গ্রামের রাস্তায় অপরিচিত কাউকে দেখলেই থামিয়ে দিচ্ছেন এলাকাবাসী, তারপর জিজ্ঞাসাবাদ। কোথায় যাবেন, কার কাছে যাবেন ইত্যাদি প্রশ্ন। গ্রামে প্রবেশের উপযুক্ত কারণ বলতে পারলে পার পাচ্ছেন পথচারী কিংবা মোটরসাইকেল আরোহী। উত্তর সন্দেহজনক হলে ফিরে যেতে হচ্ছে।

এ অবস্থা দিনাজপুর সদর উপজেলার কমলপুর ইউনিয়নের দানিহারি গ্রামে। স্থানীয়রা বলছেন, এলাকায় মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকসেবীর আড্ডা বেড়ে গিয়েছিল। প্রতিদিন বিভিন্ন সময় দেড় থেকে দুই শতাধিক মোটরসাইকেল গ্রামে ঢুকত। একেকটি মোটরসাইকেলে এক থেকে তিনজন পর্যন্ত আরোহী আসতেন। মাদক বিক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এলাকায় এসে মাদক সেবন করে চলে যেতেন অনেকে। গ্রামের মধ্যে উচ্ছৃঙ্খল আচরণও করতেন। গ্রামের সরু রাস্তায় বেপরোয়া গাড়ি চলাচলের ফলে কয়েকটি দুর্ঘটনাও ঘটেছে। বিষয়টির প্রতিকার পেতে স্থানীয়রা গঠন করেছেন ‘দানিহারী মাদক নির্মূল কমিটি’। গ্রামের কয়েক জায়গায় বসিয়েছেন সিসি ক্যামেরা।

দিনাজপুর শহর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে ভারতীয় সীমান্তঘেঁষা কমলপুর ইউনিয়নের দানিহারি গ্রাম। গ্রামে ঢোকার রাস্তা সাদিপুর মোড় থেকে দানিহারি ঢোলডাঙ্গা পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার। পুরো রাস্তার ৪টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। গ্রামে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে।

সীমান্তবর্তী এলাকাটি মাদকসেবী ও বিক্রেতাদের জন্য অপেক্ষাকৃত নিরাপদ। সম্প্রতি কমলপুর ইউনিয়নের ওই এলাকা ঘুরে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ পদক্ষেপ গ্রহণ করায় বর্তমানে ওই এলাকায় মাদকসেবীদের চলাচল প্রায় বন্ধ হয়েছে। কয়েকজন মাদক কারবারি পেশাও ছেড়েছেন। এলাকাবাসী দুজন মাদক কারবারিকে পুলিশের হাতেও তুলে দিয়েছিলেন।

দানিহারি মাদক নির্মূল কমিটির উদ্দেশ্য হিসেবে লেখা হয়েছে, এই কমিটির প্রধান কাজ হচ্ছে মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে পুলিশ প্রশাসনকে সহায়তা করা এবং মাদকসেবীদের পুনর্বাসনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

এ বিষয়ে কমিটির উপদেষ্টা হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার রেজাউল ইসলাম সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা এলাকাবাসী অতিষ্ঠ ছিলাম। গত কোরবানি ঈদের নামাজ শেষে সেখানেই প্রতিরোধ কমিটি গঠন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। মোট ৫৩ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এরই মধ্যে চিহ্নিত কয়েকজন মাদক বিক্রি ছেড়ে কৃষিকাজ শুরু করেছেন।’

মাস তিনেক আগেও এলাকায় মাদক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এক যুবক। এখন এলাকায় তিন বিঘা জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ‘ওই অন্ধকার জগৎ, খারাপ কাজ থেকে সরে এসেছি। চাষবাস করে খাচ্ছি। ভালো আছি। গ্রামের ১০ থেকে ১৫ জন মাদক কেনাবেচার সঙ্গে ছিলাম। অনেকেই আমরা আর ওই পথে হাঁটছি না। তবে দু-একজন এখনো গোপনে ব্যবসাটা চালাচ্ছে।’

মাদক নির্মূল কমিটির সভাপতি সাবেক ইউপি সদস্য আনিসুর রহমান বলেন, ‘আগের চাইতে অনেক ভালো আছি আমরা। মসজিদের ইমামসহ এলাকার গণ্যমান্য মানুষ একতাবদ্ধ হয়ে এলাকায় মাদকের বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করা গেছে। তবে আবারও যদি কেউ এ ধরনের অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করে, আইনের সহায়তা নেওয়ার পাশাপাশি আমরা তাকে সামাজিকভাবেও বর্জন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

কমলপুর দানিহারী এলাকায় আইনশৃঙ্খলা দেখভালের দায়িত্বে আছেন কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক গোলাম মোস্তফা। মুঠোফোনে তিনি বলেন, ‘কিছুদিন আগেও প্রায় প্রতিদিন ওই এলাকা থেকে ফোন পেতাম। স্থানীয়রা মাদক কেনাবেচার তথ্য দিতেন। এখন আর তেমন একটা ফোন পাই না। এলাকার মানুষও মাদক নির্মূলে এগিয়ে এসেছেন। এটা খুব ভালো একটা উদ্যোগ। ওই ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামে এ ধরনের কমিটি গঠনে আমরা কাজ করছি।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম দকস ব কম ট র ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

গ্রামের রাস্তায় সিসি ক্যামেরা, অপরিচিত কাউকে দেখলেই জিজ্ঞাসাবাদ

গ্রামের রাস্তায় অপরিচিত কাউকে দেখলেই থামিয়ে দিচ্ছেন এলাকাবাসী, তারপর জিজ্ঞাসাবাদ। কোথায় যাবেন, কার কাছে যাবেন ইত্যাদি প্রশ্ন। গ্রামে প্রবেশের উপযুক্ত কারণ বলতে পারলে পার পাচ্ছেন পথচারী কিংবা মোটরসাইকেল আরোহী। উত্তর সন্দেহজনক হলে ফিরে যেতে হচ্ছে।

এ অবস্থা দিনাজপুর সদর উপজেলার কমলপুর ইউনিয়নের দানিহারি গ্রামে। স্থানীয়রা বলছেন, এলাকায় মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকসেবীর আড্ডা বেড়ে গিয়েছিল। প্রতিদিন বিভিন্ন সময় দেড় থেকে দুই শতাধিক মোটরসাইকেল গ্রামে ঢুকত। একেকটি মোটরসাইকেলে এক থেকে তিনজন পর্যন্ত আরোহী আসতেন। মাদক বিক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এলাকায় এসে মাদক সেবন করে চলে যেতেন অনেকে। গ্রামের মধ্যে উচ্ছৃঙ্খল আচরণও করতেন। গ্রামের সরু রাস্তায় বেপরোয়া গাড়ি চলাচলের ফলে কয়েকটি দুর্ঘটনাও ঘটেছে। বিষয়টির প্রতিকার পেতে স্থানীয়রা গঠন করেছেন ‘দানিহারী মাদক নির্মূল কমিটি’। গ্রামের কয়েক জায়গায় বসিয়েছেন সিসি ক্যামেরা।

দিনাজপুর শহর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে ভারতীয় সীমান্তঘেঁষা কমলপুর ইউনিয়নের দানিহারি গ্রাম। গ্রামে ঢোকার রাস্তা সাদিপুর মোড় থেকে দানিহারি ঢোলডাঙ্গা পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার। পুরো রাস্তার ৪টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। গ্রামে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে।

সীমান্তবর্তী এলাকাটি মাদকসেবী ও বিক্রেতাদের জন্য অপেক্ষাকৃত নিরাপদ। সম্প্রতি কমলপুর ইউনিয়নের ওই এলাকা ঘুরে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ পদক্ষেপ গ্রহণ করায় বর্তমানে ওই এলাকায় মাদকসেবীদের চলাচল প্রায় বন্ধ হয়েছে। কয়েকজন মাদক কারবারি পেশাও ছেড়েছেন। এলাকাবাসী দুজন মাদক কারবারিকে পুলিশের হাতেও তুলে দিয়েছিলেন।

দানিহারি মাদক নির্মূল কমিটির উদ্দেশ্য হিসেবে লেখা হয়েছে, এই কমিটির প্রধান কাজ হচ্ছে মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে পুলিশ প্রশাসনকে সহায়তা করা এবং মাদকসেবীদের পুনর্বাসনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

এ বিষয়ে কমিটির উপদেষ্টা হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার রেজাউল ইসলাম সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা এলাকাবাসী অতিষ্ঠ ছিলাম। গত কোরবানি ঈদের নামাজ শেষে সেখানেই প্রতিরোধ কমিটি গঠন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। মোট ৫৩ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এরই মধ্যে চিহ্নিত কয়েকজন মাদক বিক্রি ছেড়ে কৃষিকাজ শুরু করেছেন।’

মাস তিনেক আগেও এলাকায় মাদক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এক যুবক। এখন এলাকায় তিন বিঘা জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ‘ওই অন্ধকার জগৎ, খারাপ কাজ থেকে সরে এসেছি। চাষবাস করে খাচ্ছি। ভালো আছি। গ্রামের ১০ থেকে ১৫ জন মাদক কেনাবেচার সঙ্গে ছিলাম। অনেকেই আমরা আর ওই পথে হাঁটছি না। তবে দু-একজন এখনো গোপনে ব্যবসাটা চালাচ্ছে।’

মাদক নির্মূল কমিটির সভাপতি সাবেক ইউপি সদস্য আনিসুর রহমান বলেন, ‘আগের চাইতে অনেক ভালো আছি আমরা। মসজিদের ইমামসহ এলাকার গণ্যমান্য মানুষ একতাবদ্ধ হয়ে এলাকায় মাদকের বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করা গেছে। তবে আবারও যদি কেউ এ ধরনের অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করে, আইনের সহায়তা নেওয়ার পাশাপাশি আমরা তাকে সামাজিকভাবেও বর্জন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

কমলপুর দানিহারী এলাকায় আইনশৃঙ্খলা দেখভালের দায়িত্বে আছেন কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক গোলাম মোস্তফা। মুঠোফোনে তিনি বলেন, ‘কিছুদিন আগেও প্রায় প্রতিদিন ওই এলাকা থেকে ফোন পেতাম। স্থানীয়রা মাদক কেনাবেচার তথ্য দিতেন। এখন আর তেমন একটা ফোন পাই না। এলাকার মানুষও মাদক নির্মূলে এগিয়ে এসেছেন। এটা খুব ভালো একটা উদ্যোগ। ওই ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামে এ ধরনের কমিটি গঠনে আমরা কাজ করছি।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ