একদিকে সবুজ-শ্যামল প্রকৃতির ছায়া, অন্যদিকে বঙ্গোপসাগরের গর্জন। মাঝখানে সূর্যাস্ত-সূর্যোদয়ের অপার সৌন্দর্য। ডাঙার দূর্বাঘাস যেন সবুজ কার্পেট। সৈকতের পাড় খাঁজকাটা, কেওড়া–ঝাউবন–ছৈলাগাছের সারি বাড়তি রূপ দিয়েছে। কেউ প্রথম দেখলে ভাববেন, এটি হয়তো সীতাকুণ্ডের গুলিয়াখালী সৈকত। কিন্তু বাস্তবে নয়নাভিরাম এই বেলাভূমি বরগুনার তালতলী উপজেলার নিদ্রার চর।

পায়রা, বিষখালী ও বলেশ্বর—এই তিন নদ–নদীর মিলন মোহনায় সৃষ্টি হয়েছে প্রায় দুই কিলোমিটার দীর্ঘ বেলাভূমি। বরগুনার তালতলী উপজেলার নিশানাবাড়িয়া ইউনিয়নে যার অবস্থান। প্রতিদিনই অসংখ্য পর্যটক এখানে ভিড় জমান সূর্যাস্তের রূপ দেখতে। সৈকতটি একদিকে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্বাসমূলীয় বন টেংরাগিরি ইকোপার্ক, অন্যদিকে জনপ্রিয় শুভসন্ধ্যা সৈকত। প্রকৃতির মনোমুগ্ধকর সমাহার ‘নিদ্রার চর’ এক অপার পর্যটন সম্ভাবনাময় অঞ্চল বলে জানালেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

তবে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে সম্ভাবনা থাকলেও এখনো অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়নি। সরু কাঁচা রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে হয় পর্যটকদের। নেই মানসম্মত খাবারের ব্যবস্থা, শৌচাগার বা বিশ্রামাগার ও রাতযাপনের কোনো নিরাপদ জায়গা। বর্তমানে মাত্র দুটি খাবার হোটেল চালু রয়েছে এখানে। সুযোগ-সুবিধা, উন্নত যোগাযোগ এবং অবকাঠামো গড়ে না ওঠায় এই সম্ভাবনাময় পর্যটন অঞ্চলটি আলোর মুখ দেখছে না।

জাতিসংঘের বিশ্ব পর্যটন সংস্থার (ইউএনডব্লিউটিও) উদ্যোগে ১৯৮০ সাল থেকে প্রতিবছরের ২৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ব পর্যটন দিবস পালিত হয়ে আসছে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘পর্যটন ও টেকসই রূপান্তর’।

সীমানাহীন সৌন্দর্য, সীমিত সুবিধা

তালতলী উপজেলা সদর থেকে মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরের চরটি প্রতিদিনই দূরদূরান্তের প্রকৃতিপ্রেমীদের আকর্ষণ করছে। প্রায় দুই কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ সৈকত। তবে স্থানীয় মানুষদের মতে, ৫-৭ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে এটি বিস্তৃত। বর্ষাকালে কিছু অংশ প্লাবিত হলেও শীতকালে এটি হয়ে ওঠে আরও আকর্ষণীয় এবং মনোমুগ্ধকর।

বরিশাল থেকে নিদ্রার সৌন্দর্য উপভোগের জন্য পরিবার নিয়ে এখানে এসছেন পর্যটক সোহাগ মিয়া। তিনি বলেন, ‘জায়গাটা অনেক সুন্দর-মোহনীয়। ছবি দেখে আর না আসার লোভ সামলাতে পারিনি। এ জন্য পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছি। কিন্তু এখানে থাকার জায়গা, শৌচাগার, যোগাযোগব্যবস্থাসহ অন্যান্য সুবিধা না থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছি। অথচ অবকাঠামো গড়ে উঠলে এটি বড় পর্যটনকেন্দ্র হতে পারে।’

সূর্যাস্তের রূপ দেখতে প্রতিদিনই অসংখ্য পর্যটক ভিড় জমান নিদ্রার চরে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন দ র র চর স ন দর য

এছাড়াও পড়ুন:

ফেনীতে নাশকতার চেষ্টা, কেরোসিন, পেট্রোল, গ্যাস লাইটসহ গ্রেপ্তার ৯

ফেনীতে নাশকতার চেষ্টার অভিযোগে কেরোসিন, পেট্রল, গ্যাস লাইটসহ পৃথক অভিযানে নয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল রোববার রাত থেকে আজ সোমবার দুপুর পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

তাঁদের মধ্যে আজ সন্ধ্যায় আদালতে দায় স্বীকার করে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন দুই যুবক। সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান ফেনীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) সাইফুল ইসলাম।

পুলিশ জানায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলার রায় ও কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ঘোষিত শাটডাউন কর্মসূচি উপলক্ষে পুলিশ বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে রোববার দিবাগত রাত দুইটার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী সদর উপজেলার লালপোল এলাকায় যানবাহনে আগুন দেওয়ার সময় আবদুল্লাহ আল মাসুম (২২) ও মোহাম্মাদ রাজু (২০) নামের দুই যুবককে আটক করে পুলিশ। দুজনই সোনাগাজী উপজেলার বাসিন্দা।

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা জানান, দক্ষিণ আফ্রিকাপ্রবাসী জনৈক রাজু তাঁদের মুঠোফোনে ফোনে টাকা পাঠান। নির্দেশনা দেওয়া হয় লালপোল এলাকায় একটি গাড়িতে আগুন লাগাতে। এবং সাবেক সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন নাসিমের পক্ষে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে ভিডিও করে পাঠাতেও বলা হয় তাঁদের। তাঁদের কাছ থেকে এক বোতল পেট্রল, এক বোতল কেরোসিন, গ্যাস লাইট ও টেপ উদ্ধার করা হয়েছে। নাশকতার ঘটনায় করা মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ বিকেলে আদালতে পাঠানো হয়।

ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সদর আমলি আদালত) মোহাম্মদ হাসান ও সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (ফুলগাজী-পরশুরাম আমলি আদালত) মোহাম্মদ মিনহাজ উদ্দিনের আদালতে আবদুল্লাহ আল মাসুম ও মোহাম্মাদ রাজু নিজেদের দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। পরে তাঁদের আদালত থেকে কারাগারে পাঠানো হয় বলে জানিয়েছেন আদালত পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) সাইফুল ইসলাম।

এদিকে নাশকতার চেষ্টাকালে আজ সকালে শহরের মহিপাল ও সদর উপজেলার লেমুয়ায় আরও সাতজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সন্ত্রাস দমন আইনের মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

তাঁদের মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের লেমুয়া এলাকা থেকে রাকিবুল ইসলাম (২১), মোহাম্মাদ নাহিদ(২২) ও আশরাফুল হক (২১) এবং শহরের মহিপাল এলাকা থেকে মোহাম্মদ জিসান (১৯), ফারদিন ইসলাম (১৮), মোহাম্মদ সোহেল (১৮) ও সিরামকে (১৮) গ্রেপ্তার করা হয়।

ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সামছুজ্জামান বলেন, গ্রেপ্তারদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ