নরসিংদীর পাঁচদোনা-ডাঙ্গা-ঘোড়াশাল আঞ্চলিক সড়কটির নাম বীর প্রতীক সিরাজ উদ্দিন আহমেদ (নেভাল সিরাজ) সড়ক নামে নামকরণ করা হয়েছে। আজ শনিবার দুপুরে সদর উপজেলার পাঁচদোনা মোড়ে সড়কটির নামফলক উন্মোচন করেন সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয় উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।

এর আগে পাঁচদোনা স্যার কৃষ্ণ গোবিন্দ (কে জি) গুপ্ত স্কুল অ্যান্ড কলেজ চত্বরে নামফলক উন্মোচন উপলক্ষে আলোচনা অনুষ্ঠান হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ফাওজুল কবির খান।

সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয় উপদেষ্টা বলেন, আজ ইতিহাসে একটি বিচারের দিন। বীর প্রতীক সিরাজ উদ্দিন আহমেদ, যিনি দেশ স্বাধীন করেছেন, তাঁকে সদ্য স্বাধীন দেশে হত্যা করা হয়েছিল। হত্যাকারীরা ভেবেছিল সিরাজকে নিশ্চিহ্ন করে দেবেন। কিন্তু নেভাল সিরাজ নিশ্চিহ্ন হননি, পুনর্জাগরিত হয়েছেন। এটাই হচ্ছে ইতিহাসের বিচার। ইতিহাস বিকৃত করা যায়, কিন্তু সত্য একদিন সামনে আসবেই। আজ সড়কটির নামকরণ করা হচ্ছে বীর প্রতীক সিরাজ উদ্দিন আহমেদ (নেভাল সিরাজ) সড়ক নামে। এভাবেই প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সামনে নিয়ে আসা হবে।

জেলা প্রশাসন বলছে, বীর প্রতীক সিরাজ উদ্দিন আহমেদ পাকিস্তান নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ছিলেন। একাত্তরে নরসিংদীতে ছুটিতে থাকাকালে বিদ্রোহ ঘোষণা করে তিনি মুক্তিযুদ্ধে আত্মনিয়োগ করেন। ৯ ও ১০ এপ্রিল ইপিআরের সঙ্গে মিলে বাগবাড়ি-পালবাড়ি-পাঁচদোনায় পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধযুদ্ধ গড়ে তোলেন। তিনি ছাত্র-যুবকদের সংগঠিত করে নিজ গ্রাম নেহাবকে কেন্দ্র করে দুই পাশের জনপদে মুক্তিযোদ্ধাদের অপ্রতিরোধ্য ঘাঁটি প্রতিষ্ঠা করেন। এ ঘাঁটি থেকেই পাঁচদোনা মোড়সহ অসংখ্য মুখোমুখি এবং গেরিলাযুদ্ধের অপারেশন পরিচালনা করেন। অসমসাহসী বীরত্বের কারণেই মুক্তিযুদ্ধের ২ নম্বর সেক্টর থেকে তাঁকে চার থানার (নরসিংদী, শিবপুর, রূপগঞ্জ ও আড়াইহাজারের) গেরিলা ইউনিট কমান্ডারের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাঁর বিশাল বাহিনী পার্শ্ববর্তী অঞ্চলেও যুদ্ধ পরিচালনা করে। তাঁর বীরত্বের কথা দিগ্বিদিক ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু সদ্য স্বাধীন দেশে সিরাজ উদ্দিন আহমদের আকাশচুম্বী খ্যাতি শাসক রাজনৈতিক গোষ্ঠীর ঈর্ষার কারণ হয়। তাদের ষড়যন্ত্রে ১৯৭২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর পুরিন্দা এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন তিনি।

বিষয়টি উল্লেখ করে উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘ভিন্নমতের জন্যই নেভাল সিরাজকে আততায়ীরা খুন করেছিল। আমরা ভিন্নমতকেই প্রতিষ্ঠা করতে চাই। বাংলাদেশ বহু মতের দেশ, বহু ধর্মের দেশ। মানুষ বিভিন্ন ধর্মাচরণ করবে, বহুমত ধারণ করবে। কিন্তু মতামতের জন্য আর কাউকে যেন পারসিকিউটেড হতে না হয়। কাউকে যেন হত্যার শিকার হতে না হয়।’

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বীর প্রতীক ও প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া। সভাপতিত্ব করেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ জিয়াউল হক। স্বাগত বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন। ওই অনুষ্ঠানে সিরাজ উদ্দিন আহমেদের সন্তান মোয়াজ্জেম হোসেন এবং তিন সহযোদ্ধা বীর মুক্তিযোদ্ধা সুলতান আহমেদ, আবুল কালাম আজাদ ও তোফাজ্জল হোসেন বক্তব্য দেন।

অন্তর্বর্তী সরকারকে পরিবর্তনের সরকার উল্লেখ করে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বলেন, সবাই বলেন, এত দিন তো হয়ে গেল, ‘এই সরকার কিছুই তো করতে পারল না? সব জায়গায় অনিয়ম আর অপকর্ম। এই যে সাংস্কৃতিক অপকর্ম, রাজনৈতিক অপকর্ম, অর্থনৈতিক অপকর্ম—এগুলো শোধরাতেই আমাদের সময় লেগেছে বেশি। বিভিন্ন জায়গায় অসংখ্য সড়ক নির্মিত হয়েছে, যেগুলোর তেমন ব্যবহার নাই। সাবেক রাষ্ট্রপতি নিজ এলাকায় ১০ হাজার কোটি টাকা খরচ করে সড়ক নির্মাণ করেছেন। সেখানে কয়েকটা টেম্পো ছাড়া কিছুই চলে না।’

নির্বাচন প্রসঙ্গে উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান আরও বলেন, ‘আপনারা সুন্দর ও অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচন করুন। যাঁর যা মত হোক, যাঁর যা দল হোক যাঁরা বিজয়ী হবেন, আমরা তাঁদের পেছনে দাঁড়াব। কিন্তু যাঁরা এই প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করবে, আগের মতো ভোটকেন্দ্র দখল বা পোলিং এজেন্টদের বের করে দেওয়ার ঘটনা ঘটাবে, তাঁদের সুযোগ দেবেন না।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম হ ম মদ উপদ ষ ট অপকর ম সড়ক ন

এছাড়াও পড়ুন:

সাগরতলে সবচেয়ে দীর্ঘ ও গভীর রাস্তা বানাচ্ছে নরওয়ে

ইউরোপের দেশ নরওয়েতে নির্মাণ করা হচ্ছে ২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি সড়ক। তবে এটি মাটির ওপরে নয়, সাগরতলে। এর সর্বোচ্চ গভীরতা হবে ১ হাজার ২৮৬ ফুট বা ৩৯২ মিটার। নির্মাণকাজ শেষ হলে এটিই হবে সাগরতলে থাকা বিশ্বের সবচেয়ে গভীর ও দীর্ঘ সড়কপথ।

সড়কটি নির্মাণ করা হবে একটি সুড়ঙ্গের মধ্য দিয়ে। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘রোগফাস্ট’। সড়কটির নির্মাণকাজ প্রথমে হাতে নেওয়া হয়েছিল ২০১৮ সালে। খরচ বেড়ে যাওয়ায় এক বছর পরেই তা বাতিল করা হয়। ২০২১ সালে আবার সড়কটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। সব ঠিকঠাক থাকলে কাজ শেষ হবে ২০৩৩ সালে। এতে মোট খরচ পড়বে ২৪০ কোটি ডলার।

সড়কপথটির উত্তরের অংশ নির্মাণ করছে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান স্কানস্কা। প্রতিষ্ঠানটির প্রকল্প পরিচালক অ্যান ব্রিট মোয়েন বলেন, সড়কটি নির্মাণ শেষ হলে নরওয়ের পশ্চিম উপকূলের যোগাযোগব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসবে। সেখানকার স্ট্যাভানগার ও বার্জেন শহরের মধ্যে যাতায়াতে আর ফেরির প্রয়োজন পড়বে না। ফলে আগের চেয়ে ৪০ মিনিট কম সময় লাগবে।

বিশাল এই প্রকল্প বাস্তবায়নে চলছে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ। একসঙ্গে সুড়ঙ্গের দুই দিক দিয়ে নির্মাণকাজ শুরু করা হয়েছে। রয়েছে নানা বাধা। যেমন প্রকৌশলীরা যখন সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩০০ মিটার নিচে সুড়ঙ্গ নির্মাণে কাজ করছেন, তখন বিভিন্ন স্থানে ছিদ্র হয়ে পানি প্রবেশ করছে। সর্বোচ্চ গভীরতায় (৩৯২ মিটার) গেলে সমস্যা আরও বাড়বে—এমন শঙ্কা রয়েছে।

আরেকটি বড় সমস্যা হলো, এতটা গভীরে আর বদ্ধ জায়গায় শ্বাসপ্রশ্বাসের জন্য অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। এটি সমাধানে বিশেষ ধরনের বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এ ছাড়া সড়ক নির্মাণের ফলে বন্ধ হয়ে যাবে ফেরি চলাচল। অনেকেই কাজ হারাবেন। যদিও একই সঙ্গে সাগরতলের সড়ক তত্ত্বাবধানের জন্য নতুন কাজের সুযোগ তৈরি হবে।

বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ সুড়ঙ্গটি রয়েছে জাপানের উত্তরাঞ্চলে। সেইকান টানেল নামের ওই সুড়ঙ্গের দৈর্ঘ্য প্রায় ৫৪ কিলোমিটার। এর সাগরতলের অংশ ২৩ কিলোমিটারের বেশি। এরপরেই রয়েছে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সকে যুক্ত করা দ্য চ্যানেল টানেল। এই সুড়ঙ্গের ৩৮ কিলোমিটার সাগরতলে—দৈর্ঘ্যে যা রোগফাস্টের চেয়ে বেশি। এই দুই সুড়ঙ্গ দিয়ে শুধু ট্রেন চলাচল করে। তবে গভীরতার দিক দিয়ে দুই সুড়ঙ্গের কোনোটিই নরওয়ের রোগফাস্টের ধারেকাছে নেই।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আমার শরীরের প্রতিটি হাড় ভেঙেছে: টুইঙ্কেল
  • জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চার আবাসিক হলের নাম পরিবর্তন
  • সোনারগাঁয়ের নয়াপুরে এক নারীতেই অতিষ্ঠ এলাকাবাসী, মানববন্ধন ও বিক্ষোভ 
  • রাধানগরে ৩৬ ঘণ্টার লড়াই, পিছু হটে পাকিস্তানি বাহিনী
  • সাগরতলে সবচেয়ে দীর্ঘ ও গভীর রাস্তা বানাচ্ছে নরওয়ে