জিমেইল ব্যবহারকারীদের আদান-প্রদান করা ই-মেইল ও অ্যাটাচমেন্টের তথ্য কাজে লাগিয়ে গুগল গোপনে নিজেদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) মডেলকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে এই অভিযোগকে ‘ভ্রান্ত’ ধারণা হিসেবে অভিহিত করে গুগল জানিয়েছে, জিমেইলের নীতিমালায় সম্প্রতি কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি।

সম্প্রতি একটি নিরাপত্তা ব্লগে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, গুগল অনুমতি ছাড়াই ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত ই–মেইল থেকে তথ্য সংগ্রহ করছে। গুগল স্মার্ট কম্পোজ ও স্মার্ট রিপ্লাইয়ের মতো সুবিধা উন্নত করতে ব্যবহারকারীর ই–মেইল ও অ্যাটাচমেন্ট বিশ্লেষণ করছে প্রতিষ্ঠানটি। সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর ব্যবহারকারীদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। অনেক ব্যবহারকারী বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানিয়েছেন, তাঁদের জিমেইল অ্যাকাউন্টে স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্মার্ট ফিচার সক্রিয় হয়ে গেছে, যা ব্যক্তিগত গোপনীয়তার জন্য হুমকিস্বরূপ। তবে গুগলের মুখপাত্র জেনি থমসন এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ‘আমরা জিমেইলের কোনো কনটেন্ট জেমিনি এআই মডেল প্রশিক্ষণে ব্যবহার করি না।’

গুগলের তথ্যমতে, স্মার্ট ফিচার বলতে সেই সব টুল বোঝায় যা বহু বছর ধরে জিমেইলের সুবিধা হিসেবে কাজ করছে। যখন এসব সুবিধা গুগল ওয়ার্কস্পেসে সক্রিয় থাকে, তখন ই–মেইলের কিছু তথ্য ব্যবহার করে ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা পার্সোনালাইজ করা হয়। এই পার্সোনালাইজেশন কার্যক্রম জেমিনি এআই মডেলের প্রশিক্ষণে ব্যবহৃত তথ্য থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। অর্থাৎ স্মার্ট ফিচার ই–মেইল বিশ্লেষণ করলেও তা এআই মডেলের প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহার করা হয় না। গুগলের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, দ্রুত রিপ্লাই সাজেস্ট করার মতো স্মার্ট ফিচার ব্যবহারকারীর ই–মেইল বিশ্লেষণ করলেও এটি কেবল ব্যক্তিগত ব্যবহারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। এআই মডেলের প্রশিক্ষণে এসব তথ্য অন্তর্ভুক্ত হয় না।

আরও পড়ুনপাসওয়ার্ড ভুলে যাওয়া ব্যবহারকারীদের জন্য গুগলের নতুন নিরাপত্তা–সুবিধা২০ অক্টোবর ২০২৫

গুগলের এই ব্যাখ্যা সবার সন্দেহ দূর করতে পারেনি। আর তাই সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার একটি আদালতে গুগলের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। মামলায় অভিযোগে বলা হয়েছে, গুগল জিমেইল, চ্যাট ও মিটের ব্যক্তিগত যোগাযোগে জেমিনিকে প্রবেশাধিকার দিয়ে ক্যালিফোর্নিয়ার গোপনীয়তা আইন লঙ্ঘন করেছে। তবে মামলার বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি গুগল।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

আরও পড়ুনএক জিমেইল অ্যাকাউন্টের তথ্য অন্য জিমেইল অ্যাকাউন্টে পাঠাবেন যেভাবে২৩ মে ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবহ র গ গল র

এছাড়াও পড়ুন:

চট্টগ্রামে উড়ালসড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন

চট্টগ্রাম নগরবাসীর বহু আকাঙ্ক্ষিত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি পরীক্ষামূলকভাবে চালু হওয়ার পর স্বস্তির বদলে এখন উদ্বেগ সৃষ্টি করছে। লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত বিস্তৃত এই সাড়ে ১৫ কিলোমিটার উড়ালসড়কটি দ্রুত যোগাযোগের মাধ্যম হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু বাস্তবে এটি পরিণত হচ্ছে গতিসীমা লঙ্ঘন, বেপরোয়া যান চলাচল এবং দুর্ঘটনার কেন্দ্রে। বিষয়টি খুবই আশঙ্কাজনক।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, গত বছরের আগস্টে চালুর পর থেকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটিতে দুটি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটেছে, যাতে প্রাণহানিও হয়েছে। সেই সঙ্গে চলতি নভেম্বর মাসে দুটি প্রাইভেট কার উল্টে যাওয়ার ঘটনা এটা প্রমাণ করে যে এই আধুনিক স্থাপনাটিতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বড় ধরনের গলদ রয়ে গেছে। এই দুর্ঘটনার জন্য বিশেষজ্ঞরা তিনটি মূল কারণকে দায়ী করছেন : নির্ধারিত গতিসীমা না মানা, মোটরসাইকেলের অবাধ ও বিপজ্জনক চলাচল এবং এক্সপ্রেসওয়ের বেশ কিছু ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বাঁক।

এক্সপ্রেসওয়েতে সর্বোচ্চ গতিসীমা ৬০ কিলোমিটার এবং বাঁকগুলোতে ৪০ কিলোমিটার বেঁধে দেওয়া হলেও, চালকেরা ফাঁকা সড়ক পেলেই তা লঙ্ঘন করছেন। নগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগও স্বীকার করেছে যে নভেম্বরের দুটি দুর্ঘটনার কারণ ছিল গতি না মানা। চালকদের মধ্যে গতি কমানোর প্রবণতা কম এবং তাঁরা সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড মানতে নারাজ।

এ ছাড়া প্রাথমিকভাবে মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলেও বর্তমানে এই উড়ালসড়কে অবাধে মোটরসাইকেল চলছে, যা ছোট যানবাহনের কারণে বড় ধরনের দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি করছে। শুধু তা–ই নয়, অনেক যাত্রী ঝুঁকিপূর্ণভাবে গাড়ি থামিয়ে বা দাঁড় করিয়ে ছবি তুলছেন, যা অন্য গাড়ির জন্য চরম বিপদের কারণ হচ্ছে।

এক্সপ্রেসওয়ের দেওয়ানহাট, বারিক বিল্ডিং, সল্টগোলা, ইপিজেড, কাঠগড়—এমন একাধিক স্থানে বাঁক রয়েছে। সড়ক পরিবহনবিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া স্পষ্ট জানিয়েছেন, এই বাঁকগুলোতে প্রকৌশলগত ত্রুটি আছে এবং সেখানে গতিরোধক বরং বাড়তি ঝুঁকি তৈরি করছে। দুর্ঘটনা রোধে এসব বাঁকে গতি কমানো এবং মোটরসাইকেলের মতো ছোট যান নিষিদ্ধ করা অপরিহার্য।

নির্মাণকারী কর্তৃপক্ষ সিডিএ বলছে, বাঁকগুলো ‘স্বাভাবিক’ এবং দুর্ঘটনা ঘটছে শুধু চালকদের নিয়মনীতি না মানার কারণে। সিডিএর পক্ষ থেকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হলেও, এই দায়মুক্তির মনোভাব জনমনে প্রশ্ন তুলেছে। একটি ৪ হাজার ২৯৮ কোটি টাকার প্রকল্পের ডিজাইন এবং বাস্তবায়নে যদি ত্রুটি থাকে, তবে সেই দায় শুধু চালকের ওপর চাপানো যায় না। সিডিএর উচিত বিশেষজ্ঞের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে বাঁকগুলোর নিরাপত্তা পর্যালোচনা করা। চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নগরের যোগাযোগব্যবস্থার জন্য এক বিশাল সম্ভাবনা। কিন্তু বেপরোয়া গতি আর নিয়ন্ত্রণের অভাবে এই সম্ভাবনা যেন প্রাণঘাতী ফাঁদে পরিণত না হয়। সিডিএ ও নগর পুলিশকে সমন্বিতভাবে কাজ করে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ