৩ দাবিতে জাস্টিস ফর জুলাইয়ের সংবাদ সম্মেলন
Published: 7th, September 2025 GMT
দেশের সমসাময়িক প্রেক্ষাপট নিয়ে তিন দফা দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে জাস্টিস ফর জুলাই সংগঠন। আগামী ১ মাসের মধ্যে এসব দৃশ্যমান না হলে আবারও রাজপথে নামার হুঁশিয়ারি দেন তারা।
রবিবার (৭ সেপ্টেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনের সামনে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
আরো পড়ুন:
ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী কলেজছাত্র নিহত
ডাকসু: উমামার স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্যের আচরণবিধি লঙ্ঘন অব্যাহত
তাদের দাবিগুলো হলো- যেখানে যত দাগী আসামি আছে এবং যারা আগস্টের পর জামিন পেয়েছিল, তাদের সবাইকে গ্রেপ্তার করতে হবে; আওয়ামী লীগের যত হত্যাকারী, খুনী আছে যারা জুলাই-আগস্টের হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল, তাদের গ্রেপ্তার করতে হবে; পুলিশ বাহিনীকে সংস্কার করতে হবে, এই পুলিশ বাহিনীকে আর কোনো রাজনৈতিক দলের বন্দুকের নিচে থেকে জনগণের বিপক্ষের শক্তি হিসেবে পুনরায় দাঁড় করানো যাবে না।
এ সময় সংগঠনটির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক তাহমিদ ফাহিম বলেন, “দেশের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে প্রশাসনসহ সরকার নিরব ভূমিকা পালন করছে। আগস্টের যেই তিনদিন কোনো সরকারই ছিলো না এই দেশে, তখন সম্পূর্ণভাবে জনগণ নিয়ন্ত্রণ করে রেখেছিল। সব পাড়া মহল্লায় পাহারা বসিয়েছিল জনগণ। ওই তিনদিন কিন্তু তেমন কিছু হয়নি। যদিও একটি দেশ কখনো এভাবে সারা জীবনের জন্যে পরিচালিত হতে পারে না। সেজন্য দরকার পড়ে প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষীকারী বাহিনীদের।”
তিনি বলেন, “অভ্যূত্থানের ১ বছর পর যেখানে আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতি উন্নত হওয়ার কথা ছিল, সেখানে উল্টো সবকিছু ভেঙে পড়ছে। ইউনূস সরকার যেহেতু প্রতিরক্ষা বাহিনীকে নিয়ন্ত্রিত করতে ব্যর্থ হচ্ছেন, সেহেতু আপনি নির্বাচন দিয়ে বিদায় হন “
তিনি আরো বলেন, “দেশের প্রতিটা জায়গায়, থানায়, মহল্লায় চুরি, ছিনতাই, খুন, জখমের ঘটনা বেড়েই চলেছে দিনদিন। এমতাবস্থায় প্রশাসন এমন মিথেন গ্যাসের মতো ভূমিকা পালন করছে কেন, তা আমাদের জানা নাই। কারণ খুঁজলে পাওয়া যেতে পারে, যে বা যারা এই দেশের সার্বভৌমত্ব ধ্বংস করতে চেয়েছিল পতিত ফ্যাসিস্টের সেসব লোক এখনো বসা আছে।”
ফাহিম বলেন, “ফরিদপুরে কবর থেকে লাশ তুলে পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা এতদূর আসত না, যদি প্রশাসন শুরু থেকেই পদক্ষেপ নিত। কিন্তু তারা নেয়নি। প্রশাসন কেন কাজ করছে না সেটার জবাবদিহিতা সরকার, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বক্স, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলকে অবশ্যই দিতে হবে।”
তিনি নুরুল হক নূরের ওপর হামলা নিয়ে বলেন, “হামলা হয় নূরুল হক নূরু ভাইয়ের ওপর, আর আইন উপদেষ্টা ফেসবুকে সমবেদনা জানায়। এটা কোন ধরনের ফাজলামি? জুলাইয়ে ২ হাজার আহত শতশত শহীদের রক্তের ওপর দিয়ে যে ক্ষমতায় তারা বসেছে, সেই ক্ষমতায় থেকেই তাদের এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, নচেৎ গদি ছাড়।”
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সদস্য আসমাউল হুসনাসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ ল ই গণঅভ য ত থ ন উপদ ষ ট সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
বিএনপি-জামায়াত দেশকে অন্য এক সংকটের দিকে নিয়ে যাচ্ছে: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশে অনৈক্যের সুর দেখতে পাচ্ছেন বলে উল্লেখ করেছেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। তিনি বলেন, ‘এই বিভেদ এবং অনৈক্য উসকে দিয়েছে বাংলাদেশের একটি বড় পার্টি, সেটা হলো বিএনপি। অভ্যুত্থানের পরে যদি ইতিহাসে লেখা থাকে, প্রথম কোন দল বাংলাদেশে অনৈক্য জন্ম দিয়েছে? সেটা হলো বিএনপি।’ একে ‘অসুস্থ রাজনৈতিক চর্চা’ উল্লেখ করে এখান থেকে সরে আসতে বিএনপির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
‘জুলাই সনদের বাস্তবায়ন এবং জাতীয় নির্বাচন কোন পথে’ শীর্ষক সেমিনারে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী এ কথাগুলো বলেন। আজ বৃহস্পতিবার বেলা তিনটায় রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কার্যালয়ে এ সেমিনারের আয়োজন করে দলের যুব সংগঠন জাতীয় যুবশক্তি।
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘জামায়াত প্রশ্ন নিয়ে এসেছে, লোয়ার হাউসে (নিম্নকক্ষে) পিআর; বিএনপি প্রশ্ন নিয়ে এসেছে, নোট অব ডিসেন্ট (ভিন্নমত); এগুলো নিয়ে তারা সরকারের সাথে বার্গেইন (দর–কষাকষি) করতে চায়—কোথায় ডিসি নিয়োগ দিবে, কোথায় এসপি নিয়োগ দিবে? জাতি যখন সংকটে, এই দুই দল বাংলাদেশকে অন্য একটা সংকটের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।’
গণভোটের প্রসঙ্গ তুলে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক বলেন, ‘হ্যাঁ’ জয়যুক্ত হলে এটি বাংলাদেশের জনগণের বিজয় হবে। তিনি বলেন, ‘এটা তো জামায়াতে ইসলামীর জয় হবে না। এ জন্য আমরা জামায়াতে ইসলামীর কাছে আহ্বান রাখব, ভণ্ডামি বাদ দেন আপনারা। ভণ্ডামি বাদ দিয়ে অন্তরে কী আছে, একটু খুলে বলেন।’
অসুস্থ রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান
নোট অব ডিসেন্টের (ভিন্নমত) বিষয়ে বিএনপির বক্তব্যের সমালোচনা করে এনসিপি নেতা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘নোট অব ডিসেন্টের বিষয়ে সালাহউদ্দিন সাহেব (সালাহউদ্দিন আহমদ) বলেছেন, কমিশনে যে নোট অব ডিসেন্টগুলো দিয়েছে, আমি সেগুলোকে বলব, “নোট অব ডিসেন্ট” নয় “নোট অব চিটিং”। ঠিক এই “নোট অব চিটিং”য়ের মাধ্যমে তারা পুরো বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের সাথে প্রতারণা করতে চেয়েছিল। কিন্তু সেই প্রতারণাটা বাংলাদেশের তরুণ ছাত্র–জনতার কাছে ধরা পড়েছে।’
বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে ‘ভেটো’ দিয়েছে উল্লেখ করে এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘অথচ তারা (বিএনপি) একটা সময় এটা চেয়েছিল।’
সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) নিরপেক্ষ হওয়ার প্রস্তাবে বিএনপির ভিন্নমতের সমালোচনা করেন নাসীরুদ্দীন। নিরপেক্ষ পিএসসি ও দুদক (দুর্নীতি দমন কমিশন) গঠনের দাবি জানান তিনি।
জাতীয় পার্টি সম্পর্কে বিএনপিকে অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে উল্লেখ করে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘এই কুসুম কুসুম প্রেম আপনারা আওয়ামী লীগের সাথে দিয়েছিলেন। এখন জাতীয় পার্টির সাথে দিচ্ছেন, জাতীয় পার্টি সম্পর্কে বিএনপির অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, “‘নোট অব চিটিং” বাংলাদেশের মানুষ কখনো মেনে নেয়নি, ভবিষ্যতেও নিবে না। এবং এই “নোট অব চিটিং”য়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে বিএনপি যে ধরনের অসুস্থতা সৃষ্টি করতে চাচ্ছে, আমরা তাদেরকে আহ্বান জানাব যে আপনারা এই সব কার্যক্রম থেকে সরে আসুন। নতুনভাবে বাংলাদেশের মধ্যে রাজনীতি করুন।’
‘নিম্নকক্ষে পিআর জামায়াতের ভণ্ডামি’
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘বাংলাদেশে জামায়াত একটা “বাইট” দেওয়ার চেষ্টা করছে যে তারা খুব সংস্কারের পক্ষে। কিন্তু বিএনপি খারাপ হলেও একদিকে ভালো যে তারা যে সংস্কারের বিপক্ষে, এটা জনগণের সামনে সরাসরি বলে। আর জামায়াত হলো এমন যে মনে বলে সংস্কারের বিপক্ষে; মুখে তারা বলে সংস্কারের পক্ষে। আমরা এখনো সুপারিশমালার কোনো সমাধান করতে পারি...তারা নতুন করে মার্কেটে নিয়ে এসেছে গণভোট হবে।’
জামায়াতে ইসলামীকে সঠিক জায়গায় কথা বলার আহ্বান জানিয়ে এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘সঠিক জায়গায় কথা বলুন, বেজাগায় কথা বলিয়েন না। ’৭১–এ আপনারা (জামায়াতে ইসলামী) উল্টাপাল্টা কাজ করেছিলেন, ’২৪–এ এসে এখন উল্টাপাল্টা কাজ শুরু করেছেন। এ জন্য জামায়াতে ইসলামীকে আমরা বলব, গণভোট নিয়ে জনগণের আতঙ্ক সৃষ্টি না করে, সংস্কারের জন্য নোট অব ডিসেন্টের প্রক্রিয়াগুলো কীভাবে সমাধানে পৌঁছতে পারি, আদেশটা কীভাবে জারি করা যায়?... সে বিষয়ে আপনার দাবি তোলা উচিত। আমরা এনসিপির পক্ষ থেকে মনে করি, জামায়াত যে দাবিগুলো তুলছে, লোয়ার হাউসের পিআর...এগুলো হলো জামায়াতের ভণ্ডামি, এগুলো হলো কিছু সিটের (আসন) বার্গেনের (দর–কষাকষি) জন্য।’
এনসিপির রাজনীতির একটি সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে উল্লেখ করে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘আমরা সেই সম্ভাবনার পক্ষে কাজ করে যাচ্ছি। আপনারা দেখছেন, আপনারা বিচার করবেন। পুরো বাংলাদেশ বিচার করবে।’ এনসিপির নেতাদের গাড়ি–বাড়ি অর্জনের অভিযোগও নাকচ করেন তিনি। এ ছাড়া প্রতীক হিসেবে এনসিপিকে শাপলা বরাদ্দ দিতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বানও জানান নাসীরুদ্দীন।
‘জনতা বঙ্গভবনে যাবে’
দেশবাসী উৎকণ্ঠা থেকে মুক্তির জন্য গণ–অভ্যুত্থানের সরকারপ্রধান উপদেষ্টার দিকে তাকিয়ে রয়েছেন উল্লেখ করে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশমালা দ্রুত আদেশ জারি করার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার কাছে তাঁদের আবেদন থাকবে।
জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়ার একমাত্র এখতিয়ার প্রধান উপদেষ্টার উল্লেখ করে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক বলেন, ‘ডক্টর ইউনূসকে বাংলাদেশের সামনে অতিসত্বর শহীদ মিনারে গিয়ে জনগণের সামনে উপস্থিত হয়ে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির আদেশ জারি করতে হবে। যদি সে ক্ষেত্রে কোনো ব্যত্যয় হয়, তাহলে সেটা আমরা কীভাবে করব, সেটা আমরা বাংলাদেশের জনগণকে আবার রাজপথে দেখিয়ে দিব ইনশা আল্লাহ। আমরা যথেষ্ট উৎকণ্ঠা এবং উদ্বেগের মধ্যে রয়েছি।’
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘সরকারের কাছে আমাদের আবেদন থাকবে যে আপনাদের কাছে নীতিমালা এসেছে। আপনারা দ্রুত আদেশ জারি করুন। আমাদের এই উৎকণ্ঠা, বিএনপি অনৈক্য সৃষ্টি করতে চাচ্ছে, এটা থেকে বাংলাদেশকে মুক্তি দিন। আমরা দ্রুত ইলেকশনের ফেজে (নিবার্চনী পর্বে) ঢুকতে চাই।’
অধ্যাদেশ বা প্রজ্ঞাপন বা আদেশ জারির বিষয়ে রাষ্ট্রপতির কোনো বৈধতা নেই, এমন মন্তব্য করে এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘যদি চুপ্পুকে (রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন) দিয়ে আদেশ দেওয়ার বাংলাদেশে কোনো চেষ্টা চালানো হয়, তাহলে জনতা বঙ্গভবনে চলে যাবে। আগে গণভবনে গিয়েছিল, নতুন করে যদি এ ধরনের কোনো প্রচেষ্টা চালানো হয়, তাহলে জনতা আবার বঙ্গভবনে যাবে ইনশা আল্লাহ।’
জাতীয় যুবশক্তির আহ্বায়ক মো. তারিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে সেমিনারে বক্তব্য দেন এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা, যুগ্ম সদস্যসচিব জহিরুল ইসলাম মুসা, যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ প্রমুখ।