তালেবানদের ভয়ে পালানো সেই মেয়েদের নতুন জন্ম হলো ফুটবলে
Published: 28th, October 2025 GMT
২০২১ সালের আগস্টে দ্বিতীয়বারের মতো আফগানিস্তানের ক্ষমতায় আসে তালেবানরা। এরপরই জন্মভূমি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন দেশটির নারী ফুটবল দলের সদস্যরা। চার বছর পর তাঁদের কয়েকজন আবার দেশের হয়ে মাঠে নামার সুযোগ পেয়েছেন। তবে এবার তাঁরা খেলছেন শরণার্থী হিসেবে।
এই টুর্নামেন্ট আফগান মেয়েদের জন্য একরকম পুনর্জন্ম। বৈশ্বিক অঙ্গনে জাতীয় দল হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পথে এটি তাদের প্রথম ধাপ। নিজেদের পরিচয় তাঁরা দিচ্ছেন ‘আফগান উইমেন ইউনাইটেড’ নামে।
ইতালিতে বসবাস করা দলের অধিনায়ক ফাতিমা হায়দারি বার্তা সংস্থা এপিকে বলেছেন, ‘একসঙ্গে দেখা হওয়া, জড়িয়ে ধরা, একসঙ্গে খেলা—এর চেয়ে সুন্দর কিছু হতে পারে না। খেলোয়াড় হিসেবে জানি, জীবনে চ্যালেঞ্জ আসবেই, কষ্ট আসবেই। কিন্তু সব সময়ই উত্তরণের একটা পথ থাকে। হাল ছাড়লে চলবে না, কখনোই না।’
কোন টুর্নামেন্টচার দল নিয়ে মরক্কোয় এক প্রীতি টুর্নামেন্ট আয়োজন করেছে ফিফা। অংশ নিচ্ছে চাদ, তিউনিসিয়া, লিবিয়া ও আফগানিস্তানের শরণার্থী ফুটবলারদের দল। গত রোববার শুরু হয়েছে প্রতিযোগিতাটি।
আফগানিস্তান নারী দলের সাবেক অধিনায়ক খালিদা পোপাল, তাঁর সাবেক সতীর্থ এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দীর্ঘ প্রচেষ্টায় এই টুর্নামেন্ট বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে। লক্ষ্য ছিল একটাই—আফগান নারী ফুটবলারদের আবার মাঠে ফেরানো।
আবারও মাঠে নেমেছেন আফগান নারী ফুটবলাররা.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
একসঙ্গে ৩৫০টি ট্রাক্টর হস্তান্তর করে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে এসিআই মটরস
দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলায় বাড়ির পাশে টংদোকানে চা, পান-সুপারি বিক্রি করতেন রেজাউল করিম (৫১)। ট্রাক্টরচালক সাদ্দাম হোসেন প্রায় প্রতিদিনই তাঁর দোকানে আসতেন। এভাবে কৃষকের জমি চাষ করে বেড়ানো সাদ্দামের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে রেজাউলের। পরস্পরের আর্থিক অনটনে একদিন সাদ্দামের পরামর্শে টংদোকান বন্ধ করে জমি চাষের কাজে যুক্ত হন রেজাউল। কয়েক দিনের মধ্যে ট্রাক্টর চালানো শিখে নিজেই ভাড়ায় নিয়ে চালানো শুরু করেন। সেটা ২০১০ সালের কথা। এরপর আয় বাড়তে থাকে রেজাউলের। খরচের পর সামান্য কিছু অর্থ সঞ্চয় করেন। সঞ্চয়ের সেই টাকায় নিজের জন্য একটি ট্রাক্টর কেনেন রেজাউল।
আজ সোমবার সকালে দিনাজপুর গোর-এ-শহীদ বড় মাঠে এসিআই মটরস থেকে দ্বিতীয়বারের মতো ‘সোনালীকা ট্রাক্টর’ কিনেছেন রেজাউল। এদিন ‘সোনালীকার বিশ্বজয়’ শিরোনামে একসঙ্গে ৩৫০টি ট্রাক্টর বিক্রি করে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম লেখানোর উদ্যোগ নেয় এসিআই মটরস। সে অনুযায়ী গত রাতেই একসঙ্গে ৩৫০টি ট্রাক্টর হস্তান্তরকে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
রেজাউলের মতো দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে ৩৫০ কৃষক ও উদ্যোক্তা ট্রাক্টর কিনতে এসে সেই ইতিহাসের অংশ হয়েছেন। অনুষ্ঠানে রেজাউল করিম বলেন, ‘নিজের আয়ে বছর তিনেক আগে একটি ট্রাক্টর কিনেছিলাম। সেটি বড় ছেলে চালাচ্ছে। এবার ছোট ছেলের জন্য আরেকটি ট্রাক্টর কিনলাম। খুবই ভালো লাগছে এত বড় একটি আয়োজন। কোম্পানি একসঙ্গে এতগুলো মানুষকে ট্রাক্টর কেনার সুযোগ করে দিয়েছে।’
গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম লেখানোর এ আয়োজনকে ঘিরে আজ সকাল থেকে দিনাজপুর গোর-এ-শহীদ মাঠে ছিল মানুষের উপচে পড়া ভিড়। আয়োজকদের প্রতিনিধি, ট্রাক্টরের ক্রেতার পাশাপাশি ছিলেন উৎসুক সহস্রাধিক মানুষ। মাঠে সাজিয়ে রাখা হয়েছিল নীল রঙের সাড়ে তিন শ ট্রাক্টর। দুপুর সাড়ে ১২টায় শতাধিক মোটরসাইকেলের বিশাল গাড়িবহর নিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে আসেন এসিআই মটরসের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক সুব্রত রঞ্জন দাস, ইন্টারন্যাশনাল ট্রাক্টরসের পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী গৌরব সাক্সেনা। এরপর ক্রেতারা এসিআই মটরসের পতাকা হাতে ট্রাক্টরের চালকের আসনে বসেন। তার পরপরই আনন্দ–উল্লাসে ধ্বনিত হয় ‘শাবাশ বাংলাদেশ’। উৎসবের আবহ দিতে ওড়ানো হয় রঙিন কাগজ।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক রফিকুল ইসলাম, এসিআই মটরসের প্রধান ব্যবসায়িক কর্মকর্তা আসিফ উদ্দীন, জ্যেষ্ঠ মহাব্যবস্থাপক শামীম হোসেনসহ এসিআইয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, আমন্ত্রিত অতিথি ও সংগীতশিল্পীরা। বেলা দেড়টায় অনুষ্ঠানের মঞ্চে দ্বিতীয় পর্বে ছিল আলোচনা সভা।
আয়োজকেরা জানান, গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম লেখাতে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে এক ভিডিও বার্তায় গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস লিমিটেডের বিচারক কার্ল স্যাভিলে বলেন, ‘বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ট্রাক্টর সরবরাহ করে একটি রেকর্ডের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
সমাপনী বক্তব্যে এসিআই মটরসের সুব্রত রঞ্জন দাস বলেন, ‘আমরা কৃষির যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে বিশ্বে বাংলাদেশের পজিটিভ ব্র্যান্ডিং করতে চেয়েছি। যাঁরা এ আয়োজন থেকে ট্রাক্টর নিয়েছেন, তাঁরা বিশ্বের বড় একটি আয়োজনের অংশ হয়েছেন।’