মাগুরায় মুক্তিযুদ্ধের উত্তাল দিনগুলোতে পাকিস্তান বাহিনীর ও তাদের দোসরদের সঙ্গে মুখোমুখি কয়েকটি যুদ্ধ হয়েছিল মুক্তিযোদ্ধাদের। এর মধ্যে মহম্মদপুরের বিনোদপুর ও জয়রামপুরের দুই যুদ্ধের কথা বিশেষভাবে স্মরণীয়।
১৯৭১ সালের ৮ অক্টোবর বিনোদপুর যুদ্ধে শ্রীপুরের কিশোর মুক্তিযোদ্ধা মো. জহুরুল আলম (মুকুল) এবং মাত্র আট দিন পর ১৬ অক্টোবর জয়রামপুরের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে মহম্মদপুরের সাহসী যোদ্ধা আবীর হোসেন শহীদ হন। এক মাসের মধ্যে দুই গ্রামের দুই কিশোরের আত্মদান আরও বহুজনকে উদ্বুদ্ধ করে।
শুধু ফেরেনি মুকুল১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে সার্জেন্ট হিসেবে চট্টগ্রামে কর্মরত ছিলেন মাগুরা সদর উপজেলার বেলনগর গ্রামের বদরুল আলম। বর্তমানে তাঁর বয়স ৮৫ বছর। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর চট্টগ্রাম থেকে পালিয়ে আসেন। মাগুরায় এসে যোগ দেন শ্রীপুর বাহিনীতে (স্থানীয়ভাবে আকবর বাহিনী হিসেবেও পরিচিত)। এই বাহিনীর একজন কমান্ডার হিসেবে ৮ অক্টোবর তিনি অংশ নিয়েছিলেন বিনোদপুর যুদ্ধে।
গ্রামের বাড়িতে বসে কথা হয় বীর মুক্তিযোদ্ধা বদরুল আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, বিনোদপুর হাইস্কুলে তখন রাজাকারদের একটি ক্যাম্প ছিল। যেখানে মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষকে ধরে নিয়ে নির্যাতন করা হতো। এ কারণে শ্রীপুর বাহিনীর অধিনায়ক আকবর হোসেন মিয়ার নির্দেশে বিনোদপুর রাজাকার ক্যাম্পে আক্রমণের পরিকল্পনা হয়।
এই মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ‘আক্রমণের এক দিন আগে আমরা শ্রীপুর থেকে হেঁটে বিনোদপুরের পাশে বাবুখালী ইউনিয়নের একটি গ্রামে আশ্রয় নিই। কিন্তু সে খবর রাজাকারদের কাছে পৌঁছে যায়। তারা সতর্ক হয়ে যায়। আমরা ৮ অক্টোবর ভোরে বিনোদপুরে রাজাকার ক্যাম্পে আক্রমণ করি। ঘণ্টাব্যাপী যুদ্ধ হয়। একপর্যায়ে কিশোর যোদ্ধা মুকুলের মাথায় গুলি লাগে।’
বিনোদপুর যুদ্ধের বিষয়ে শ্রীপুর বাহিনীর অধিনায়ক আকবর হোসেন মিয়া বিস্তারিত উল্লেখ করেছেন ২০০৮ সালে নন্দিত প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত তাঁর লেখা বই মুক্তিযুদ্ধে আমি ও আমার বাহিনী বইয়ে। সেই বইয়ের একটি অংশে তিনি লিখেছেন, ‘আমাদের নিকটবর্তী আর কোনো ক্যাম্প না থাকায় মহম্মদপুরের হাফিজ মাস্টার সাহেবের সঙ্গে আমাদের পরামর্শ হলো যে বিনোদপুর রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণ করতে হবে। এ ব্যাপারে মহম্মদপুর থানার রশিদ বিশ্বাস ও নজরুল ইসলাম সাহেবের সাথে যোগাযোগ হয়ে গেল। আমাদের লোক তাদের কাছে পাঠানোর পর তারা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাদের যাওয়ার জন্য খবর পাঠালেন।’
দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে যুদ্ধবিনোদপুরের যুদ্ধের ঠিক আট দিন পর ১৬ অক্টোবর মহম্মদপুর থানার নহাটা ইউনিয়নের জয়রামপুর গ্রামে হয় আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ। এখানে শহীদ হন কাশিপুর গ্রামের কিশোর মুক্তিযোদ্ধা আবীর হোসেন।
স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আবীর ছিলেন স্থানীয় গেরিলা দলের সদস্য। ওই দিন আবীরসহ স্থানীয় ইয়াকুব বাহিনীর একদল মুক্তিযোদ্ধা জয়রামপুরে অবস্থান করছিলেন। বোয়ালমারী থেকে সিরাজ গ্রুপের একটি মুক্তিযোদ্ধা দল সেখানে এসে খাবার নেয়। এ সময় দুজন রাজাকার এলাকা রেকি করতে এলে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের আটক করেন। খবরটি দ্রুত পৌঁছে যায় পাকিস্তানি বাহিনীর কাছে। তৎক্ষণাৎ পাকিস্তানি বাহিনীর একটি দল জয়রামপুরে হামলা চালায়। শুরু হয় সম্মুখযুদ্ধ।
ওই যুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া নহাটা গ্রামের প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা মো.
ওই যুদ্ধে শহীদ মহম্মদপুর সদর ইউনিয়নের কাশিপুর গ্রামের আবীর হোসেনের বড় ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. তিলাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভাইয়ের মৃত্যুর খবর আমরা পাই পরদিন দুপুরে লাশ বাড়িতে আসার পর। সে তখন কেবল এসএসসি পাস করেছিল। আমার জানামতে, মাগুরায় পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে মুখোমুখি হওয়া সবচেয়ে বড় ও দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ ছিল এটি।’
এই যুদ্ধক্ষেত্রের কাছেই জয়রামপুর গ্রামে কয়েক বছর আগে নির্মাণ করা হয় ‘মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ’ নামে একটি স্মৃতিস্তম্ভ। সেটার ফলকে লেখা আছে, এই যুদ্ধে বীর প্রতীক মো. গোলাম ইয়াকুব মোল্লার নেতৃত্বে প্রায় ১৫০ মুক্তিযোদ্ধা অংশ নেন। যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর প্রায় এক শ সদস্য নিহত হন। যুদ্ধে আবীর গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন।
তরফদার প্রকাশনী থেকে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত মাগুরার লেখক ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক জাহিদ রহমানের মুক্তিযুদ্ধে মাগুরা: ইতিহাসের সন্ধানে বইয়ে লেখা আছে, ‘গুলিবিনিময়ের এক পর্যায়ে কিশোর যোদ্ধা আবীর গুলিবিদ্ধ হন। সহযোদ্ধা সিরাজুলসহ অন্য যোদ্ধারা আবীরকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় বিভিন্ন বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে নিয়ে চলে আসেন পাশেই হরিরাম গ্রামের আনোয়ার মাস্টারের বাড়িতে। ওখানে স্থানীয় পদ্ধতিতে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। অতঃপর রাত দুইটার দিকে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবীর।’
কিশোর বয়সে যুদ্ধের ময়দানে প্রাণ দেওয়ার এই বীরত্বগাথা আজও মহম্মদপুরের মানুষ স্মরণে রেখেছেন। ১৯৮৫ সালে মহম্মদপুর সদরে স্থানীয়দের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় শহীদ আবীর সাধারণ পাঠাগার। এ ছাড়া স্মৃতি ধরে রাখতে তাঁর গ্রামে কবরের পাশে স্থাপিত হয়েছে শহীদ আবীর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: মহম মদপ র র প রক শ ন র এক আম দ র র একট
এছাড়াও পড়ুন:
একজন হাতের মাংস তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন: আসিফ
বাংলাদেশের সংগীতজগতের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী আসিফ আকবর। যিনি মাঠ থেকে গান, সেখান থেকে সরাসরি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালনা পর্ষদে। সবসময়ই আলোচনায় থাকেন। ব্যস্ততার মধ্যেও এবার তিনি আসছেন জনপ্রিয় পডকাস্ট ‘বিহাইন্ড দ্য ফেইম উইথ আরআরকে’র দ্বিতীয় সিজনের প্রথম পর্বে অতিথি হয়ে।
সঞ্চালক রুম্মান রশীদ খান (আরআরকে) জানান, এই পর্বে কোনো রাখঢাক ছাড়াই নিজের স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে অনেক অজানা–অপ্রকাশিত গল্প শেয়ার করেছেন আসিফ। এর মধ্যেই ছিল এক চমকপ্রদ অভিজ্ঞতা—একজন নাকি একবার তার হাতের মাংস তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি পডকাস্টে এ ঘটনার পেছনের বিস্তৃত গল্পও বলেছেন।
আরো পড়ুন:
এবার অপু বিশ্বাসের নায়ক সজল
ফের দেখা যাবে শুভ–মিমের রসায়ন!
আরও জানা যায়, দীর্ঘ সাড়ে চার বছর আসিফের কাছে পাসপোর্ট ছিল না। তার ভাষায়, “তখন নিজেকে ফিলিস্তিনিদের মতো মনে হতো।”
ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক হিসেবে যুক্ত হওয়ার পর তাকে নিয়ে কেন সমালোচনা হয়—সে বিষয়েও সরাসরি কথা বলেছেন তিনি।
আসিফ আকবর বলেন, “আর কাউকে নিয়ে কখনও সমালোচনা হয় না—শুধু আমাকে নিয়েই কথা বলতে পছন্দ করে। হয়তো তাদের কাছে আমি সবার থেকে আলাদা। কিছু মানুষের জন্ম আর মৃত্যু ফেসবুকেই হয়। কখনো বলবে খেলা পারি না, কখনো বলবে গান পারি না। ওসব সমালোচনাকারীরা কী পারে—এই টেস্টই বা করবে কে? মানুষ কী বলল সেটা মুখ্য নয়, তুমি দুনিয়ায় কী রেখে গেলে—তাই মৃত্যুর পর আলোচিত হবে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “আমি আমার মতো করে মানুষের জন্য কাজ করে যেতে চাই, আর কিছু না।”
মাছরাঙা টেলিভিশন এবং রেডিও দিনরাত ৯৩.৬ এফএমে প্রচারিত ‘বিহাইন্ড দ্য ফেইম উইথ আরআরকে’ বর্তমানে দেশের সবচেয়ে প্রশংসিত পডকাস্টগুলোর একটি। প্রথম সিজনে অতিথি হয়ে এসেছিলেন বরেণ্য অভিনেতা আফজাল হোসেন, জাহিদ হাসান, সাদিয়া ইসলাম মৌ, আদিল হোসেন নোবেল, জয়া আহসান, ড. রাফিয়াত রশিদ মিথিলা, মেহজাবীন চৌধুরী, পরীমনি, তৌসিফ মাহবুব, সাবিলা নূর, সাফা কবির ও সাদিয়া আয়মানসহ বহু তারকা।
আজ ৬ ডিসেম্বর, শনিবার থেকে শুরু হচ্ছে নতুন সিজন। প্রতি শনিবার রাত ৮টায় মাছরাঙা টেলিভিশন এবং রেডিও দিনরাতে প্রচার হবে সিজন টু। পডকাস্টটি প্রযোজনা করছেন জেড আই ফয়সাল।
ঢাকা/রাহাত/লিপি