এখনো বিদেশে নেওয়ার মতো অবস্থায় নেই খালেদা জিয়া
Published: 6th, December 2025 GMT
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা এখনো স্থিতিশীল নয়। এ কারণে তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে নেওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্তে আসা যায়নি। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাঁকে লন্ডনে নেওয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত আছে। তবে বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি নির্ভর করছে তাঁর শারীরিক অবস্থার অর্থাৎ দীর্ঘ যাত্রার ধকল নিতে শারীরিকভাবে উপযোগী কি না, সেটার ওপর।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্যদের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র গতকাল শনিবার রাতে প্রথম আলোকে জানিয়েছে, খালেদা জিয়ার নানা শারীরিক জটিলতাগুলোর মধ্যে ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদ্যন্ত্র ও ফুসফুসের সমস্যা ওঠানামা করছে। এর কিছু কিছু কখনো নিয়ন্ত্রিত, আবার হঠাৎ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, কিডনির সমস্যার কারণে খালেদা জিয়ার শরীরে হিমোগ্লোবিন কমে গিয়েছিল, সেটি বেড়েছে। কিডনির কার্যকারিতা সামান্য বৃদ্ধি পেয়েছে, ফুসফুসেরও উন্নতি আছে। তবে তিনি এখনো আশঙ্কা মুক্ত নন।
এমন পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ নেওয়ার তারিখ পেছানো হয়। তাঁকে বিদেশ নেওয়ার বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে প্রথমে বলা হয়েছিল শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) ভোরে নেওয়া হবে। এর পর শুক্রবার সকালে বিএনপির পক্ষ থেকে নতুন তারিখ বলা হয়েছিল ৭ ডিসেম্বর। পরে রাতে জানা গেছে, সেটা পিছিয়ে সম্ভাব্য যাত্রার তারিখ ঠিক করা হয়েছে ৯ ডিসেম্বর। এখন পর্যন্ত এই তারিখে যাওয়াও নিশ্চিত নয়।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ও বিদেশ পাঠানোর বিষয়ে অবগত একটি সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে তাঁকে বিদেশ পাঠানোর পরিকল্পনা আরও দু দিন পিছিয়ে ৯ ডিসেম্বর করা হয়েছে। তবে যাত্রার বিষয়টি নির্ভর করছে তাঁর শারীরিক অবস্থা ও চিকিৎসকদের সিদ্ধান্তের ওপর। তবে গতকাল সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যে তাঁর শারীরিক অবস্থা অনেকটা অপরিবর্তিত রয়েছে।
এ বিষয়ে গতকাল বিকেলে এভারকেয়ার হাসপাতালের বাইরে এক ব্রিফিঙে মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ও বিএনপির নেতা এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেছেন, বিমান ভ্রমণে শারীরিকভাবে সক্ষম না হওয়ার কারণেই খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নিতে বিলম্বিত হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘বিদেশে যাওয়ার ব্যাপারে আমাদের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি রয়েছে।
যখনই উনাকে বিদেশ নেওয়ার জন্য মেডিকেল বোর্ড যথোপযুক্তভাবে তৈরি মনে করবেন, শারীরিকভাবে মনে হবে যে, উনাকে সেফলি ট্রান্সফার করা যাবে—তখনই ফ্লাই করবেন।’
জাহিদ হোসেন আরও বলেন, ওই সময়ে (শুক্রবার) এয়ার অ্যাম্বুলেন্স কারিগরি সমস্যার কারণে আসতে পারেনি, এটাও যেমন সত্য—আবার ওই সময়ে জরুরিভাবে মেডিকেল বোর্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে, ওই মুহূর্তে তাঁর বিমানযাত্রা সঠিক হবে না। সে জন্য তাঁকে বিদেশ নেওয়ার বিষয়টি কিছুটা বিলম্বিত হচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও হয়তো শারীরিক অবস্থাই বলে দেবে তাঁকে কখন বিদেশে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া যাবে।
এ সময় জাহিদ হোসেন দীর্ঘদিন ধরে খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় নিয়োজিত দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও (শেখ হাসিনার সরকারের সময়) মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা বিগত ৬ বছর যাবৎ তাঁকে (খালেদা জিয়া) সেবা দিয়ে আসছেন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ও চিকিৎসক রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) এর আগে আরও খারাপ অবস্থা থেকে সুস্থ হয়ে ফিরেছেন। তাই আমরা আশাবাদী তিনি এবারও সুস্থ হয়ে ফিরবেন ইনশা আল্লাহ।’
এয়ার অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুতবাসস জানায়, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এনামুল হক চৌধুরী গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, মেডিকেল বোর্ড সবুজসংকেত দিলেই খালেদা জিয়াকে নেওয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবে।
এনামুল হক বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং দলের পক্ষ থেকে কাতার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। তিনি বলেন, কাতার কর্তৃপক্ষই জার্মানি থেকে একটি অত্যাধুনিক এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে।
খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ার হাসপাতালে প্রতিদিনই যাচ্ছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল রাতেও তিনি খালেদা জিয়াকে দেখতে যান।
শাশুড়ি খালেদা জিয়াকে দেখতে লন্ডন থেকে ঢাকায় পৌঁছার পর এভারকেয়ার হাসপাতালে প্রতিদিনই যাচ্ছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী জুবাইদা রহমান। গতকাল বিকেল তিনটা ২০ মিনিটের দিকে হাসপাতালের ফটক দিয়ে জুবাইদা রহমানের গাড়ি ঢুকতে দেখা যায়। জুবাইদা গত শুক্রবার লন্ডন থেকে ঢাকায় এসে পৌঁছান।
গত ২৩ নভেম্বর রাতে শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে মেডিকেল বোর্ডের অধীন চিকিৎসাধীন।
গুজবে কান না দেওয়ার অনুরোধখালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে নানা গুজব চলছে। এতে কান না দিতে দেশবাসীর প্রতি আবারও আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি।
গতকাল ব্রিফিংয়ে এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যাপারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো কোনো সময় অনেক গুজব শোনা যায়। তিনি বলেন, ‘আমি সবাইকে বিনীতভাবে অনুরোধ করব, দয়া করে দেশনেত্রীর প্রতি যদি আপনাদের শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসার নিদর্শনস্বরূপ আপনারা দয়া করে যে ফ্যাক্ট-সেটার বাইরে গুজব ছড়িয়ে কাউকে বিভ্রান্ত করবেন না।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র শ র র ক অবস থ শ ক রব র ড স ম বর ব এনপ র র সদস য র জন য গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
ইমরানের সঙ্গে কারও সাক্ষাৎ নিষিদ্ধ
পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার আদিয়ালা কারাগারে বন্দী পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খানের সঙ্গে সব ধরনের সাক্ষাৎ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার কথা জানিয়েছেন। তিনি ইমরান খানকে ‘যুদ্ধোন্মাদনায় আচ্ছন্ন এক চরমপন্থী’ বলে আখ্যা দেন। গত শুক্রবার জিও নিউজের ‘নয়া পাকিস্তান’ অনুষ্ঠানে তারার এ কথা বলেন।
এর আগে পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী ইমরান খানকে ‘মানসিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তি’ এবং জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে উল্লেখ করেন। এর কয়েক ঘণ্টা পরেই ইমরান খানের সঙ্গে অন্যদের সাক্ষাৎ বন্ধ করার বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করেন।
তারার বলেন, ‘আইন ও নির্ধারিত বিধি অনুসারেই বন্দীদের সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়। এখন ইমরান খানের সঙ্গে সব ধরনের সাক্ষাৎ নিষিদ্ধ।’ কারাগারের বাইরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিঘ্নিত করার যেকোনো চেষ্টার বিরুদ্ধে দ্রুত ও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেন তিনি।
পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রীর দাবি, কারা বিধি অনুযায়ী যেকোনো সাক্ষাতের সময় কারা সুপার উপস্থিত থাকেন। কর্মকর্তারা ইমরানের সঙ্গে কারাগারে সাক্ষাৎ করতে আসা ব্যক্তিদের রাজনৈতিক আলোচনা এবং ইমরানের নির্দেশনা দেওয়ার বিষয়টি লক্ষ করেছেন।
পিটিআইয়ের প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খান ২০২৩ সালের আগস্ট মাস থেকে কারাগারে রয়েছেন। ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতি থেকে সন্ত্রাসবাদ পর্যন্ত নানা ধরনের অসংখ্য মামলা রয়েছে।
ইমরান খানের বিরুদ্ধে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ধ্বংসের চেষ্টা এবং রাষ্ট্র ও এর প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে জনগণকে উসকে দেওয়ার অভিযোগ করে আসছে ক্ষমতাসীন জোট সরকার।
তারার বলেন, ইমরান খান ও তাঁর দল দেশকে দেউলিয়া করার দিকে ঠেলে দিতে চেয়েছিল। পাকিস্তানকে দেউলিয়া করতে আইএমএফে (আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল) চিঠি পাঠানো হয়েছিল। ৯ মে সামরিক স্থাপনায় হামলা চালানো হয়েছিল।
তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, নিজের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ দেখতে না পেয়েই সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রবিরোধী বয়ান তৈরি করছেন।
খাইবার পাখতুনখাওয়ায় গভর্নর শাসনতথ্যমন্ত্রী তারার বলেন, খাইবার পাখতুনখাওয়ায় গভর্নর শাসন জারির বিষয়টি ফেডারেল সরকার গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে।
সমঝোতার সুযোগ নেইপিটিআইয়ের সঙ্গে এখনো সমঝোতার সুযোগ আছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তারার বলেন, ‘তারা সুযোগ নষ্ট করেছে। যারা বিশৃঙ্খলা, সন্ত্রাসবাদ বা চরমপন্থী চিন্তাধারা ছড়ায়, তাদের সঙ্গে কোনো সংলাপ হবে না।’ তবে পিটিআই ক্ষমা চাইলে ও অনুশোচনা করলে পুনর্বিবেচনা করা যেতে পারে।’
ইমরানের বোনের বিরুদ্ধে ক্ষোভজিও নিউজের অনুষ্ঠান ‘আজ শাহজেব খানজাদা কে সাথ’-এ কথা বলতে গিয়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেন, ইমরান খানের বোন উজমা খানের সাম্প্রতিক ভারতীয় গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকার সাবেক ক্ষমতাসীন দলের জন্য কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দিয়েছে। তিনি বলেন, পিটিআই প্রতিষ্ঠাতা সব সময় রাজনীতিবিদদের সঙ্গে সংলাপে বসতে অস্বীকার করেছেন এবং দলটির কোনো সদস্যের পাকিস্তানবিরোধী বক্তব্যের বিরুদ্ধেও পিটিআই কখনো নিন্দা জানায়নি।