ওমানে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত চট্টগ্রামের দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপের সাত প্রবাসীর মরদেহ দাফন করা হয়েছে। রবিবার (১৯ অক্টোবর) উপজেলার নিজ নিজ এলাকায় জানাজা শেষে তাদের দাফন করা হয়। প্রতিটি জানাজায় শত শত মানুষ অংশ নেন।

এর আগে, আজ সকালে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে সাতটি মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া ফেরিঘাটে পৌঁছায়। সেখান থেকে মরদেহ স্পিডবোটে এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। এসময় স্বজনদের আহাজারিতে পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে।  

আরো পড়ুন:

ঈশ্বরদীতে মধ্যরাতে বাস উল্টে আহত ১৬

ওমান থেকে ফিরল ৭ প্রবাসীর মরদেহ, জানাজা আজ

সন্দ্বীপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মংচিংনু মারমা জানান, উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পূর্ব সন্দ্বীপ হাইস্কুল মাঠ ও সাউথ সন্দ্বীপ হাইস্কুল মাঠে সমন্বিত জানাজার আয়োজন করা হয়েছিল। নিহতদের স্বজনদের অনুরোধে পারিবারিকভাবে জানাজার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ফলে মারা যাওয়াদের প্রত্যেকের   জানাজা নিজ নিজ গ্রামে অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুপুর ২টার মধ্যে তাদের দাফন সম্পন্ন হয়। 

শনিবার (১৮ অক্টোবর) রাত ৯টায় বাংলাদেশ বিমানের বিজি-১২২ ফ্লাইটে ওমান থেকে মরদেহগুলো চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছয়। রাত সাড়ে ১০টায় আনুষ্ঠানিকতা শেষে স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়।

গত ৮ অক্টোবর ওমানের দুখুম এলাকায় কর্মস্থল থেকে বাসায় ফেরার পথে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় আট বাংলাদেশি নিহত হন। তাদের মধ্যে সাতজনের বাড়ি চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলায়। নিহতরা হলেন- আমিন সওদাগর (৫০), মো.

সাহাবুদ্দিন (২৮), মো. বাবলু (২৮), মো. রকি (২৭), মো. আরজু (২৬), মো. জুয়েল (২৮) এবং মোশারফ হোসেন রনি (২৬)। তাদের মধ্যে পাঁচজনের বাড়ি সন্ধীপের সারিকাইত ইউনিয়নে, একজনের বাড়ি মাইটভাঙ্গা ইউনিয়নে এবং অপরজন সন্দ্বীপ পৌরসভার বাসিন্দা। নিহত আলাউদ্দিনের বাড়ি রাউজানের চিকদাইর ইউনিয়নে। 

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে দাফন খরচ বাবদ ৩৫ হাজার টাকার চেক প্রদান করা হয়। 

ঢাকা/রেজাউল/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সড়ক দ র ঘটন প রব স ন হত সন দ ব প প রব স মরদ হ উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

মুক্তিযুদ্ধে বিদেশি স্বজনদের কথা

সেই পঞ্চাশ দশকের শুরু থেকে তৎকালীন পূর্ব বাংলায়—বাংলাদেশে—বাংলা ভাষা, গণতন্ত্র, স্বায়ত্তশাসন আর স্বাধিকারের সংগ্রামের শুরু থেকেই কবি, শিল্পী, গায়ক বা অন্যান্য মাধ্যমের সকল সংস্কৃতিসেবীর স্মরণীয় অবদানের কথা আমরা জানি। বলতে গেলে, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকেই দেশের রাজনৈতিক সংগ্রামের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক আন্দোলনও একটি স্বতন্ত্র বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছে, সর্বস্তরের মানুষকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। পরস্পরকে পরিপুষ্ট করেছে এই দুই ধারা।

বাংলা ভাষা, গান, রবীন্দ্রসংগীত, কবিতা, নাটক নিয়ে আন্দোলনের সঙ্গে সংস্কৃতিজগতের প্রায় সকলেই নিজেদের যুক্ত করেছেন। পঞ্চাশের পর ষাটের দশকে কোনো কোনো সময়ে এ ধারা শুধু বেগবানই হয়নি, কখনো মুখ্য প্রভাবশালী ধারায় পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে বাঙালি-হৃদয়ের সবচেয়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী দিন একুশে ফেব্রুয়ারিকে কেন্দ্র করে দেশের মূল সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের ধারাটি বেগবান হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মুনীর চৌধুরীর নাটক, শহীদুল্লা কায়সারের উপন্যাস, আলতাফ মাহমুদের গান, জহির রায়হানের সিনেমাসহ সকলের অবদানের কথা আমরা স্মরণ করতে পারি।

দীর্ঘ দুই দশকের বেশি সময়ের সংগ্রাম আর আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে সেই একাত্তরে, দেশবাসী যখন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মরণপণ সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ, তখন আমাদের দেশের প্রায় সকল সংস্কৃতিসেবী ও বুদ্ধিজীবী এ লড়াইয়ের সঙ্গে শুধু সহমর্মিতা প্রকাশ করেই তাদের দায়িত্ব পালন শেষ করেননি, প্রত্যক্ষভাবে এ লড়াইয়ে অংশও নিয়েছেন। কবিতা, গান, চিত্রকলা, সিনেমাসহ বিভিন্নভাবে দেশের অভ্যন্তরে অবরুদ্ধ অথবা ক্যাম্প বা অন্যত্র সমবেত মানুষকে তাঁরা উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত করেছেন। ওয়াহিদুল হক আর সন্জীদা খাতুনের নেতৃত্বে বাংলাদেশের সংগ্রামী শিল্পী দল শরণার্থী ও মুক্তিযোদ্ধাদের শিবিরে ও বিভিন্ন জমায়েতে গিয়ে গান করেছেন। কামরুল হাসানের নেতৃত্বে শিল্পীরা এঁকেছেন ছবি, তৈরি করেছেন নানা পোস্টার। গণহত্যার বিরুদ্ধে বিশ্ববিবেক জাগ্রত করতে জহির রায়হান তৈরি করেছেন স্বল্পদৈর্ঘ্যের প্রামাণ্যচিত্র ‘স্টপ জেনোসাইড’। অবরুদ্ধ ঢাকা নগরীতে বাস করেও স্বাধীনতার জন্য গান তৈরি করেছেন আলতাফ মাহমুদ, কবিতা লিখেছেন শামসুর রাহমান বা উপন্যাস রচিত হয়েছে শহীদুল্লা কায়সারের ক্ষিপ্র হস্তে। বেগম সুফিয়া কামাল অবরুদ্ধ ঢাকার প্রতিদিনের ডায়েরি লিখেছেন। ডায়েরি লিখেছেন জাহানারা ইমাম। এভাবেই আমাদের দেশের সকল সংস্কৃতিসেবী দেশের স্বাধীনতার জন্য, মুক্তির জন্য উজ্জ্বল এক অবিস্মরণীয় ভূমিকা পালন করে এসেছেন। আর এ জন্যই শুধু আলতাফ মাহমুদ, মুনীর চৌধুরী আর শহীদুল্লা কায়সার নন, দেশের সেরা বুদ্ধিজীবী-লেখকদের নৃশংসভাবে হত্যা করেছে স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠীগুলো।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতিসেবীদের অবদানের সব কথা কি আমরা আর কখনো জানতে পারব? তাঁদের মধ্যে প্রথম সারির যাঁদের কথা স্মরণ করতে হয়, তাঁরা হলেন আর্জেন্টিনার খ্যাতনামা লেখক ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো, ফ্রান্সের প্রখ্যাত মানবতাবাদী সংগ্রামী লেখক আঁদ্রে মালরো, ভারতের পণ্ডিত রবিশঙ্কর, ‘বিটলস’-এর গায়ক জর্জ হ্যারিসন।

দেশের অভ্যন্তরে বা সাহায্যকারী প্রতিবেশী দেশ ভারতে বাংলাদেশের সাহসী সংস্কৃতিসেবীরা যখন তাদের সকল শ্রম দিয়ে অনুপ্রেরণা সৃষ্টির কাজ করে যাচ্ছেন, তখন আমরা দেখি আন্তর্জাতিক পরিসরেও দেশে দেশে বিশ্বনন্দিত শিল্পী, সাহিত্যিক, কবি বা গায়কেরা একইভাবে আমাদের স্বাধীনতার সমর্থনে মহতী ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁরা কবিতা পাঠ করে, কনসার্টে গান গেয়ে, ছবি এঁকে আমাদের মহাবিপর্যয়ের দিনগুলোতে পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। সভা-সমাবেশ বা মিছিল করে নিজ নিজ দেশের মানুষের মধ্যে আমাদের জন্য সহানুভূতি সৃষ্টি আর সমর্থন আদায়ের জন্য দৃঢ় হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। এভাবেই বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামের পক্ষে আন্তর্জাতিক সংহতি আন্দোলনে তাঁরা বিশাল অবদান রেখেছেন। তাঁদের সেসব কবিতা ও গান শুনে, সে সময়ে তাঁদের আরও নানা ভূমিকার নতুন নতুন তথ্য পেয়ে আমাদের হৃদয় আজও উদ্বেল হয়, আমরা অনুপ্রাণিত বোধ করি। তাদের অনেক কথা হয়তো এখনো আমাদের অজানা। সেসব দিনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতিসেবীদের অবদানের সব কথা কি আমরা আর কখনো জানতে পারব? আমরা জানি কেবল অল্প কজনের কথা। তাঁদের মধ্যে প্রথম সারির যাঁদের কথা স্মরণ করতে হয়, তাঁরা হলেন আর্জেন্টিনার খ্যাতনামা লেখক ও রবীন্দ্র-অনুরাগী ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো, ফ্রান্সের প্রখ্যাত মানবতাবাদী সংগ্রামী লেখক আঁদ্রে মালরো, ভারতের পণ্ডিত রবিশঙ্কর, ‘বিটলস’-এর গায়ক জর্জ হ্যারিসন ও রিঙ্গো স্টার, মার্কিন কবি অ্যালেন গিন্সবার্গ, রুশ কবি আন্দ্রেই ভজনেসেনিস্ক, মার্কিন গায়িকা জোয়ান বায়েজ ও বব ডিলান প্রমুখের কথা।

দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ-এ গাইছেন জর্জ হ্যারিসন

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মুক্তিযুদ্ধে বিদেশি স্বজনদের কথা