যুক্তরাষ্ট্রে হেপাটাইটিস বি–এর টিকা নিয়ে সন্দিহান পরামর্শক প্যানেল, নতুন সুপারিশ
Published: 6th, December 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রে সব নবজাতককে হেপাটাইটিস বি–এর টিকা দেওয়ার সুপারিশের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে পরামর্শক প্যানেল। গতকাল শুক্রবার এ ভোটাভুটি হয়। পরামর্শক প্যানেলটি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী রবার্ট কেনেডি জুনিয়রের হাতে নিয়োগ পাওয়া। কেনেডি জুনিয়র টিকাবিরোধী হিসেবে পরিচিত।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের সুপারিশে বলা হয়েছিল, হেপাইটিস বি আক্রান্ত মায়ের গর্ভে জন্ম নেওয়া নবজাতক ছাড়া বাকি সব শিশুকে জন্মের পরপরই তিন ডোজ হেপাটাইটিস বি টিকার প্রথম ডোজ দিতে হবে। এর মূল উদ্দেশ্য, যেসব অন্তঃসত্ত্বা মা জানেন না যে তাঁরা হেপাটাইটিস বি–তে আক্রান্ত বা পরীক্ষায় ভুল করে হেপাটাইটিস বি ধরা পড়েনি, তাঁদের থেকে শিশুদের মধ্যে সংক্রমণ প্রতিরোধ করা। ফলে দেশটির তরুণদের মধ্যে প্রাণঘাতী লিভারের রোগের সংক্রমণ অনেকটা নির্মূল করা সম্ভব হয়েছিল।
এক দিন দেরি করার পর গতকাল শুক্রবার পরামর্শক প্যানেল নতুন সুপারিশ নিয়ে ভোটাভুটি করে। সুপারিশটি ৮–৩ ভোটে পাস হয়। সুপারিশ অনুযায়ী, এখন থেকে মায়ের হেপাটাইটিস বি পরীক্ষা নেগেটিভ হলে শিশুর জন্য স্বাস্থ্যসেবাদাতার সঙ্গে পরামর্শ করে পৃথকভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।ভোটাভুটিতে এক দিন দেরি করার পর গতকাল পরামর্শক প্যানেল নতুন এক সুপারিশ নিয়ে ভোটাভুটি করে। সুপারিশটি ৮–৩ ভোটে পাস হয়। সুপারিশ অনুযায়ী, এখন থেকে মায়ের হেপাটাইটিস বি পরীক্ষা নেগেটিভ হলে শিশুর জন্য স্বাস্থ্যসেবাদাতার সঙ্গে পরামর্শ করে পৃথকভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
প্যানেল মনে করে, জন্মের সময় ভ্যাকসিন দেওয়ার ক্ষেত্রে এর লাভ, ঝুঁকি ও সংক্রমণের আশঙ্কা—সবকিছু বিবেচনা করা উচিত।
নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া পোস্টে ট্রাম্প এ পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন। তিনি একে ‘অত্যন্ত ভালো একটি সিদ্ধান্ত’ বলে উল্লেখ করেছেন।
তবে চিকিৎসাবিষয়ক কয়েকটি সংগঠন তাৎক্ষণিকভাবে নতুন সুপারিশের নিন্দা জানিয়েছে।
আরও পড়ুনটিকার সঙ্গে আসলে কি অটিজমের সম্পর্ক আছে, কেন ট্রাম্প এমন বলছেন২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫আমেরিকান একাডেমি অব পেডিয়াট্রিকসের সভাপতি সুসান জে ক্রেসলি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন ও উদ্দেশ্যমূলকভাবে দেওয়া এ বিভ্রান্তিকর নির্দেশনা নবজাতক ও শিশুদের মধ্যে হেপাটাইটিস বি–এর সংক্রমণ আরও বাড়িয়ে দেবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের রোগনিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধকেন্দ্রে (সিডিসি) ট্রাম্পের নিযুক্ত কর্মকর্তারা আনুষ্ঠানিকভাবে এ সুপারিশগুলো গ্রহণ করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্যানেল আরও সুপারিশ করেছে, যে শিশুরা জন্মের সময় টিকা পায়নি, তাদের প্রাথমিক ডোজ নেওয়ার জন্য অন্তত দুই মাস অপেক্ষা করা উচিত। তা ছাড়া দ্বিতীয় ডোজের আগে অ্যান্টিবডি পরিমাপের জন্য রক্ত পরীক্ষা করা উচিত।
প্যানেল আরও সুপারিশ করেছে, যে শিশুরা জন্মের সময় টিকা পায়নি, তাদের প্রাথমিক ডোজ নেওয়ার জন্য অন্তত দুই মাস অপেক্ষা করা উচিত। তা ছাড়া, দ্বিতীয় ডোজের আগে অ্যান্টিবডি পরিমাপের জন্য রক্ত পরীক্ষা করা উচিত।স্বাস্থ্যমন্ত্রী হওয়ার পর কেনেডি অ্যাডভাইজরি কমিটি অন ইমিউনাইজেশন প্র্যাকটিসেস (এসিআইপি)-এর সব সদস্যকে বরখাস্ত করেন। তাঁদের জায়গায় তিনি এমন ব্যক্তিদের নিয়োগ দিয়েছেন, যাঁরা টিকা নিয়ে সংশয়ী। আর তাঁদের মতামত কেনেডি জুনিয়রের মতামতের সঙ্গে মিলে যায়।
দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই নতুন প্যানেল আগের সুপারিশগুলো পর্যালোচনা করতে শুরু করে। চিকিৎসাবিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এ পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রে টিকা নেওয়ার হার আরও কমাতে পারে।
আরও পড়ুনকরোনা টিকাকে প্রাণঘাতী বলা কেনেডিকেই স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে বেছে নিলেন ট্রাম্প১৫ নভেম্বর ২০২৪.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র হ প ট ইট স ব স ক রমণ জন ম র পর ক ষ র শ কর র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
বাগেরহাটে চারটি সংসদীয় আসন পুনর্বহালের নির্দেশ–সংবলিত হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ
বাগেরহাটে আগের মতো চারটি সংসদীয় আসন পুনর্বহাল করতে নির্দেশ–সংবলিত হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে আজ বুধবার ৬১ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশ করা হয়েছে।
বাগেরহাটে সংসদীয় আসন চারটি থেকে কমিয়ে তিনটি আসন করা-সংক্রান্ত নির্বাচন কমিশনের (ইসি) গেজেটের বৈধতা নিয়ে করা এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত ১০ নভেম্বর হাইকোর্ট রায় ঘোষণা করেন।
হাইকোর্টের রায়ে বাগেরহাটে চারটি সংসদীয় আসন পুনর্বহাল করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গেজেট প্রকাশ করতে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দেওয়া হয়। পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, সর্বশেষ ২০২২ সালের আদমশুমারির ভিত্তিতে ২০২৩ সালের ১ জুলাই উল্লেখিত গেজেট অনুসারে আগের মতো সংসদীয় আসন নম্বর ৯৫ (বাগেরহাট-১), আসন নম্বর ৯৬ (বাগেরহাট-২), আসন নম্বর ৯৭ (বাগেরহাট-৩) এবং আসন নম্বর ১৯৮ (গাজীপুর-৬) পুনর্বহাল করে গেজেট প্রকাশ করতে নির্দেশ দেওয়া হলো। রায় ও আদেশ গ্রহণের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।
এর আগে হাইকোর্টের রায় ঘোষণার পরপরই ওই রায় স্থগিত চেয়ে নির্বাচন কমিশন এবং গাজীপুর-৬ আসন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী মো. সালাহ উদ্দিন সরকার আপিল বিভাগে পৃথক আবেদন করেন। গত ১২ নভেম্বর আবেদন দুটি আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে ওঠে। সেদিন আদালত আবেদন দুটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে ১৬ নভেম্বর শুনানির জন্য পাঠান। পাশাপাশি স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে বলা হয়। এর ধারাবাহিকতায় আবেদন দুটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চের কার্যতালিকায় ওঠে। আজ বুধবার সন্ধ্যায় সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগের বৃহস্পতিবারের কার্যতালিকায় এ-সংক্রান্ত আবেদন দুটি শুনানির জন্য ১০ নম্বর ক্রমিকে রয়েছে।
হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, রিট আবেদনে সংযুক্ত গত ৪ সেপ্টেম্বরের গেজেট নোটিফিকেশনের (ইসির প্রজ্ঞাপন) সংসদীয় আসন নম্বর ৯৫ (বাগেরহাট-১), আসন নম্বর ৯৬ (বাগেরহাট-২), আসন নম্বর ৯৭ (বাগেরহাট-৩) এবং আসন নম্বর ১৯৮ (গাজীপুর-৬) গঠন–সম্পর্কিত অংশটুকু অবৈধ, আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হলো।
রিট আবেদনকারী পক্ষ জানায়, বাগেরহাটে আগে চারটি আসন ছিল, একটি কমিয়ে গাজীপুরে একটি আসন বাড়ানো হয়েছিল। বাগেরহাট-৪ আসন কেটে গাজীপুর-৬ আসন করা হয়েছিল।
পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপি পেয়েছেন বলে জানান রিট আবেদনকারীদের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শেখ মোহাম্মদ জাকির হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, হাইকোর্ট বাগেরহাটে আগের মতো চারটি সংসদীয় আসন পুনর্বহাল করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গেজেট প্রকাশ করতে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছেন। তবে হাইকোর্টের রায়ের পরপরই নির্বাচন কমিশনসহ অন্যরা আপিল বিভাগে পৃথক আবেদন করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে চেম্বার আদালত এ বিষয়ে পক্ষগুলোকে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দিয়েছেন। আবেদন দুটি এখন আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। এ আবেদনের নিষ্পত্তি না হলে বাগেরহাটের চারটি ও গাজীপুরের পাঁচটি সংসদীয় আসনে তফসিল ঘোষণা করতে পারবে না নির্বাচন কমিশন।
১৯৬৯ সাল থেকে বাগেরহাটে চারটি সংসদীয় আসনে নির্বাচন হয়ে আসছিল। সে অনুযায়ী বাগেরহাট-১ ছিল চিতলমারী-মোল্লাহাট-ফকিরহাট উপজেলা নিয়ে গঠিত; বাগেরহাট-২ ছিল বাগেরহাট সদর-কচুয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত; বাগেরহাট-৩ ছিল রামপাল-মোংলা উপজেলা নিয়ে এবং বাগেরহাট-৪ ছিল মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা উপজেলা নিয়ে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গত ৩০ জুলাই নির্বাচন কমিশন প্রাথমিকভাবে বাগেরহাটের চারটি আসন থেকে একটি কমিয়ে তিনটি করার প্রস্তাব দেয়। ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনে নামে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। তারা গড়ে তোলে সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটি এবং হরতাল-অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে।
নির্বাচন কমিশন গত ৪ সেপ্টেম্বর এ-সংক্রান্ত চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করে। এতে চারটি আসন থেকে একটি কমিয়ে বাগেরহাটকে তিন আসনে ভাগ করা হয়। এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বাগেরহাট প্রেসক্লাব, বাগেরহাট জেলা বিএনপি, জেলা জামায়াতে ইসলামী, বাগেরহাট জেলা আইনজীবী সমিতি, সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশন, বাগেরহাট জেলা ট্রাক ট্যাংকলরি কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতি এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে বাগেরহাট-১ আসন থেকে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী মো. শেখ মাসুদ রানা ওই রিট করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ১৬ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট রুল দেন। চূড়ান্ত শুনানি শেষে রুল যথাযথ (অ্যাবসলিউট) ঘোষণা করে ১০ নভেম্বর ওই রায় দেওয়া হয়। হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় আজ প্রকাশিত হলো।