ডিজিটাল ব্যাংক করতে আগ্রহী দেশের বেসরকারি খাতের জীবনবিমা কোম্পানি প্রগতি লাইফ ইনস্যুরেন্স। সম্প্রতি কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় ডিজিটাল ব্যাংক করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি হিসেবে নিজেদের এই আগ্রহের কথা মূল্য সংবেদনশীল তথ্য হিসেবে বিনিয়োগকারীদের জানিয়েছে কোম্পানিটি।

দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আজ বৃহস্পতিবার ডিজিটাল ব্যাংক করার আগ্রহের এই কথা বিনিয়োগকারীদের জানানো হয়। কোম্পানিটি জানিয়েছে, এককভাবে নয়, আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মিলে যৌথভাবে দেশে ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী তারা। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক ডিজিটাল ব্যাংক করতে আগ্রহীদের কাছ থেকে আবেদন চেয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। প্রগতি লাইফ ইনস্যুরেন্স জানিয়েছে, তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের সেই প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার আবেদন করবে। যদি বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন পাওয়া যায়, তবে ওই ডিজিটাল ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধনের ৫ শতাংশ বিনিয়োগ করবে কোম্পানিটি। অর্থাৎ ডিজিটাল ব্যাংকের মূলধন বিনিয়োগের ৫ শতাংশের মালিকানা থাকবে প্রগতি লাইফ ইনস্যুরেন্সের হাতে।

বাংলাদেশ ব্যাংক ডিজিটাল ব্যাংকের জন্য যে নীতিমালা করেছে, তাতে বলা হয়েছে, ডিজিটাল ব্যাংকের ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধন হতে হবে ৩০০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে ওই মূলধনের ৫ শতাংশ মালিকানা নিতে প্রগতি লাইফ ইনস্যুরেন্সকে বিনিয়োগ করতে হবে ১৫ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, ডিজিটাল ব্যাংক পরিচালনার জন্য প্রধান কার্যালয় থাকবে। সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে এটি হবে স্থাপনাবিহীন। অর্থাৎ এই ব্যাংক কোনো ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) সেবা দেবে না। ডিজিটাল ব্যাংকের নিজস্ব কোনো শাখা বা উপশাখা, এটিএম, সিডিএম অথবা সিআরএমও থাকবে না। সব সেবাই হবে অ্যাপ–নির্ভর, মুঠোফোন বা ডিজিটাল যন্ত্রে।

একটি ডিজিটাল ব্যাংকে দিন–রাত ২৪ ঘণ্টাই সেবা মিলবে। গ্রাহকদের লেনদেনের সুবিধার্থে ডিজিটাল ব্যাংক ভার্চ্যুয়াল কার্ড, কিউআর কোড ও অন্য কোনো উন্নত প্রযুক্তিভিত্তিক পণ্য দিতে পারবে। তবে লেনদেনের জন্য কোনো প্লাস্টিক কার্ড দিতে পারবে না। এই ব্যাংকের সেবা নিতে গ্রাহকেরা অন্য ব্যাংকের এটিএম, এজেন্টসহ নানা সেবা ব্যবহার করতে পারবেন। ডিজিটাল ব্যাংক কোনো ঋণপত্র (এলসি) খুলতে পারবে না। বড় ও মাঝারি শিল্পেও কোনো ঋণ দেওয়া যাবে না। শুধু ছোট ঋণ দিতে পারবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম লধন প রগত

এছাড়াও পড়ুন:

চীনের সহযোগিতায় বিদ্রোহীদের এলাকা পুনর্দখল করছে মিয়ানমারের জান্তা

গত বছর চীনা সীমান্ত থেকে মিয়ানমারের বাকি অংশে প্রধান বাণিজ্য রুটে অবস্থিত কিয়াউকমে শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল বিদ্রোহীরা। কিয়াউকমে এশিয়ান হাইওয়ে ১৪-এর উপর অবস্থিত, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বার্মা রোড নামে বেশি পরিচিত ছিল। তাআং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির (টিএনএলএ) এই শহর দখলকে অনেকেই বিরোধীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিজয় হিসেবে দেখেছিলেন। ধারণা করা হচ্ছিল, বিদ্রোহীদের এই অগ্রগতিতে ২০২১ সালে ক্ষমতা দখলকারী সামরিক জান্তার মনোবল ভেঙে পড়তে পারে।

তবে চলতি মাসে কিয়াউকমে পুনরুদ্ধার করতে সেনাবাহিনীর মাত্র তিন সপ্তাহ সময় লেগেছে। এই ছোট্ট পাহাড়ি শহরটির পুনর্দখল একটি স্পষ্ট উদাহরণ যে মিয়ানমারের সামরিক ভারসাম্য এখন জান্তার পক্ষে কতটা সরে গেছে।

এর জন্য কিয়াউকমেকে চড়া মূল্য দিতে হয়েছে। টিএনএলএ-র হাতে থাকাকালে সেনাবাহিনীর দৈনিক বিমান হামলায় শহরের একটি বড় অংশ ধ্বংস হয়ে গেছে। বিমান বাহিনীর যুদ্ধবিমান ৫০০ পাউন্ড ওজনের বোমা ফেলেছে, আর শহরের বাইরে বিদ্রোহীদের অবস্থানে কামান ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে। বেশিরভাগ জনসংখ্যা শহর ছেড়ে পালিয়ে গেছে, যদিও সেনাবাহিনী এখন শহরটি পুনরুদ্ধার করেছে, তারা ফিরে আসতে শুরু করেছে।


টিএনএলএ-এর মুখপাত্র টার পার্ন লা চলতি মাসের শুরুতে বিবিসিকে বলেছিলেন, কিয়াউকমে এবং সিপাওতে প্রতিদিনই তীব্র লড়াই চলছে। চলতি বছর সেনাবাহিনীর আরো সেনা, আরো ভারী অস্ত্র এবং আরো বিমান শক্তি রয়েছে। সিপাওকে রক্ষা করার জন্য আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।”

বিবিসি তার সাথে কথা বলার পর থেকে জান্তার বাহিনী সিপাও পুনরুদ্ধার করেছে, যা গত বছর টিএনএলএ-এর  দখল করা শেষ শহর ছিল।

এই শহরগুলোর পতন মূলত জান্তা সরকারের প্রতি চীনের সমর্থনের কারণেই হয়েছে। কারণ চীন ডিসেম্বরে জান্তার নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনাকে সমর্থন করেছে। এই পরিকল্পনার ব্যাপক নিন্দা করা হয়েছে। কারণ এতে অং সান সু চির ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসিকে বাদ দেওয়া হয়েছে, যারা গত নির্বাচনে জয়লাভ করেছিল। কিন্তু অভ্যুত্থানে তাদের সরকার উৎখাত হয়েছিল এবং মিয়ানমারের বেশিরভাগ অংশ গৃহযুদ্ধের অবস্থায় রয়েছে।

এই মুহূর্তে সামরিক বাহিনী যতটা সম্ভব হারানো অঞ্চল পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করছে, যাতে এই অঞ্চলগুলোতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সফলতা পেতে জান্তা চীন থেকে হাজার হাজার নিজস্ব ড্রোন কিনেছে এবং তাদের অগ্রবর্তী ইউনিটগুলোকে কীভাবে সেগুলো ব্যবহার করতে হয় তা প্রশিক্ষণ দিয়েছে।

সামরিক জান্তা ধীর এবং সহজেই উড়তে পারে এমন মোটরচালিত প্যারাগ্লাইডারও ব্যবহার করছে, যা হালকাভাবে সুরক্ষিত এলাকার উপর দিয়ে উড়তে পারে এবং নির্ভুলতার সাথে বোমা ফেলতে পারে। তারা চীনা এবং রাশিয়ান সরবরাহিত বিমান দিয়ে নিরলসভাবে বোমাবর্ষণ করছে, যার ফলে মিয়ানমারে চলতি বছর বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা অনেক বেশি। ধারণা করা হচ্ছে, চলতি বছর কমপক্ষে এক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে, তবে মোট সংখ্যা সম্ভবত আরো বেশি।

ঢাকা/শাহেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ