এনসিপির মনোনয়ন পেলেন জাতীয় ছাত্র সমাজের সাবেক সভাপতি
Published: 10th, December 2025 GMT
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) রংপুর–১ আসনে (গঙ্গাচড়া ও সিটি করপোরেশনের একাংশ) মনোনয়ন পেয়েছেন জাতীয় পার্টির সহযোগী ছাত্রসংগঠন জাতীয় ছাত্র সমাজের সাবেক সভাপতি আল মামুন।
আজ বুধবার বেলা ১১টায় রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের প্রথম ধাপে ১২৫ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে দলটি। এতে রংপুর–১ আসনের জন্য আল মামুনের নাম উল্লেখ করা হয়। তাঁর বাড়ি রংপুর সিটি করপোরেশনের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বুড়িরহাট এলাকায়।
২ ডিসেম্বর আল মামুন এনসিপির রংপুর জেলা কমিটির আহ্বায়ক হন। এর আগে ২০১৯ সালে তিনি জাতীয় ছাত্র সমাজের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক হন। ২০২৩ সালে কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হন তিনি এবং ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে রংপুর–১ আসনে জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন সংগ্রহ করেন।
আল মামুন প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, তিনি ১৩ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে একাত্মতা পোষণ করেন। এ সময় জাতীয় পার্টিকে সংসদ থেকে পদত্যাগের দাবিও জানিয়েছিলেন। কিন্তু জাতীয় পার্টি সেটি না করলে সংবাদ সম্মেলন ডেকে পদত্যাগ করেন। আন্দোলনের পুরো সময় তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন। এ প্ল্যাটফর্মের বড় অংশ থেকে যেহেতু এনসিপি গঠিত হয়েছে, ফলে তাঁকে নিয়ে সমালোচনার সুযোগ নেই।
আরও পড়ুনজাতীয় পার্টি থেকে ‘দোসরদের’ বের করার দাবি, ছাত্রসমাজের সভাপতি–সম্পাদকের পদত্যাগ১৬ অক্টোবর ২০২৪আল মামুনের এনসিপির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি জাতীয় ছাত্র সমাজের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যসচিব আরিফ আলী। তবে তিনি বলেন, গণ–অভ্যুত্থানে যাঁরা কারা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান তাঁদের মূল্যায়ন করতে চেয়েছিলেন। এ কারণে ২৪–এর অভ্যুত্থানের পর জাতীয় ছাত্র সমাজের কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি করা হয়।
গঙ্গাচড়া উপজেলা ও রংপুর সিটি করপোরেশনের ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে রংপুর–১ আসনটি গঠিত। এ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৭০ হাজার ১৩৪ জন। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোকাররম হোসেন। জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হয়েছেন রংপুর মহানগর কমিটির সহকারী সেক্রেটারি রায়হান সিরাজী। তাঁরা দুজন গণসংযোগ ও সভা–সমাবেশ করছেন।
এ ছাড়া গণ অধিকার পরিষদের হানিফুর রহমান (সজীব), ইসলামী আন্দোলনের গোলাম মোস্তফা, খেলাফত মজলিসের মমিনুর রহমান ও গণতন্ত্র মঞ্চ থেকে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের ফরিদুল ইসলাম নির্বাচনী তৎপরতা চালাচ্ছেন। এ আসনে জাতীয় পার্টি থেকে লন্ডনপ্রবাসী মঞ্জুম আলীর প্রার্থী হওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে।
আরও পড়ুনছাত্র সমাজের নেতৃত্বে মামুন আশরাফুল১৬ মার্চ ২০২৩.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র প র ১ আসন আল ম ম ন কম ট র স এনস প র
এছাড়াও পড়ুন:
সিলেটে আওয়ামী লীগের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামানের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল রোববার দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (মানি লন্ডারিং-১) আসাদুজ্জামান বাদী হয়ে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় সিলেটে মামলাটি করেন।
সম্পদ বিবরণী দাখিলের আদেশ জারির পরও হিসাব দাখিল না করার পরিপ্রেক্ষিতে এই মামলা হয়েছে বলে দুদক দূত্রে জানা গেছে। মামলায় সাবেক মেয়রের বিরুদ্ধে প্রায় ১ কোটি টাকার সম্পদ অবৈধভাবে অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। দুদক সিলেটের উপপরিচালক রাফী মো. নাজমুস্ সা’দাৎ আজ সোমবার রাত আটটার দিকে প্রথম আলোকে মামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
রাফী মো. নাজমুস্ সা’দাৎ জানান, আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রাথমিক সত্যতা রয়েছে। এ জন্য তাঁকে নিজের সম্পদ ঘোষণার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। তবে নির্ধারিত সময়ে সম্পদের তথ্য না দেওয়ায় কিংবা সময় বাড়ানোর আবেদন না করায় কমিশনের অনুমোদনের ভিত্তিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামলাটি (নন-সাবমিশন) দায়ের করেছেন। বিধি অনুযায়ী তদন্ত ও পরবর্তী কার্যক্রম নেওয়া হবে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আনোয়ারুজ্জামান ২০২৩ সালের নভেম্বর মাস থেকে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে প্রায় আট মাস দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে তিনি ২০১১ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসির পরিচালনা পর্ষদের পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি নির্বাচনী হলফনামায় লন্ডনে তাঁর নিজ নামে থাকা ৪ হাজার বর্গফুটের একটি বাড়ি, ১ হাজার ৮০০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট এবং একটি রেস্টুরেন্টের তথ্য উল্লেখ করেননি। এ ছাড়া ঢাকার পূর্বাচলে রাজউক বরাদ্দ করা পাঁচ কাঠা জমির তথ্যও গোপন করেছেন।
এজাহারে আরও বলা হয়েছে, ২০২২-২০২৩, ২০২৩-২০২৪ এবং ২০২৪-২০২৫ সালে দাখিল করা আয়কর রিটার্ন অনুসারে আনোয়ারুজ্জামানের মোট ৮৪ লাখ ৪৪ হাজার ৯৮ টাকার সম্পদ রয়েছে। তবে এ সম্পদ তিনি কীভাবে অর্জন করেন, এর কোনো সঠিক তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। তিনি ৯৩ লাখ ৪৪ হাজার ৯৮ টাকার অগ্রহণযোগ্য নিট সম্পদ অবৈধভাবে অর্জন করেছেন বলে দুদক প্রাথমিক অনুসন্ধানে নিশ্চিত হয়েছে। তবে এ নিট সম্পদের হিসাবে যুক্তরাজ্যে থাকা ফ্ল্যাট, বাড়ি ও রেস্তোরাঁর মূল্য আনা হয়নি।
দুদক বলছে, আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী আয়কর রিটার্নে বা নির্বাচনী হলফনামায় তাঁর সম্পদের উৎস, ধরন, সময় ও মূল্য উল্লেখ করেননি। এ ছাড়া দুদক সম্পদ বিবরণী আদেশ জারির ২১ কার্যদিবসের মধ্যে দাখিল না করায় তিনি দুদক আইন অনুযাযী শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
এদিকে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী লন্ডনে চলে যান। মামলার বিষয়ে হোয়াটসঅ্যাপে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুদকের আনা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভুয়া। জীবনে কখনো একটি পয়সাও আমি অবৈধভাবে অর্জন করিনি। রাষ্ট্রীয় মদদে সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যমূলকভাবে আমার সম্পর্কে মিথ্যাচার ছড়ানো হচ্ছে।’
আনোয়ারুজ্জামান দাবি করেন, ‘হলফনামায় বিদেশের সম্পদ দেখানোর কোনো অপশন ছিল না, তাই বিদেশের সম্পদ দেখাতে পারিনি। এসব আমার বহু আগে অর্জিত সম্পদ। এ ছাড়া রাজউকের প্লটটি বৈধভাবে বরাদ্দ পেলেও সেটি আমাকে এখন পর্যন্ত রেজিস্ট্রারি করে দখল বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। তাই সেটি সম্পদ হিসেবে দেখানোর সুযোগও ছিল না। আর আইএফআইসি ব্যাংকে আমি স্বাধীন পরিচালক ছিলাম।’
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ২০২৩ সালের ২১ জুন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র হন। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর গত বছরের ১৯ আগস্ট সিলেটসহ দেশের ১২টি সিটি করপোরেশনের মেয়রকে অপসারণ করে প্রশাসক নিয়োগ দেয় সরকার।