সম–অধিকারের ভিত্তিতে রাজনৈতিক সমঝোতা করতে চাইলে স্বাগত জানাই: মামুনুল হক
Published: 26th, November 2025 GMT
খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হক বলেছেন, ‘আমাদের অনেকে অফার করেছিল যে তোমরা লভ্যাংশ নিয়ে যাও; মালিকানা দাবি কইরো না। আমরা বলেছি, লভ্যাংশ নয়; আমরা বাংলাদেশের মানুষের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রের মালিকানা চাই। তারা আমাদের লভ্যাংশ দিতে চায়। আমরা বলেছি, ২৫ শতাংশ লভ্যাংশ চাই না; ১০ শতাংশের মালিকানা চাই।’
ময়মনসিংহ নগরের রেলওয়ে কৃষ্ণচূড়া চত্বরে গতকাল মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে দলটির ময়মনসিংহ মহানগর ও সদর উপজেলা শাখার উদ্যোগে নির্বাচনী গণসমাবেশে এ কথা বলেন মামুনুল হক।
ভিক্ষার নয়, অংশীদারত্ব ও মালিকানার রাজনীতি করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে খেলাফত মজলিসের আমির বলেন, ‘অনেকেই মনে করেছিলেন, আমরা হয়তো বড় বড় রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব, সংসদ সদস্যপদ বা রাষ্ট্রীয় কোনো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বপ্রাপ্তি নিশ্চিত করব। আমরা সে পথে না হাঁটায় অনেকে মর্মাহত ও বিস্মিত হয়েছেন। আমি বলতে চাই, বাংলাদেশে ইসলামপন্থীরা অন্যের ওপর নির্ভর করে রাজনীতি করতে চায় না।’
মামুনুল হক আরও বলেন, ‘আমরা চাই নিজের পায়ে স্বাধীন বাংলার মাটিতে দাঁড়িয়ে মালিকানাসূত্রে রাজনীতি করব। যদি কেউ সম–অধিকারের ভিত্তিতে আমাদের সঙ্গে আলাপ–আলোচনা করে, রাজনৈতিক সমঝোতা করতে চায়, তাহলে স্বাগত জানাই। ভিক্ষার থলি ধরে কেউ আমাদের দিকে হাত বাড়ালে ধিক্কার জানাই, ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করি।’
শেখ হাসিনার পরিণাম থেকে শিক্ষা নেওয়ার তাগিদ জানিয়ে মামুনুল হক বলেন, ‘বাংলাদেশে যদি কেউ ফ্যাসিবাদের মতো চলতে চেষ্টা করে, তাঁর পরিণাম শেখ হাসিনার থেকেও ভয়াবহ হবে ইনশা আল্লাহ। সবাইকে হুঁশিয়ার করি, বাংলার মাটিতে ফ্যাসিবাদী সাজতে যাইয়েন না। মানুষ যদি একবার ক্ষিপ্ত হয়, তাহলে খুব খতরনাক হয়ে যায়। ক্ষমতায় আসার স্বপ্ন যে কেউ দেখতে পারেন, কিন্তু ফ্যাসিবাদী হওয়ার চিন্তাও করবেন না, স্বপ্নও দেখবেন না, খবরদার!’
মামুনুল হক বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে প্রতিটি রাজনৈতিক পক্ষকে আহ্বান জানাই, যারা বিগত ফ্যাসিবাদী আমলে নিগৃহীত হয়েছেন, জুলুমের শিকার হয়েছেন, জুলাই বিপ্লবের অংশীজন, আসুন এক টেবিলে বসি; অংশীদারত্বের ভিত্তিতে বাংলাদেশকে পরিচালিত করি। অন্য সবাইকে বাদ দিয়ে যদি শুধু একদলীয় কায়দায় আবার বাকশালি ব্যবস্থা বাস্তবায়নের চেষ্টা চলে, তাহলে আবার জুলাই হবে, শাপলা চত্বর হবে।’
গণসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন খেলাফত মজলিসের ময়মনসিংহ মহানগর শাখার সভাপতি মুফতি আবদুস সালাম। এ ছাড়া বক্তব্য দেন ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসনে দলটির প্রার্থী মুফতি কাজী মোশতাক আহমাদ ফারুকী, দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব আতাউল্লাহ আমীন, যুগ্ম মহাসচিব আবদুল আজিজ, কেন্দ্রীয় বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হেদায়েতুল্লাহ হাদী, কেন্দ্রীয় বায়তুলমাল সম্পাদক ফজলুর রহমান প্রমুখ। এর আগে জেলার নান্দাইল ও গৌরীপুরের নির্বাচনী গণসমাবেশে বক্তব্য দেন মামুনুল হক।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম ম ন ল হক র জন ত ক আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
বিসিএস পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে ময়মনসিংহে ফের রেল অবরোধ, যাত্রীদের দুর্ভোগ
৪৭তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য ‘যৌক্তিক সময়ের’ দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো আন্দোলন করছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। আজ রোববার বেলা ১১টা থেকে ঢাকা থেকে ময়মনসিংহগামী তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেনটি আটকে রেখেছেন তাঁরা।
বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে এই প্রতিবেদন লেখার সময়ও আন্দোলনকারীরা ট্রেন আটকে রেখেছেন। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা।
আজ সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে মিছিল নিয়ে আবদুল জব্বার মোড়ে জড়ো হন আন্দোলনকারীরা। এরপর তাঁরা আবদুল জব্বার মোড়সংলগ্ন রেললাইনে অবস্থান নেন। পরে বেলা ১১টার দিকে ঢাকা থেকে ময়মনসিংহগামী তিস্তা এক্সপ্রেস আটকে দেন। ফলে ঢাকা-ময়মনসিংহগামী রেল চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
আন্দোলনকারী মেহরাজ হাসান বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের লিখিত পরীক্ষার জন্য ন্যূনতম প্রস্তুতির সময় দিতে হবে, যাতে তাঁরা ভালোভাবে পরীক্ষা দিতে পারেন। আমাদের এই যৌক্তিক দাবি পিএসসিকে মানতেই হবে। যে পর্যন্ত পিএসসি এই সময় পরিবর্তন না করছে, সেই পর্যন্ত অবরোধ চলবে। পিএসসি যদি আমাদের সঙ্গে স্বৈরাচারী আচরণ চলমান রাখে, তাহলে আমাদের অবরোধও চলমান থাকবে।’
ট্রেন অবরোধ করে রাখায় দুর্ভোগে পড়েছেন ট্রেনের যাত্রীরা। আবদুল কাদির নামে তিস্তা এক্সপ্রেসের এক যাত্রী বিরক্তি প্রকাশ করে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের দাবি যৌক্তিক। তবে জনদুর্ভোগ যাতে না হয় সেদিকেও তাঁদের নজর দিতে হবে। তাঁদের যা দাবি-দাওয়া আছে তা প্রশাসনের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান করতে হবে। এতক্ষণ ধরে ট্রেনে আটকে আছি। এই পরিস্থিতি প্রচণ্ড বিরক্তিকর।’
ট্রেনের চ-বগিতে বসেছিলেন ষাটোর্ধ্ব এক দম্পতি। তাঁরা বলেন, ‘সাড়ে তিন ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বসে আছি। ট্রেন রাস্তা থেকে অনেক উঁচুতে হওয়ার একটু নেমে কোথাও বসতে বা হাঁটাচলাও করতে পারছি না। আমরা ডায়াবেটিসের রোগী। এতক্ষণ ধরে বসে থেকে পা ফুলে যাচ্ছে। ছেলেমেয়েরা সময় থাকতে পড়াশোনা করে না, পরে এসে আন্দোলন করে। এসব আর সহ্য হচ্ছে না।’
অবরোধের একপর্যায়ে ট্রেন থেকে কিছু যাত্রী নেমে এসে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন। অবরোধের কিছুক্ষণের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক মো. আবদুল আলীম ও সহযোগী ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুল্লাহকে ঘটনাস্থলে এসে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তাঁরা অবরোধের কারণে জনদুর্ভোগের বিষয়টি উল্লেখ করে অবরোধ ছেড়ে দিতে বলেন। তবে আন্দোলনকারীরা তাঁদের কথা শোনেননি।
আরও পড়ুনবিসিএসের লিখিত পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে রাজশাহী ও ময়মনসিংহে রেলপথ অবরোধ১৮ ঘণ্টা আগেবিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া বলেন, ৪৭তম বিসিএসের সময়সূচি নিয়ে যে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে সেটি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং ময়মনসিংহের স্থানীয় প্রশাসন সর্বোচ্চ ধৈর্যসহকারে ছাত্রদের বোঝানোর চেষ্টা করছে। বিশ্ববিদ্যালয় ও ময়মনসিংহের স্থানীয় প্রশাসন বিসিএস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করবে। তিনি বলেন, ‘আমি ছাত্রদের জনভোগান্তি বাড়ানোর পথ থেকে সরে আসতে বলছি। আমি তাদের বলব, তারা যেন এই মুহূর্তে ট্রেন ছেড়ে দেয়।’