অর্ন্তবর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়াকে নিয়ে প্রথম আলোয় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনের মূলকথা হলো মাহফুজ আলম এখনো নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেননি। অন্যদিকে আসিফ মাহমুদ ঢাকা থেকে ভোট করার কথা বলেছেন এবং নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে তিনি সরকার থেকে পদত্যাগ করতে পারেন। তবে তিনি কোন দল থেকে নির্বাচনে অংশ নেবেন তা এখনো নিশ্চিত হয়নি। (মাহফুজ সিদ্ধান্তহীন, আসিফের রাজনৈতিক ঠিকানা অনির্দিষ্ট, প্রথম আলো, ২ ডিসেম্বর ২০২৫) 

জাতীয় নির্বাচনের আর মাত্র দুই মাসের অল্প কয়েক দিন বেশি সময় বাকি আছে; আগামী সপ্তাহে যেকোনো দিন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে। এরপরও দুই উপদেষ্টার ক্ষমতায় বহাল থাকা নিয়ে কিছু প্রশ্ন ও বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

২.

উপদেষ্টা পরিষদে ছাত্র প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি নিয়ে শুরুতে খুব বেশি বিতর্ক ছিল না। এই বিতর্ক তীব্র হয় তখন, যখন গণ–অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের একটি অংশ জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নামে নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠন করে ও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এনসিপির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে সরকারে থাকার ফলে অনেকেই দলটিকে ‘কিংস পার্টি’ হিসেবেও অভিহিত করেছেন। এসব বিতর্ক এবং জনমনে তৈরি হওয়া ধারণাকে পুরোপুরি ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে, গঠনপ্রণালির দিক থেকে তা অনেকটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো তা নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ হবে এবং তারা একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আয়োজন করবে। এসব কারণেই এ ধরনের সরকারে দলনিরপেক্ষ ব্যক্তিরাই থাকবেন, এমনটাই প্রত্যাশিত ছিল।

কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার এই ধারা কতটা বজায় রাখতে পেরেছে, তা নিয়ে অনেকেরই প্রশ্ন রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির সমর্থক উপদেষ্টারা রয়েছেন, এই দলগুলোই বিভিন্ন সময়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে এ রকম অভিযোগ করেছে। লক্ষণীয় হলো, মাহফুজ আলম বা আসিফ মাহমুদ ছাড়া অন্য কোনো উপদেষ্টা নির্বাচনে অংশ নেবেন বলে জানা যায়নি। এ কারণে এই দুই উপদেষ্টাই আলোচনার বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছেন।

৩.

মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদের উপদেষ্টা পদে বহাল থাকার বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সংবিধানবিশেষজ্ঞ রিদওয়ানুল হক বলেন, ‘...অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে প্রায় হুবহু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আদলে বা অনুসরণে। সেই হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকার হওয়ার কথা নির্দলীয় এবং সেই সরকারে থাকা কোনো ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না; কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারে থাকা দু-একজন উপদেষ্টার আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়টি বেশ জোরেশোরে আলোচনা হচ্ছে। এটা অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতাকে দারুণভাবে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে তাঁরা পদত্যাগ করবেন বলে সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে; কিন্তু তাঁরা তো এখন সরকারে থেকে নানা রকম সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছেন এবং ভোটারদের প্রভাবিত করতে পারছেন। এটা যেমন স্বার্থের দ্বন্দ্ব তৈরি করছে, তেমনি নৈতিকভাবে সমর্থনযোগ্য নয়।’ (তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার গঠন নিয়ে আলোচনা দরকার, প্রথম আলো, ৩০ নভেম্বর ২০২৫)

উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করে নির্বাচনে অংশ নিলে, সেটা যে সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ও স্বার্থের সংঘাত তৈরি করে, তা সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খানও অনুধাবন করেছেন। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া একটি পোস্টে তিনি জানিয়েছেন, এলাকাবাসী তাঁকে নানাভাবে অনুরোধ করলেও তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন না। এ ক্ষেত্রে তিনি কয়েকটি কারণের কথা বলেছেন।

ফাওজুল কবির খানের ফেসবুক পোস্ট থেকে কিছু অংশ পড়লে তাঁর বক্তব্যটি স্পষ্ট হবে, ‘...জনপ্রতিনিধি হওয়া সৌভাগ্যের বিষয়। কিন্তু যেমনটি মতবিনিময় সভায় বলেছি, আমি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি না।’ 

কারণগুলো হলো এক. যাঁরা রাজনীতি করেন, তাঁদের লক্ষ্য থাকে সংসদ সদস্য হওয়া। এ জন্য তাঁরা ত্যাগ স্বীকার করেন। সারা জীবন আমার কোনো দলীয় রাজনীতির সাথে সংস্পর্শ ছিল না। রাজনীতিবিদদের বঞ্চিত করে, আমি হঠাৎ উড়ে এসে জুড়ে বসতে চাই না। তাই আমি নির্দলীয় মানুষ হিসাবেই বাকি জীবন কাটাতে চাই। উপদেষ্টা হিসাবে আমি নিরপেক্ষতার শপথ আবদ্ধ। 

দুই. আমাকে অনুরোধ করা হচ্ছে। কারণ, উপদেষ্টা হিসাবে আমি সন্দ্বীপের জন্য কিছু কাজ করেছি; কিন্তু এখানে একটা স্বার্থের সংঘাত আছে। আমি সরকারি দায়িত্ব পালন করে, ব্যক্তিগত সুবিধা নিতে পারি না।...’

প্রশ্ন হলো, উপদেষ্টা হিসেবে ফাওজুল কবির খান যে ‘নিরপেক্ষতার শপথ’ এবং ‘স্বার্থের সংঘাতের’ কথা বলেছেন, সেটি কি মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না? 

৪.

মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদের উপদেষ্টা হিসেবে বহাল থাকার বিষয়টি যে স্বার্থের সংঘাত ও সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি করে, তা উপদেষ্টা পরিষদের অন্য সদস্যরাও আগেই অনুধাবন করেছিলেন। এ কারণেই অন্তর্বর্তী সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে দুই ছাত্র প্রতিনিধি উপদেষ্টাকে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে পদত্যাগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। (দুই উপদেষ্টাকে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছিল, প্রথম আলো, ২৩ অক্টোবর ২০২৫)। কিন্তু তাঁরা সেই পরামর্শ আমলে নেননি।

আলোচিত দুই উপদেষ্টার এ বিষয়টি কি আমাদের রাজনীতির কিছু পুরোনো প্রবণতাকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে না? এমন প্রবণতা কাউকে শেষ পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার সুযোগ করে দেয় এবং এতে নির্বাচনী বৈতরণি পার হতে ক্ষমতা ব্যবহারের লক্ষণও প্রকাশ পায়। বিগত সরকারের আমলে আমরা এ ধরনের চেষ্টার চূড়ান্ত প্রদর্শনী দেখেছি। আমাদের প্রত্যাশা ছিল, গণ–অভ্যুত্থানের পর এগুলো পুরোপুরি বন্ধ হবে; নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি তৈরি হবে।

মনজুরুল ইসলাম  প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক

*মতামত লেখকের নিজস্ব

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দ ই উপদ ষ ট উপদ ষ ট র প রথম আল সরক র র র ব ষয়ট পদত য গ ত হয় ছ য গ কর র জন ত ব তর ক ক ষমত

এছাড়াও পড়ুন:

৩ কোম্পানির ক্রেডিট রেটিং নির্ণয়

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত তিনটি কোম্পানির ক্রেডিট রেটিং নির্ণয় করে তা প্রকাশ করা হয়েছে। কোম্পানি তিনটি হলো- ন্যাশনাল পলিমার ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি, রূপালী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড ও ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যালস ইন্ডাস্ট্রি পিএলসি।

বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)  সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

কোম্পানগুলোর মধ্যে ন্যাশনাল পলিমার ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি ও রূপালী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ক্রেডিট রেটিং নির্ণয় করেছে ন্যাশনার ক্রেডিট রেংটিস লিমিটেড (এনসিআর) এবং ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যালস ইন্ডাস্ট্রি পিএলসির ক্রেডিট রেটিং নির্ণয় করেছে আলফা ক্রেডিট রেটিং পিএলসি।

ন্যাশনাল পলিমার: আলফা ক্রেডিট রেটিং পিএলসি অনুযায়ী, কোম্পানিটির দীর্ঘ মেয়াদে রেটিং হয়েছে ‘এ’। আর স্বল্প মেয়াদে রেটিং হয়েছে ‘এসটি-৩’। ২০২৫ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক পরিমাণগত ও গুণগত তথ্যের ভিত্তিতে এ ক্রেডিট রেটিং নির্ণয় করা হয়েছে।

রূপালী ইন্স্যুরেন্স: ন্যাশনার ক্রেডিট রেংটিস লিমিটেডের রেটিংস অনুযায়ী, কোম্পানিটির দীর্ঘ মেয়াদে রেটিং হয়েছে ‘এএএ’। আর স্বল্প মেয়াদে রেটিং হয়েছে ‘এসটি-১’। ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক পরিমাণগত ও গুণগত তথ্যের ভিত্তিতে এ ক্রেডিট রেটিং নির্ণয় করা হয়েছে।

ইবনে সিনা: আলফা ক্রেডিট রেটিং পিএলসি অনুযায়ী, কোম্পানিটির দীর্ঘ মেয়াদে রেটিং হয়েছে ‘এএ+’। আর স্বল্প মেয়াদে রেটিং হয়েছে ‘এসটি-১’। ২০২৫ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন এবং ২০২৫ সালের ২ ডিসেম্বর অন্যান্য প্রাসঙ্গিক পরিমাণগত ও গুণগত তথ্যের ভিত্তিতে এ ক্রেডিট রেটিং নির্ণয় করা হয়েছে।

ঢাকা/এনটি/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সামরিক ভূমি ও ক্যান্টনমেন্ট অধিদপ্তরে নিয়োগ, পদসংখ্যা ৪৫
  • ১৫ বছর পর আবারও বিশ্ব সাইবার গেমসে বাংলাদেশ
  • রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা: আবেদন শেষ ৭ ডিসেম্বর
  • আজ টিভিতে যা দেখবেন (৬ ডিসেম্বর ২০২৫)
  • গুগল সার্চে সেরা ১৪ বছরের সূর্যবংশী
  • বন ও বন্যপ্রাণী সুরক্ষায় দুটি যুগান্তকারী অধ্যাদেশ পাস
  • পিএসসির প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদের বাছাই পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ, উত্তীর্ণ ৫৯০
  • প্রথম প্রান্তিকে মুনাফা থেকে লোকসানে ওয়াইম্যাক্স ইলেকট্রোড
  • ৩ কোম্পানির ক্রেডিট রেটিং নির্ণয়