স্বৈরাচারবিরোধী দীর্ঘ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এক গণ–অভ্যুত্থানে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর পতন হয়েছিল সামরিক স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের। সে আন্দোলন ও এরশাদের পতন নিয়ে লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদের এ লেখা ৬ ডিসেম্বর ২০১৭ সালে প্রথম আলোতে প্রকাশিত হয়। স্বৈরাচার পতন দিবস উপলক্ষে প্রসঙ্গ বিবেচনায় ঈষৎ পরিমার্জনসহকারে আজ লেখাটি পুনঃপ্রকাশ করা হলো।

কিছু কিছু দিন আছে, যা আমরা নানাভাবে স্মরণ করি—কখনো ঘৃণায়, তখন আমরা বলি কালো দিবস; কখনো ভালোবাসায়, তখন বলি শোক দিবস অথবা বিজয় দিবস। কিছু কিছু দিন আছে, যা আমাদের পাওয়া না-পাওয়ার হিসাবের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়। অনেক বছর পর আমরা যখন পেছন ফিরে তাকাই, তখন পোস্টমর্টেম করে দেখি, আসলে আমরা কী করেছিলাম, কী চেয়েছিলাম এবং কী পেয়েছিলাম।

১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর এমনই একটি দিন। ওই দিন এ দেশে ক্ষমতার পালাবদল হয়েছিল। কিন্তু আসলে জিতেছিল কে বা কারা, আমরা সেই জিজ্ঞাসার জবাব এখনো খুঁজছি।

১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তারের সরকারকে হটিয়ে সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ লে.

জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নিজেকে গদিনশিন করেন। ওই দিন বেতার ও টেলিভিশনে প্রচারিত ভাষণে তিনি বলেন, ‘জনগণের ডাকে সাড়া দিতে হইয়াছে, ইহা ছাড়া জাতির সামনে আর কোনো বিকল্প ছিল না।’

তিনি বাংলাদেশে দ্বিতীয়বারের মতো সামরিক শাসন জারি করে নিজেকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ঘোষণা করেন। সামরিক শাসন জারির পরপরই আওয়ামী লীগপন্থী দৈনিক বাংলার বাণী এরশাদের ক্ষমতা গ্রহণকে সমর্থন দিয়েছিল। শেখ ফজলুল করিম সেলিম সম্পাদিত এই দৈনিকে মোনাজাতরত এক মহিলার ছবি ছাপা হয়—সামরিক আইন জারি হওয়ায় তিনি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছেন। আওয়ামী লীগ মনে করেছিল যে তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি তো গেল, এটাই লাভ।

আরও পড়ুনএরশাদ আমলে ভেঙে পড়ে নির্বাচনী ব্যবস্থা০২ জানুয়ারি ২০২৪

আওয়ামী লীগ আর বিএনপি হলো দেশের দুটি প্রধান রাজনৈতিক দল। দেশের ওপর তাদের একচেটিয়া প্রাধান্য। তাদের দ্বৈরথে দেশ জেরবার হলেও জেনারেল এরশাদ মোটামুটি শান্তিতেই দেশ শাসন এবং উন্নয়ন—দুটোই চালিয়েছেন একটানা অনেকগুলো বছর।

আমরা নসিহত শুনেছি: এ দেশের মানুষ অশিক্ষিত, এরা গণতন্ত্র বোঝে না, এদের দরকার উন্নয়ন। ‘উন্নয়নের রাজনীতির’ প্রথম ঢেউ এ দেশে বইয়ে দিয়েছিলেন পাকিস্তানের সিপাহসালার আইয়ুব খান।

দ্বিতীয় ঢেউটি আমরা দেখলাম এরশাদের জমানায়। সেতু তৈরি হচ্ছে, রাস্তা চওড়া হচ্ছে, দালান উঁচু হচ্ছে, খাল ভরাট করে কালভার্টের বাক্স তৈরি হচ্ছে। নতুন এক স্লোগান চালু করলেন তিনি—নতুন বাংলা। তিনি তো কবি। গান লিখে ফেললেন। তিনি যখন তাঁর স্ত্রী ও শিশুপুত্র নিয়ে পথ দিয়ে হাঁটেন, তাঁদের ওপর ভক্তরা ফুলের পাপড়ি ছিটায়। ব্যাকগ্রাউন্ডে সাবিনা ইয়াসমীন আর এন্ড্রু কিশোরের গলায় কবি এরশাদের লেখা গান বাজে, ‘নতুন বাংলাদেশ গড়ব মোরা, নতুন করে আজ শপথ নিলাম। নব জীবনের ফুল ফোটাবার, প্রাণে প্রাণে আজ দীক্ষা নিলাম।’

রাজনীতিবিদদের ‘গুড হিউমারে’ রেখে তিনি ভালোই চলছিলেন। কিন্তু তরুণেরা সব সময়ই উর্দি শাসনের বিরুদ্ধে। আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে প্রথম বিদ্রোহ করেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে। এবারও তা-ই হলো। ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলনের স্মরণে ১৯৮২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর শিক্ষা দিবস পালন করার জন্য ১৪টি ছাত্রসংগঠন একত্র হলো। পরে আরও ৫টি ছাত্রসংগঠন এতে যোগ দেয়। তারা ১০ দফা দাবিনামাও তৈরি করে। তাদের মূল দাবি ছিল, মজিদ খানের প্রস্তাবিত শিক্ষানীতি বাতিল করা।

১৯৮২ সালের ২১ নভেম্বর তৈরি হওয়া ছাত্র সংগ্রাম পরিষদে যোগ দেয় ছাত্রলীগ (মুনীর-হাসিব), ছাত্রলীগ (ফজলু-চুন্নু), ছাত্রলীগ (জালাল-জাহাঙ্গীর), ছাত্রলীগ (রশীদ-রতন), ছাত্রলীগ (ওয়ারেশ-জহীর), ছাত্রলীগ (আখতার), ছাত্রলীগ (আজিজ), বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বাংলা ছাত্র ইউনিয়ন, জাতীয় ছাত্র ইউনিয়ন, বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়ন (ইসরারুল-স্বপন), বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়ন (মানু), বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়ন (গিরানি), বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, ছাত্র ঐক্য ফোরাম, বাংলাদেশ ছাত্র সমিতি, জাতীয় ছাত্র সংসদ, সমাজবাদী ছাত্র জোট ও ছাত্র একতা কেন্দ্র।

আরও পড়ুননব্বইয়ের ১০ দফার সঙ্গে সবাই বিশ্বাসঘাতকতা করেছে০৫ ডিসেম্বর ২০২২

১৯৮৩ সালের ১৪ ও ১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় পুলিশের সঙ্গে ছাত্রদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। কমপক্ষে পাঁচজন ছাত্র নিহত ও শতাধিক আহত হন। এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের প্রথম বলি হলেন জয়নাল, কাঞ্চন, মোজাম্মেল, জাফর ও দীপালি সাহা। এরশাদের সেনাশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে সেই প্রথম রক্ত ঝরল ঢাকার রাজপথে। এরপরও অনেক তরুণের রক্ত ঝরেছে। নূর হোসেন আর ডা. মিলন তো মুখে মুখে উচ্চারিত নাম। রক্তের সিঁড়ি বেয়ে গণতন্ত্রের ঝান্ডা হাতে যাঁরা ১৯৯১ সাল থেকে এ দেশ শাসন করে যাচ্ছেন, তাঁরা এই তরুণদের কজনের নামে কয়টি রাস্তা, সেতু বা ভবনের নামকরণ করেছেন? প্রতিবছর ৬ ডিসেম্বর এলে মহাসমারোহে ‘স্বৈরাচার পতন দিবস’ পালন করা হয়। এই তরুণদের ছবি নিয়ে শোভাযাত্রা হয় না। অকৃতজ্ঞ এই দেশ, অকৃতজ্ঞ এই সমাজ!

এরশাদ আনুষ্ঠানিকভাবে মসনদ থেকে বিদায় নিয়েছিলেন ৬ ডিসেম্বর ১৯৯০। রাজনীতিবিদদের একে অপরের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে কিংবা লেলিয়ে দিয়ে তিনি মহাসুখেই রাজত্ব করছিলেন। ১৯৮৮ সালের নির্বাচনে মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলো অংশ না নেওয়ায় তাঁর পক্ষে ক্ষমতায় টিকে থাকা আর সম্ভব ছিল না। রাজনীতিবিদেরা অনেকেই এরশাদের কাছে বিক্রি হয়ে গিয়েছিলেন, অনেকেই মন্ত্রিত্ব করেছেন, কেউ কেউ নিয়মিত মাসোহারা পেতেন বলেও কানাঘুষা আছে। একদিন না একদিন এসব তথ্য জনসমক্ষে প্রকাশ পাবেই। আর আমরা তখন রাবীন্দ্রিক ভাষায় তাঁদের বলতে পারব, ‘সাধুবেশে পাকা চোর অতিশয়!’

আমার কাছে ‘স্বৈরাচার পতন দিবস’ বিরাট এক পরিহাস। এরশাদ পড়ে গিয়েছিলেন বটে। তবে আবার উঠে দাঁড়িয়েছিলেন। তাঁর পুনরুত্থান ঘটে। গণমাধ্যমে তিনি প্রায়ই হুংকার দিতেন, তাঁকে বাদ দিয়ে এ দেশে কেউ সরকার গঠন করতে পারবে না। এরশাদকে ক্ষমতা থেকে নামাতে যাঁরা প্রাণ দিয়েছিলেন, তাঁরা অলক্ষে হয়তো ভাবতেন, আমরা কেন মরলাম? কার জন্য?

ওই সময় ‘তিন জোটের রূপরেখা’ নিয়ে আমরা অনেক কথাবার্তা শুনেছি। তিন জোটের মধ্যে ছিল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৫-দলীয় জোট, বিএনপির নেতৃত্বে সাতদলীয় জোট এবং বামপন্থীদের পাঁচদলীয় জোট। পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীও ‘যুগপৎ’ আন্দোলনে শামিল ছিল। ১৯৮৩ সালে জামায়াতে ইসলামীর আবিষ্কৃত ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের’ তত্ত্ব অন্য দলগুলো গ্রহণ করায় একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীন সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জোরদার হয়। রাজপথে তখন সবচেয়ে জনপ্রিয় স্লোগান ছিল, ‘এক দফা এক দাবি, এরশাদ তুই কবে যাবি।’

এরশাদ ১৯৮৬ সালে একটা পাতানো সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করেন এবং আওয়ামী লীগ ও তার মিত্রদের সেই নির্বাচনে ভিড়িয়ে ভেবেছিলেন, তিনি বুঝি টিকে গেছেন। আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাঁর মধুচন্দ্রিমা পর্বটি এক বছর টিকেছিল। শেষের দিকে আবার সামরিক আইন জারি করে এরশাদ ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন। ডা. মিলন নিহত হওয়ার পর পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটে। সেনাবাহিনী এরশাদকে জানিয়ে দেয়, সমস্যার সমাধান করতে না পারলে এরশাদকেই তার দায় নিতে হবে, সেনাবাহিনী নিরপেক্ষ থাকবে।

তিন জোটের নেতাদের মধ্যে একটা সমঝোতা হয়েছিল যে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেবেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খন্দকারকে রাষ্ট্রপতি করতে চেয়েছিল। খালেদা জিয়া জানিয়ে দেন যে প্রধান বিচারপতিই হবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান। সারা দিন অপেক্ষা করার পর প্রধান বিচারপতিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে মেনে নিতে আওয়ামী লীগ রাজি হয় (মহিউদ্দিন আহমদ, বিএনপি: সময়-অসময়; হায়দার আকবর খান রনো, শতাব্দী পেরিয়ে)।

আরও পড়ুনএরশাদ একটি সিনড্রোম০৬ ডিসেম্বর ২০১৮

ক্ষমতার চূড়া থেকে এরশাদের পতনের দৃশ্যটি খুব কাছ থেকে দেখেছেন সে সময় রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিবের দায়িত্ব পালনকারী মেজর জেনারেল মনজুর রশীদ খান। পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়ার পর তিনি শেষবারের মতো তাঁর অফিসে যান। সেখানে তিনি আধা ঘণ্টা ছিলেন। তিনি ব্যক্তিগত কাগজপত্র সরিয়ে নেন এবং তাঁর ব্যক্তিগত সচিব ৪ কোটি ৮ লাখ ৬৫ হাজার টাকা অফিস থেকে সরিয়ে নিতে সক্ষম হন (মনজুর রশীদ খান, আমার সৈনিক জীবন: পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ)।

পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়া সত্ত্বেও এরশাদ তাঁর অনুগত নবম ডিভিশনের জিও মেজর জেনারেল রফিকুল ইসলামের ওপর নির্ভর করে বাঁচতে চেয়েছিলেন। পরিস্থিতি আঁচ করে সেনাপ্রধান লে. জেনারেল নূরউদ্দীন রফিকের পুরো বাহিনী সাভারে পাঠিয়ে দেন। জেনারেল নূরউদ্দীন এবং সিজিএস মেজর জেনারেল আবদুস সালাম সারা দিন এরশাদের ফোন ধরেননি। সেনা কর্মকর্তাদের একটা বড় অংশ এরশাদের ‘অপকর্মের’ দায় আর বয়ে বেড়াতে চায়নি।

৬ ডিসেম্বর বেলা দুইটায় বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ উপরাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেন। এরশাদ নবনিযুক্ত উপরাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। এভাবেই শেষ হয় ৯ বছরের এরশাদ-জমানা।

এরপরেও কি এরশাদ-জমানা শেষ হয়ে গিয়েছিল? বিচারপতি সাহাবুদ্দীনের সরকার এরশাদকে জেলে ঢোকায়, তাঁর বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা করে। খালেদা জিয়ার বিএনপি সরকার তাঁর বিরুদ্ধে অনেক মামলা করে এবং একটি মামলায় তিনি দণ্ডিত হন। পরে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার এরশাদকে সব মামলায় জামিন দিয়ে জাতীয় সংসদে বসার সুযোগ করে দেয়। তারপর এরশাদ ২০০৫ সালে তাঁর জাতীয় পার্টি নিয়ে মহাসমারোহে খালেদা জিয়ার জোটে যোগ দেন। ২০০৭ সালের এক-এগারোর কিছু আগে সমীকরণ আবার পাল্টে যায়। ২০০৮ সালের নির্বাচনে এরশাদ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোটে মহা অংশীদার হন। ২০০৯ সাল থেকেই তিনি এবং তাঁর দল ক্ষমতার ভাগীদার।

আমার কাছে ‘স্বৈরাচার পতন দিবস’ বিরাট এক পরিহাস। এরশাদ পড়ে গিয়েছিলেন বটে। তবে আবার উঠে দাঁড়িয়েছিলেন। তাঁর পুনরুত্থান ঘটে। গণমাধ্যমে তিনি প্রায়ই হুংকার দিতেন, তাঁকে বাদ দিয়ে এ দেশে কেউ সরকার গঠন করতে পারবে না। এরশাদকে ক্ষমতা থেকে নামাতে যাঁরা প্রাণ দিয়েছিলেন, তাঁরা অলক্ষে হয়তো ভাবতেন, আমরা কেন মরলাম? কার জন্য?

মহিউদ্দিন আহমদ লেখক ও গবেষক

* মতামত লেখকের নিজস্ব

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ষ ট রপত র দ দ ন আহমদ ৬ ড স ম বর এরশ দ র ব চ রপত সরক র র র এরশ দ র জন ত র জন য আওয় ম ক ষমত ব এনপ প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

অস্ত্রবিরতির মধ্যেই পাকিস্তান–আফগানিস্তান সীমান্তে প্রাণঘাতী গোলাগুলি, নিহত ৪

পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে অন্যতম প্রধান সীমান্ত ক্রসিংয়ে রাতভর গোলাগুলির ঘটনায় চার বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। আফগানিস্তানের এক কর্মকর্তা আজ শনিবার এ তথ্য দিয়েছেন।

গত অক্টোবরে দুই দেশের সীমান্ত এলাকায় প্রাণঘাতী সংঘর্ষ হয়েছিল। এবার অস্ত্রবিরতি চলার মধ্যে নতুন করে সংঘর্ষ ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটল।

আফগানিস্তানের দক্ষিণে স্পিন বোলডাক অঞ্চলের গভর্নর আবদুল করিম জাহাদ এএফপিকে বলেন, সংঘর্ষে আরও চারজন আহত হয়েছেন।

পাকিস্তানের সীমান্ত শহর চামানের স্থানীয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেছে, হালকা আহত হওয়া তিনজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

পাকিস্তান ও আফগানিস্তান দুই দেশই একে অপরের বিরুদ্ধে চামান ও স্পিন বোলডাক সীমান্তে ‘বিনা উসকানিতে’ হামলার অভিযোগ এনেছে। অথচ অক্টোবরের সংঘর্ষের পর দুই দেশই একটি অস্ত্রবিরতি চুক্তিতে পৌঁছেছিল।

গতকাল শুক্রবার গভীর রাতে তালেবান সরকারের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে একটি পোস্ট দিয়েছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘দুঃখজনকভাবে আজ রাতেই কান্দাহারের স্পিন বোলডাক অঞ্চলে আফগানিস্তানের ওপর হামলা শুরু করে পাকিস্তান। এতে ইসলামিক আমিরাতের (আফগানিস্তান) বাহিনী জবাব দিতে বাধ্য হয়।’

গতকাল শুক্রবার গভীর রাতে তালেবান সরকারের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে একটি পোস্ট দিয়েছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘দুঃখজনকভাবে আজ রাতেই কান্দাহারের স্পিন বোলডাক অঞ্চলে আফগানিস্তানের ওপর হামলা শুরু করে পাকিস্তান। এতে ইসলামিক আমিরাতের (আফগানিস্তান) বাহিনী জবাব দিতে বাধ্য হয়।’

তবে পাকিস্তান বলছে, আফগানিস্তানই প্রথমে গুলি চালিয়েছে।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর মুখপাত্র মোশাররফ জায়েদি এক্স পোস্টে লিখেছেন, ‘অল্প কিছুক্ষণ আগে আফগান তালেবান প্রশাসন সীমান্তে বিনা উসকানিতে গুলি চালিয়েছে।’

জায়েদির দাবি, তাঁদের বাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে সমুচিত জবাব দিয়েছে।

সীমান্তের আফগান অংশের বাসিন্দারা এএফপিকে বলেন, রাত প্রায় ১০টা ৩০ মিনিটের দিকে গোলাগুলি শুরু হয় এবং দুই ঘণ্টার মতো চলতে থাকে।

কান্দাহার প্রদেশের তথ্য বিভাগের প্রধান আলী মোহাম্মদ হাকমল বলেন, পাকিস্তানি বাহিনী হালকা ও ভারী অস্ত্র ব্যবহার করে হামলা চালায়। কয়েকটি বেসামরিক বাড়িতে মর্টারের গোলার আঘাত লেগেছে।

২০২১ সালে তালেবান কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমে বাড়ছে।

আরও পড়ুনপাকিস্তান–আফগানিস্তান সীমান্তে তুমুল গোলাগুলি৫ ঘণ্টা আগে

বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে নিরাপত্তা ইস্যু। ইসলামাবাদ অভিযোগ করে আসছে যে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে, বিশেষ করে পাকিস্তান তালেবানকে (টিটিপি) আশ্রয়–প্রশ্রয় দিচ্ছে কাবুল। এ টিটিপি পাকিস্তানের ভূখণ্ডের ভেতরে হামলা চালিয়ে থাকে।

তালেবান সরকার এসব অভিযোগ অস্বীকার করে থাকে।

গত অক্টোবরে দুই দেশের মধ্যকার সংঘাতে ৭০ জনের বেশি নিহত এবং শতাধিক মানুষ আহত হয়।

আরও পড়ুননতুন সংঘাতের পর পাকিস্তান–আফগানিস্তানের মধ্যে আলোচনায় আবারও অচলাবস্থা০৮ নভেম্বর ২০২৫

কাতার ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় একটি অস্ত্রবিরতি চুক্তির মধ্য দিয়ে লড়াই বন্ধ হয়। পরে দোহা ও ইস্তাম্বুলে একাধিক দফায় আলোচনার পরও তারা কোনো স্থায়ী সমাধানে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছে। দুই দক্ষিণ এশীয় প্রতিবেশীর মধ্যকার সীমান্ত এখনো বন্ধ রয়েছে।

গত মাসে কাবুল অভিযোগ করেছিল, সীমান্ত এলাকার ওপর পাকিস্তানের বিমান হামলায় ১০ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ৯ জনই শিশু। পাকিস্তান অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ