Prothomalo:
2025-12-06@10:18:33 GMT

শীতকালীন সবজি কেন খাবেন

Published: 6th, December 2025 GMT

শীত মানেই নানা সবজির সমাহার। এসব সবজিতে যেমন আছে বৈচিত্র্য, তেমনি পুষ্টিগুণে ভরা। আসুন জেনে নেওয়া যাক শীতকালে সবজির নানা উপকারিতা।

গাজর: গাজরে আছে বিটা ক্যারোটিন, যা ভিটামিন এ-তে রূপান্তরিত হয়ে দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে। গাজরের ভিটামিন সি, লুটেইন, জেক্সানথিন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চোখ ভালো রাখতে এবং শরীরের রোগপ্রতিরোধে সাহায্য করে। এ ছাড়া গাজরে ক্যালরি কম ও ফাইবার বেশি থাকায় ওজন কমাতে, কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে, কোলেস্টেরল কমাতে ও ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী।

ক্রুসিফেরাস সবজি : ক্রুসিফেরাস মানে কপিজাতীয় সবজি, যেমন ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রকলি ইত্যাদি। এসব সবজিতে গ্লুকোসিনোলেট ও কার্বন ৩ ইন্ডোল নামে দুটি যৌগ রয়েছে, যা বিভিন্ন ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে এবং নারীদের ইস্ট্রোজেন প্রোজেস্টেরনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। এ ছাড়া এতে রয়েছে দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় ফাইবার, যা অন্ত্রের জন্য ভালো। এগুলোর ভিটামিন সি রোগপ্রতিরোধে ও আয়রন শোষণে সাহায্য করে। ক্রুসিফেরাস সবজিতে ভিটামিন কে থাকে, যা হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী। 

টমেটো : টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যেমন বিটা-ক্যারোটিন, যা ভিটামিন এ-তে রূপান্তরিত হয়, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, লাইকোপেন ইত্যাদি। এগুলো হৃদ্‌রোগ, চোখের রোগ, কিছু ক্যানসার, স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে ও ত্বক ভালো রাখতে সাহায্য করে। এ ছাড়া টমেটোতে ভিটামিন কে, পটাশিয়াম রয়েছে, যা আমাদের বেশির ভাগ ব্যক্তির ঘাটতি রয়েছে। এগুলো হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ও রক্ত জমাট বাঁধা ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে ও কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। ১ কাপ টমেটোর রসে ৫৩৪ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম থাকে।

শিম : শিম প্রোটিনের উৎস, যা পেশি গঠনে ও শীতে রোগপ্রতিরোধে সাহায্য করে। এ ছাড়া শিমে থাকা ফাইবার হজমশক্তি বৃদ্ধি ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। শিমে রয়েছে পটাশিয়াম, ফোলেট ও কপার, যা রক্তচাপ ও হৃদ্‌রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।

মটরশুঁটি : মটরশুঁটিতে ক্যালরি কম ও ফ্যাট কম থাকায় ওজন কমাতে ও ডায়াবেটিস রোগীদের ও হৃদ্‌রোগীদের জন্য উপকারী। এ ছাড়া রয়েছে ফাইবার, প্রোটিন, ভিটামিন বি৬, ফোলেট ও পটাশিয়াম, যা হজমশক্তি বৃদ্ধি, কোলেস্টেরল কমাতে, হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে। এতে পলিফেনাল থাকে, যা পাকস্থলী ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করে।

বিট : বিটে রয়েছে বিভিন্ন প্রকার খনিজ, ভিটামিন, নাইট্রেট বেটালাইন, ফাইবার ও ফোলেট। এগুলো রক্তচাপ কমাতে, রক্তস্বল্পতা, অস্টিওআর্থ্রাইটিস, কোষ্ঠকাঠিন্য, মস্তিষ্কের কার্যকারিতায়, ঘুমের মান উন্নত করতে সাহায্য করে।

পালংশাক : পালংশাকে কার্বোহাইড্রেট ও ক্যালরি কম। এতে রয়েছে বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি, আয়রন ও ক্যালসিয়াম, ফোলেট, যা শিশুর বুদ্ধি ও বিকাশে, জন্মগত ত্রুটি ও রোগপ্রতিরোধে সাহায্য করে।

কখন খাবেন না

যাঁদের থাইরয়েডের সমস্যা বা গলগণ্ড আছে, যাঁরা রক্ত পাতলা করার ওষুধ খান ও আইবিএসের সমস্যা আছে, তাঁরা অতিরিক্ত ক্রুসিফেরাস সবজি খাবেন না। বেশি পরিমাণে গাজরের রস শিশুদের দাঁতের ক্ষয় ও ত্বক হলুদ হতে পারে। এ ছাড়া ডায়াবেটিস রোগীরা অতিরিক্ত রান্না করা গাজর খাবেন না। যাঁদের অ্যাসিডিটি, জিইআরডি, আইবিএস, কিডনিতে পাথর সমস্যা, দীর্ঘদিন আর্থ্রাইটিস বা প্রদাহজনিত সমস্যা আছে, তাঁরা টমেটো বেশি খাওয়া এড়িয়ে চলুন। থাইরয়েড, কিডনিতে পাথর বা কিডনিজনিত সমস্যা থাকলে পালংশাক এড়িয়ে চলুন। এ ছাড়া কিডনির সমস্যা, ইউরিক অ্যাসিড বাড়তি থাকলে মটরশুঁটি কম খাবেন কিংবা এড়িয়ে যাবেন।

লিনা আকতার, পুষ্টিবিদ, রাইয়ান হেলথ কেয়ার হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার, দিনাজপুর

আগামীকাল পড়ুন: কিশোরীর মনোজাগতিক সমস্যা

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স হ য য কর র সমস য র জন য উপক র

এছাড়াও পড়ুন:

নেসলের প্রথম ‘গাট হেলথ সামিট’: অংশ নিলেন দেশ-বিদেশের গবেষক, বিশেষজ্ঞ

নেসলে বাংলাদেশের আয়োজনে নিউট্রিশন সায়েন্সের অগ্রগতি ও জনস্বাস্থ্য উন্নয়নের লক্ষ্যে ‘দ্য গাট নেক্সাস’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী বৈজ্ঞানিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ৪ ও ৫ নভেম্বর রেডিসন ব্লু ঢাকায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে দেশ-বিদেশের ২৫০ জনের বেশি গবেষক, বিশেষজ্ঞ এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন। গাট মাইক্রোবায়োমের বৈজ্ঞানিক গুরুত্ব ও মানুষের সার্বিক সুস্থতার সঙ্গে এর নিবিড় সম্পর্ক তুলে ধরাই ছিল সম্মেলনের মূল লক্ষ্য।

মানুষের পেটে থাকা ‘গাট মাইক্রোবায়োম’ বা উপকারী জীবাণুগুলো হজমশক্তি থেকে শুরু করে মানসিক সুস্থতা ও রোগ প্রতিরোধক্ষমতাসহ অসংখ্য উপকারী ভূমিকা রাখে। ওই ওয়ার্কশপে বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন সেশন, প্রেজেন্টেশন, ইন্টারঅ্যাকটিভ আলোচনা এবং হাতে–কলমে শেখার নানা কার্যক্রম পরিচালনা করেন। অংশগ্রহণকারীরা এসবের মাধ্যমে গাট হেলথ–সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর আধুনিক গবেষণা ও বাস্তব প্রয়োগ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা লাভ করেন।

বিশেষজ্ঞের মতামত এবং বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি

আন্তর্জাতিক আলোচকদের মধ্যে ছিলেন শ্রীলঙ্কার অধ্যাপক ড. শামান রাজেন্দ্রজিথ। তিনি শিশুদের গাট মাইক্রোবায়োটার বিকাশ এবং এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নিয়ে কথা বলেন। এ ছাড়া স্থূলতা, ডায়াবেটিস ও হজমজনিত সমস্যার মতো ভবিষ্যতের স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে প্রাথমিক জীবনে সঠিক মাইক্রোবায়োম প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব তুলে ধরেন তিনি।

শামান রাজেন্দ্রজিথ বলেন, ছোটবেলা থেকে সঠিক মাইক্রোবায়োম গড়ে উঠলে জীবনের নানা পর্যায়ে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা আরও শক্তিশালী হয়।

নেদারল্যান্ডসের অধ্যাপক ড. মার্ক এ বেনিঙ্গা অনুষ্ঠানে শিশুদের কলিক সমস্যা এবং গাটের ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্যহীনতার ওপর তাঁর গবেষণা বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করেন। বেনিঙ্গা বলেন, ব্যাকটেরিয়ার সুষম উপস্থিতি বিঘ্নিত হলে শিশুদের পেটে অস্বস্তি, ব্যথা অনুভব হয়। ফলে শিশুদের কান্নার সম্ভাবনা দেখা দেয়। সঠিক প্রোবায়োটিক গ্রহণে এ সমস্যা সমাধান হতে পারে।

বাংলাদেশিদের দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাস ও পুষ্টিবিষয়ক বাস্তবতা সামনে রেখে বক্তব্য দেন আইসিডিডিআরবির অধ্যাপক ড. মো. ইকবাল হোসেন। তিনি গাটবান্ধব খাবার, প্রিবায়োটিক, প্রোবায়োটিক ও সিনবায়োটিক গ্রহণের সুবিধা এবং শিশুদের পুষ্টি উন্নয়নে করণীয় বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। ইকবাল হোসেন বলেন, ‘আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় বায়োটিকস যুক্ত হলে হজমশক্তি ও সার্বিক সুস্থতায় ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে, যা জীবনমানকে দীর্ঘমেয়াদি উন্নত করতে সহায়তা করবে।’

গবেষণা ও প্রদর্শনী

কর্মশালায় গাট হেলথ–সম্পর্কিত আধুনিক গবেষণার ওপর ভিত্তি করে তৈরি বিভিন্ন সায়েন্টিফিক প্রদর্শনী করা হয়। সেখানে অংশগ্রহণকারীরা প্রোবায়োটিক ও সিনবায়োটিকের উদ্ভাবন ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন সরাসরি পরিদর্শনের সুযোগ পান, যা নেসলে বাংলাদেশের গবেষণানির্ভর নিউট্রিশনবিষয়ক উদ্ভাবনের প্রতিশ্রুতি আরও স্পষ্ট করে।

কর্মশালাটির সার্বিক বিষয়বস্তু এবং সহযোগিতামূলক মনোভাব ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করেছে। বিশেষজ্ঞদের মধ্যে আলোচনার পরিবেশ তৈরি করে এবং বাস্তব চিত্র সামনে এনে উৎসাহিত করার মাধ্যমে নেসলে বাংলাদেশ পুষ্টিবিষয়ক শিক্ষা ও বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবনে বিশ্বস্ত সহযোগী হিসেবে তাদের ভূমিকা আরও সুদৃঢ় করেছে।

জনস্বাস্থ্যের প্রতি অঙ্গীকার

এই উদ্যোগটি নেসলে নিউট্রিশন ইনস্টিটিউটের বৃহত্তর উদ্দেশ্যকে প্রতিফলিত করে, যা দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বব্যাপী গাট হেলথ–সম্পর্কিত এডুকেশনকে সামনে রেখে কাজ করে যাচ্ছে। গবেষণা ও জ্ঞানচর্চামূলক প্ল্যাটফর্মে বিনিয়োগের মাধ্যমে নেসলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুস্থতা নিশ্চিত করতে এবং বিজ্ঞাননির্ভর সমাধানের মাধ্যমে আরও স্বাস্থ্যকর জীবনধারা গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শীতে রাঁধুন মটরশুঁটি চিংড়ির স্যুপ, দেখুন রেসিপি
  • নেসলের প্রথম ‘গাট হেলথ সামিট’: অংশ নিলেন দেশ-বিদেশের গবেষক, বিশেষজ্ঞ