকে’ সার্বক্ষণিক নজরে রাখেন। গন্ডারগুলো যাতে চোরাচালানের শিকার না হয়, সে জন্য রয়েছে নিশ্ছিদ্র সীমানা পাহারার ব্যবস্থা।
জিওয়া র্যাঞ্চে যেসব ব্যক্তি রেঞ্জার হিসেবে কাজ করেন, তাঁদের একজন শরিফ নসুবাগা। তিনি খামারটিতে ১০ বছরের বেশি সময় ধরে কাজ করছেন।
শরিফ নসুবাগা বলেন, প্রতি ঘণ্টায় তাঁরা গন্ডারদের কার্যকলাপ এবং তাদের আচরণ, যেমন খাওয়া, মলমূত্র ত্যাগ, বিশ্রাম নেওয়া রেকর্ড করেন। তিনি বলেন, এই কাজ করতে গিয়ে তাঁদের সঙ্গে গন্ডারদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। কোন গন্ডারের আচরণ কেমন, কোনটি শান্ত আর কোনটি আক্রমণাত্মক, তা তাঁরা জেনে গেছেন।
জিওয়া র্যাঞ্চে গন্ডারের বাইরে চিতাবাঘ, জিরাফ, জেব্রাসহ ৩০০টির বেশি প্রজাতির পাখি দেখা যায়। পর্যটকেরা এখানে এসে বন্য প্রাণীগুলো দেখতে পারেন। পর্যটকদের থেকে পাওয়া অর্থ প্রাণীগুলোর সংরক্ষণে ব্যয় হয়।
জিওয়া কর্তৃপক্ষ জানায়, র্যাঞ্চের মূল লক্ষ্য হলো পর্যাপ্ত গন্ডার প্রজনন করে তাদের উগান্ডার জাতীয় উদ্যানগুলোতে স্থানান্তর করা। এ খামারে ৮০টি পর্যন্ত গন্ডার রাখা যেতে পারে। গন্ডারের প্রজাতিতে বৈচিত্র্য আনতে আফ্রিকার অন্যান্য দেশ থেকে শিগগিরই আরও আটটি গন্ডার আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জিওয়া কর্তৃপক্ষ।
সার্বিক বিষয়ে উগান্ডায় গরিলা সংরক্ষণে বিপ্লব ঘটানো প্রাণিচিকিৎসক গ্ল্যাডিস কালেমা-জিকুসোকা বলেন, জাতীয় উদ্যানগুলোতে গন্ডার স্থানান্তর একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তবে এ জন্য পর্যাপ্ত বিনিয়োগ ও পর্যাপ্ত রেঞ্জার অপরিহার্য।
জিকুসোকা বলেন, ইদি আমিনের শাসনামলে উগান্ডা থেকে গন্ডার সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। সেই গন্ডার ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে প্রমাণিত হচ্ছে, উগান্ডা আবার স্থিতিশীল হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
তানজানিয়ার বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফের বিজয়ী সামিয়া
পূর্ব আফ্রিকার দেশ তানজানিয়ার বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ৯৮ শতাংশ ভোট পেয়ে পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন প্রেসিডেন্ট সামিয়া সুলুহু হাসান। শনিবার (১ নভেম্বর) নির্বাচন কমিশন ঘোষিত চূড়ান্ত ফলে দেখা যায়, বুধবারের নির্বাচনে তিনি ৯৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। খবর বিবিসির।
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা নির্বাচনে স্বচ্ছতার অভাব এবং ব্যাপক অস্থিরতার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। নির্বাচন ঘিরে দেশটিতে গত কয়েক দিনে সহিংসতায় কয়েক শ’ মানুষ নিহত ও বহু আহত হয়েছে। দেশজুড়ে ইন্টারনেট বন্ধ থাকার কারণে নিহতের সঠিক সংখ্যা যাচাই কঠিন হয়ে পড়েছে।
সরকার সহিংসতার মাত্রা কমিয়ে দেখানোর চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অস্থিরতা দমনে দেশজুড়ে কারফিউও বাড়ানো হয়েছে।
ক্ষমতাসীন চামা চা মাপিন্দুজি (সিসিএম) দলের প্রেসিডেন্ট সামিয়া সুলুহু হাসানের প্রশাসনের বিরুদ্ধে ভোটের আগে ভিন্নমত পোষণকারী ও বিরোধীদের ওপর কঠোর দমনপীড়ন চালানোর অভিযোগ রয়েছে। প্রধান দুই বিরোধী দলকেই নির্বাচনে অংশ নিতে দেয়া হয়নি।
ফলে নির্বাচনের পরই বৃহত্তম নগরী দার-এস-সালাম ও অন্যান্য শহরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। শুক্রবারও বিক্ষোভ অব্যাহত ছিল। অস্থিরতা বন্ধ করার জন্য সেনাপ্রধানের সতর্কবার্তা সত্ত্বেও বিক্ষোভকারীরা সামিয়ার পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে এবং অসংখ্য গাড়ি, পেট্রোল স্টেশন এবং থানায় আগুন দেয়।
বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বেশিরভাগ তরুণ বিক্ষোভকারীরা, যারা নির্বাচনকে অন্যায্য বলে সমালোচনা করেছেন। তাদের অভিযোগ, সরকার প্রধান বিরোধী নেতাদের দমন করে গণতন্ত্রকে ক্ষুণ্ন করছে। প্রধান দুই বিরোধী নেতার মধ্যে একজন কারাগারে রয়েছেন এবং অন্যজনকে নির্বাচন থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
বিরোধী চাদেমা দলের একজন মুখপাত্র শুক্রবার বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানান, নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে প্রায় ৭০০ মানুষ নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে তানজানিয়ার একটি কূটনৈতিক সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে, কমপক্ষে ৫০০ জন মারা যাওয়ার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ রয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ কম্বো থাবিত এই সহিংসতাকে ‘এখানে-সেখানে কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, “পরিস্থিতি মোকাবেলায় নিরাপত্তা বাহিনী খুব দ্রুত ও দৃঢ়তার সাথে কাজ করেছে।”
প্রধান দুই বিরোধী দলীয় নেতার মধ্যে চাদেমা দলের টুন্ডু লিসুকে নির্বাচনের আগে রাষ্ট্রদোহের অভিযোগ আটক করা হয়, যদিও তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং এসিটি-ওয়াজালেনডো দলের নেতা লুহাগা এমপিনাকে আইনি কৌশল খাটিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া হয়নি।
১৬টি প্রান্তিক দল, যাদের কারোরই ঐতিহাসিকভাবে উল্লেখযোগ্য জনসমর্থন ছিল না, তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।
সামিয়ার ক্ষমতাসীন দল সিসিএম, দেশটির রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করেছে। স্বাধীনতার পর থেকে কখনও কোনো নির্বাচনে সিসিএম হারেনি।
নির্বাচনের আগে, মানবাধিকার সংস্থাগুলো বিরোধী ব্যক্তিত্বদের জোরপূর্বক গুম, নির্যাতন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে সরকারের নিন্দা জানিয়েছিল।
প্রেসিডেন্ট জন মাগুফুলির মৃত্যুর পর ২০২১ সালে তানজানিয়ার প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে সামিয়া ক্ষমতায় আসেন।
ঢাকা/ফিরোজ