আগামীকাল বৃহস্পতিবার গ্রহণযোগ্য খসড়া সনদ সব দলের কাছে তুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রিয়াজ। তিনি বলেছেন, ‘আজকের মধ্যে আমরা ঐকমত্যের ভিত্তিতে যেসব বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে, তার একটি তালিকা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পৌঁছে দেব। আশা করছি, আগামীকাল আমরা একটি সমন্বিত ও গ্রহণযোগ্য খসড়া সনদ সব দলের কাছে তুলে দিতে পারব।’

আজ বুধবার বেলা তিনটার দিকে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে দ্বিতীয় দফার ২২তম বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা শুরু হয়। আলোচনা শুরুর আগে দেওয়া বক্তব্যে এ কথাগুলো বলেন আলী রিয়াজ।

আলোচনার গতি বাড়াতে দলগুলোর সহযোগিতা কামনা করে আলী রিয়াজ বলেন, ‘যেমনটি আপনারা শুরু থেকেই করে আসছেন, তেমন সহযোগিতার ধারাবাহিকতা আমরা আশা করছি।’

আলী রীয়াজ বলেন, ‘আপনারা যে দায়িত্ব আমাদের দিয়েছেন, তার মধ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। আমরা চেষ্টা করছি, এসব বিষয়ে দ্রুত ঐকমত্যে পৌঁছাতে এবং আগামীকালের মধ্যেই আপনাদের অবহিত করতে পারব।’

সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব–সংক্রান্ত আলোচনায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে এবং এ বিষয়ে একটি লিখিত খসড়া অংশগ্রহণকারী দলগুলোর কাছে তুলে দেওয়া হবে বলেও জানান আলী রীয়াজ।

আলী রীয়াজ বলেন, ‘প্রাথমিক পর্যায়ে সব দল মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণের নীতিগত অবস্থানে একমত হয়েছে। তবে সংবিধানে এ বিষয়ে কী ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে, তা নিয়ে কিছু ভিন্নমত রয়ে গেছে। এই প্রক্রিয়ায় বিএনপির দেওয়া সুপারিশ ও আপত্তিগুলো স্পষ্টভাবে কমিশনের কাছে তুলে ধরা হয়েছে এবং তা আলোচনাকে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।’

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনা চলছে। ফরেন সার্ভিস একাডেমি, ৩০ জুলাই.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আগ ম ক ল দলগ ল র ঐকমত য সব দল

এছাড়াও পড়ুন:

ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই নির্বাচন হতে হবে

অর্থনৈতিক ও অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা এবং জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে জাতীয় নির্বাচন যে জরুরি হয়ে পড়েছে, সে ব্যাপারে দ্বিমত করার কোনো সুযোগ আছে বলে মনে হয় না। আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ঘোষিত সময়ের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে যেকোনো বাধা দূর করা তাই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর এখনো মতৈক্যে পৌঁছাতে না পারাটা সংগত কারণেই গভীর উদ্বেগের। এই প্রশ্নে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি—তিন দল তিন অবস্থানে রয়েছে। আমরা মনে করি, অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ৩০টি রাজনৈতিক দল যখন দীর্ঘ আলোচনা প্রক্রিয়ায় অভূতপূর্বভাবে ৮৪টি বিষয়ে ঐকমত্য ও সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পেরেছে, তখন জুলাই সনদের সংবিধান-সম্পর্কিত সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে একটা সর্বসম্মত অবস্থানে পৌঁছানো মোটেই কঠিন কোনো বিষয় নয়।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর রোববারের সংলাপে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসও ঐকমত্যের পথে রাজনৈতিক দলগুলো যে অর্জন করেছে, সেটাকে বিশ্বের জন্য অনন্য দৃষ্টান্ত বলে মন্তব্য করেছেন। চব্বিশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান প্রকৃতপক্ষেই বাংলাদেশের সামনে গণতান্ত্রিক উত্তরণ ও পরিবর্তনের বড় একটা সুযোগ এনে দিয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মতভিন্নতার কারণে সেই সুযোগ যদি হারিয়ে যায়, এর চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা একটি জাতির জন্য আর কী হতে পারে। বাস্তবতা হলো ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের যেমন বিকল্প নেই, আবার মতভিন্নতা কাটিয়ে উঠতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই।

শনিবার প্রথম আলো আয়োজিত ‘নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক সমঝোতার পথ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে আলোচকেরা ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সরকারের শক্ত ভূমিকা নেওয়ার কথা বলেছেন। তাঁরা সতর্ক করেছেন যে ঘোষিত সময়ে নির্বাচন না হলে, দেশে অভ্যন্তরীণ অস্থিতিশীলতা তৈরি হওয়ার পাশাপাশি জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কাও আছে।

রাজনৈতিক দলগুলোকে সবার আগে এই বাস্তবতাকে উপলব্ধি করা জরুরি। বর্তমান অনিশ্চয়তা শুধু রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, তার গভীর নেতিবাচক প্রভাব সমাজ ও অর্থনীতির ওপরও পড়ছে। দারিদ্র্য, বেকারত্ব বাড়ছে এবং অর্থনৈতিক-সামাজিক ও জীবিকায় দীর্ঘমেয়াদি ক্ষত তৈরি হচ্ছে। সবার আগে এই অনিশ্চয়তা কাটানো প্রয়োজন। একটি সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে যাত্রাই এর একমাত্র পথ বলে মনে করি।

আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা বলে, চাপিয়ে দিয়ে সংস্কার হয় না। আবার পরিবর্তনের অঙ্গীকার করে ক্ষমতায় যাওয়ার পর তার বাস্তবায়নও হয় না। এই ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে একটা বাস্তবসম্মত পথ খুঁজে বের করতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ বাড়াচ্ছে। আমরা আশা করি, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর যে মতভিন্নতা, তা ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই একটা সমঝোতায় পৌঁছাবে। তবে এরই মধ্যে আমরা দেখলাম যে জুলাই সনদের ভিত্তিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ পাঁচ দফা দাবিতে জামায়াতে ইসলামী নতুন এক কর্মসূচি দিয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা তাঁর বক্তব্যে আবারও স্পষ্টভাবে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচনের কথা বলছেন। আগামী নির্বাচনকে তিনি ‘জাতির সত্যিকারের নবজন্ম’ হিসেবে দেখছেন। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রশ্নে যদি নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়, তাহলে এত মানুষের আত্মত্যাগ এবং সংস্কার নিয়ে এত আলাপ-আলোচনা সবকিছুই বৃথা হবে। তাতে দেশও গভীর অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে। রাজনৈতিক দলগুলোর মতভিন্নতায় জনগণ কেন ভুক্তভোগী হবে?

নির্বাচনের একটি সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরিতে গণ–অভ্যুত্থানের পক্ষের সব রাজনৈতিক দলকে অবশ্যই তাদের ক্ষুদ্র দলীয় স্বার্থের বাইরে বেরিয়ে আসতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রভাষকসহ চার পদে নিয়োগ দিচ্ছে কেডিএ স্কুল অ্যান্ড কলেজ
  • ‘সংবিধান আদেশ’ জারির সুপারিশ করতে পারে কমিশন: আলী রীয়াজ
  • সংগীতশিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি বাতিলের দাবি গ্রহণযোগ্য নয়: আসক
  • কমিটি গঠন, প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত 
  • রাকসু নির্বাচন: ৬ দফা দাবিতে ছাত্রদলের স্মারকলিপি
  • বর্ধিত মেয়াদের আগেই জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি চূড়ান্ত করতে চায় কমিশন: আলী রীয়াজ
  • বিএনপি নির্বাচনমুখী কর্মসূচিতে যাবে
  • দলগুলোর সঙ্গে বুধবার আবার আলোচনায় বসছে ঐকমত্য কমিশন
  • ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই নির্বাচন হতে হবে
  • অন্তর্বর্তী সরকার না চাইলে ‘মব সন্ত্রাসের’ ঘটনাগুলো ঘটতে পারত না: বাম গণতান্ত্রিক জোট