টেকনাফে জেলের জালে ১৫ মণ ওজনের বিশাল মাছ, কেন এটি ধরা নিষিদ্ধ
Published: 6th, December 2025 GMT
কক্সবাজারের টেকনাফ উপকূলে এক জেলের জালে ধরা পড়ে ১৫ মণ ওজনের একটি মাছ। দানব আকৃতির এই মাছটি দেখতে অদ্ভুত দর্শন। নৌকা থেকে নামিয়ে তীরে টেনে আনতে হাত লাগাতে হয়েছে বেশ কয়েকজনকে। মুহূর্তেই ভিড় জমে যায় মাছটিকে ঘিরে। বিশাল আকারের মাছটি স্থানীয় জেলেদের কাছে শাপলা পাতা নামে পরিচিত। হাঙর প্রজাতির স্টিংরে পরিবারের এই মাছ বাংলাদেশের বন্য প্রাণী আইনে ধরা ও বিক্রি নিষিদ্ধ।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে টেকনাফ সমুদ্রের সাবরাং মুন্ডার ডেইল উপকূলে মাছটি জেলে আবদুল গফুরের জালে ধরা পড়ে এই মাছ। ধরা ও বিক্রি নিষিদ্ধ হলেও মাছটি ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে।
জেলে আবদুল গফুর বলেন, মাছটি ধরা পড়ার পর সাগর থেকে উপকূলে আনতে অনেক কষ্ট হয়েছে। অতিরিক্ত ওজনের কারণে ট্রলারে ভরে উপকূলে তোলা সম্ভব হয়নি। পরে অন্য জেলেদের সহায়তায় মাছটিকে রশি দিয়ে বেঁধে আনতে হয়েছে। বিশাল আকারের শাপলা পাতা মাছ জীবনের প্রথম দেখেছেন বলে জানান তিনি।
টেকনাফ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন বলেন, জেলের জালে ধরা পড়া বিশাল আকারের এই মাছ শাপলা পাতা বা পাতা হাঙর। এই ধরা নিষিদ্ধ।
স্থানীয় জেলেরা বলেন, সাগরের জোয়ার-ভাটার পানির সঙ্গে গভীর সমুদ্র থেকে এই মাছটি আবদুল গফুরের জালে ধরা পড়েছে। অন্যথায় জালটি সমুদ্রের যে স্থানে ফেলা হয়েছিল, সেখানে এই মাছটি ধরা পড়ার কথা নয়। কারণ, এই মাছ গভীর সমুদ্রে বসবাস করে।
স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ী নুর আহমদ বলেন, বিশাল আকারের শাপলা পাতা ধরার পর সাবরাং মুন্ডার ডেইল ফিশিং ঘাটে স্থানীয় মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। জেলেরা মাছটিকে রশি দিয়ে বেঁধে টেনে উপকূলে নিয়ে আসেন। ভিন্ন প্রকৃতির এই মাছটিকে একনজর দেখার জন্য বিভিন্ন স্থান থেকে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কসংলগ্ন সৈকত এলাকায় ঘুরতে আসা পর্যটকেরাও ভিড় জমান।
স্থানীয় ছৈয়দ আলম নামের একজন মাছ ব্যবসায়ী ৫০ হাজার টাকা দিয়ে শাপলা পাতা মাছটি কিনে নেন। ছৈয়দ আলম বলেন, মাছটি কেটে টুকরা টুকরা করে চট্টগ্রামে পাঠানো হবে।
বাংলাদেশ বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন অনুযায়ী, শাপলা পাতা মাছ একটি সংরক্ষিত জলজ বন্য প্রাণী। এই আইনের ধারা ৩৮ অনুযায়ী, ‘সংরক্ষিত বন্য প্রাণী হত্যা, সংগ্রহ, অধিকার, ভোগ, পরিবহন, বিক্রয় বা কেনা দণ্ডনীয় অপরাধ। এর জন্য সর্বোচ্চ ১ বছর কারাদণ্ড বা ১ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে।’
জানতে চাইলে কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আবদুল্লাহ আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, শাপলা পাতা বা পাতা হাঙর ধরা, বিক্রি করা বন্য প্রাণী আইনে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। টেকনাফের সাবরাং মুন্ডার ডেইল ফিশিং ঘাটে যে মাছটি ধরা পড়েছে, সে সম্পর্কে আমরা অবগত নই। তবে খুব দ্রুত এ বিষয়ে খবর নেওয়া হচ্ছে। ছৈয়দ আলম নামের যে জেলে শাপলা পাতা কিনেছেন, মাছটি নিয়ে বর্তমানে তাঁর অবস্থান কোথায়—খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বন য প র ণ র এই ম ছ উপক ল আবদ ল
এছাড়াও পড়ুন:
ভারতে আবারো বাবরি মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন
ভারতে আবারো স্থাপিত হলো বাবরি মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর। পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার বেলডাঙ্গা ও রেজিনগরের মাঝামাঝি এলাকায় শনিবার বাবরি মসজিদের আদলে নতুন মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সাসপেন্ডেড বিধায়ক হুমায়ুন কবির। সকাল ১০টা থেকে কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হয় অনুষ্ঠান। বেলা ১২টায় শুরু হয় ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মূল অনুষ্ঠান।
মুর্শিদাবাদে হুমায়ুন করিরের বাবরি মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে সৌদি আরব থেকে এসেছিলেন মুফতি সুফিয়ান। মদিনা থেকে এসেছেন শেখ আবদুল্লা। এর পাশাপাশি, ভিত্তিপ্রস্তর উপলক্ষে হাজার হাজার মুসল্লি এসেছিলেন। যে যার সাধ্যমতো কেউ দুটো, কেউ চারটে, কাউকে ছয়টা ইট মাথায় নিয়ে সভাস্থলে এসেছিলেন। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনে দান হিসেবে এই ইট এনেছেন তারা। সভাস্থলেই প্রায় কয়েক কোটি রুপি মসজিদ নির্মাণের জন্য দান করেন মুসল্লিরা। এককভাবে এক ডাক্তারই দিয়েছেন এক কোটি রুপি।
হুমায়ুনের মসজিদ নির্মাণের প্রস্তাব সংবিধানবিরোধী বলে অভিযোগ তুলে হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়েছিল। শুক্রবার ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি সুজয় পাল এবং বিচারপতি পার্থসারথি সেনের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, এ ক্ষেত্রে আদালত হস্তক্ষেপ করবে না। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না-হয়, তা পুলিশকে নিশ্চিত করতে হবে। পুলিশ জানিয়েছে, তারা নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।
শনিবার উদ্বোধন হলেও আদালতের নির্দেশ মেনে শুক্রবার সকাল থেকেই বেলডাঙ্গা ও আশপাশের অঞ্চলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। এলাকায় মোতায়েন করা হয় কেন্দ্রীয় সশস্ত্র বাহিনী, র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স, বিএসএফসহ তিন হাজারেরও বেশি নিরাপত্তা কর্মী।
ভিত্তিপ্রস্তর অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে এলাহি আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে এসেছিলেন প্রায় ৪০ হাজার অতিথি। স্থানীয় প্রায় ২০ হাজার মানুষ ও দর্শনার্থীর জন্য ছিল শাহী বিরিয়ানির ব্যবস্থা। রান্নার দায়িত্ব দেওয়া হয় সাতটি কেটারিং সংস্থাকে। এছাড়া তৈরি করা হয়েছিল ৪০০ অতিথি ধারণ ক্ষমতার মঞ্চ। সবদিক সামল দেওয়ার জন্য কমপক্ষে তিন হাজার স্বেচ্ছাসেবক ছিল। পুরো আয়োজনে সবমিলিয়ে খরচ হয়েছে প্রায় কয়েক কোটি রুপি।
বরখাস্ত তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক হুমায়ুন কবির শনিবার মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে বলেন, একটি ইটও কেউ সরাতে পারবে না, কারণ বাংলার ৩৭ শতাংশ মুসলিম জনসংখ্যা যেকোনো মূল্যে এটি তৈরি করবে। মসজিদ তৈরি হবে।
তিনি উপাসনালয় নির্মাণের সাংবিধানিক অধিকারের কথা উল্লেখ করে বলেন, “আমি অসাংবিধানিক কিছু করছি না। যে কেউ মন্দির বানাতে পারে, যে কেউ গির্জা বানাতে পারে; আমি মসজিদ বানাব। বলা হচ্ছে যে আমরা বাবরি মসজিদ বানাতে পারব না। এটা কোথাও লেখা নেই। সুপ্রিম কোর্ট একটি রায় দিয়েছিল যেখানে বলা হয়েছিল যে হিন্দুরা বাবরি মসজিদ ভেঙে দিয়েছে। হিন্দুদের ভাবাবেগের কথা মাথায় রেখে এখানে মন্দির তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। এখন আমরা দেখছি সাগরদিঘিতে কেউ রাম মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করছে। কিন্তু সংবিধান আমাদের মসজিদ তৈরির অনুমতি দেয়।”
কবির জোর দিয়ে বলেন, আইনি চ্যালেঞ্জ মসজিদের নির্মাণকে আটকাতে পারবে না। আমার বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা করা হয়েছে, কিন্তু যার সঙ্গে আল্লাহ আছেন তাকে কেউ থামাতে পারবে না। আদালতও স্পষ্টভাবে বলেছে যে ভারতের সংবিধানে লেখা আছে যে কেউ মসজিদ তৈরি করতে পারে; এটি একটি অধিকার।”
কবির জানান, মসজিদের জন্য ৩০০ কোটি রুপির বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে, ২৫ বিঘা জমির মসজিদ চত্ত্বরে নির্মাণ হবে কলেজ হাসপাতাল। মূল মসজিদ নির্মাণ হবে তিন কাঠা জমির উপর। যেখানে একটি হাসপাতাল, গেস্টহাউস এবং সভাকক্ষও থাকবে। মসজিদ নির্মাণে টাকার অভাব হবে না। মসজিদ নির্মাণের জন্য এক শিল্পপতি ৮০ কোটি রুপি দিয়েছেন।
তিনি এই প্রকল্পের প্রতি তার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, “এটি মুসলমানদের প্রতিশ্রুতি: বাবরি মসজিদ তৈরি হবেই, হবেই, হবেই।
ঢাকা/শাহেদ