হবিগঞ্জে বড় ভাইয়ের প্রেমঘটিত বিরোধে ছোটকে ভাই হত্যা
Published: 22nd, October 2025 GMT
হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলায় কলেজছাত্রী পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় মেয়ের পরিবারের লোকজন প্রেমিকের ছোট ভাইকে কুপিয়ে হত্যা করেছে।
বুধবার (২২ অক্টোবর) সন্ধ্যায় উপজেলার সুবিদপুর ইউনিয়নের বলাকীপুর গ্রামে তাকে হত্যা করা হয়। নিহতের নাম সাদেকুজ্জামান সাদেক (২০)। তিনি ওই গ্রামের লেবু মিয়ার ছেলে।
আরো পড়ুন:
জোবায়েদ হত্যার বিচার দাবিতে জবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
জোবায়েদ হত্যা: দায় স্বীকার করে ৩ আসামির জবানবন্দি
বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রবাস কুমার সিংহ বলেন, ‘‘তরুণ-তরুণীর পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় মেয়ের পরিবারের লোকজন ছেলের ভাইকে কুপিয়ে হত্যা করেছে।’’
লাশের ময়নাতদন্তের জন্য হবিগঞ্জে ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
নিহতের বড় ভাই পুলিশ কনস্টেবল এনায়েত আহমেদের সঙ্গে একই গ্রামের এক কলেজছাত্রীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সম্প্রতি ছুটিতে বাড়ি এসে এনায়েত কর্মস্থলে ফেরার সময় ওই তরুণীকে সঙ্গে নিয়ে পালিয়ে যায়। এতে দুই পরিবারের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়।
বুধবার (২২ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৬টার দিকে ওই ছাত্রীর পরিবারের লোকজন সাদেককে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। পরে তাকে হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে দায়িত্বরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের বড় ভাই এনায়েত দুই বছর আগে পুলিশের চাকরিতে যোগ দেন। সংসারের টানাপোড়েন কমাতে এসএসসি পাস করা ছোট ভাই সাদেক ইউরোপ যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। নর্থ মেসিডোনিয়ায় যাওয়ার জন্য তার কাগজপত্র তৈরির কাজ চলছিল।
ঢাকা/মামুন/বকুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হত য ন হত পর ব র র
এছাড়াও পড়ুন:
বুয়েটের ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে চাকসু নেতার পোস্ট, সমালোচনার পর মুছে দিয়ে দুঃখ প্রকাশ
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে ফেসবুকে নিজের আইডি থেকে পোস্ট করেছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (চাকসু) এক নেতা। এতে তিনি ভুক্তভোগী নারীকেও দায়ী করেন। তবে সমালোচনার মুখে এক ঘণ্টার মধ্যে পোস্ট ডিলিট করেন ওই নেতা। এরপর দুঃখ প্রকাশ করে আরেক পোস্টে তিনি লেখেন ঘটনা সম্পর্কে তিনি জানতেন না।
পোস্ট দেওয়া ওই চাকসুর নেতার নাম আকাশ দাস। তিনি চাকসু নির্বাচনে শিবির-সমর্থিত ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলে নির্বাহী সদস্য প্রার্থী ছিলেন। এ পদে তিনি জয়ীও হয়েছেন। পোস্টের কয়েকটি মন্তব্য নিয়ে বেশি সমালোচনা হচ্ছে। এ পোস্টে তিনি ধর্ষণ-কাণ্ডের ঘটনায় ভুক্তভোগীকেও দায়ী করেন। এ ছাড়া তদন্ত করলে ভুক্তভোগীর দোষ বেশি পাওয়া যাবে বলেও উল্লেখ করেন।
জানতে চাইলে আকাশ দাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি পোস্টে বলেছি, অপরাধী ছেলে বা মেয়ে যেই হোক, তাঁর ফাঁসি হওয়া উচিত। অনেক আইনজীবীও বলেছেন, “অনেক ধর্ষণ মামলা ভুয়া।” আমি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী, তাই সবার মন্তব্যের উত্তর দিতে পারি না। আমি নারী-পুরুষের সমান অধিকারেই বিশ্বাসী।’
তাঁর পোস্টের ব্যাখ্যা দিয়ে আকাশ দাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কেউ কাউকে জোর করে ধর্ষণ করতে পারে না। তাদের আগে থেকে পরিচয় থাকায় এমন ঘটনা ঘটে। আমি অপরাধীর শাস্তির কথাও বলেছি। তবে আমি একটি সংগঠনের প্যানেলে নির্বাচিত। তাই পোস্টটি ডিলিট করতে হয়েছে। কারণ, অনেকে আমার বক্তব্য বিকৃতভাবে তুলে ধরে শিবিরকে ছোট করার চেষ্টা করছে। আমি ইতিমধ্যেই দুঃখ প্রকাশ করেছি।’
বুয়েটের এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও নারীদের কটূক্তি করার অভিযোগ উঠেছে। শ্রীশান্ত রায় নামের ওই শিক্ষার্থীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।
ফেসবুকে সমালোচনা
আকাশ দাসের পোস্টের স্ক্রিনশট ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে অনেকেই ইসলামী ছাত্রশিবির ও আকাশ দাসের সমালোচনা করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী, ছাত্রদলসহ অনেক রাজনৈতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা এ পোস্টের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে পোস্ট করেছেন। শাখা শিবিরের নেতা-কর্মীরাও সমালোচনা করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও চাকসুতে ছাত্রদল–সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী সাজ্জাদ হোসেন তাঁর ফেসবুক আইডিতে লেখেন, ‘আকাশ দাস বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবির–সমর্থিত প্যানেল থেকে সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ধর্ষণকে কীভাবে স্বাভাবিকীকরণ করেছে দেখেন! এরাই নাকি নারীবান্ধব ক্যাম্পাস গড়বে!’
এ ছাড়া ছাত্রদল মনোনীত প্যানেলের জিএস প্রার্থী শাফায়েত হোসেন, গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক রশিদ দিনার, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব আশরাফ চৌধুরীসহ অনেকে আকাশ দাসের পোস্টের নিন্দা জানিয়েছেন।
ছাত্রশিবির–সমর্থিত প্যানেল থেকে নির্বাচিত হওয়া চাকসুর ভিপি মো. ইব্রাহীম তাঁর ফেসবুকে লেখেন, ‘চাকসুর নবনির্বাচিত সদস্য আকাশ দাস বুয়েটের ধর্ষণ ঘটনাকে ঘিরে যে নিন্দনীয় মন্তব্য করেছেন, আমি তার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। তিনি যেন অবিলম্বে বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন।’ একই মন্তব্য করেন শাখা ছাত্রশিবিরের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক নবনির্বাচিত চাকসুর সাধারণ সম্পাদক সাঈদ বিন হাবিবও। এ ছাড়া চাকসুর অন্য নেতারাও এ পোস্টের নিন্দা জানিয়েছেন।
বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিবাদ
চাকসুর শিবির–সমর্থিত প্যানেল থেকে নির্বাচিত নির্বাহী সদস্য আকাশ দাস বুয়েটের ধর্ষণের ঘটনায় নেতিবাচক পোস্ট দেওয়ায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
আজ রাত সাড়ে নয়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশ শুরু হয়। তারপর কাটা পাহাড়ের রাস্তা হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনে সমাবেশ হয়। এতে বক্তারা আকাশ দাসের পোস্টে করা বক্তব্যকে ‘নারীবিদ্বেষী’ ও ‘ধর্ষণকে স্বাভাবিকীকরণ’ হিসেবে অভিহিত করে এর নিন্দা জানান। পাশাপাশি তাঁর বিরুদ্ধে প্রশাসনের যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান।
প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য দেন শাখা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্যসচিব আল মাসনূন, ছাত্রদল–সমর্থিত প্যানেলের জিএস প্রার্থী মো. শাফায়েত হোসেন, ইসলামী ছাত্র মজলিসের সভাপতি সাকিব মাহমুদ, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সহসাধারণ সম্পাদক উম্মেহ সাবাহ্ তাবাসসুম, নওয়াব ফয়জুন্নেছা হলের ভিপি পারমিতা চাকমা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ও শাখা নারী অঙ্গনের সংগঠক সুমাইয়া শিকদারসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী।