যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন করতে জ্বালানি তেল আমদানি বাড়িয়েছে ভারত। চলতি মাসের ২৭ তারিখ পর্যন্ত দেশটি যুক্তরাষ্ট্র থেকে গড়ে দৈনিক ৫ লাখ ৪০ হাজার ব্যারেল তেল আমদানি করেছে। ২০২২ সালের পর যুক্তরাষ্ট্র থেকে এটি তাদের সর্বোচ্চ তেল আমদানি।

বার্তা সংস্থা পিটিআইয়ের সংবাদে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য সংঘাত এড়াতে ভারত যে কৌশলগত পদক্ষেপ নিচ্ছে, এটি তারই অংশ। যুক্তরাষ্ট্র থেকে তেল আমদানি বাড়িয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যঘাটতি–সংক্রান্ত উদ্বেগও আমলে নিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

তেল আমদানি পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান কেপলারের তথ্যানুসারে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারত তেল আমদানি বাড়িয়েছে, কেননা সেখান থেকে তেল আমদানি করা ভারতের পক্ষে অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক। এর নানা কারণ আছে। প্রথমত, ব্রেন্ট ক্রুড ও ডব্লিউটিআই ক্রুডের মধ্যে দামের যে ব্যবধান, সেই কারণে ডব্লিউটিআই ক্রুড কেনা ভারতের জন্য লাভজনক হয়েছে। সেই সঙ্গে বিশ্ববাজারে থেকে চীনের তেল কেনা কমেছে। ফলে মার্কিন তেল কেনা ভারতের তেল পরিশোধনাগারগুলোর জন্য লাভজনক হয়ে উঠেছে।

কেপলারের প্রতিবেদনে উদ্ধৃত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, অক্টোবর মাসে দৈনিক তেল আমদানির পরিমাণ গড়ে প্রায় ৫ লাখ ৭৫ হাজার ব্যারেলে উত্তীর্ণ হতে পারে। আগামী নভেম্বর মাসের জন্য যে পূর্বাভাস, তাতে এই পরিমাণ ৪ লাখ থেকে ৪ লাখ ৫০ হাজার ব্যারেলের মধ্যে থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অক্টোবর মাসের আগপর্যন্ত দৈনিক গড়ে প্রায় ৩ লাখ ব্যারেল তেল কিনেছে ভারত, সেই তুলনায় এই বৃদ্ধি যথেষ্ট উল্লেখযোগ্য।

ভারতের সরকারি ও বাণিজ্য কর্মকর্তাদের হিসাব অনুসারে, ভারতের তেল পরিশোধনাগারগুলো তেলের উৎস বাড়াতে মার্কিন অপরিশোধিত তেল কেনা বাড়িয়েছে। এই তেলের মধ্যে আছে মিডল্যান্ড ডব্লিউটিআই ও মার্স। তবে অর্থনৈতিক কারণ যতই বলা হোক না কেন, এর পেছনে আছে মূলত রাজনৈতিক কারণ। সেটা হলো, ওয়াশিংটনের সঙ্গে সহযোগিতার পরিসর বাড়ানো।

এই কৌশলগত পরিবর্তন এমন সময়ে এল, যখন রুশ তেল কোম্পানি রুজনেফট ও লুকঅয়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞার মাত্রা আরও তীব্র হচ্ছে।

পিটিআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতের তেল আমদানি বাড়ানোর এ ঘটনা বাণিজ্যিক টানাপোড়েন দূর করার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন যখন ভারতীয় রপ্তানি পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে, তখন থেকেই এই পরিবর্তন দেখা গেছে। ভারতের এই পদক্ষেপ থেকে বোঝা যায়, ভারত নিজের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, রিজার্ভ ব্যবস্থাপনা ও রুশ তেল কেনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ প্রশমনের কৌশলগত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

এরই মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আবারও বলেছেন, রাশিয়া থেকে ভারত তেল কেনা বন্ধ করবে। যদিও ভারত এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতের তেল আমদানি বাড়লেও রাশিয়া এখনো ভারতের প্রধান অপরিশোধিত তেল সরবরাহকারী, দেশটির মোট আমদানির প্রায় এক-তৃতীয়াংশই আসে রাশিয়া থেকে। সরবরাহের দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ইরাক, তৃতীয় স্থানে সৌদি আরব।

কেপলারের বিশ্লেষক ঋতোলিয়া এই প্রবণতার সীমাবদ্ধতা তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, মার্কিন তেল কেনা বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে ভারতীয় তেল পরিশোধনাগারগুলো তেলের উৎস বহুমুখী করেছে, তা ঠিক। এর মধ্য দিয়ে তারা দেখিয়েছে, স্বল্পমেয়াদি সুযোগ কাজে লাগানোর সক্ষমতাও তাদের আছে। কিন্তু বিষয়টি কাঠামোগত নয়, শুধু দামের পার্থক্যের কারণে তা হয়েছে। দীর্ঘ পরিবহন সময়, বাড়তি ভাড়া ও ডব্লিউটিআই তেলের গড়নের কারণেও ভারতের পক্ষে এই তেল কেনা তেমন একটা সম্ভব হবে না।

ঋতোলিয়া আরও বলেন, ভারতের অপরিশোধিত তেল আমদানিতে যুক্তরাষ্ট্রের তেলের হিস্যা বৃদ্ধির বিষয়টি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্য দিয়ে দুই দেশের জ্বালানি সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা বাড়ছে। পাশাপাশি ভারতের জ্বালানি সরবরাহের বহুমুখীকরণ কৌশল শক্তিশালী হচ্ছে। দেশটি সরবরাহ নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও ভূরাজনৈতিক ভারসাম্য সমানভাবে বিবেচনায় নিচ্ছে বলেই মনে হয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র থ ক য ক তর ষ ট র র ত ল আমদ ন সরবর হ

এছাড়াও পড়ুন:

ডিজিটাল ইকোসিস্টেম তৈরি করতে চায় আকিজ রিসোর্স

বাংলাদেশে ডিজিটাল ইকোসিস্টেম তৈরি করতে চায় আকিজ রিসোর্স। এরই মধ্যে নিজস্ব ডেটা সেন্টার এবং সফটওয়্যার তৈরির মাধ্যমে তারা গ্রাহক এবং সরবরাহকারীদের নিরবচ্ছিন্নভাবে সংযুক্ত করেছে এবং পয়েন্ট অব সেল সিস্টেম গড়ে তুলেছে। আজ বুধবার রাজধানীর গুলশানের বীর উত্তম মীর শওকত সড়কে অবস্থিত আকিজ হাউসে আয়োজিত ‘প্রচলিত থেকে স্মার্ট: আকিজ রিসোর্স ডিজিটাল রূপান্তরের নেতৃত্ব দিচ্ছে’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

অনুষ্ঠানে আকিজ গ্রুপের সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান আইবস লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এস কে মো. জায়েদ বিন রশিদ বলেন, অটোমেশন শুধু কাজের গতিই বাড়ায় না, এটি মানবসম্পদের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে ভুল হওয়ার সম্ভাবনাও কমায়। বিশেষ করে আর্থিক এবং উৎপাদন খাতে অটোমেশনের বহুমাত্রিক প্রয়োগ উৎপাদনশীলতা কয়েক গুণ বাড়াতে সাহায্য করেছে, যা সরাসরি জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। এমন সব সফটওয়্যার ব্যবহারের সুযোগ তৈরি হয়েছে, যা ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগকে সহজে ডিজিটাল লেনদেন এবং অ্যাকাউন্টিং ব্যবস্থাপনা করতে সাহায্য করছে।

আকিজ ইনফোটেকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জি এম কামরুল হাসান বলেন, ‘দেশের বেসরকারি প্রযুক্তি খাত নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমরা এখন আর কেবল সফটওয়্যার বা যন্ত্রাংশ সরবরাহকারী নয়, এখন দেশের সামগ্রিক ডিজিটাল ইকোসিস্টেমের স্থপতি। বিভিন্ন উদ্ভাবনী সমাধান, ডেটা নিরাপত্তা ও অটোমেশনের ওপর গুরুত্বারোপ বাংলাদেশকে একটি প্রকৃত ডিজিটাল অর্থনীতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছি।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন আকিজ রিসোর্সের চিফ ডিজিটাল ও ইনোভেশন অফিসার মো. ফিরোজ কবির ও আইবস লিমিটেডের চিফ সেলস অফিসার শাহেদ ইকবাল। আকিজ গ্রুপের ডিজিটাল ও স্মার্ট অফিস ম্যানেজমেন্ট ও এন্টারপ্রাইজ টেকনোলজির উল্লেখযোগ্য দিক তুলে ধরেন তাঁরা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ডিজিটাল ইকোসিস্টেম তৈরি করতে চায় আকিজ রিসোর্স
  • আশুগঞ্জ সার কারখানায় উৎপাদন চালুর দাবিতে শ্রমিক-কর্মচারীদের বিক্ষোভ
  • চ্যাটজিপিটির নির্মাতা ওপেনএআইয়ের বাজারমূল্য ৫০০ বিলিয়ন ডলার নির্ধারণ
  • আশুগঞ্জ সার কারখানায় গ্যাস সংযোগের দাবিতে সমাবেশ
  • চীনের আধিপত্য মোকাবিলায় এবার যুক্তরাষ্ট্র-জাপান বিরল খনিজ চুক্তি
  • ভারতের নতুন দুশ্চিন্তা: অরুণাচলের কাছে ৩৬টি বিমান বাংকার তৈরি করেছে চীন
  • দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে নতুন নৈতিক পরীক্ষায় দিল্লি
  • মালির সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ, কারণ জ্বালানিসংকট
  • ‘চোখের দেখায়’ সিলিন্ডারের মান পরীক্ষা