গোপন নথি ফাঁসের অভিযোগে রাশিয়ার এক অভিজ্ঞ নভোচারীকে নিজেদের আসন্ন মহাকাশ মিশন থেকে বাদ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। ৫৪ বছর বয়সী রাশিয়ার নভোচারী ওলেগ আর্টেমিয়েভের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নভেম্বরের শেষের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত স্পেসএক্সের একটি স্থাপনার গোপন নথি ও রকেট সরঞ্জামের ছবি তুলেছেন। এরপর সেই ছবি তাঁর ফোনের মাধ্যমে পাচার করেছেন।

২০২৬ সালের প্রথম দিকে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের উদ্দেশ্যে নাসার স্পেসএক্স ক্রু-১২ মিশনে যাওয়ার কথা ছিল নভোচারী ওলেগ আর্টেমিয়েভের। তার বদলে রাশিয়ার নভোচারী আন্দ্রে ফেদিয়ায়েভকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। রাশিয়ার সরকারি মহাকাশ সংস্থা রসকসমস জানিয়েছে, আর্টেমিয়েভের চাকরি স্থানান্তরের কারণে এ পরিবর্তন করা হয়েছে।

আর্টেমিয়েভ স্পেসএক্সের যে সব ছবি তুলে ফাঁস করেছেন, তা মারাত্মকভাবে ইন্টারন্যাশনাল ট্রাফিক ইন আর্মস রেগুলেশনসের লঙ্ঘন। এই নিয়ম মার্কিন সরকারের সংবেদনশীল প্রতিরক্ষা-সম্পর্কিত নিয়ম। এই আইন অনুসারে প্রযুক্তি, তথ্যসহ মহাকাশযানের উপাদান ও প্রযুক্তিগত নকশা রপ্তানি বা প্রকাশ নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

রাশিয়ান অনুসন্ধানী আউটলেট দ্য ইনসাইডার জানিয়েছে, আর্টেমিয়েভের কর্মকাণ্ডের বিষয়ে একটি আন্তর্জাতিক তদন্ত শুরু হয়েছে। আপাতত ঘটনাটি যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে ঘটেছিল বলে  দাবি করা হচ্ছে না। ভবিষ্যতে প্রমাণিত হলে আর্টেমিয়েভকে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে অভিযুক্ত করা হতে পারে।

মহাকাশ শিল্পসংশ্লিষ্ট বিশ্লেষক জর্জী ত্রিশকিন জানান, এই অভিজ্ঞ নভোচারী আইন গুরুতর লঙ্ঘন করেছেন। যদি তদন্তকারীরা তাঁকে দোষী বলে সাব্যস্ত করে, তবে এর জন্য দেওয়ানি ও ফৌজদারি উভয় ধরনের শাস্তি হতে পারে। নাসা বা স্পেসএক্সের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ছাড়াই তাঁকে পরিবর্তন করা হয়েছে। যেহেতু ক্রু-১২ মিশনের তিন মাসেরও কম সময়ের মধ্যে আর্টেমিয়েভকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাই তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হচ্ছে।

সূত্র: ডেইলি মেইল

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স প সএক স আর ট ম য

এছাড়াও পড়ুন:

চোরের নজর এবার জেলে নৌকায়, সীতাকুণ্ডে এক সপ্তাহে ৫ জেলের নৌকা চুরি

উপকূলে প্রতিদিনের মতো নৌকা বেঁধে বাড়ি ফিরেছিলেন জেলে রূপণ দাশ। তবে দিবাগত রাত তিনটার দিকে আবার উপকূলে গিয়ে দেখেন নৌকা নেই। টর্চ জ্বালিয়ে খালের ভেতরে বিভিন্ন জায়গা খুঁজেও তিনি সেদিন নৌকা পাননি।

জানতে চাইলে রূপণ দাশ প্রথম আলোকে বলেন,‘সাগরে যাওয়ার জন্য রাত তিনটায় ঘাটে এসে দেখি নৌকাটা নেই। টর্চ নিয়ে আশপাশের বিভিন্ন জায়গায় খুঁজলাম। এরপরও পেলাম না। তখন বুক ধড়ফড় করছিল।’

গত ২৮ নভেম্বর চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের গুলিয়াখালীতে এ ঘটনা ঘটে। একই দিন আরেক জেলে শিবলু দাশেরও নৌকা চুরি হয়। এর পর থেকে দুজনেই তন্নতন্ন করে খুঁজতে থাকেন। গত বুধবার দুজনেই নোয়াখালীর সুবর্ণচর গিয়ে নৌকা খুঁজে পান। ওই এলাকার দুজন শ্রমিক নৌকা দুটি চুরি করেছিল বলে তাঁরা জানতে পেরেছেন।

অবশ্য শুধু শিবলু বা রূপণ নন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ড, ভাটিয়ারী ও কুমিরা এলাকা থেকে আরও তিনটি নৌকা চুরি হয়েছে। অর্থাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে সীতাকুণ্ড থেকে জেলেদের নৌকা চুরি হয়েছে পাঁচটি। এসব নৌকার দাম অনন্ত পাঁচ লাখ টাকা। জেলেরা জানান, তাঁরা এমন দিন আগে কখনো পার করেননি। হঠাৎ নৌকা চুরি শুরু হওয়ায় পুরো উপকূলের সবাই আতঙ্কে রয়েছেন।

যেভাবে দুটি নৌকা উদ্ধার

নৌকা চুরি হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন ঘাটে খোঁজ করছিলেন শিবলু দাশ ও রূপণ দাশ। তবে পাননি। বিভিন্ন জেলে, দোকানিদেরও তাঁরা জিজ্ঞাসা করেছেন। একপর্যায়ে একটি জ্বালানির দোকানে গিয়ে জানতে পারেন নোয়াখালীর সুবর্ণচর থেকে আসা দুই শ্রমিক তাদের থেকে ৩০ লিটার তেল কিনেছে। এরপরই শিবলুর সন্দেহ হয়।

শিবলু দাশ প্রথম আলোকে বলেন, ‘তেলের দোকান খুললে জানতে পারি সুবর্ণচর থেকে আসা দুই শ্রমিক ৩০ লিটার তেল কিনেছে। তাদের চেহারা চিনতাম। তখন আমাদের সন্দেহ হয়।’

এ সন্দেহ থেকেই সুবর্ণচর যান শিবলু দাশ ও রূপণ দাশ। সেখানে গিয়ে নৌকা দুটিও পেয়ে যান। তবে ওই দুই শ্রমিক ৯০ হাজার টাকা দাবি করেন। উপায় না পেয়ে তাঁরা দুটি নৌকার জন্য ৬৫ হাজার দিতে রাজি হন। এরপর স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও রাজনৈতিক নেতাদের সহযোগিতায় নৌকা দুটি ফিরে পান।

আরও যত চুরি

একই কায়দায় গত ২৯ নভেম্বর ভাটিয়ারীর জেলে সর্দার বাদল দাশেরও নৌকা চুরি হয়। আবার ওই সপ্তাহেই বাড়বকুণ্ড থেকে একটি আর কুমিরা এলাকা থেকে একটি নৌকা চুরি হয়। এসব নৌকার একেকটির দাম অন্তত পাঁচ লাখ টাকা।

জেলেরা জানান, ইলিশ মৌসুমে ভোলা, বরিশাল, নোয়াখালী, কক্সবাজারসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে সীতাকুণ্ডে শ্রমিক আসেন। তাঁরা জেলেদের এসব নৌকায় কাজ করেন। থাকা খাওয়া সবকিছুর ব্যবস্থাও সীতাকুণ্ডে রাখা হয়। তাঁদের ধারণা এসব শ্রমিকই মৌসুমের কাজ শেষে ফেরার পথে নৌকা নিয়ে যাচ্ছেন।

জানতে চাইলে ভাটিয়ারীর জেলে সর্দার বাদল দাশ বলেন, তাঁর চুরি হওয়া নৌকা কক্সবাজারের মহেশখালীতে রয়েছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন। তিনি থানায় অভিযোগ করেছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যবস্থা নেবে বলে তাঁর আশা।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মোতাছিম বিল্লাহ বলেন, ‘একসঙ্গে এত নৌকা আগে চুরি হয়নি। কাজ করতে আসা শ্রমিকদেরই সন্দেহ করছেন জেলেরা। হারিয়ে যাওয়া এসব নৌকার খোঁজ চলছে।

জানতে চাইলে নৌ পুলিশের কুমিরা ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক ওয়ালি উদ্দিন আকবর বলেন, ‘এতগুলো নৌকা চুরির বিষয়টি আমাদের জানানো হয়নি। জেলেরা পুলিশকেও জানায়নি। থানায় মামলা থাকলে আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ